লোকটা যে সারাদিন কী করে বাসায় বসে। সেই তখন থেকে ফোন দিয়েই যাচ্ছি। ফোন ধরে না। একটা জরুরি ইনফরমেশন দিতে হবে...
ইনফো টা তারই প্রয়োজন। সেই আমাকে বলেছিলো মেয়েটা কখন ফেরে স্কুল থেকে একটু ফলো করিসতো।
কোন স্কুলে পড়ে?
তাতো জানি না....সাদা ড্রেস!
মনিপুর নাকি?
তেজগাঁওতো হতে পারে।
সেই মেয়ে সম্পর্কে খোঁজখবর কিছু পাওয়া গেছে। বসকে জানাতে এলাম আর শালা বস ফোনই ধরে না। গেটও খোলে না। এমন এক বাসায় থাকে একটা দারোয়ানও নেই। সারাদিন কলাপসিকল গেট তালামারা থাকে। ভাড়াটিয়াদের সবার কাছে চাবি আছে, কিন্তু গেস্ট এলে যতো জ্বালা। সেই ৫তলা থেকে নেমে গেট খুলে মেহমান বাসায় নিতে হয়, আবার যাবার সময় তালাখুলে বিদায় দিয়ে আবার ৫তলায় উঠতে হয়। কী যে সব সিস্টেম এই শহরের!
মেয়েটার স্কুলের খোঁজ পাইনি, কোচিং এর খোঁজ পেলাম। নাম প্যাটেল। বস নিশ্চই অবাক হবে এতোদ্রুত এতো তথ্য কী করে পেলাম! আসলে আমার কপাল ভালো। আল্লাহ সাহায্য করেছে। আমি এমনিতেই গতকাল রাস্তায় পোলাপানদের সাথে ক্রিকেট খেলছি, ঠিক সেমুহূর্তে মেয়েটা আসে। আস্তে আস্তে হেঁটে যায়, আমি তাকিয়ে থাকি সন্তর্পণে। তারপর বাকিটা মেধার খেল। সঙ্গে বই ছিল, কোথায় যেতে পারে? পড়তে! আশেপাশে কী কী কোচিং আছে? সবচে কাছে মেধা কোচিং এটাতে নাকি মেয়েরা বেশি পড়ে। বাসায় ঢুকে রেডি হয়ে গেলাম কোচিংএ। পরিচিত একটা মেয়ের নাম বলে তাকে খুঁজলাম। তার আগে বসে থেকে দেখে নিলাম এখানকার ব্যাচগুলোর কী সিস্টেম।
কোন কোন ব্যাচের ক্লাস চলছে?
ডি-৩ ই-৩
কমার্স না আর্স? (আর্টস)
ডিতে সব কমার্স
তান্নি আছে?
ডি ৩ অথবা ...
তান্নি? নাদিয়া নূর তান্নি?
হ্যাঁ,
আছে।
সে আমাকে বসিয়ে ডাকতে গেলো। এদিকে আমি পড়েছি মহা দু:শ্চিন্তায়। সবার সামনে মেয়েটাকে কী পরিচয় দেবো।..একটু পর ছেলেটা এসে বলল একটু ওয়েট করেন ক্লাস প্রায় শেষ পর্যায়ে। একসাথেই বের হবে।
যাক ভালোই হলো।
আমি গিয়ে বাইরে দাঁড়ালাম, ইচ্ছে হচ্ছিল পালাই। লোকটাকে বলেছি আন্টি পাঠাইছে একটু খবর দিতে, অথচ আমিতো কোথায় পড়ে জানি না, অনুমানে এলাম এখানে...
এখন তান্নি যদি আমাকে না চেনে?
আর আমিও না চেনার ভান করবো? নাকি চিনে বিপদে পড়বো। তারচে বাইরে থাকি।...
তান্নি তোমার গেস্ট আছে বাইরে।
আমি বিড়ি ধরাই। কী বলবো ভাবছি। তান্নিই বোধয় মুখ বাড়িয়ে খুঁজতে থাকে গেস্ট। আহারে কোন প্রিয় মানুষটাই না সে খুঁজছে।
আজতো আমার মামার আসার কথা বলতে বলতে বের হয় মেয়েটা।
আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
আমিই সেই গেস্ট! আপনি তান্নি?
