somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যখন UN মিশনে ছিলাম : পর্ব –৫

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুল লেখকঃ কমান্ডার হাসান জামান খান

দিনটি শুক্রবার ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃরাশ সেরে অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময়ে আফ্রিকান গৃহপরিচারিকা ফাতু এসে হাজির। বিনম্রভাবে জিজ্ঞেস করলো “মসিও, কে্ত ছে কি ভু প্রেফারেয মজে পেন্দান লে দেজুনে? (Monsieur, Qu'est-ce que vous préférez manger pendant le déjeuner? অর্থাৎ, স্যার, দুপুরে কি খেতে পছন্দ করেন ? ) এই সাধারন কথাটা বাংলায় জিজ্ঞেস করলে কি আর এত বড় বাক্য প্রয়োজন ছিল? ভাত, সবজি, ডাল আর মাছ এই কথা প্রায় পনের মিনিট ধরে বুঝাবার পর জবাব দিলো “কম্প্রি” (অর্থাৎ বুঝেছি) । জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশী রান্না জানো? মুচকি হেসে “উই মসিও, জো কনে” (হ্যাঁ স্যার, আমি পারি)। আমার পূর্বে এখানে যে বাংলাদেশী অফিসার ছিলেন হয়তো তাঁর কারনেই বাংলাদেশী রান্নার উপর ফাতুর এতো আত্মবিশ্বাস। ইউ এন এর গাড়ী নিয়ে নিশ্চিন্তায় অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। পাহাড় ঘেঁষা উচু নিচু রাস্তার অর্ধেক কাঁচা আর অর্ধেক পাকা। রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল বলে চলার পথ একদম পিচ্ছিল ছিল। সাবধানে গাড়ী চালাচ্ছিলাম। যদিও ঐ রাস্তায় গাড়ী চালাতে হলে ২০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতি ছাড়া কোন উপায় নেই। আমার দুপাশ দিয়ে প্রায় সব বয়সের নারী-পুরুষ মহাআনন্দে ৫০ সি সির মটরসাইকে্ল নিয়ে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলছিল। এ শহরের শ্রেষ্ঠ বাহন যে মটর সাইকেল সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ রইলো না। বাসা থেকে আফিস প্রায় ৫ কিলোমিটার। নাইজেরিয়ান ব্যাটালিয়ানের এলাকাতে অফিসের অবস্থান । নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমন বাবস্থা। টীম সাইটে হাজির হয়ে প্রথমেই অন্যান্য অফিসারদের সাথে নিজেকে পরিচিত করে নিলাম। তারপরঃ ভারত, উরুগুয়ে, মলদোভা, রুমানিয়া, নাইজেরিয়া, চাদ, ইয়েমেন, জর্ডান, রাশিয়া এবং টোগো এই ১০ দেশের অফিসারের সাথে কাজে যোগ দিলাম। । ১৯৯৩ সনে প্রতিবেশী দেশ লাইবেরিয়াতে এরকম এক সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তাই হঠাৎ করেই পুরনো সৃতি মনে পড়ে গেলো। সে ছিল এক দারুন অভিজ্ঞতা। যাক গে, সে কথা। আইভরি কোস্ট জুড়েই বাংলাদেশী অফিসারদের খুব প্রশংসা । বাংলাদেশীদের সবারই খুব পছন্দ। সে ভিন দেশী অফিসারই হোক আর আইভরিয়ানিই হোক। আইভরিয়ান লোকজনতো বাংলাদেশী দেখলে সারাক্ষণই বাংলা গুড, বাংলা গুড বলে স্লোগান দিতে থাকে। এ যেন নিঃস্বার্থ আত্মচিৎকার। যাই হোক, টীম সাইটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে সকাল ১০ টায় গাড়ী নিয়ে বের হলাম দূর এলাকায় টহলের জন্য । সাথে মালদোভার অফিসার মেজর আনদরে তারাণূ। মাটির পথ চলতে চলতে ভাবছিলাম একই দেশের কত যে রূপ। এ চিত্র নিজ চোখে না দেখলে বোঝা বড় দায় ? কোথায় আবিদজান আর কোথায় ফেরকেসদুগু । আবিদজানের সর্বত্রই ফরাসীদের হাতের