somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাফসীর রচনাপদ্ধতি

১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

তাফসীর রচনাপদ্ধতি
মূল: ইবনে তাইমিয়্যাহ

যদি প্রশ্ন করা হয় তাফসীর রচনার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কোনটি, তাহলে বলা যায় কুরআন দ্বারা (এক অংশ দ্বারা) কুরআনকে (অন্য অংশের) ব্যাখ্যা করা। কারণ কুরআনে একস্থানে যা পরোক্ষভাবে উল্লেখিত হয়, অন্য স্থানে হয়ত তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এবং এক স্থানে যা সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হয় অন্য স্থানে তার বিস্তারিত দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু কুরআনের অন্য অংশের দ্বারা সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা পাওয়া না গেলে, আমাদের উচিত সুন্নাহর অনুবর্তী হওয়া। কারণ, সুন্নাহ হচ্ছে কুরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফিঈ বলেছেন:
“রাসূল (সা.) যা কিছুই বলেছেন তার সবটুকুই ছিল কুরআনভিত্তিক।”

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের প হতে বিতর্ককারী হবেন না”। (সূরা নিসা ১০৫)

“তাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসমূহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।” (আন নাহল ৪৪)

“আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্য” (আন নাহল ৪৬)

তাই নবী (সা.) বলেছেন, “জেনে রাখ যে আমাকে কুরআন এবং তৎসদৃশ বিষয় দেয়া হয়েছে” (আহমদ, মুসনাদ খণ্ড চার ১৩১, আবু দাউদ, সুনান সুন্নাহ ৫)
‘তৎসদৃশ’ এখানে সুন্নাহকে ইঙ্গিত করে। আসলে কুরআনের মত সুন্নাহও অহীভিত্তিক, তবে কুরআনের ন্যায় তা তাঁর নিকট পাঠ (তিলাওয়াত) করা হয়নি। ইমাম আশ শাফিঈ সহ বেশ কিছু আলেম এর পক্ষে যথেষ্ট যুক্তির অবতারণা করেছেন, কিন্তু এখানে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন আল শাফিঈ আল রিসালাহ)।

কুরআন বুঝতে হলে সর্বপ্রথম কুরআনের ভিতরে ব্যাখ্যা অন্বেষণ করতে হবে। তাতে যদি ইঙ্গিত পাওয়া না যায়, তবে সুন্নাহ’র প্রতি নজর দিতে হবে। রাসূল (সা.) যখন মু’আয (রা.) কে ইয়েমেনে পাঠান তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন “তুমি কিভাবে তোমার নিকট আনীত বিষয়ের মীমাংসা করবে?” তিনি বললেন “আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করব”। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন “সেখানে তুমি কিছু না পেলে কি করবে?” তিনি উত্তর দিলেন, “আমি রাসূল (সা.)-এঁর সুন্নাহ’র অনুসরণ করব”। রাসূল (সা.) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “যদি তুমি সেখানেও ফয়সালা না পাও তখন কি করবে?” তিনি উত্তর দিলেন “আমি নিজ বিচার-বুদ্ধি অনুযায়ী ফয়সালা করব।” একথা শুনে রাসুল (সা.) মু’আয (রা.)-এর ঘাড়ে মৃদু আঘাত পূর্বক বাহবা জানালেন। বললেন, “আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই পথে পরিচালিত করেছেন, যাতে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট হন।” এ হাদীসখানি মুসনাদে উল্লেখিত হয়েছে এবং সুনান হাদীস সংকলনে সংকলিত হয়েছে। (আহমদ, মুসনাদ আল দারিমী, সুনান, মুকাদ্দিমাহ্ ৩০; আল তিরমিযী, সুনান, আহ্কাম, ৩; আবু দাউদ, সুনান, আযিয়া ১১)

