somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূনকে তারা ক্ষমা করবে না![/sb:‘লীলাবতী কাউকে মাফ করবে না তার প্রতি অবিচার করায়।’

২১ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশের বায়ু স্তম্ভিত হয়ে গেছে। সর্বত্র যেন কান্নার রোল পড়ে গেছে। সবাই কাদছে। ফেবু থেকে সামু সবার চোখে জল। কিন্তু সেই জল আমাদের একান্ত ভালবাসার।
ভালাবাসা আছে বলে আমরা তাকে স্মরণ করছি প্রোফাইল পিক. চেঞ্জ করে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে যারা কাছ থেকে দেখেছে যার আদরে বড় হয়েছে তারা কি কখনো কেঁদেছে। তাদের কি কোন অভিমান ভেঙ্গেছে।তারা কি হুমায়ূন আহমেদকে মাপ করবেন নাকি তারা মাপ পােইবেন?
এইসব জটিল প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে কয়েকটি সূত্র দাবী করছে হুমায়ূন আহমেদকে তার গুলতেকিন পরিবার ক্ষমা করবে না। পিতার আদর বঞ্চিত ৪ সন্তান কেবল অভিমানের আবডালে রয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ কিংবদন্তিতুল্য একজন শিল্পী। লেখনিতে সহজ সাবলীল ভাষা ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রাম বাংলা থেকে তুলে আনা সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাষাশৈলী আর ঝরঝরে উপস্থাপনা মানুষ নিজের বলে গ্রহণ করেছে। অপরিসীম রসবোধের অধিকারী এই মানুষটি অন্য ভুবনের বাসিন্দা হয়ে গেলেন।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু খবরটি শোনার পরপরই মনে প্রথম ভেসে উঠেছে মা আয়েশা খানমের মুখ। তার বড় সন্তান হুমায়ূন আহমেদ। বড় সন্তানেরা মায়েদের মনের আলাদা জায়গা দখল করে থাকে। বৃদ্ধা মা আয়েশা খানম মুক্তিযুদ্ধে স্বামী শহীদ হওয়ার পর কতই না যাতনা সহ্য করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। অসীম মানসিক শক্তিবলে ছয় সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থেকেছেন। তার প্রত্যেকটা সন্তান নিজেদের পেশায় সফল একেকজন মানুষ। সন্তান হারিয়ে আয়েশা খানমের এখন যে মনের কঠিন অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মায়ের আগে সন্তানের মৃত্যুতো কোনো মায়ের কখনোই কাম্য না।

২৮ বছর ঘর করেছেন প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে। জীবনের দীর্ঘ সময় আনন্দ-বেদনার সাথী ছিলেন তারা দু’জন। হুমায়ূনের প্রথম জীবনের ভালোবাসা ছিলেন স্ত্রী গুলতেকিন। তার সেই কৈশোর বয়সে হুমায়ূন তাকে বিয়ে করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনী সমগ্র ‘ আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ বইটি পড়ে এই দম্পতির কতশত রাগ-অনুরাগের সাক্ষী হয়েছি আমি! আর কতবার যে বইটি পড়েছি গুণে বলতে পারবো না। তাদের আনন্দঘন জীবনের নানা খুনসুটি আমাকে আপ্লুত করতো।

হুমায়ুনের মৃত্যু খবর জানার পর হঠাৎ মনে পড়লো গুলতেকিনের কথা। মানুষ তার কর্মক্ষেত্রের পদবি হারিয়ে সাবেক হতে পারেন। ভালোবাসা কি কখনো সাবেক হয়ে যেতে পারে? এক জীবনে কাটানো আনন্দ হাসির মধুর সময় কি পুরোটাই মন থেকে মুছে যেতে পারে! জীবনের টানাপোড়েন মোকাবেলা করতে করতে এই দম্পতি দুজন দুজনের থেকে একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। হুমায়ুনের জীবনে শাওন এলেও গুলতেকিন এখনো একা। একসময়ের খুব কাছের এই মানুষের মৃত্যুতে কেমন বোধ করছেন গুলতেকিন! খুব জানতে ইচ্ছা করে।

গুলতেকিনের ঘরে হুমায়ুন আহমেদের তিন মেয়ে আর এক ছেলে আছে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে-মেয়েরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাবার কাছ থেকে। বাবার সঙ্গে কিছু ব্যাপারে নৈতিক দ্বন্দ্ব থেকেই সন্তানদের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছিল ক্ষোভ অভিমান। সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বাবা তাদের হয়তো খোঁজ খবর নিতেন, হয়তো বা না। আবার উল্টোটাও হতে পারে। মেয়েরাই হয়তো বাবাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। সে যাই হোক, এই বিষয়টা এখানে একদমই প্রাসঙ্গিক না।

