কারাগারে বন্দি সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা অপরাধীদের মুখ থেকে গোপন কথা অথবা যে কোন ধরনের তথ্য বা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ বা মিলিটারি তাদের ওপর যে অত্যাচার করে থাকে এটা নতুন কোন কথা নয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নানাবিধ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অন্যায় অত্যাচার বা নির্যাতন বন্ধ করা যায়নি। কিন্তু কী ধরনের অত্যাচার করা হয় তাদের ওপর? আসুন আজ আমরা তার কিছু অংশ জেনে নিই । পৃথিবীর বিভিন্ন কারাগারের ভিতরে বন্দিদের সঙ্গে ঠিক কী চলে।
যেমনঃ গুয়ানতানামো কারাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যেখানে বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং বিভিন্ন প্রকার তথ্য আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে বন্দীদের ওপর ওয়াটার বোর্ডিং সহ নানা নির্চাযাতন চালানো হয়।নির্যাতনের প্রকার এবং মাত্রা এতই বেশি যে অনেকে এই কারাগারকে মর্ত্যের নরক বলে আখ্যায়িত করেন। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করতে থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের লজ্জা হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।এই কারাগারটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে এর অবস্থান। ২০১২ সালে ১৪ই জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত আল জাজিরা টেলেভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ৮০০ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার পর এ কারাগারে বিভিন্ন দেশের ১৭১ জন বন্দী আটক আছে। এই কারাগারে মার্কিন-বিরোধী তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গী ও সন্ত্রাসী এবং গুপ্তচর সন্দেহে বিভিন্ন দেশের নাগরিককে আটক রাখা হয়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই বন্দীশালায় বিনা বিচারে আট বৎসর আটক থাকার পর ১৯৮ জনের মধ্যে ১৩০ জনেরও বেশি বন্দী নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ৬ জন বন্দীকে বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে।
যেমনঃ কারাগারের যেখান দিয়ে বন্দেীর আত্মীয়স্বজন দেখা করে সেদিক দিয়ে অল্প বা বলা চলে নিঃশ্ছিদ্র নেট থাকে। কথা বললে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ঠিক মত শোনা যায় না।সেল নামে পরিচিত ছোট্ট ক্ষুদ্র তালাবদ্ধ কক্ষে বন্দীদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। সে কক্ষে সাধারনত দশ থাকলেই কষ্ট হবে অথচ সে কক্ষে কম হলেও বিশ থেকে ত্রিশ জন বা অনেক সময় এর থেকেও বেশি হতে পারে ।
দিনের শেষে যখন রাতে তাদের ঘুমাতে হয় তখন গরমে সময় আর শীতের সময় বলে কোন কথা নাই দেখা গেছে দশ জনের জায়গায় বিশজনকে শুতে হয় ।একজনের উপরে একজন ঘুমাতে হয় ।
আরো কিছু অন্য ধরনের নির্যাতনের কথাও শোনা যায় যেমন যাদের পুরোপুরি রায় দেয়া হয় না যাদের বিচারদিন অবস্থায় রাখা হয় জিজ্ঞাসা বাদের জন্য তাদের যেরকম শাস্তি দেয়া হয় ।দেখা যায় মুখে কাপড় দিয়ে ঢেকে মুখ এবং নাকের জায়গাগুলোতে পানি ঢালা ও এতে হয় কী, নিঃশ্বাসের সময় বন্দির অনুভূতি হয় যেন সে জলে ডুবে যাচ্ছে। স্বীকারোক্তি আদায়ের সময় এই কৌশল ব্যবহার করা হয় আমেরিকায়। ভারতের পুলিশও এই কৌশল ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়।
তাছাড়াও স্তনবৃন্তে এবং কুঁচকিতে ইলেকট্রিক শক দেয়া অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক অত্যাচার এটি। সারা বিশ্বেই সম্ভবত এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। এই অত্যাচারের বৈশিষ্ট্য হলো এতে বন্দিকে যতই অত্যাচার করা হোক তার দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন থাকে না।
দিনের পর দিন বন্দিকে ঘুমোতে না দেয়া কোনো কোন বন্দিকে টানা চার পাঁচ দিন পযন্ত এক মিনিটের জন্যও ঘুমোতে না দিলে তার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সাধারণত এভাবে কাউকে টানা জাগিয়ে রাখার পরে যদি তাকে জেরা করা হয় তাহলে সেই অবস্থায় মিথ্যে কথা বলার মতো মানসিক জোর আর তার থাকে না।
বন্দিদের মধ্যে লড়াই বাঁধিয়ে দেয়া বন্দিদের মধ্যেই থাকে জেল কর্তৃপক্ষের লোক। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য বন্দিদের সঙ্গে লড়াই বাধিয়ে দেয়। এই ধরনের মারামারিতে অনেক সময় কোনো কোনো বন্দির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যায়। এটিও অত্যাচারের একটি ধরন।
চড়া ভলিউমে একটানা কোনো শব্দ শোনানো হোয়াইট নয়েজের মতো শব্দ যদি একটানা কাউকে চড়া ভলিউমে শোনানো হয় তাহলে তা অত্যাচারের আকার নেয়। বন্ধ ঘরে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে বন্দিদের এই শব্দ শুনতে বাধ্য করা হয়।
তাছাড়াও পরিকল্পিতভাবে বন্দিদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা ইচ্ছাকৃতভাবেই বন্দিদের খেতে দেয়া হয় মানুষের অখাদ্য খাবার। আমেরিকার অনেক জেলেই এই ধরনের অত্যাচার করা হয়ে থাকে। এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক বন্দিই দেখা যায় নিজেদের আচরণ সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেয় জেল কর্তৃপক্ষের কাছে।
ড্রাগ দেয়া ড্রাগ মানুষকে স্নায়বিক দিক থেকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ড্রাগের প্রভাবে থাকা মানুষের পক্ষে কোনো জেরার উত্তরে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যে বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। ১৯৬০ এর দশকে আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র পরিচালনায় এইভাবে ড্রাগের মাধ্যমে বন্দিদের কাছ থেকে কথা আদায় করার চেষ্টার পরিণামে বেশ কিছু বন্দির মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২০