প্রাণী জগৎ সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারনা নেই। তবে আমি যেহেতু মানুষ, সেই হিসেবে মানুষ সম্পর্কে আর দশ জনের মত কিঞ্চিৎ জ্ঞান আমারও আছে। যেমন মানুষ কিভাবে হাঁটে, কিভাবে কাঁদে, কিভাবে খায় অথবা কিভাবে বংশবিস্তার করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব বিষয় নিয়ে বিরক্তিকর বিবৃতি অথবা গল্প ফাঁদতে লেখাটা শুরু করিনি। এটা লেখার পিছনে আমার একটি বিশেষ উদ্দ্যেশ্য আছে।
না না ষড়যন্ত্র মূলক কোন উদ্দেশ্য নয়। আমি মানুষের হাসি নিয়ে কিছু বলতে চাই। আমারা সবাই জানি মানুষের হাসি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং সেই সমস্ত হাসির আবার নানান অর্থ থাকে, থাকে অনেক ধরনের উদ্দ্যেশ্য। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, নতুন করে আমি কি বলতে চাই? আমি যে বিরাট রসগোল্লা, দুনিয়ার সবকিছু জানি অথবা হাসির উপরে পিএইসডি করে বসে আছি এমন নয়।
আমি খেয়াল করে দেখেছি, একজন মানুষ খুব উৎসাহের সাথে অন্য মানুষ দেখে এবং পাশের একজন মানুষকে খোঁচা দিয়ে মুচকি অথবা হা হা করে হেসে ওঠে। এই হাসি আনন্দের অথবা গৌরবের হাসি নয়। এই হাসি হচ্ছে তাচ্ছিল্যের হাসি উপহাসের হাসি। আমি জানিনা প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রানিরা ঠিক একই কাজ করে কিনা। চলুন কিছু উদাহরন দেয়া যাক। যদিও মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতায় কোন প্রশ্নের জন্যেই আমি খুব একটা উদাহরন লিখতে পছন্দ করতাম না যার ফলে উত্তরটির জন্য নাম্বার পেতাম কম অথবা সেটি কেটে গোল্লা দিয়ে দেওয়া হত। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি, সমর্থনের জন্যে উদাহরনের প্রয়োজনীয়তা অসীম।
শপিং মলে তো মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সকলেরই পদচারনা থাকে। এই শপিং মলে একটু চোখ কান খোলা রাখলে আমার কথার সত্যতা বোঝা যাবে। মনে করেন একটা এক্সেলেটরের একদিক থেকে আধুনিক পোশাক আশাকে সজ্জিত অতি মডার্ন দুজন লাভ বার্ড উঠছে আর অন্য দিক থেকে সাধারন পোশাক আশাকে সজ্জিত দুজন প্রেমিক প্রেমিকা নামছে। দুই দলই একে অপরকে উৎসাহের সাথে দেখছে এবং এই দুই দলই কিছুটা দূরে এসে একে ওপরকে খোঁচা দিয়ে হাসি শুরু করবে। মডার্ন লাভ বার্ড যুগলয়ের হাসির কারন হবে, ওই জুগলের সাধারন পোশাক আশাক, সিঁতি করা চুল এবং সাধারনভাবে চলার স্টাইল। আর সধারন পোশাক আশাকে সজ্জিত যুগলের হাসির কারন হবে ওই জুগলের অদ্ভুত রংচঙা নাভির বহু নিচে পড়া প্যান্ট, খাড়া করা চুল আর ইয় ইয় চলনের স্টাইল। এত গেল একটা উদাহরন। এরকম আরও উদাহরন আপনি নিজেই লক্ষ্য করলে দেখবেন।
আমরা মানুষরা একে অপরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে খুবই পছন্দ করি। মোটা কাউকে দেখে বলে উঠি, আস্তে হাঁটুন বিল্ডিং ভেঙ্গে পরবে। চিকন কাউকে বলি, ফ্যানের সামনে দাড়াবেন না উড়ে টুড়ে যেতে পারেন। খাট কে বলি, আপনি তো মিয়া আল্লার শত্রু। হায় হায় খাট মানুষ যে আল্লার শত্রু এই কথা আপনেরে কেউ বলে নাই? লম্বাকে তো আমারা লম্বু অথবা খাম্বাই ডাকি। কালো মানুষকে বলি, অন্ধকারে আপনেরে তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ফর্সা মানুষকে বলি, আপনে এত ফর্সা ক্যান? ফরেনার ফরেনার লাগে। জানেন না মেয়েরা ফর্সা ছেলে পছন্দ করে না। কারো শরীরে প্রচুর লোম থাকলে আমারা বলি, হনুমান। যার লোম নেই তাকে বলি পাষাণ। যে বেশী জানে সে অন্যদের উপহাস করে বলে মূর্খ আবার যে কম জানে সে বেশী জানার ব্যক্তিকে বলে, আইছে! শিক্ষিত। বড়লোক গরীবকে নিয়ে হাসে, গরীব বড়লোককে। এগুলো কিছু সাধারন তাচ্ছিল্য এবং উপহাসমূলক কথার উদাহরন যা আমারা প্রতিদিন একে অপরকে বলি এবং উপহাসমূলক হাসি প্রদান করি। এরকম হাজারটা উদাহরন আপনি নিজেই দিতে পারবেন।
মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা জীব। অথচ কি আশ্চর্য দেখেন, নিজেরাই নিজেদের তাচ্ছিল্যে করে, উপহাস করে নিচে নামিয়ে ফেলি। কেউ আছার খেয়ে পড়ে গেলেও আমরা হা হা করে হেসে উঠি। ধংস দেখে আনন্দ পাই। সেরা জীব হিসেবে যে পরিমান দয়া, ভালোবাসা আর ত্যাগ আমাদের ভিতরে থাকা উচিত তা আদৌ নেই। বুকে হাত দিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আছে কি নেই? যদি নাই থাকে তাহলে আমারা মানুষরা নিজেদের সেরা জীব বলার অধিকার রাখি না।
বিদ্রঃ লেখাটি সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিছু ভাল এবং দয়ালু মানুষ পৃথিবীতে সব সময়ই ছিল এবং আছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই আমার এই লেখার আওতায় পড়ে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




