somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

কেন বেশি দক্ষতা থাকার পরেও অনেকে বেকার থাকেন? অপশন প্যারাডক্সের জট খুলুন!

০২ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, সাধারণত একাধিক দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ বেকার বসে থাকেন। যিনি সেলস্‌ থেকে সিইও (CEO) হবার যোগ্যতা রাখেন তার চাকুরী-ই হয় না। যিনি চাইলেই অনেক দামী কার ক্রয় করতে পারেন কিন্তু তার পক্ষে একটি সাধারণ মোটরসাইকেল ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেক জ্ঞানী মানুষ তূলনামূলক সাধারণ মানুষদের চেয়ে একা থকেন। অথবা, যিনি যত বেশি জানেন তিনি তত বেশি ব্যক্তি জীবন নিয়ে হতাশায় ভোগেন। আবার যে ব্যক্তির উপার্জন যত বেশি সে ব্যক্তির এমন কিছু ব্যয় থাকে যা শুনতেও অপ্রাসঙ্গিক লাগতে পারে।

এছাড়াও এমন অনেক সুন্দর/সুন্দরী মানুষ আছেন যাদের হাতে বিশাল পরিমাণ অপশন থাকা সত্ত্বেও সাধারণ একজন মানুষকে বেছে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হতে পারে, এই মানুষগুলো ব্যক্তিজীবনে ভালো করতে পারেন নাই।

এ নিয়ে আমাদের দেশে একটি কথা খুবই প্রচলিত, “অতি বড় রুপসী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর।” চারপাশে এমন মানুষদের সাথে আপনার পরিচয় নিশ্চয় রয়েছে। আপনি তাদের জীবনের গল্প শুনে হয়তো মনে মনে হেসেছেন বা ঐ বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেন নাই। কিন্তু কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, এমন কেন ঘটে? এর পেছনে প্রধান কারণ কি কি? খুব সম্ভবত নয়।

চলুন, আমরা আজকে এই মানুষদের সম্পর্কে একটু বুঝার চেষ্টা করি।

আমার বন্ধু আবদুল কুদ্দুস একদিন মাত্র ২৫ হাজার টাকা নিয়ে গ্রামের কাছাকাছি একটি শহরে স্মার্টফোন ক্রয় করতে গেল। অনেক বড় স্মার্টফোন মার্কেট দেখে বন্ধুর চোখ কপালে উঠে গেল। সন্ধ্যার দিকে চারপাশে দেখলো নিয়ন আলোয় বড় বড় অক্ষরে লিখা একাধিক স্মার্টফোন ব্রান্ডের বড় বড় সব বিলবোর্ড আস্তে আস্তে জ্বলে উঠছে। একপাশে লিখা আছে, Apple, Samsung, Pixel, OnePlus ও Huawei। অন্যপাশে লিখা আছে, Xiaomi, Vivo, Oppo, Realme, Honor, Motorola ও Nokia। এছাড়াও আছে চেনা-অচেনা আরো অন্তত ১০টি ব্রান্ডের নাম।

বন্ধুর বাজেট মাত্র ২৫ হাজার টাকা। বন্ধু অনেক কষ্ট করে এই টাকাটা উপার্জন করেছে। সে চায় এই টাকার মধ্যে সকল কোম্পানি যাচাই পূর্বক সর্বোচ্চ ভালো স্মার্টফোন টা নিতে হবে। শুধুমাত্র Apple কোম্পানি ব্যতীত সব কোম্পানির কাছে ২৫-৩০ হাজার টাকায় স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু মুশকিল হচ্ছে কোন ব্রান্ডের ব্যাটারি ক্ষমতা বেশি, কোন ব্রান্ডের ক্যামেরা অনেক ভালো, কোন ব্রান্ডের RAM ও ROM যথেষ্ট ভালো আবার কোন ব্রান্ডের প্রসেসর লেটেস্ট ভার্সনের। এছাড়াও সে পার্থক্য খুঁজে পেল এক ব্রান্ড থেকে আরেক ব্রান্ডের এন্ড্রয়েড ভার্সনের। মানে একসাথে সবই পাওয়া যাচ্ছে এবং ভালো ব্রান্ডও মিলছে এমন কিন্তু মোটেই ঘটছে না।

প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা স্মার্টফোন খোঁজাখুঁজি করার পর আমার বন্ধু আবদুল কুদ্দুস আমাকে ফোন করে বললো, “আচ্ছা, এই বাজেটের মধ্যে কি আইফোন মানে Apple ব্রান্ডের কি কিছু পাওয়া যাবে?” আমি বললাম, “নিশ্চয় পাওয়া যাবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে ঐ মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি দোকানে গিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ডের মধ্যে একটা বেছে নিতে হবে, আইফোন ভার্সন বাজেট অনুযায়ী পাওয়া যাবে তবে এক্ষেত্রে একটু নেগোসিয়েশন যাওয়া খুবই জরুরী।”

