somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্মৃতি রোমান্থন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কিছু স্মৃতি হাসায় আবার কিছু স্মৃতি স্মরণ করে মানুষ নিরবে কাঁদে। প্রত্যেকের জীবনের কিছু ঘটনা মনে রাখা হয় যাকে স্মৃতি বলে থাকি। অন্যভাবে বলা যায় মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে স্মৃতি বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। জমাকৃত তথ্য হারিয়ে গেলে কিংবা সময়মত খুঁজে পাওয়া না গেলে তা দূর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ। অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে স্মৃতি-দৌর্বল্য দেখা দেয়।
স্মৃতির প্রকারভেদঃ
• সংবেদী স্মৃতি
• স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি
• দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি
সংবেদী স্মৃতিঃ
কয়েক সেকেন্ড বা তারও কম সময় যে স্মৃতি স্থায়ী হয় তাই সংবেদী স্মৃতি । একটি পাত্রের দিকে এক পলক তাকানোর ফলে পাত্রটির আকার কেমন ছিল, বর্ণ কি ছিল ইত্যাদি যে সব তথ্য মস্তিস্কে সংরক্ষিত হয় তা সংবেদী স্মৃতির উদাহরণ । অথবা একসারি শব্দ এক সেকন্ডের পর্যবেক্ষণে পর যতগুলো মনে রাখা যাই তাও সংবেদী স্মৃতির উদাহরণ । এটি একটি স্বতঃস্পূর্ত প্রক্রিয়া । অধিকাংশ সময়ই পর্যবেক্ষক যা দেখে সব মনে রাখতে পারে না।
স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিঃ স্বল্প মেয়াদে যে স্মৃতি মস্তিষ্ক ধারন করে তাই স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি। প্রয়োজন অনুসারে মনের গতিপ্রকৃতি বা মস্তিস্কের নির্দেশনা মোতাবেক স্মৃতি শক্তির মেয়াদ নির্ধারিত হয়। আবার অসুস্থতাজনিত কারনে কারও স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি হতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতিঃ যে স্মৃতি আজীবন মনে থাকে তাকে দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি বলে। যে ঘটনা মনে দাগা দেয় বা যে বিষয় আমাদের ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে সে বিষয়টি দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি হিসেবে আমাদের মস্তিস্কে সংরক্ষিত হয়।
সকল মানুষের স্মৃতি শক্তি এক রকম হয় না। আবার সব বয়সের স্মৃতি এক রকমভাবে সংরক্ষণ হয় না। আমি ছোট্ট বেলা থেকে মুখস্ত বিদ্যাকে না বলার কারনে এখন অনেক পড়া মুখস্ত করতে পারি না বা মনে রাখতে পারি না। তবে দেখে শুনে বুঝে পড়ার কারনে শিক্ষা গ্রহনে কোন সমস্যা হয়নি। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর মতো একবার পড়ে মুখস্থ করতে না পারলেও বুঝে পড়লে হ্রদয়ে ধারন করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
শৈশব স্মৃতি সব সময়ই মধুর হয়। কিন্তু সবাই তা মনে রাখতে পারে না। আমার জন্ম ১৯৮২ সালের শেষের দিকে হলেও ১৯৮৭ সালের ঘটনা স্মরনে আছে।
স্মৃতি-১
মায়ের কোলে চড়ে তাঁর মামার বাড়িতে গিয়ে দেখি লন্ডন প্রবাসী মামা বাড়িতে বিল্ডিং দিচ্ছে যার কারনে পুরাতন ঘর এর অংশবিশেষ ভাঙ্গা হয়েছে এবং নতুন বিল্ডিং এর জন্য গর্ত করে ভিত্তি ঢালাই দিচ্ছে। বড় বড় চতুর্ভূজ আকৃতির গর্ত করে লোহার খাচা বানিয়ে ইটের খোয়া, সিমেন্ট ও বালু মিশিয়ে ঢালাই দিয়ে পিলার বানানোর দৃশ্যটা আমার কাছে নতুন তাই স্মৃতিপটে ভেসে আছে। তবে সালটা মনে থাকার কথা না। পরবর্তীতে বিল্ডিং এর ভিত্তি/নেম প্রেট দেখে ১৯৮৭ সালের ঘটনা বলে নিশ্চিত হয়েছি।
স্মৃতি-২
