somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাসেম-হ্যাপি-এএফপি ও আমরা

২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




যাকে নিয়ে আমরা আলোচনার প্রয়োজন বোধ করিনি সেই কাসেম বিন আবু বাকারকে আলোচনায় তুলে দিল বার্তা সংস্থা এএফপি! চললো তুমুল আলোচনা-শোরগোল। অনলাইনে তুমুল লড়াই শুরু হলো পক্ষে-বিপক্ষে। আমার মত যারা কাসেম বিন আবু বাকারের কোনো বই পড়েনি তারাও খুঁজতে শুরু করলো তাঁর বই। শেষ বয়সের স্বীকৃতিস্বরূপ টেলিভিশন লাইভ থেকে শুরু করে সবরকম কাভারেজ পেলেন তিনি। তার নিজস্ব পাঠকগোষ্ঠী তো আছেই!

যারা তার তুমুল সমালোচনা করলেন তাদেরকে কোনোদিন তাকে নিয়ে আলোচনাও করতে দেখিনি! আমার অজ্ঞ মন বিবেকের কড়া নেড়ে বললো- ভিনদেশি মিডিয়া আমাদের বলে দিল কোন বিষয়গুলো আলোচনায় আসা দরকার! একটা চলমান স্রোতধারাকে ধারেকাছে না গিয়ে উপেক্ষা হয়তো করা যায় কিন্তু অগ্রাহ্য করা যায় না!

কাসেম বিন আবু বাকার নিজের মুখেই বললেন, ‘আমার আছে ১০ টাকা এর থেকে বেশি দেবার সামর্থ আমার নেই!’ নিজের অযোগ্যতাকে প্রকাশ করেই কথা বললেন তিনি। জীবনের পড়ন্তবেলায় মিডিয়া কাভারেজ তাকে খুশি করলো। শিক্ষা দিল আমাদের! সমাজ তথা সাহিত্যের একটা জগৎকে আমরা স্বীকারই করতে চাই না। অথচ ভিনদেশিরা লজ্জা দিয়ে আলোচনার ধারা দেখিয়ে দেয়। একটা বিদেশি বার্তা সংস্থা একটু উসকে দিয়েই আমাদের মুখ থেকে কতগুলো আলোচনা করিয়ে নিলো। কতগুলো লেখা লেখিয়ে নিল। গণমাধ্যমকেও প্রভাবিত করলো গণমাধ্যমই!

এএফপি যা বোঝাতে চেয়েছে তা হলো- বাংলাদেশে সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র ধারা আছে এ ধারারও বহু পাঠক আছে। যাদের সামনে দেখা যায় তাদের পেছনেও কাসেমের মত তারকা আছে!


এএফপি টার্গেট কাসেম সফল। ‘ফুটন্ত গোলাপ’ এর আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই ‘হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটির আলোচনা। বইয়ের বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে যদিও এর আলোচনা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এএফপি উসকে দেয়ার পর শুরু হয় আরো তুমুল আলোচনা।

কটাক্ষপ্রেমীরা বোধকরি হ্যাপির এমন পরিবর্তন মেনে নিতে নারাজ! রুবেলের থেকে যেমন প্রতারণা পেয়েছে তেমন আরো ১৫-২০ জন পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করে ‘বঞ্চিত’ হয়ে যদি সে একজন কট্টর নারীবাদী হতো কিংবা দ্বিতীয় কাতারের নায়িকা থেকে শরীর বিলাতে বিলাতে প্রথম কাতারে চলে আসতো তাহলেই বোধকরি ভালো হতো। তারা কুমিরের কান্না কাঁদতো তখন যখন সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কিংবা লাইভে এসে আত্মহত্যা করতো!

হ্যাপি আসলে সৃষ্টিশীলতার জগতে উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রেখেছে তা নয়! বলা চলে অনৈতিকতার পথ থেকে নৈতিকতার পুরনো পথে সে ফিরে এসেছে। কনভার্টা না এটাকে রিভার্ট বলে! সেন্টিমেন্ট ব্যবসায়ীরা সেটা তাৎক্ষণিক কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে নিল। হ্যাপির এ পরিবর্তন তাকে হয়তো জীবনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁবলের হাত থেকে রক্ষা করেছে। না হয় মামলায় পরাজিত হয়ে সে নিজেই ক্ষান্ত দিয়েছে ওপথে আর নয়! তাকে তার মতই থাকতে দেই। কিছুদিন পর হয়তো ক্রিকেটার আরাফাত সানির কারণেও তারকা হবে নাসরিন! চলচ্চিত্র জগতের হাতছানিকে তোয়াক্কা না করে অনেকেই একটা ভিন্ন জীবন বেছে নিয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে কেউ নেয়নি। পাড়ি জমিয়েছে প্রবাসে। শাবানাও তো আজ এ জগৎ ছেড়ে অনেক দূরে।

যাহোক এএফপি প্রমাণ করতে সফল হয়েছে বাংলাদেশে ধর্মাশ্রয়ীরা একটি স্বতন্ত সাহিত্য ধারা তৈরি করেছে। তাদের ভাষায় বাংলাদেশ একটি কট্টর মৌলবাদী দেশ! এর দু’টি বড় বড় প্রমাণও তারা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বেস্টসেলার হয়েও গণমাধ্যমের তালিকায় আসেনি!

আমার কাছে একজন জানতে চাইলো- কাসেম বিন আবু বাকারের পাঠক আছে কিন্তু হ্যাপির বইয়ের পাঠক কারা? বললাম, ওই একই পাঠক!মাদরাসা শিক্ষার্থী কিংবা যারা সবকিছুতে ধর্ম সন্ধানী তারাই এ বইয়ের পাঠক। তাদেরই বালিশের নিচে পাবেন হ্যাপির বইও।

তার মানে বাংলাদেশের পাঠকরা বিভক্ত! বাংলাদেশে দু’টি ধারায় সাহিত্যচর্চা হয়। এ জাতি ধর্মাশ্রয়ী। এ বিভক্তি আজকের নয়- ইসমাইল হোসেন সিরাজীকেও অনেকে বঙ্কিম চন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন এর একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতাও আছে। আহমদ ছফার লেখা ‘হাজার বছরের ফেরারি বঙ্কিম’ প্রবন্ধ পড়লে আরো অনেক কিছুই জানা যাবে। অন্যদিকে তাঁর ‘বাঙ্গালি মুসলমানের মন’ পড়লে আরো ধারণা পাওয়া যাবে যে ‘বিষাদসিন্ধু’ ইসলামের ইতিহাস আশ্রিত কল্পকাহিনি ছাড়া আর কিছুই নয়! মহাভারতের অর্জুনের একটা প্রতিপক্ষ হিসেবে ইমাম হোসেন চরিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। ইসলামি ইতিহাসের সাথে যা সাংঘর্ষিক। কিন্তু ওই সাহিত্য দু’টি ধারাকে চিহ্নিত করে। ওই ধারা দু’টির মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটলেও এখন একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যধারার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধারা সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। অন্যের উসকানিতে আর কত আমরা কী নিজেরা সচেতন হতে পারি না? আমাদের কাছে কী আমাদের ধর্মীয় ধারণা পরিষ্কার (কনসেপ্ট ক্লিয়ার)? না আমরা একটি বিষয়কে কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে লোকলজ্জার কারণে মেনে চলেছি? না কি আমাদের আরো অধ্যয়ন প্রয়োজন নিজের স্বকীয়তা সম্পর্কে জানার জন্য?

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×