হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২৫ টি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। শুনেছি আরও কিছু বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান এই বিমানবন্দরটিকে তাদের বিমানরুট হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বিশ্বমানের কিছু প্রতিষ্ঠান আছে এবং আরও কিছু ঢোকার চেষ্টা করছে, তার মানে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা এবং এই রুটটি একটি লাভজনক রুট। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যেখানে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের বাংলাদেশ বিমানকে আমরা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই জানি। আর এর নামের সাথে আমরা সবসময়েই দুর্নীতি, ফ্লাইট বিভ্রাট, নিম্নমানের যাত্রীসেবা এই শব্দগুলির সাথে পরিচিত।
একজন যাত্রী হিসেবে গাল্ফ এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এ ভ্রমন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ যেমন বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রনাধীন, তেমনি বাকী তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে বাহ্রাইন, কাতার এবং মালয়েশিয়া সরকার নিয়ন্ত্রনাধীন। যাহোক, ভ্রমনের সময় অন্য প্রতিষ্ঠান তিনটির সাথে বিমান বাংলাদেশের কিছু ভিন্নতা আমার অভিজ্ঞতায় এসেছে, যা মোটেই সুখকর নয়।
বিমান বাংলাদেশে টিকেট শুনেই আমার কলিগ বন্ধুরা বলেছিলেন, বিমানবন্দরে থাকার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। ফ্লাইট ডিলে হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। আমি বলেছিলাম, আরে না সবসময়ে কি হয়? সৌদিআরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে গিয়ে ডিস্প্লেতে সত্যিই ডিলে দেখতে পেলাম। বুঝলাম প্রায়ই বুঝি হয়। সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দুয়েক পরে আমাদের বোর্ডিং হয়েছিলো। অবাক হয়েছিলাম কেবিন ক্রুদের ব্যবহার দেখে। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী যারা যান, তারা বেশীর ভাগই একটু কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত হন, তাই তাদের আচরণ এবং ভাষাগত একটা সমস্যা থেকেই যায়। আর সেটা শুরু হয় সিট খোজা থেকে। অন্যান্য বিমানের ক্রুদেরকে আমি বিরক্তি ভাবটা চেপে যেয়ে, মুখে হাসি রেখে যথাসম্ভব সহযোগিতা দিতে দেখেছি। ভাষাগত দূরত্ব না থাকা স্বত্তেও সেদিন বিমান বাংলাদেশের ক্রুরা বিরক্ত হয়েছিলেন। হাসির পরিবর্তে তারা রাগ করেছিলেন। তাদের আচরণ ছিল আমাদের দেশী বাস কন্ডাক্টরদের কাছাকাছি।
আমার ছিট ছিল মাঝখানে। আমার সিট আর সামনের সিটের মাঝে জায়গা এত কম ছিল যে হাটু সামনের সিটের সাথে সারাক্ষন ঠেসে ছিল। সেদিন আমার ঢাকার লোকাল বাসগুলির কথা মনে হয়েছিল, যেগুলোর সিটে আমি সাধারনত বসতেই পারিনা। আমার হাটু সেদিন ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া সেদিন বিমানে কোনো স্ক্রীন চালু ছিলনা। কাতার আর মালয়েশিয়ায় ছিল প্রত্যেকের জন্য আলাদা ছোট স্ক্রীন। আর গাল্ফ এ ছিল কমন বড় স্ক্রীন। তাতে এন্টারটেইনমেন্ট এর সুবিধা, বিমান পরিচালনাকারী দেশের সংস্কৃতির বর্ননা, তাদের বিমানের সেবার বিভিন্ন দিক এবং ভ্রমনের সময় প্রয়োজনীয় মূহুর্তগুলো তুলে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের বিমানে বুঝি তা দরকার নেই। ঢাকায় এসে ব্যাগ এর জন্য অপেক্ষা করছি। ব্যাগ আসতে দেরী হচ্ছে। সাথের একজন যাত্রী বললেন, ভাই টেনশন নিয়েন না, ব্যাগ না পেলে রিপোর্ট করে গেলে এক সপ্তাহ বা পনের দিন পরে এসে নিয়ে যেতে পারবেন। যাহোক অপেক্ষার পরে ব্যাগ পেয়েছিলাম।
যেখানে অন্যেরা তাদের বিস্তৃতি আরো বাড়াচ্ছে, প্রতিযোগিতায় নামছে কে কার চেয়ে কত বেশী সংগঠিত, পরিকল্পিত, আর যাত্রীসেবায় উন্নত, সেখানে দিনকে দিন বিমান বাংলাদেশ হচ্ছে কোনঠাসা আর নিম্নমুখী। কবে যে কর্তৃপক্ষের থলের ভেতর থেকে দুর্নীতির ধূসর ম্যাওটি বের হবে, তাদের মনে শুভবুদ্ধির উদয় হবে, যাত্রীসেবার মান অন্যদের মানের কাছাকাছি আসবে, যার ফলে অন্যদের টিকেটের আগে দেশী পন্য হিসেবে বিমান বাংলাদেশের টিকেট কিনতে আমরা আগ্রহী হবো, আর বিমান বাংলাদেশ পরিনত হবে একটি লাভজনক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে, আল্লাহ্ই জানেন!