নেই সেই ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ। আমাদের ছোট্ট বেলায় ইলিশ মাছ ছিল এক আরাধ্যোর বিষয়। যেমন ছিল অপ্রতুলতা তেমন ছিল স্বাদ। সব সময় হাট বাজারে ইলিশ মাছ পাওয়া যেত না। সাধারণত বর্ষাকালে হাটের দিন দূরের কোথাও থেকে মাছের ব্যাপারীরা বরফ দিয়ে ঢেকে কয়েক ঝুড়ি ইলিশ মাছ নিয়ে আসত। আমাদের মুরব্বীরা অনেক কষ্টের ফসল সোনালী আঁশ খ্যাত পাট বিক্রি করে একটা ইলিশ মাছ কিনে আনত। ইলিশ মাছ আনলে সেদিন বাড়িতে এক আনন্দ বিরাজ করতো। নিজের বাড়ি ইলিশ মাছ রান্না করলে তার ঘ্রাণ পাশের বাড়ি চলে যেত। তখনকার দিনে ভালো কিছু রান্না করলে প্রতিবেশিকে এক বাটি রান্না তরকারি দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। তখনকার ইলিশের স্বাদই ছিল অন্য রকম। একবার খেলে স্বাদের কথা অনেক দিন মনে থাকতো। আগে যেখানে পাশের বাড়ির ইলিশ মাছের ঘ্রাণ নাকে চলে আসত বর্তমানে নাকের কাছে নিলেও ইলিশের কোন ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। স্বাদ ও পাওয়া যায় না বর্তমানের ইলিশ মাছের। এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় বিভিন্ন সাইজের ইলিশ। কিন্তু নাই সেই ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ। এখন যখন বাজারে পদ্মার ইলিশ, চাদঁপুরের ইলিশ, চট্টগ্রামের ইলিশ, বার্মার ইলিশ ও বরিশালের ইলিশ এর আধিপত্য তখন আমি খুঁজি ছোট্ট বেলার সেই স্বাদ ও ঘ্রাণ যুক্ত ইলিশ। ঐতিহ্যবাহী ইলিশ আজ জাতীয় মাছের মর্যাদা পেয়েছে কিন্তু হারিয়েছে তার গুনাগুন।
এক সময় খাবার হিসেবে কোরমা-পোলাও এর যেমন ছিল নাম ডাক তেমন ছিল স্বাদ ও সুগন্ধ। পোলাও এর চাল যে ধান থেকে পাওয়া যেত সেই ধানের ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে গেল যে ঘ্রাণ বা সুগন্ধ পাওয়া যেত আজ কাল পোলাও ক্ষেতে বসেও সে ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। অথচ নামে বেনামে সুন্দর প্যাকেটজাত চিনি গুড়া পোলাও চালের অভাব নেই। আধুনিক যুগে আমাদের প্রাপ্তি কতটুকু। যাযাবর এর কথায় বলতে হয় আধুনিক বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
এক সময় বংশীয় পদমর্যাদার গুরুত্ব যেমন ছিল তেমনি ছিল প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যাদের ছিল আত্মমর্যাদাবোধ এবং সকলে তাঁদের সম্মান করতো। চৌধুরী আর খন্দকার, চোখ বুজিলে অন্ধকার এই নীতির উপর ভর করে এখন আর কেউ বংশের গৌরব করে না বা কেউ বংশ মর্যাদার গুরুত্ব দেয় না। এক সময় বলা হতো, জাতের মেয়ে কালো ভালো,নদীর পানি ঘোলা ভালো। এখন কেউ এসব মানে না। যেমন কমেছে মানুষের ব্যক্তিত্ব তেমনি কমছে মানুষের সম্মান। এখন মানুষ ছুটে চলছে নিরন্তর এক অজানা উদ্দেশ্যে। ক্লান্ত হয়ে বুঝতে পারবে আলো ভেবে আলেয়ার পিছনে ছুটেছি। টাকা সে তো মরীচিকা যে কখনও ঐতিহ্যের কাছে পৌছাতে দিবে না। আমু।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২১