somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরণ মঞ্চের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল

০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাস সব সময় লিখিত হয় বিজয়ীদের হাতে। তাই ইতিহাস সব সময় নিরপেক্ষ হয় না। আবার বর্তমান সংবাদপত্রের সূত্র ধরে ভবিষ্যতের ইতিহাস রচিত হয়। যদিও হলুদ সাংবাদিকতার কবলে পড়ে এখানেও সঠিক ইতিহাস খুজেঁ পাওয়া যায় না। গণজাগরণ মঞ্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্ববহন করে কারন এই মঞ্চ তরুণ প্রজন্মকে অতীত ইতিহাস ও চেতনা ধারন করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু অনেকেই এই মঞ্চ শুরুর ইতিহাস ভুলে গেছে, কেউ জানে না, কেউ জানলেও মানে না।

আমি ব্রার্টান্ড রাসেল এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আড্ডা মারতে পছন্দ করি। তাই পাবলিক লাইব্রেরীতে পড়তে গিয়ে লাইব্রেরীর গেটে আড্ডা মারতে বেশি উৎসাহিত হই। বেকার থাকা অবস্থায় শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরীতে পড়ার পাশাপাশি আড্ডাটা চালিয়ে যেতাম এবং এতাটাই আকর্ষণ অনুভব করতাম যে ঘোষণা দিয়েছিলাম আজীবন লাইব্রেরীর সাথে সম্পর্ক রাখব। চাকুরীতে প্রবেশের পর লাইব্রেরীর ভিতরে পড়তে না গেলেও শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরীর গেটে নিয়মিত যেতাম আড্ডা দিতে। প্রতিদিন অফিস শেষ করে মতিঝিল থেকে চলে যেতাম শাহবাগ। গৌতমের তত্বাবধানে আমাদের নিজস্ব কিছু চেয়ার ছিল আড্ডা মারার জন্য এবং আড্ডার কর্তাব্যক্তি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বর্তমান পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন ভাই। আমাদের আড্ডায় শরীক হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমলা, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী, বেকার, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। শাহবাগকে এক গুনীজন পাচঁটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমারা আড্ডায় আড্ডায় সৃজনশীলতার চর্চা করতে করতে দেশগঠনের কথাই ভাবতাম নিরন্তর।

০৫ ফ্রেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে আমি যথারীতি অফিসে গিয়ে অফিসের ফাঁকে ব্লগিং করছি। আর এদিকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল কাঁদের মোল্লার ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরধের জন্য যাবৎজীবন কারাদন্ড ঘোষনা করেছে। কিন্ত এ রায় সচেতন নাগরিক বিশেষ করে তরুনসমাজ মেনে নিতে পারে নাই। সবাই মেনে না নিলেও প্রকাশ করার যথাযথ মাধ্যম পায় নি। বাংলা ভাষায় মুক্ত মত প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় প্লাটফরম এবং জনপ্রিয় ব্লগ https://www.somewhereinblog.net/ সামুতে প্রতিবাদের ঝড় উঠল এবং কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি করা হল। প্রতিবাদ সংশ্লিষ্ট লেখা স্টিকি করা হলো এবং সকল ব্লগারদের শাহবাগে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আহবান জানানো হলো। তখন ফেসবুকে লেখালেখি কম হতো এবং বর্তমানের মতো এতো জনপ্রিয়ও ছিলনা। ফলে সামুতে লেখালেখির ফলে ব্লগারগণ সক্রিয় হলেন এবং স্বতস্ফুর্তভাবে শাহবাগে জড়ো হয়ে প্রতিবাদী মানব বন্ধন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শ্রোগান তুললেন দাবী মোদের একটাই কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। আমি অফিসে দায়িত্বরত থাকায় ব্লগ পড়ে উত্তেজিত হলেও তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারলাম না। শাহবাগে উপস্থিত ব্লগারগণ সারা রাত অবস্থান করে রায়ের বিরোধীতা করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে অনড় থাকে। পরবর্তী দিনে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সতেনত নাগরিক দলে দলে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শাহবাগে জড় হয়ে প্রতিবাদ করেতে থাকে। ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালের বিকাল পর্যন্ত আন্দলোন অনানুষ্ঠানিকভাবেই চলছিল। বিকালে পর বিভিন্ন সামাজকি, সাংস্কৃতিক, প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে “ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট মুভমেন্ট” নামে একটা প্লাটফরমের ব্যানের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্ত এই আন্দোলনে সামুর ব্যানারে যারা শরীক হয়েছিলেন তারা সুবিধাবাদীদের কেনুই এর ধাক্কায় মূল চত্তর থেকে একটু দূরে দাড়াতে বাধ্য হয় যা দেখে আমি মনে কষ্ট পাই। এ সময় শাহবাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীরত ডাঃ ইমরারন এইচ সরকার টেকনিক্যাল কারনে গুরুত্বপেয়ে আন্দোলনের আহবায়ক হয়ে যান এবং মূল উদ্যোক্তরা পিছিয়ে পড়ে যান। এর পর গনজাগরণ মঞ্চ নাম ধারন করে আন্দোলনটি স্বতস্ফুর্তভাবে চলতে থাকে এবং সকল ধরনের ব্যক্তি ও সংগঠন উপস্থিত হয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। আমি গনজাগরণ আন্দোলন শুরুির পর থেকে প্রতিদিনই শাহবাগ যেতাম এবং মঞ্চের অদূরে আমাদের আড্ডায় বসে আন্দোলন এর প্রতি সমর্থন দিয়ে যেতাম। মঞ্চ থেকে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা আমাদের আড্ডায় এসে পরামর্শকরে আন্দোলনকে গতিশীল করতেন। বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক বিশেষ করে তরুন সমাজের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রনের মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সপ্তাহখানেক চলার পর মেরুকরন হতে থাকে এবং চেতনার শক্তি হারাতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ২:৩০
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×