গেল কিছুদিন বলতে গেলে একটু দৌড়ের ওপরই ছিলাম, তাই এখানে অনুপস্থিত। শেয়ার করার মতো অনেক কিছু জমে গেছে। দেকি কতদূর শেয়ার করা যায়। ব্যস্ততা শুরু হয়েছে ২৬ তারিখে। সেদিন গিয়েছিলাম নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হিরনপুর গ্রামে। বাংলার আর দশটা গ্রামের মতোই। তবে, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। আমরা, মানে আমি, ইন্টেলের ড, বার্নার্ড, মেজর আখতার, বিসিসির দুইজন কর্মকর্তা, ডিনেটের অজয় বসু। আমাদের লক্ষ্য ছিল তেনুয়া হাই স্কুল। আর দশটা গ্রামের স্কুলের মতো। বিশাল খেলারমাঠ আছে। একতলা ভবন। মাঠের একপাশে প্রাইমারি আর এক পাশে হাই স্কুল।
আমরা যে মাইক্রোবাসে করে গিয়েছি সেটা স্কুল পর্যন্ত যায় নি। শেষের ৫০০ গজ আমাদের হেটে. কাঁদা মারিয়ে গেলাম। আমাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য হেড স্যার আবদুল কৃদ্দুস ও স্কুল কমিটির সভাপতি এগিয়ে আসলেন।
স্কুল এলাকায় প্রবেশ করে আমরা দেখলাম অনেক কলকাকলী। একটু বেশি মনে হলো। আমার ধারণাটা যে ঠিক সেটা স্বীকার করলেন হেড স্যার। বললেন, মাসখানেক ধরে স্কুলে সবাই আসে! উপস্থিতি প্রায় শতভাগে পৌছেছে!!
বিদ্যুৎবিহীন একটি সাদামাটা স্কুলে মতভাগ উপস্থিতির পেছনের কারণটা কী? আমরা যা ভেবেছি সেটাই?
ঠিক তাই। স্কুলের সব ছেলেমেয়েকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার এই দু:সাধ্য কাজটি সহজ করেছে ১০টি ক্লাশমেট পিসির একটি ল্যাব। ইন্টেলের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ল্যাবটি তৈরি হয়েছে। আগে বলেছি গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। তাহলে, কম্পিউটার চলে কেমনে? সোলার পাওয়ারে।
১০টি কম্পিউটার চালানোর জন্য ৩০০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, স্কুলের ছাদে। ব্যাটারি ব্যাকআপেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোলার পাওয়ারের হিসাব করার সময় প্রতিদিন ৪ ঘন্টা ল্যাব চালু রাখার কথা ধরা হয়েছে। ইন্টেলের ক্লাশমেট পিসিগুলো চলার সময় মাত্র ১৫-১৮ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। (আমরা মেপে দেখেছি!!!)।
একটা ভাল হিসাব করা হয়েছে যাতে মোবাইল ফোন চার্জ করা না যায়। সে কারণে কোন এসি আউটলেট রাখা হয়নি। ডিসি-ডিসি কনভার্টার ব্যবহার করাতে এফিসিয়েন্সিও বেড়েছে। যদিও ব্যবহারকারীদের একটি ধারণা ছিল যে, প্রথমে চার্জ করতে হবে, পরে ব্যবহার করতে হবে। ফলে, দিনের বেলায়ও তারা ব্যাটারিতে সেগুলো চালাচ্ছে! আমরা বলেছি যে, এগুলো সরাসরি লাইনে দিয়ে ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে চার্জটা জমা থাকে।
বার্নাড জানালো উগান্ডায় ওরা ব্যাটরি ছাড়াই সিএমপিসি ব্যবহার করছে। তাহলে এনার্জি কনজাম্পশন আরো কমে আসে। তাও আমরা দেখলাম (মেপে দেখলাম আর কী)।