হ্যাঁ, আপনি? পাড়ার বখাটে ছেলে।
তেমনতো মনে হচ্ছে না। এনিওয়ে কী চাই আপনার ?
কিছুই না। আমি আপনাদের বাসার কাছেই থাকি, বস্তিতে। ডিশের ব্যবসা করি। লাইনম্যান। ডিশের লাইন লাগবে কি না জানতে চেয়েছিলাম।
মেয়েটা আমার দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকায়।
আসলে এই লাইনে নতুন কেউ এলে আমরা ওত পেতে থাকি, আপনারাতো নতুন এসছেন!
হ্যাঁ এ মাসেই উঠলাম।
নিশ্চই ডিশের লাইন নিতে হবে। তা হয়ত নেবো, সেটা মা ভালেঅ বলতে পারবে। কিন্তু তার জন্য আমার কোচিংএ?
আসলে তা না, কোচিংএও আমাদের লাইন আছে, বিল নিতে এসছিলাম। আপনার কথা জানতে চাইলে ওরাই ধরে নিল আমি আপনার গেস্ট!
ভালোই ভদ্রতা শিখেছে মানুষ আজকাল!
হ্যা তাই, ম্যাডাম কাল কি একবার আসবো আমরা? বাসার নাম্বারটা একটু...
৮৩ নম্বর!
ও ওই মাথায়?......
একটা লোক এলো, তার সাথে ঢুকলাম। বলল কয় তালায় যাবেন?
৫তলা।
ও! চাবি নাই?
এ এক ধরণের ইনভেস্টিগেশন! অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। যার গেস্ট সে এসে খুলে নিয়ে যাবে। তবু লোকটা আমার চেহারায় হয়ত কোনও কালোছায়া দেখতে পায়নি, অথবা নিজের ভদ্রতা ক্ষণ্ন হবে বলে আমাকে ঢুকতে দিল। বসের রুমে টোকা দিচ্ছি, দিচ্ছিতো দিচ্ছি....৫তলায় ওঠারপর নাভিশ্বাস উঠে যায়, দাঁড়ানো কঠিন অথচ দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে।
কীরে কী খবর?
আরে সব আমি আপনার জন্য সব তথ্য সংগ্রহ কইরা ঘুইরা মরতেছি, আর আপনে দিব্যি বাসায় বইসা বিড়ি টানেন!
নারে কাজ করছিলাম।
কী কাজ? এই দেখ, একটা মিউজিক ভিডিও বানাইছি...জোস একটা গান গাইছে ন্যান্সি....
ভিডিও পাইলা কই?
কাটপিস। বিভিন্ন ভিডিও থেকে কেটে কেটে বানানো...
মন দিয়ে দেখবি!
আমি মন দিয়ে দেখলাম। কল্পনায় আরও কতো কি দেখলাম!....
তান্নি সংক্রান্ত তথ্যগুলো পেয়ে বসতো মহাখুশি। বলল তার মানে তুই ওদের বাসায়ও যাবি? ডিশের লাইনের লোক এই আইডিয়াটা কই পাইলি?
তুমি কি মনে করো আমার ঘটে কিছু নাই? সব তোমার থেকে কাটপিস করা?
তা হবে কেন? কিন্তু আইডিয়া হ্যাভি! আর তোরে দেখলেতো মনে হয় সেরকমই কেউ!
কিন্তু বস মেয়েটাকে তুমি দেখলা কেমনে?
তুই দেখলি কেমনে সেটা বল?
আরে আমিতো রাস্তায় খেলতেছিলাম, মেয়েটা তখন পাসিং শটে...
কিন্তু বুঝলি কী করে যে ওই মেয়েটাকেই আমি ফলো করেছি?
আরে বস এইটাও বুঝায়া দেওয়া লাগে? এই রোডে, মানে এই আটনম্বরে কয়টা বাসা? এখানকার কোনবাসায় কারা থাকে সব আমাগো মুখস্ত না। নতুন কেউ এলেই চোখে পড়ে! আর পুরাতনদের কাউরে দেখে তোমার ভালো লাগলে সেটাতো আগেই লাগতো...