১৯৮৮ সালের বন্যার স্মৃতি মানসপটে এখনো ভেসে আসে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে কাঠের দোতলা বাড়ি ছিলো যার নিচ তলা ১৯৮৮ সালের বন্যায় ডুবে গিয়েছিলো ফলে আমরা দোতলায় অবস্থান করেছিলাম। বাড়ির উঠান ডুবে ঘরের নিচতলা ডুবে যাওয়া ঘরের ভিতরে মাছ, সাপ ও ব্যাঙ এর যাতায়াত মনে পড়ে। একদিন ডাকপিয়ন নৌকা দিয়ে এসে বড় মামার পাঠানো মানি অর্ডার দিয়ে যায় যা দোতলার বারান্দা থেকে গ্রহণ করা হয়।
স্মৃতি-৩
বড় মামা তখন বাকেরগঞ্জ থানার ওসি। মামার বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। মামার বাসা নদীর পারে।সেই নদীতে বোটে চড়েছি। একদিন সকাল বেলা দেখলাম বড় মাছ বরফের মধ্যে করে কেউ দিয়ে গেছে। আর একদিন রাতের বেলা বাসার পাশের রাস্তা দিয়ে মশাল মিছিল যাচ্ছে সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে। স্মৃতিপটের এই ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখলাম ১৯৯০ সালে সৈরাচার বিরোধী সারাদেশ জুড়ে যে গণ আন্দোলন হয়েছিল তার অংশ হিসেবে বরিশালে ঐ মশাল মিছিল হয়েছিল।
স্মৃতি-৪
আমার স্পষ্টভাবে মনে আছে আমি শৈশবে একবার হ্যা/না ভোট দিয়েছিলাম। এতো ছোট বেলায় কবে কিভাবে ভোট দিয়েছিলাম তার বিশ্লেষণ করে দেখি যে তখন ভোট গ্রহনের দায়িত্বে ছিলেন আমার ছোট চাচা তাই অন্যদের সাথে ভোট কেন্দ্রে যাই এবং প্রতিদ্বন্দিতামূলক ভোট না হওয়ায় আইন শিথিল থাকার কারনে আমি ভোট দেওয়ার সুযোগ পাই।
বাংলাদেশে ৩ বার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২ বার অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনিক গণভোট এবং ১ বার অনুষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক গণভোট।
প্রথম গণভোট প্রশাসনিক গণভোট হয় ১৯৭৭ সালে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসন কার্যের বৈধতা দান। ফলাফল ৯৮.৮০% 'হ্যাঁ' ভোট। দ্বিতীয় গণভোট প্রশাসনিক গণভোট ১৯৮৫ সালে । হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমর্থন যাচাইয়ের লক্ষ্যে হ্যাঁ-না ভোট। ফলাফল ৯৪.১৪% হ্যাঁ ভোট। তৃতীয় গণভোট সাংবিধানিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়- ১৯৯১ সালে। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী আইন প্রস্তাব। ফলাফল ৮৪.৩৮% হ্যাঁ ভোট।
আমি ১৯৯১ সালে তৃতীয় গণভোটে হ্যা ভোট দিয়েছিলাম বলে মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাকশাল নিয়ে কুৎসা রটনাকারিদের জন্য॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯



গ্রীক দার্শনিক প্লোটো, অ্যারিস্টটল, ফার্সি এজমালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর ফিলোসফির একটি শাখা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এরিস্টটল পোয়েটিকস লিখেছেন আর বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার দেখা নয়া চীন ও কারাগারের রোজনামচা।

ফ্রাঁসোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিজদের লেখা নারকীয়তার স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫




একাত্তরের নারী নির্যাতন আজ অনেকের কাছেই বিতর্ক , কারণ তারা বিশ্বাস করতে চায় না যে একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এতটা নৃশংস হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো: পাকিস্তানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:০০


২০০১ সাল। নির্বাচনে বিএনপির ভুমিধস বিজয় হয় হাসিনা সেটআপ প্রশাসনে। এতে ভারত প্রচন্ড ভিত হয়ে যায় যে, ভোটে তাদের দোসর আম্লিগ আর কখনো জয়ী হতে পারবেনা। আম্লিগকে জয়ী করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×