আশা করছি ওরা এই ভুলটুকু সঙশোধন করে ফেলেছে। ভুল বলছি কারণ পিসিগুলোর পাওয়ার সোর্স তিনটি - সোলার, সোলারের ব্যাটারি আর সিএমপিসির ব্যাটারি। ওরা খালি শেসেরটা ব্যবহার করছে।
শিক্ষার্থীরা খুবই খুশী। স্কুল কর্তৃপক্ষ সব ক্লাশের জন্য পিসি ব্যবহারের ব্যবস্তা রেখেছেন। ক্লাশের সবাই পর্যায়ক্রমে পিসি ব্যবহার করতে পারছে। শুরুতে ওরা মাউস কী বোর্ড ব্যবহার করা শিকছে ড্রয়িং করে। সবাই এরই মধ্যে লাল সবুজের পতাকা আঁকা শিখে ফেলেছে। ঐ ল্যাব খালি ঐ স্কুলের ছেলেমেয়েরা ব্যবহার করছে না। ব্যবহার করছে কমিউনিটির সবাই। এরই মধ্যে বৈকালিক শেষনে নাম নিমন্ধন করেছে ৩০ জন্। পর্যায়ক্রমে আরো যোগ দেবে। আমরা যেদিন সেখানে গেছি সেদিন ঐ ল্যাবের বয়স মাত্র ১ মাস ১০দিন!
এই অল্প সময়ের মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্পের কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু, তারপরও বলা যায়, পূর্বধলার হিরনপুরের তেনয়া স্কুল ও এর আশেপাশের শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তি এক নতুন দিনের হাতছানি নিয়ে এসেছে। ঐ স্কুলে ৫ জন ছাত্র ও ১ জন ছাত্রী এর আগে কম্পিউটার দেখেছে, কোনদিন ছোঁয়নি। এখণ সবাই কম্পিউটার চালাতে পারে। ওয়ার্ড/এক্সেল পারে না অবশ: P । অবশ্য খায়রুল আমাকে তার নাম লিখে দেখিয়েছে ওপেন অফিস রাইটারে!!! ওরা ওয়ার্ড শিখবে না। প্রকল্পটি ইন্টেলের। ওরা পাইরেসি করে না। দামী মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহার করলে স্বভাবতই প্রতিটি সিএমপিসির দাম কয়েক হাজার টাকা করে বেড়ে যেতো। এ কারণে তারা সেদিকে যান নি!
যে সোলার প্যানেল সিস্টেম নেওয়া হয়েছে তার দাম পড়েছে ১৭০,০০০ (২৫০০ ডলার) টাকার মতো। সিএমপিসির বাজর দর ২২-২৫ হাজার টাকা। ইন্টেলের এই প্রকল্পের আওতায় আরো একটি স্কুল আছে। গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় একটি জুনিয়র গার্লস হাই স্কুল। সেখানে অবশ্য ৫টি পিসি আর ১৫০ ওয়াটের প্যানেল।
দুপুর বেলা আমরা আরবানের মেহমান ছিলাম। খাওয়ার যে আযোজন ছিল তাতে শেষ মেষ ‘ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হয়েছিল। তবে সে অন্য গল্প।
আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, কারণ আগে বলেছি মাত্র ১ মাস ায়স এই ল্যাবের। তবে, মনে হয়েছে ২২৫ ওয়াটের প্যানেল কাজটা সারতে পারে। শিক্ষকদের যদি রেডি করা যায়, তাহলে উবুন্টু দিয়ে দেওয়া যেতো, তাহরে আরো খরচ কমানো সম্ভব।
ফেরার সময় আমি ভাবছিলাম আচ্ছা যদি, শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার না দিয়ে খালি মাস্টারদের জন্য একটি পিসি আর একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া হতো তাহলে কী একই ফলাফল পাওয়া যেতো??
সবার সেকেন্ড ডিয়ারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক
(ছবি আমার ফেসবুক এলবামে)