দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সব বিষয় এড়িয়ে যাই এবং বলি যে, না আমরা তো চরমপন্থী নই। আমরা তো মৌলবাদী নই। কিন্তু এই টেবিলটি আমাদের ঘুরিয়ে দিতে হবে। মুসলিমদের এখন বলা হয় সন্ত্রাসী। কিন্তু আমি বলি সব মুসলমানেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। কিন্তু আমি বলি সব মুসলমানেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। এখন সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ কি? সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ হলো যে লোক ত্রাস ছড়িয়ে দেয়। যখন একজন ডাকাত কোন পুলিশকে দেখে তখন সে ভয় পায়। সুতরাং পুলিশ তখন ডাকাতদের জন্য সন্ত্রাসী এবং একইভাবে যখন দেখবেন একজন ডাকাত বা ধর্ষণকারী বা সমাজের শত্র“ কোন মুসলিমকে দেখবে সে ভয় পেয়ে যাবে। আমরা সমাজের শত্র“দের আতংকের মধ্যে রাখবো।
আর পবিত্র কোরআনের এ উল্লেখ আছে যে, ‘যারা সমাজের শত্র“ তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার কর’।
কিন্তু আমি জানি এখনকার দিনে সন্ত্রাসী কর্ম বলতে বুঝানো হয় এমন কাজ যেটি সাধারণ মানুষকে আতংকে রাখে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কোন মুসলিমও নিরীহ মানুষের উপর সন্ত্রাস চালাবে না। একজন মুসলিম এখানে বাছাই করে সমাজের শত্র“দের সাথে এটি করতে পারেন। একানে বাছাই করে চোর, ডাকাত, ধর্ষক এর সাথে করতে পারে। যখন কোন সমাজ বিরোধী লোক কোন মুসলমানদের দেখে ভয় পাবে এবং তখনই আমরা এই পৃথিবীতে শান্তি পাব। প্রায়ই দেখা যায় একটি মানুষের একটি কাজকে দুটো আলাদা আলাদা লেবেল দেয়া হয়। ৬০-৭০ বছর আগে ইন্ডিয়ায় স্বাধীনতা পাওয়ার পূর্বে, আমার দেশ ইন্ডিয়া বৃটিশ শাসন করতো। অনেক ইন্ডিয়ানই তখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতো। এই লোকগুলোকে বৃটিশ সরকার তখন বলতো সন্ত্রাসী। কিন্তু আমরা সাধারণ লোকের তাদের বলি মুক্তিযোদ্ধা, দেশ প্রেমিক।
একই লোক একই কাজ কিন্তু দুটি আলাদা লেবেল। আপনারা যদি বৃটিশ সরকারের সাথে একমত হোন যে, ভারতকে শাসন করার অধিকার তাদের আছে, তাহলে আপনিও ঐ লোকগুলোকে বলবেন সন্ত্রাসী। কিন্তু যদি আপনি সাধারণ ভারতীয়দের সাথে একমত হন যে, বৃটিশরা ভারতে এসেছে ব্যবসা করার জন্য, আমাদের শাসন করার অধিকার তাদের নেই, তাহলে আপনি ঐ লোকগুলোকে বলবেন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। একই লোক কাজ কিন্তু লেবেল দুটি এবং এরকম উদাহরণ আপনারা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক খুঁজে পাবেন। একজন দাইয়্যিই বুঝবেন এমন অনেক দৃষ্টান্ত থাকলে যে কোনটি কোথায় ব্যবহার করতে হবে, যেন লোকেরা বুঝতে পারে, কারণ পবিত্র কোরআনের (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ৬৪) উল্লেখ করা হয়েছে যে,
অর্থ: এসো সেই কথায় যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এক।
ভারতীয়রা মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলে অভিযোগ করলে আমি এই ব্যাখ্যাটি দেই, তখন তারা ভাল করে বুঝতে পারে। দুই মাস আগে ইংল্যান্ডে ছিলাম সেই বোম ব্লাস্টের পরে অর্থাৎ ৭ জুলাই-এর পরে। একটি কনফারেন্স আমি লেকচার দিয়েছিলাম। সেখানে টনি ব্লেয়ারের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসতে পারে নি। তবে পুলিশ প্রধান সেখানে ছিলেন, মেয়রও ছিলেন। সেখানেও আমি উদাহরণ দিয়েছি সেটি ছিল অন্যরকম। বলেছিলাম অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছিল, তখন বৃটিশরা আমেরিকা শাসন করতো। অনেক আমেরিকানই স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছিল। ১৭৭৬ সালে তারা স্বাধীনতা লাভ করে। আর তখনকার উচ্চপদস্থ নেতা ফ্রাংলিন, জর্জ ওয়াশিংটনকে বৃটিশ সরকার ১ নম্বর সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করতো। যে লোক ছিল ১ নম্বর সন্ত্রাসী অর্থাৎ জর্জ ওয়াশিংটন পরবর্তীতে তিনিই হলেন ইউএস-এর প্রেসিডেন্ট।
একটু চিন্তা করে দেখেন ১নং সন্ত্রাসী হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আর তিনি হলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট যাকে সবাই শ্রদ্ধা করে, এমনকি জর্জ বুশও। এই হচ্ছে মিডিয়া। ১নং সন্ত্রাসী পরবর্তীতে হয়ে গেলেন আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। আমেরিকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত রাষ্ট্র। আর সে দেশেন প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন একন সন্ত্রাসী। এছাড়াও বলতে পারেন নেলসন ম্যান্ডেলার কথা, বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্বে, সেখানকার ক্ষমতায় ছিল শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার। এই শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার নেলসন ম্যান্ডেলাকে ২৫ বছর ধরে আটকে রেখেছিল রোবেন সাইলেন্ডে। তখন তাকে বলা হতো ১ নম্বর সন্ত্রাসী।
পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন বর্ণবাদী সরকার থেকে মুক্ত হলো তখন দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এরপর নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন। আর তিনি নতুন কোন কাজের জন্য শান্তি পুরস্কার পান নি। এমন নয় যে, তিনি পূর্বে সন্ত্রাসী ছিলেন পরে ভাল হয়ে গেছেন। একজন খারাপ লোক ভাল হয়ে গেল এরকম না। সেই একই কাজ যার জন্য তাকে সন্ত্রাসী বলা হয়েছে, কয়েক বছর পরে তার জন্যই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন। এটি খুবই অদ্ভুদ। একই কাজ যার কারণে তিনি ২৫ বছর জেলখানায় ছিলেন, যার জন্য তাকে সন্ত্রাসী বলা হলো, সেই কাজের জন্যই তিনি আরবি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন।
আর ঠিক এইভাবেই মিডিয়া দিনকে রাত বানিয়ে বদলে দেয়, কালোকে সাদা বানায়, হিরোকে ভিলেন বানায় আর ভিলেনকে হিরো। এক কথায় যার কাছে ক্ষমতা থাকে সে তখন যা বলে সেই কথাটিই সত্যি হয়ে যায়। আমরা জানি যে হিটলার যখনই ইউরোপ আক্রমণ করে অনেক দেশ তখন বাধা দিয়েছিল, এমনকি ফ্রান্সও বাধা দিয়েছিল। সেই ফরাসি লোকদের তখন জার্মান বলতো সন্ত্রাসী। আর এভাবেই মিডিয়া খবর তুলে ধরে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা মুসলিমরা অনেক পেছনে পড়ে আছি। আমাদের জানতে হবে কিভাবে টেবিলটি উল্টে দেয়া যায়।