সুনামধন্য Apple ব্রান্ডের স্মার্টফোন হাতে পেতে পারে ভেবে সে ঐ মার্কেটের তৃতীয় তলায় গেল। কিন্তু পুরাতন মোবাইলের সাথে বাজেটের খাপ খাওয়াতে গিয়ে এমন এমন সব আইফোন ভার্সন হাতে পড়লো তাতে ওর মনে হলো, ব্রান্ড ভালো হলেও নতুন ক্রয় করা ছাড়া আর হাতে উপায় নাই। বিশেষ করে যখন বেশিরভাগ পুরাতন আইফোনের ব্যাটারি ক্ষমতা প্রায় শেষের দিকে, পলিশ করা রঙটাও উঠে গেছে।

এছাড়াও ক্যামেরা, প্রসেসর, RAM ও ROM মোটেই ওর পছন্দ হলো না। কারণ ঐ একই টাকায় অন্য ব্রান্ড নতুন স্মার্টফোন দিচ্ছে আরো অনেক উন্নত ফিচারে। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা দ্বিধার মধ্যে থেকে অবশেষে সে নির্ণয় করলো Inifinix ব্রান্ডের একটি স্মার্টফোন ক্রয় করতে। ফোনটা ছিলো বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং সে সময়ের বাজারের সর্বোচ্চ ফিচার ও স্পেসিফিকেশনের।

গ্রামের বাড়িতে ফিরে বন্ধু আবদুল কুদ্দুস অনেক বেশি হতাশ। তার মনে হতে শুরু করলো, হতে পারে মার্কেটে থেকে ৩ ঘন্টারও অধিক সময় ব্যয়ে সে সর্বোচ্চ বিকল্প খুঁজে পায় নাই। একাধিক ভালো ভালো ব্রান্ড কে মস্তিষ্ক থেকে বাদ দিতে হয়েছে। আরেকটু বাজেট থাকলে সে হয়তো Apple ব্রান্ডের কোন নতুন ফোন পেয়ে যেত। তার হাতে স্বাধীনতা ছিলো এবং চয়েস ছিলো। হয়তো সে তার স্বাধীনতা ও চয়েসের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে নাই। তার উপর সেদিনের একটা বড় অংশ বা সময় নষ্ট হয়েছে। অন্তত ৩ ঘন্টারও বেশি সময় সে মার্কেটেই কাটিয়েছে। কিন্তু তারপরও সে সেরা বিকল্প খুঁজে পায় নাই।

গল্পটা আমার কাল্পনিক বন্ধু আবদুল কুদ্দুসের হলেও এরকম সমস্যায় আমরা নিজেরাও পড়েছি বহু ভাবে, বহু জায়গায়। হয়তো স্মার্টফোনের জন্য নয়, অন্য কোন পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে। এখানে অন্তত ৬টি সমস্যা আমাদের সামনে বারবার তৈরি হয়,

১. সিদ্ধান্তহীনতা: আমাদের হাতে যখন অনেকগুলো অপশন থাকে তখন আমরা হয়তো কোনটা নেবো আর কোনটা নেবো না এ নিয়ে ব্যাপক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারি। এমনকি অতিরিক্ত বিশ্লেষণ আমাদেরকে ‘Analysis Paralysis’-এ ভোগাতে পারে। আবদুল কুদ্দুস একটা স্মার্টফোন বেছে নিতে পারলেও অনেকের ক্ষেত্রে একই বাজেটে ঐ দিন ঐ একই সময়ে একটি সঠিক বিকল্প বেছে নিতে হবে চিন্তায় কিছুই ক্রয় করা হয়ে ওঠে না।

২. সময় নষ্ট: ধরুন ৩টি ব্রান্ডের মধ্যে একটি ক্রয় করতে হবে। এরকম কম অপশন থাকলে আপনি দ্রুত আপনার পছন্দ নির্ধারণ করতে পারতেন। এতে করে আপনার অতিরিক্ত সময় নষ্ট হত না।

৩. অনুশোচনা: উপরের উদাহরণের কথা চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই আবদুল কুদ্দুস কে একটি স্মার্টফোন বেছে নিতে গিয়ে অন্তত ৯৯টি স্মার্টফোন মস্তিষ্ক ও মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়েছে। ফলে তার ফোন-ই সেরা বিকল্প কিনা এ নিয়ে এক ধরণের আফসোস বা অনুশোচনা নিশ্চয় কাজ করবে। তার মনে হতে পারে, বাকি ফোনগুলোর সবগুলোই তো আর খারাপ ছিলো না! একই বাজেটের মধ্যে মিলেও যেত। কিন্তু গ্রামে হঠাৎ বাকিদের হাতে একই বাজেটের অন্য কোম্পানির ফোন দেখে তার মনে তীব্র আফসোস ও অনুশোচনার তৈরি হতে পারে এবং নিজের পছন্দ কে ছোটও করতে পারে নিজের কাছে।