তুই বাঁচলে বড় গোয়েন্দা হবি
আর না বাঁচলে?
না বাঁচলে?...পঁচে গন্ধ হবি
কথাটা শুনে হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সত্যিকি সব মানুষ পঁচে গন্ধ হয়ে যায়? সবাইকে একদিন মরতে হবে? মরণকে আমার খুব ভয় হয়.....এতো মানুষ এতো বড়ভাই বন্ধুবান্ধব কেউ কি থাকবো?
আমি বসের ফ্লোরটাতে শুয়ে পড়লাম। মরণ নিয়া একটু গবেষণা করতে হবে। যদি তাতে কিছু সান্ত্বনা পাওয়া যায়!
আমার খুব ঘুম পেয়েছিল, বড়ভাইর ডাকে চমকে উঠলাম!
ঘুমায় পরছিলি নাকি?
কই না!
নাক ডাকায়া ঘুমালি আবার বলিস...
বস দারুণ একটা স্বপ্ন দেখলাম।
কী?
আপনি আর সেই তান্নি ঘুম সুন্দর একটা পার্কে বসে বাদাম খাচ্ছেন, গান গাইছেন...
তান্নিটা কেরে?
বস আমার কেউ না! আরে আপনে যে মেয়েটারে চয়েস করলেন! ওইটাইতো।
ও! নাম যোগাড় করে ফেলেছিস?
শুধু নাম? আরও কতো কি?
তা এসব না বলেই ঘুমে গেলি কেন?
আগে বললেতো আর এই গানটা যোগ হতো না। উফ কী সুন্দর!
শোন এসব বাস্তব হওয়া অতো সহজ না। তুই ঘুমানোর আগে ভিডিওগুলো দেখলিতো! তাই স্বপ্নেও সেগুলো .........
এখন শোনেন বস, আমি কিন্তু মেয়েটার বাসায় যাবো। আর কি কি তথ্য লাগবে তাই বলেন।
আপাতত আর কিছু দরকার নাই। তুই এককাজ কর যে কোনওভাবে মেয়েটার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি কর....সুবিধা বুঝে আমারে ইন করাবি.....
তার জন্য কিছু খরচপাতিও লাগতে পারে....
আরে চিন্তা করিস না...
এদিকে মেয়েটা ওর বাসায় গিয়ে বলে ঘটানাটা।
মা একটা কাণ্ড হইছে,
কি?
আরে একটা ছেলে ডিশ এর লাইনের কাজ করে, ডিশ এর লাইন নেবো কি না জিজ্ঞেস করতে আমার কোচিং এ গিয়েছিল। আজব না। ওদেরও মার্কেটিং করা লাগে।
তা কী বললি?
আমি ভাবলাম ছোট মামা বুঝি এসছে, আচ্ছা মা ছোট মামার না আজকে আসার কথা ছিল?
হয়ত কোনও সমস্য হইছে।
ফোন দিছিল?
না, রাতেও আসতে পারে।
ফোন দিয়ে দেখি, রওনা হলো কি না!
তোরটা দিয়ে দে......
আচ্ছা!
শোন তোর আগ্রহ দেখে কিন্তু আমার ভয় লাগতেছে, পড়াশুনাতো মনে হয় গাছে উঠবে।
আরে এতো ভাইব নাতো। আমি এখন বড় হইছিনা।
হ্যালো মামা! মামা!
ও নানী? তারমানে এখনও রওনা হয় নাই? ধুর! নানী রাখি?
আরে রাখলি কেন? তোর নানীর সাথে একটু কথা বলতাম!
দেখলে মামা রওনা হয় নাই, কেমনে বুঝলি?
রওনা হলে ফোন বাসায় থাকত?
তোর নানীও আসতে পারে,
হ, তাইলে গাড়ির শব্দ শুনতাম না! ধ্যাত!
পড়তে বসে টেবিলে।
পদার্থ বিজ্ঞান।
ফোন আসে
হ্যালো!
হ্যালো! তান্নি বলছেন?
হ্যা বলছি আপনার জন্য একটা খবর আছে! আপনি কি সুস্থ আছেন?
