somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঔষধি গুণসমৃদ্ধ লতানো গাছের দৃষ্টিনন্দন ফল তেলাকুচা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। এর বোটানিক্যাল নাম Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভেষজ নাম: Coccinia। প্রচলিত নাম- তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক, কাউয়ালুলি। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বা বিভিন্ন দিকে অঞ্চল বিশেষে একে কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।শেরপুর জেলার ডালু আদিবাসীরা এই শাককে কুইচ্চ্যাগেলেক ও কুইচ্যাগাস বলেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে এটি কুদরি নামে পরিচিত ।নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। এর ইংরেজি নাম 'scarlet gourd', 'ivy gourd', baby watermelon, little gourd বা gentleman's toes। এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের লতাগাছ। এর অন্যান্য বৈজ্ঞানিক নামগুলো হলো Cephalandra indica (সিফালান্দ্রা ইন্দিকা) এবং Coccinia indica (কচ্চিনিয়া ইন্দিকা)। কানাড়া ভাষায় এর নাম 'thonde kaayi'(ತೊಂಡೆ ಕಾಯಿ)। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয় এবং বাংলাদেশে এটি টিয়া পাখিকে খেতে দেখা যায় ।
বিবরণঃ
তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে। পঞ্চভূজ আকারের পাতা গজায়, পাতা ও লতার রং সবুজ।
তেলাকুচা, বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়। পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীস্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। ফল ধরার ৪ মাস পর পাকে এবং পাকলে টকটকে লাল হয়।
তেলাকুচা
চাষঃ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে তেলাকুচার চাষ হয়ে থাকে। এর ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে। শিকড়সহ লতা এনে রোপণ করলে অতি সহজেই তেলাকুচা গাছ জন্মে। এর বীজ থেকেও চারা তৈরি করা যায়। দুই থেকে আড়াই ফুট দুরত্বে বাণিজ্যিক চাষাবাদ করা যায়। বেলে বা দোঁআশ মাটিতে ভালো চাষ হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি হলে তেলাকুচার বীজ বপন করতে হয়। বীজ তলার মাটি আগে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে থাকে।
বিস্তৃতিঃ
মিষ্টি তেলাকুচা এশিয়ার বিভিন্ন দেশসমুহে জন্মে যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকাতেও দেখা যায়।
খাদ্য পদ্ধতিঃ
অনেক অঞ্চলে এটি বিভিন্ন সবজির সাথে শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। এটি লতানো উদ্ভিদ। এর ফল ও কচি ডগা কোন কোন এলাকায় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খাবার হিসেবে পাতা এবং ফল খাওয়া হয়। তেলাকুচার কাঁচা ফল তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়, পাতা শাক হিসেবে ভেজে খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচা ফল এবং কচি পাতা দিয়ে সুপ এবং সালাদ তৈরি করা হয়। কাঁচা ফল পটলের মত চিরে দুইভাগ করে ভেজে খাওয়া যায়। থাইল্যান্ডে বিভিন্ন তরকারী এবং সুপে ফল ব্যবহার করা হয়। সেখানে এটি চাষ হয়। ভারত ও বাংলাদেশে খাওয়া হলেও চাষ হতে দেখা যায় না।
পুষ্টিঃ
স্বাদের পাশাপাশি তেলকুচা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। একশো গ্রাম তেলাকুচায় প্রোটিন ১.২ গ্রাম, ১.৪ মিলি গ্রাম আয়রন, ০.০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লোবিন), ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ১.৬ গ্রাম আঁশ এবং ৪০ মিলি গ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। তেলাকুচা ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। তাছাড়া এতে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন আছে।
ঔষধি গুণাগুণঃ
তেলাকুচা অনন্য গুণাবলী সমৃদ্ধ এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়।
তেলাকুচার সবুজ ফল পাকা লাল টকটকে তেলাকুচা ফল
তেলাকুচা ফলে আছে 'মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং', 'এনাফাইলেকটিক-রোধী' এবং 'এন্টিহিস্টামিন' জাতীয় উপাদান।[৪] কবিরাজী চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, শোথ (edema), হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস।

উপকারিতাঃ
এই শাক খেলে খাবারের রুচি বাড়ে এবং পেটের গোলমাল কমে। পেটে সমস্যা এবং বদহজমের জন্য এই শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকার কারনে এটি পরিপাক সহায়ক। থায়ামিন কার্বহাইড্রেটকে গ্লুকোজে পরিণত করতে সাহায্য করে। বেঙ্গালোরের একদল ডাক্তার গবেষণা করে বের করেছেন, তেলাকুচা প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এটি প্রোটিন এবং চর্বি ভাঙতেও সহযোগিতা করে, স্থুলতা কমায়। এটি খেলে শরীরের অবসন্নতা কাটে, স্নায়ুতন্ত্র ভালো থাকে,পরিপাকক্রিয়া সহজ হয়, পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে, কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে না। তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। কবিরাজী চিকিৎসায় তেলাকুচার ফল এবং পাতার রস বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, শোথ (edema), হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস। যদিও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার আঞ্চলিক; বৈজ্ঞানিকভাবে খুব বেশি পরীক্ষিত নয়। তেলাকচু, তেলাকুচা বা বিম্বি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বসত বাড়ির আশে পাশে, রাস্তার পাশে বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশ বিস্তার করে। সাধারণত চৈত্র বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়। পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। অবহেলিত এ লতা জাতীয় গাছটি অত্যন্ত উপকারী।
ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কাণ্ড সমেত পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়।
সাবধানতাঃ
কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট ও প্রদাহের(inflammation) সৃষ্টি করতে পারে।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কি পুরোপুরি ভারতের উপর নির্ভরশীল?

লিখেছেন গেছো দাদা, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৭

অনেক ভারতীয় দের দেখি কেবল পেয়াজ, আলু, কাঁচা মরিচ এসবের উদাহরন দিয়েই সোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি দের আক্রমন কে প্রতিহত করে! তাই আমরা বাংলাদেশে কি কি পন্য রপ্তানি করি সেই বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি অরাজনৈতিক গল্প.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১০

এক অন্ধ ভিখারি ভিক্ষা করতে করতে একদিন রাজপ্রাসাদে
ঢুকে পড়লো। রাজার মনে দয়া এলো।
রাজামশাই মন্ত্রী-কে ডেকে বললেন-
"'জানো হে, এই ভিক্ষুক জন্মান্ধ নন, একে চিকিৎসা করানো হোক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিন্দু ধর্মের মানুষদের নোৗকায় ভোট না দিতে হুশিয়ারী দিয়েছে সার্ভিস আলম

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


ঠাকুরগাওয়ে হিন্দু ধর্মের মানুষদের নোৗকায় ভোট না দিতে হুশিয়ারী দিয়েছে সার্ভিস আলম। এবং তাদের ওপরে যে হামলা হয় তার জন্য হিন্দুরাই দায়ী। কারন হিন্দুরা নৌকায় ভোট দেয়। যার ভোট সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিঠাই লাগাইন্যা শয়তান!! # ২

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৭


গাজিয়াবাদের গোপন এক ডেরায় আপার মুখোমুখি বসে মিঠাই লাগাইন্যা শয়তান' বসে মিচকি মিচকি হাসিতেছে।
আপা তারে জিগাইল, 'হাসতে কিউ হু?' (আপার হিন্দী এই রকম, কেউ ভুল ধরিয়েন না)
মিঠাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরাফাতের ড্রাগ তত্ত্ব বিশ্লেষন

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৭



আওয়ামীলীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আরাফাত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে বলে “ আন্দোলনকারীদের অনেকে ড্রাগড ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×