যখন কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে না, তখন সাহাবীদের বক্তব্য খেয়াল করতে হবে। কারণ তাঁরা কুরআন অধিক ভালভাবে অনুধাবন করেছেন; তাদের সমসাময়িক কালেই কুরআন নাযিল হয়েছে এবং যে অবস্থার প্রেক্ষিতে কুরআন নাযিল হয়েছে, তাঁরা সেই অবস্থা বা ঘটনার প্রত্যদর্শী এবং এ ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন পূর্ণ ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে চার খলিফা এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.)। ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত তাবারী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) হতে মাসরুক; মাসরুক হতে আবু দুহা; আবু দুহা হতে আল আ’মাশ; আল আ’মাশ হতে জাবীর ইবনে নুহ; জাবীর ইবনে নুহ থেকে আবু কুরাইব বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) বলেন, “সেই একক সত্তার শপথ যিনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই, কুরআনে এমন কোন আয়াত নেই যা কোন ব্যক্তির সম্পর্কে এবং কোন স্থানে নাযিল হয়েছে সে বিষয়ে আমি না জানি। আমি যদি জানতাম যে, কেউ আমার চেয়ে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখে এবং তার সাথে আমার সাক্ষাৎ করা সম্ভবপর তাহলে আমি অবশ্যই তার সাথে সাাৎ করতাম।” (ইবনে আল আছীর, জামী আল উসুল ফি আহাদীস আর রাসূল, ১৩৯২/১৯৭২, খণ্ড ৯, পৃ. ৪৮) আল আ’মাশ আবু ওয়ায়েলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ বলেন, “যখন আমাদের কেউ কুরআনের দশটি আয়াত শিখত, সে পরবর্তীতে ততক্ষণ অগ্রসর হতনা, যতক্ষণ না সে ঐ আয়াত সমূহের অর্থ এবং বাস্তবজীবনে কিভাবে তার অনুশীলন করতে হবে তা জেনে নিত ।”

আরেকজন বিশিষ্ট আলেম হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), যিনি রাসূলের(সা.) চাচাতো ভাই এবং কুরআনের ব্যাখ্যাকারক। তিনি রাসূলের দোয়ায় এই বিশেষ গুণাবলী অর্জন করেছিলেন, “হে আল্লাহ, তাঁকে (ইবনে আব্বাস) ইসলামের জ্ঞান এবং কুরআনের তাৎপর্য শিক্ষা দাও।” (আহমদ, মুসনাদ, খণ্ড ১ : ২৬৬, ৩১৪, ৩২৮, ৩৩৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) হতে মাসরুক, মাসরুক হতে মুসলিম ইবনে সাবি ইবনে দুহা, মুসলিম হতে আল আ’মাশ আল আ’মাশ হতে সুফিয়ান, সুফিয়ান হতে ওয়াকি, ওয়াকি হতে মুহাম্মদ ইবনে বাশশার, আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: “ইবনে আব্বাস কুরআনের কি অসাধারণ ব্যাখ্যাকারক!”
ইবনে জারীর-ও একই রকম হাদীস ভিন্ন শব্দ মালায় এবং ইয়াহইয়া ইবনে দাউদ, ইসহাক আল আযরাফ, সুফিয়ান, আল আ’মাশ, মুসলিম ইবনে সাবি আবি দুহা, আল মাসরুক পরম্পরায় তুলে ধরেন:
“ইবনে আব্বাস কি অসাধারণ কুরআনের ব্যাখ্যা কারক!”
ইবনে জারীর একই ধরনের বক্তব্য বুন্দার, জাফর ইবন আওন, আল আ’মাশ পরম্পরায় উল্লেখ করেন। তার এ বক্তব্যগুলোও ইবনে মাসুদের (রা.) উদ্ধৃতি যা ইবনে আব্বাস (রা.) প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল। ইবনে মাসুদ (রা.) সম্ভবত ৩৩ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন; ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর মৃত্যুর পর ৩৬ বছর জীবিত ছিলেন এবং ইসলামী জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধি দান করেন।

আবু ওয়াইল হতে আল আ’মাশ বলেন যে আলী (রা.) ইবনে আব্বাস (রা.) কে হজব্রত পালনকারীদের আমীর নিযুক্ত করেন। তিনি এমনভাবে সূরা বাকারাহ হতে (অন্য বর্ণনা মতে সূরাত আন নূর হতে) ধর্মোপদেশ দান করলেন যে, যদি রোমান, তুর্কী বা দালামাইটগণ তা শুনতে পেতেন তবে তারা ইসলাম গ্রহণ করতেন। সেজন্যই আবদেল রহমান সুদ্দী রচিত তাফসীরে উদ্ধৃত অধিকাংশ ব্যাখ্যা এই দুই বিখ্যাত আলেম ইবন মাসুদ (রা.), ইবন আব্বাস (রা.)-এর ব্যাখ্যা থেকে সংকলিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×