এ কী ধরণের কথা বলছেন এমনভাবে কথা বললেতো সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাবে।
বলেন কার কী হয়েছে?
না তেমন কিছু না। আচ্ছা মুনিয়া আপনার কে হয়? আত্মীয় না বান্ধবী?
কেন বলুনতো ওর কি কিছু হয়েছে?
না আসলে হয়েছি কি, বুঝতে পারছি না আপনাকে কথাটা বলা ঠিক হবে কি না। বাসায় এখন অনেক মানুষ, কে কী করছে কোনও ঠিক নেই। ওর ফোনটা আমার হাতেতো তাই ভাবলাম সবাইকে ফোনে একটু...
আচ্ছা ফানি কিছু নাকি সিরিয়াস?
মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে। অবশ্য এখনও নিশ্চিত না, এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা!
হোয়াট! কী বলছেন? কবে? আজই। এখনও লাশ সরানো হয়নি। পুলিশের সাথে দেনদরবার চলছে। আপনি কি আসবেন?
আমি হ্যা আমি আসছি...
মার কাছ থেকে অনুমতি পায় না। কল্পনা করে মুনিয়ার সঙেগর স্মৃতিগুলো। কোথাও আত্মহত্যার কোনও লক্ষণ আছে কি না আর ক্লু পাওয়া যায়কি না।
কিন্তু তান্নির কিছুই ভালোলাগছে না। মায়ের সাথে ঝগড়া করে।
আমার বান্ধবী মারা গেছে, তুমি ওকে কতো বলেছ ও তোমার মেয়ের মতো...তাকে আমি একটু দেখতে যেতে পারবো না?
এখনতো রাত যাবি কী করে? কার সাথে যাবি?
আমি যাবো এটাই জানি, দেখি তনুদি যায়কি না তাকে নিয়ে যাবো। আমি গেলাম মা....
বলে ড্রেসটা চেইঞ্জ করে বের হয় তান্নি। আশ্চর্য মেয়েদের মন! বান্ধবীর ফিলিংসটা যেমন তেমনি ঘরের ড্রেসটা চেইঞ্জ করতেও ভোলেনি।....
রাস্তায় নেমে কোনও রিকশা চোখে পড়ল না। হাটতে থাকে রিকশার আশায়। হঠাৎ দেখা হয় ডিশের ছেলেটির সাথে, ডাকতে গিয়ে খেয়াল হয় নামটা মনে নেই, এই যে ডিশ ভাই...ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, এই যে...
কে যেন তুমি?
আমি তান্নি
কোন তান্নি? দীপার বান্ধবী?
মেয়েটা ঢোক গেলে। সেদিন কোচিংএ কথা হলো, ....আর এখন চিনতেও পারছে না?
না মানে আপনি আমাদের বাসায় আসতে চেয়েছিলেন ডিশের লাইন নিয়ে দেবেন বলে...
কথা বলতে বলতে একটু কাছাকাছি আসাতে আবছা আলোটা আরও স্পষ্ট হয়। রাস্তার আলোতে চেনা যাচ্ছিল না। এবার চিনেতে পারে।
ওও আপনি?
কেমন আছেন? লাইন কি লাগবে?
আরে হ্যা তাতো লাগবেই কিন্তু এখন একটা উপকার করতে পারবেন?
বলুন কী করতে পারি? ছেলেটার ভাব এমন যেন ধন্য হয়ে গেছে।
না মানে আমার এক বান্ধবী মারা গেছে আমি ওকে দেখতে যাবো। একটা রিকশার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়?
রিকশার ব্যবস্থা করা যাবে, কিন্তু শুধু রিকশা দিয়ে কী করবেন? চালাবে কে?
কেন রিকশার চালক নেই?
আমাদের বস্তিতে একটা রিকশা আছে, ড্রাইভার গেছে বোনের বাড়ি রিকশাটা দুইদিন পড়ে আছে।
তাইলে আর হলো কি!
আচ্ছা এখানে এখন রিকশা নেই কেন?
এই এলাকাটা ভিআইপিতো এখানে যারা থাকে সবারই প্রায় নিজেদের গাড়ি থাকে। দিনের বেলা ভাড়া পাওয়া গেলেও রাতে কেউ থাকে না রিকশায় চড়ার মতো। কতদূর গেলে পাওয়া যাবে?