৪. ‘স্বাধীনতা’ কি? আমরা মনে করি যে, যত বেশি বিকল্প থাকে তত বেশি আমরা স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবো। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। বিকল্প আপনাকে স্বাধীনতা তো দেয় কিন্তু শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত শ্রম ও মানসিক দ্বন্দ্বও উপহার দেয়।

৫. আত্মবিশ্বাস হারানো: যেহেতু আমি সঠিক বিকল্প খুঁজে পেলাম না সেহেতু আমার দ্বারা সঠিক বিকল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।

৬. FOMO: বাকিদের পছন্দ কত ভালো! তাদের ভীড়ে আমার অবস্থান কই?

আমি এতক্ষণ কথা বলছিলাম ‘Option Paradox’ নিয়ে। অপশন পারাডক্স আমাদের নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয় ঠিকই, কিন্তু এই স্বাধীনতা এতটাই ভারী হয়ে যায় যে আমরা আর স্বাধীন বোধ করি না। বরং আমরা সিদ্ধান্তহীনতা, অনুশোচনা ও ক্লান্তির দাস হয়ে পড়ি।

যে সমস্ত বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে,
১. ব্যারি শোয়ার্জ (Barry Schwartz) এর বই ‘The Paradox of Choice: Why More Is Less (2004)’ – অপশন পারাডক্সের তাত্ত্বিক ভিত্তি ও জনসচেতনতা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা।
২. আলভিন টফলার (Alvin Toffler) এর বই ‘Future Shock (1970)’ – প্রথম “Overchoice” শব্দটি ব্যবহার করেন; দ্রুত পরিবর্তন ও বিকল্পের চাপ নিয়ে আলোচনা।
৩. শিনা আয়েঙ্গার (Sheena Iyengar) এর বই ‘The Art of Choosing (2010)’ – বিকল্পের সংখ্যা ও মানসিক প্রভাব নিয়ে গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ। বিখ্যাত ‘জ্যাম পরীক্ষার’ মাধ্যমে দেখান বেশি অপশন কম সিদ্ধান্ত আনে।

Image Credit: VidIQ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিএনপি তথা তারেক রহমান কেন বলছেন না......

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৩৮



জামাত, গৃহপালিত জাতীয়পার্টি, পতিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগ এবং বিএনপি এই চারটি রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। অন্য যে আরো ৩০/৪০ দল আছে সেগুলো বলতে গেলে প্যাডে পোস্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রেম-বিবাহ সমাচার !:#P

লিখেছেন আরোগ্য, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০




১. আমার এক আত্মীয় ভাই প্রেম বিবাহ করে। ওগো জোড়া পুরা "রাব্ব নে বানাদি জোড়ি", মাশা-আল্লাহ! ভাইও গুন্ডা, ভাবির বাপও গুন্ডা। ভাইয়ের পরিবার বিয়াতে রাজি না দেইখা ইতিহাসের পাতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ৬০ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন, আজ ৪৫টি কাচ্চি রেস্টুরেন্টের মালিক[/sb

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২





শাহাবুদ্দীন তালুকদার ২০০১ সালে বাবার দেওয়া ৬০ টাকা নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। তখন বয়স মাত্র ১৫/১৬ বছর।সেই শাহাবুদ্দীন তালুকদার এখন সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে প্রসিদ্ধ ৪৫টি কাচ্চি বিরিয়ানির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকে ধুয়ে নিজেদের গা মুছছে এনসিপি!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:২৫


আহ্, কী দিনকাল পড়লো! রাজনৈতিক দলগুলো যেন একেকটা কমেডি থিয়েটার খুলে বসেছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' (এনসিপি) নামের নতুন দলটির কাণ্ডকারখানা দেখলে মনে হয়, তারা যেন আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

১২.৫ লিটার সিলিন্ডারে ৮লিটার গ্যাস, বাকিটা বাতাস আর পানি

লিখেছেন অপলক , ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ২:৫১



একটা ম্যাজিক স্টিক দরকার। আমার তো নেই। তাই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লিখতে বসলাম। টপিকস হল: দেশে কি আছে , কি পাচ্ছি, কতটা ফাঁকিবাজি।



দেশে শাসক বদলেছে, শাসন ব্যবস্থা বদলায়নি:
---... ...বাকিটুকু পড়ুন

×