আবডেট জেল হত্যা দিবসে বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নূর মোহাম্মদ নূরু
জেল হত্যা দিবস হল বাংলাদেশের এক কলঙ্কিত অধ্যায় । মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ১৯৭৫ সালে এইদিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল । কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ও স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে । সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান। দেশের সকল আন্দোলনেই তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বা কাছের মানুষ । মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অসীম সাহসিকতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। গঠন করেন মুজিবনগর সরকার। এই জাতীয় নেতাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় দেশের মানুষ। ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছিল দূর্গ এবং পাল্টা আঘাত হানে শত্রুর উপর। নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীনতা পেল বাংলাদেশ। পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর শুরু হয় নতুন এক দেশ গড়ার যুদ্ধ । কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত হলেন বঙ্গবন্ধু । এরপর গ্রেফতার করা হয় জাতীয় চার নেতাকে । পরে ৩রা নভেম্বর জেলখানার ভেতর নির্মমভাবে তাদেরকে হত্যা করলেন নরপিচাশ ঘাতকরা। ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে নিম্ন আদালতে তিন জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় । তবে ফাসির দুই আসামীসহ ছয় জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট।রক্তঝরা সেই দিনটির কথা আজো ভুলতে পারেনি স্বজনেরা। সেদিন শুধু নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করেই থেমে থাকেনি ঘাতকেরা। ধরে নিয়ে যায় তাঁর ছোট ভাইকে। ১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পরে তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলের অভ্যন্তরে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলেন। চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর কারাগারে পাঠিয়ে খুনীচক্র কারাগারে ঢুকে প্রথমে গুলি এবং পরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জাতীয় এ চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আজ জাতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়ের দিবসটি পালন করবে। শোকাবহ দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল সংগঠনের উদ্যোগে সারাদেশে পালিত হবে। আজ দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন থাকবে ।আজ ১৫ আগস্টের শহীদ এবং এই জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২