হুমায়ূন আহমেদের ক্যানসার ধরা পড়ার পড়ে তার দখিন হাওয়া অ্যাপার্টমেন্টের বাসায় স্বামী ও সন্তানসহ মেয়েরা বাবাকে দেখতে এসেছিল। অনেকদিন পর তিনি আপনজনদের কাছে পেয়ে আনন্দে ভেসেছিলেন। আর এই বিষয়টিকে হুমায়ূন আহমেদ তার কর্কট রোগের সিলভার লাইনিং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্যানসারের চিকিৎসার্থে নিউ ইয়র্ক অবস্থানকালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ নিউ ইয়র্কের আকাশে ঝকঝকে রোদ’ শিরোনামে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক লিখে গেছেন হুমায়ুন আহমেদ। সেখানে তিনি মেয়েদের সঙ্গে তার বর্তমান সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ করেছেন নাতি-নাতনিদের কথা, যাদেরকে ঠিক সেদিনের আগে কখনো দেখেননি। দখিন হাওয়ার বাসা তার নাতি-নাতনিদের জন্য নিষিদ্ধ করায় এবং দীর্ঘদিনের অদেখা থেকে মনে মনে মেয়েদের প্রতি কিছুটা অভিমানও করেছেন।

হুমায়ুন আহমেদের মেয়েরা সবাই প্রচণ্ড মেধাবী। এটা নিয়ে তিনি গর্ব করতেন। খুবই স্বাভাবিক। মেয়েরা তার জিন পেয়েছে বলেও মজা করেছেন। কিছুটা অভিমান থেকেই বলেছেন-মেয়েরা তাকে পছন্দ না করলেও তার জিন মেয়েদের সারাজীবন বহন করতেই হবে।

বাবা-মেয়ের ভেতরের অভিমান ছিল দু’তরফা। মা গুলতেকিনকে বঞ্চিত করে মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মতো বাবার নৈতিক স্খলন মেয়েদের পক্ষেও মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমার তিন কন্যাই দূরদ্বীপ বাসিনী। ওরা এখন আমাকে চেনে না, হয়তো আমিও তাদের চিনি না। কি আর করা! কে সারা সারা! তারপর মেয়েদের উদ্দেশ্যে এডগার এলান পো’র কবিতার কয়েকটি লাইন উৎসর্গ করেছিলেন।

‘ফ্রম এভরি ডেপ্থ অব গুড অ্যান্ড ইল
দ্য মিস্ট্রি হুইচ বাইন্ডস্ মি স্টিল
ফ্রম দ্য টরেন্ট অর দ্য ফাউন্টেন
ফ্রম দ্য রেড ক্লিফ অব দ্য মাউন্টেন
মাই হার্ট টু জয় এট দ্য সেইম টোন
অ্যান্ড অল আই লাভড্, আই লাভড্ অ্যালোন।’ (এডগার এলান পো)

ভাবছি দীর্ঘদিনের অভিমান কি ভাঙতে পেরেছে হুমায়ূন আহমেদের মেয়েরা! বাবার সাথের তাদের ছেলেবেলার সব স্মৃতি কি একেবারে বিস্মৃত! কেমন বোধ করছে ওরা! বাবার মৃত্যুর খবরে বুকের পাঁজর ভেঙে কি তাদের কান্না উথলে ওঠেনি! খুব জানতে ইচ্ছে করছে!

হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার পর পুরো পরিবার বিশেষ করে ভাইবোন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ধীরে ধীরে অবশ্য সবাই পরিস্থিতি সামলিয়ে নেন। শাওনের প্রথম কন্যা সন্তান যখন মারা যায় তখন পরিবারের কেউ তাকে দেখতে না যাওয়াতে হুমায়ূন আহমেদ খুব অভিমান করেছিলেন। শাওন সেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন লীলাবতী। হুমায়ূন আহমেদ পরিবারের প্রতি অভিমান করে বলেছিলেন, ‘লীলাবতী কাউকে মাফ করবে না তার প্রতি অবিচার করায়।’

সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রেই আত্মাভিমানী। অভিমান করে বড্ড অকালেই তিনি চলে গেলেন। তাকে আরো অনেকদিন পর্যন্ত আমাদের দরকার ছিল। হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টিকে সব ধরনের মানুষের উপযোগী করে রেখে গেছেন। বই পড়াকে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। বই শুধু যে গুরু গম্ভীর এবং শুধুই জ্ঞানদায়ক বিষয় না সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। যেখানেই থাকুন তিনি ভালো থাকুন। (তথ্য সংগৃহিত)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১৪
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×