রামপুরার আগে পাবেন বলে মনে হয় না। তবে মেইন রাস্তা পর্যন্ত আমি পৌঁছে দিতে পারি। এক আধটু চালাতে পারি। একেবারে খারাপ না। বলে একটা রিকশা বের করে আনে।
ওঠেন
মেয়েটা কাচুমাচু করে ওঠে।
ছেলেটা চালায় আর বলে, রাস্তা ফঁকাতো রিক্স কম।
আপনি লেখা পড়া শিখেছেন না?
তেমন না।
শুধু ডিশের লাইনের কাজ করে জীবন চলবে?
জীবন আর কি? কয়দিনের? মরলে সব পঁচে ভুত।
আর রিকশা চালানোটাও শেখা আছে কাজে লাগবে। তবে এই রিকশা চালানো শেখার একটা কারণ আছে
কী কারণ?
সেটা আজ বলবো না, আরেকদিন।
ওর বাসা কিন্তু সি ব্লকে। সামনে গিয়ে বামে.......
সত্যি মানুষে মানুষে ভরেগছে বাসাটা। পুলিশের উপস্থিতিও অনেক । টি.ভি সাংবাদিকরাও আছে।
তান্নি অনেক কষ্টে ভিড়টির ঠেলে ভিতরে যায়। সেখানে একজন সাংবাদিক মুনিয়ার মাকে প্রশ্ন করছে আপনার মেয়েকি আত্মহত্যা করেছে নাকি এটি কোনও হত্যাকাণ্ড? আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মেয়ে না....
কান্নায় ফেটে পড়ছে মা....অন্যরাও কাঁদছে। সাঙবাদিক বলে একটু এদিকে আসলে ভালো হয়, লাশটার পাশে বসে কাঁদলে ভালো হতো। বলে রিকোয়েস্ট করে নিয়েও এলো লাশের পাশে। মহিলাকে একেকটি প্রশ্ন করছে আর মহিলা কাঁদছে আর বলছে। রিপোর্টাররা বিভিন্ন ভাবে শট নিচ্ছে। যার যেভাবে লাগছে সেভাবে করে নিচ্ছে।
তান্নির দেখে খুব অসহ্য লাগে। এরা কি মানুষ? কেমন নিস্পৃহভাবে সবকিছু করে যাচ্ছে। এদের কি বাপ মা ভাইবোন নেই? এমন ফিলিংস ছাড়া?
হঠাৎ তান্নিকে দেখতে পেয়ে হামলে পড়ে মুনিয়ার মা ওরে তানি রে তোর মুনিয়াতো আরে নাই রে...............
তান্নি জড়িয়ে ধরে, কাঁদে শব্দকরে কাঁদে। আপনজন হারাণোর কান্না কোনও বাধ মানে না।
রিকশাটা রেখে ওও ভিতরে ঢোকে, ওর চোখ প্লাবণে ভরে যায়। কাঁদতে কাঁদতে তান্নি প্রায় বেহুঁশ হয়ে যায়, ও আর স্থির হতে পারছে না। মুনিয়ার বোন, ভাগ্নিদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়লো।
এই কে কোথায় আছো, এই মেয়েটা আসছে কার সাথে ওকে একটু ধরো...
লোকটার গলা বেশ চড়া। ছেলেটা শুনতে পেয়ে চমকে গিয়ে বলে আমি আমার সাথে আসছে। তান্নি প্রায় রে ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রিকশার কাছে আসে। কিন্তু ওকি পারবে একা বসতে?
মেয়েটাকে নিচে বসিয়ে পানি খুঁজে আনে। হাতে মুখে দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক করে। মেয়েটা ধাতস্থ্ হয়ে বলে আমি আরেকটু থাকবো...মুনিয়ার সঙ্গে আমি আরকেটু থাকবো....মাথাটা ধরে রাখে। একটু একটু করে কথা বলে মেয়েটা। হঠাৎ চোখ পড়ে একটা ক্যামেরাম্যানের উপর। ছেলেটার চোখে পানি দেখে ওর মাতাল ভাবটা একটু কমে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৯ রাত ৯:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