ছোঁয়া । সাজিয়েছে নিজের মত করে। যেন ফ্রান্স থেকে ছোট্ট একটি শহর নিয়ে এসে বসিয়ে দিয়েছে আইভরি কোস্টে। ভালবেসে যার নাম রেখেছে আবিদজান । ৮০ মাইল যেতেই রাস্তার দুধারে সে এক অপরূপ দৃশ্য, অনেক দূর পর্যন্ত সাড়ি সাড়ি কোকো আর পাম গাছ । এ যে পরিকল্পিত রোপণ ছিল তা দেখেই বোঝা যায়। জীবনে এই প্রথম কোকো গাছ দেখেতো আমি খুবই উত্তেজিত। মনে মনে ভাবছিলাম আর যাই হোক এবার অন্তত চকলেটের সাধ মিটবে। তবে দুঃখ পেলাম যখন জানলাম এ দেশে কোকো চাষ হয় ঠিকই কিন্তু তা চলে যায় বিদেশের মাটিতে। পরে চকলেট হয়ে আবার ফিরে আসে এ দেশেই আর বিক্রি হয় চড়া দামে। মিশনে এসে আবার চকলেট, সাধ কতো ? কল্পনার জগতে একাকী হাসছিলাম। সফরসঙ্গীর সাথে আলাপচারিতা করতে করতে এক পর্যায় পৌঁছে গেলাম পাহাড়ি গহীন জঙ্গলের ছোট এক গ্রামে। বাড়ীর দরজায় গাড়ী থামাতেই দেখি প্রায় তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী দশ-বারোজন ছেলে মেয়ে খালি গায়ে বাড়ীর উঠানে খুব মজা করে খেলা করছে। সামরিক পোষাকে আমাদের দেখেই দে দৌড়। সে কি দৌড়। এ যেন জীবন রক্ষায় আপ্রান চেষ্টা। সাথে কিছু চকলেট আর বিস্কুট নিয়েছিলাম বলে রক্ষা, বের করে দেখাতেই একজন দুজন করে আবার ফিরে আসতে লাগলো। তবুও তাঁদের চোখে মুখে ভীতির ছাপ। কাছে ডেকে যখন আদরের ছোঁয়া বুলিয়ে দিলাম তখন ওদের মুখের নিষ্পাপ হাসি ফুটলো । চকলেট হাতে পেয়ে তো মহাখুশি। অপালক দৃষ্টিতে ওদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম আর মনে প্রাণে উপভোগ করছিলাম শিশুদের আনন্দ- ফুর্তি। দেরী না করে ক্যামেরা বন্ধী করলাম মুহূর্তটাকে । এরই মধ্যে কুড়ে ঘর থেকে সত্তর ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে আঞ্চলিক ভাষায় কি যেন বলল। ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে মনে হলো আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি হলেন গ্রামের প্রধান। ঐতিহ্য অনুযায়ী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ বাক্তি হন “গ্রাম প্রধান”।আমাদের বসার বাবস্থা নিতে বলা মাত্রই সুঠাম দেহের মধ্যম বয়সী আরও দু – তিনজন লোক সাথে একটা বেঞ্চ নিয়ে বেরিয়ে এলো । বসার অনুরোধ জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো, পানি খাবেন মশাই? ধন্যবাদ জানিয়ে আসন গ্রহণ করলাম। তারপর অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা । মানুষগুলোকে দেখে খুব সহজেই আনুমান করা যায় যে এদের জীবনের চাহিদা খুবই কম। জীবিকার সন্ধানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাটা দিন গ্রামের মানুষগুলো বাস্ত থাকে গহীন জঙ্গলে, হয় গাছ কাটা না হয় কৃষি কাজ অথবা বিশাল সবুজ মাঠে গরুর পাল নিয়ে। অনেকেই গাছ কেটে নিজ বাবস্থায় তৈরি করে কয়লা আর বিক্রি করে জ্বালানি হিসাবে। এছাড়া মাঠের ফসল আর ফলফলাদি বিক্রি করে যে কয় ছাফা (এ দেশের মুদ্রার নাম ছাফা) অর্জন করে তা দিয়েই পেটের চাহিদা মিটায়। তাই বলে এদের সম্পদের কোন অভাব নেই । হীরা, সোনা কি নাই এ দেশের মাটির নীচে !

পূর্বে প্রকাশিত “আমার ডায়েরীর পাতা থেকে” নামে

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব –
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×