২০০৯ সালের প্রথম দিকের সময়। আমি তখন সৌদিআরবে চাকরী করি। বাড়িতে প্রায় দৈনিক কথা হত। নাফ্‌সি তখন কথা বলার চেষ্টা করছে। নাফ্‌সি হলো আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে। মা বা ভাবির সাথে কথা হলে প্রায়ই বলতেন, নাফ্‌সি চাচ্চুর সাথে কথা বলো। আর আমি এপাশ থেকে জিজ্ঞেস করতাম, নাফ্‌সি কেমন আছো আম্মু? কি করছ? এইসব। নাফ্‌সি উত্তর না করলেও আমি ঠিকই উত্তর পেয়ে যেতাম। এত ভাল লাগত, যে মনে হত আমি বুঝি নাফ্‌সির সাথে কথা বলার জন্যেই ফোন করি।

একদিন এভাবে কথা বলার সময় মা অথবা ভাবি নাফ্‌সিকে বললেন চাচ্চুর সাথে কথা বলার জন্য। আর নাফ্‌সিও চাচ্চু বলে কথা শুরু করে দিল। এ আমি কি শুনলাম! ছোট্ট মানুষটি তার ছোট্ট মুখটি থেকে ছোট্ট স্বরে আমাকে ডাক দিয়েছে! এরপর প্রায় পনের মিনিট নাফ্‌সি আমার সাথে অনর্গল কথা বলে গেছে। আমি শুধু চুপচাপ শুনেছি। এক মুহূর্তের জন্যেও আমি মোবাইল কান থেকে সরাইনি। বাহ্যিক শব্দ হিসেবে আমি ওর মুখ থেকে মাঝে মাঝে উচ্চারিত চাচ্চু শব্দটি শুনেছি। বাকি সব কথা আমি আত্মা দিয়ে শুনেছি। সেখানে ছিলো এতোদিনের জমানো অনেক গল্প, নালিশ আর আবদার। সেদিন আমি আমার বন্ধু/কলিগদের মিষ্টিমুখ করিয়েছি। আমার মাথায় খুব কাজ করছিল, যে তারিখটা লিখে রাখব। পরে আবিষ্কার করলাম, যে আসলে তারিখটা আমি ভুলে গেছি। লিখে রাখা হয়নি।

আজ আমি অস্ট্রেলিয়ায়। নাফ্‌সি এখন খুব সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প করে। আবদার হিসেবে প্রথম দাবি দুজনের জন্য চকলেট, নইলে খবর আছে। আর যে এখন কথা বলার চেষ্টা করছে সে হলো আঈমা। আঈমা হচ্ছে জাকির ভাইয়ার মেয়ে। নাফ্‌সি আর আঈমা মিলে মাঝে মাঝেই ঘর মাথায় করে। মায়ের ভাষায়, মোবাইলে রিং বাজলেই আঈমা তাড়াতাড়ি মোবাইলটা কানের কাছে নেবে। মা কাছে গেলে সেটাকে মায়ের কানের কাছে নিয়ে আসবে। মা বা ভাবি প্রায় প্রতিদিন আঈমাকে আমার সাথে কথা বলতে বলেন। আমি আঈমার সাথে কথা বলি আর আঈমার কথাগুলো বুঝে নেই। অপেক্ষায় আছি, আঈমা কবে ওর ছোট্ট মুখটি থেকে ছোট্ট স্বরে নতুন করে চাচ্চু বলে প্রথমবার ডাক দিবে। এবার তারিখ ঠিকই লিখে রাখব, ইনশাআল্লাহ্‌।