বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধ-বাসিনী’ পড়ার আগে প্রস্তুতিমূলক একটা প্রবন্ধ পড়া দরকার। তা হলো- আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানদের মন’। বাস্তবে বাঙালি মুসলমানদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে অনেক ধীরে। অজ্ঞতার অন্ধকার তাদের জীবন থেকে দূর হয়নি দীর্ঘদিন। এরফলে সংস্কারের বদলে কুসংস্কারকেই তারা ধর্মীয় বিধি হিসেবে মেনে চলতো...আর বলপূর্বক কিছু বিধান মানুষকে মানানোর চেষ্টা করতো...এর সবচেয়ে বেশি শিকার হতেন নারীরা...বেগম রোকেয়া কতগুলো অণু গল্পে এসব বিরণই তুলে ধরেছেন। তবে কেবল মুসলমানদের গোঁড়ামিগুলোই তিনি তুলে ধরেননি অন্যান্য ধর্মেরও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণগুলো তুলে ধরেছেন।
১২ নং গল্পে তিনি তুলে ধরেছেন, ‘পশ্চিমদেশের এক হিন্দু বধূ তাহার শাশুড়ি ও স্বামীর সহিত গঙ্গাস্নানে গিয়াছিল। স্নান শেষ করিয়া ফিরিবার সময় তাহার শাশুড়ি ও স্বামীকে ভিড়ের মধ্যে দেখিতে পাইলো না। অবশেষে সে এক ভদ্রলোকের পিছু-পিছু চলিল। কতক্ষণ পরে পুলিশের হল্লা- সেই ভদ্রলোককে ধরিয়া কনস্টেবল বলে, ‘তুমি অমুকের বউ ভাগাইয়া লইয়া যাইতেছ।’ তিনি আচম্বিতে ফিরে দেখেন : আ-রে এ কাহার বউ পিছন হইতে তাহার কাছার খুঁটি ধরিয়া আসিতেছে! প্রশ্ন করায় বধূ বলিল, সর্বক্ষণ মাথায় ঘোমটা দিয়া থাকে- নিজের স্বামীকে সে কখনও ভালো করিয়া দেখে নাই। স্বামীর পরিধানে হলদে পাড়ের ধুতি ছিলো...তাহাই সে দেখিয়াছে, এই ভদ্রলোকের ধুতির পাড় হলদে দেখিয়া সে তাঁহার সঙ্গ লইয়াছে।’
এমন গোড়ামি মুসলমানরাও করেছে। তবে নারীদের শিক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ না করাটাই প্রমাণ করে তারাও অজ্ঞ ছিলেন। ইসলাম জ্ঞানার্জনকে নারী-পুরুষ সকলের জন্য ফরজ (আবশ্যক) করেছে...আর এর পরিধি বলে দেয়া আছে, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত...
এজন্য দোষ ধর্মের না, দোষটা অজ্ঞ মানুষের...কোরআনে প্রথম যে কথা এসেছে তা হলো- ‘পড়ো তোমার প্রভূর নামে...’ মানুষকে একটা নিরপেক্ষ মন নিয়ে পড়তে হবে এরপর ভাবতে হবে...তারপর ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে...আগে ভালো করে জানা তারপর মানার প্রশ্ন...জানার কোন আগ্রহ নেই অথচ কিছু একটা মানা হচ্ছে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