somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন নাকি অন্য কিছু

১৮ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে। আবার কেউ কেউ দিবা-স্বপ্নও দেখে। স্বপ্ন কেন দেখে, কিভাবে দেখে, কে কী দেখে এবং কোন কারণে দেখে তা এখনো অজানা। বিজ্ঞানী আর সাইকাইট্রিসটরা নানা রকম গবেষণা করে যাচ্ছেন এই স্বপ্ন দেখা নিয়ে। আমার লেখার বিষয় কিন্তু স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক বা অলৌকিক ব্যাখ্যা দান করা নয়। আমি আমার দেখা একটি স্বপ্নের কথা বলব। এ স্বপ্নের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ আবার মনে পড়ল। মানুষের কিন্তু স্বপ্নের কথা ঘুম ভাঙার পর আর মনে থাকে না। আমারও মনে থাকে না। কিন্তু এটা মনে আছে। এটাকে স্বপ্ন বলা যায় কিনা তাও বুঝতে পারছি না। হতে পারে এটা কোন স্বপ্ন, কিংবা ঘোর লাগা কোন এক সময়, বা কোন হেলুসিনেশন। আমার এতো কিছু না বুঝলেও চলবে।

গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস। সামনে ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষা। পি. এল. চলছে। পি. এল. এর মধ্যেই আবার ঈদ। হঠাৎ আমার শরীর খারাপ করলো। খুবই খারাপ অবস্থা। বা পায়ের হাঁটু ফুলে গেল। আমি আর নড়তে পারি না। পুরোপুরি বিছানায় শোয়া। ঈদ পুরোটাই মাটি। সামনে পরীক্ষা। এর মধ্যেই পড়তে হবে। কোন রকমে বিছানায় শুয়ে শুয়ে Pre-stressed Concrete পড়ি। রাতের বেলা জ্বর আর ব্যথা খুব বেড়ে যায়। একদম অসহ্যকর অবস্থা। এক পায়ের জন্য পুরো শরীর অবশের মতো। নিজের শরীরকে নড়াতে পারি না। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। ঘুম আসে, আবার আসে না। আধো জাগা, আধো ঘুম অবস্থা। সেদিন রাত দুটো কি তিনটে বাজে। মাথার উপর টিউব লাইট জ্বালানো। সারা রাতই জ্বালানো থাকে। আমি চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। ঘুম আসছে না। আবার ঘুম আসলেও একটু পরপর ভেঙে যাচ্ছে। কোন এক সময় আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বোধ হয়। দেখলাম আমার মতো এক পা খোঁড়া অনেক মানুষ আমার আশে-পাশে। একটা আরব পরিবেশে চলে এসেছি। মরুভূমি টাইপ। আমার পা বহন করার জন্য দু’জন মানুষ রাখা হয়েছে। তাদের পোশাক-আশাকও আরবদের মতো। জোব্বা-জাব্বা পড়া। আমারই মতো অন্য খোঁড়া লোকদের পা বহন করার জন্য দু’জন করে নিয়োগ দেওয়া আছে। আমি তো পা নাড়াতে পারি না, তাই ওই দুই লোক আমার পা বহন করে। আমি তাদের উপর ভর দিয়ে চলি। সবসময় শুয়ে থাকি। কোন কষ্ট করতে হয় না। তবে ডানে-বামে কাত হতে পারি না।

তো সমস্যা শুরু হয়ে গেল যখন লোকগুলো স্ট্রাইক করে বসলো। তাদের দাবি, তাদের বেতন বাড়াতে হবে। তাদের বেতন এতাদিন ছিল ৩০ ডলার। কিন্তু এখন তারা ২০০ ডলার চাচ্ছে। এতো মহাবিপদ। একে তো আমি চলতে পারি না। আবার এতা টাকা দিয়ে তো চাকরও রাখতে পারবো না। এর মধ্যে সবাই বললো আমাকে এ ব্যাপারে ভাষণ দিতে। ভাষণ দিতে হবে আবার বালিশের উপর দাঁড়িয়ে। আমি অনেক চেষ্টা করলাম দাঁড়ানোর। কিন্তু মাথাই উঠাতে পারলাম না। কিছু বলতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। ততক্ষণে চাকরের দল আমাকে রেখে আন্দোলনে চলে গিয়েছে, “আমাদের দাবি মানতে হতে, মানতে হবে‍‍‍‌‌।”‍‍‌‌‌

তারা লিফলেট বিতরণ শুরু করলো। উপর থেকে লিফলেট ফেলা হচ্ছে। হলুদ লিফলেট। চারদিক লিফলেটে ভরে গেল। আমি আমার রুম দেখতে পারছি, রুমের সব ফার্ণিচার দেখতে পাচ্ছি। তারই মধ্যে সেই আরব আরব টাইপ পরিবেশও দেখতে পাচ্ছি। একটা লিফলেট পড়লো আমার বালিশের বা পাশে, বইয়ের উপর। সেই হলুদ লিফলেট। আমি লিফলেটটা নিতে চাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই পারছি না। বা পাশে কাত হওয়ার খুব চেষ্টা করলাম। আমার একদম কাছেই লিফলেটটা। কিন্তু নাগালে পাচ্ছি না।এক সময় মনে হলো, হাত দিয়ে না পারি তো মুখ দিয়ে নেই। তখনই আম্মু আসলো আমাকে দেখতে। আমি বললাম, ওই লিফলেটটা দাও তো। আম্মু বললো, কোন লিফলেট? “আরে এই তো, ওই লোকগুলো দিয়েছে।” আম্মু বললো, কোথায় লোক? তখন আমি সামনে তাকিয়ে দেখি, কই লোক? কেউ তো নেই। আর হলুদ লিফলেটটাও উধাও। শুধু আমার লাল বইটা আছে। সবই ঠিকঠাক আছে। আমি যেভাবে শুয়ে ছিলাম সেভাবেই আছি। কেবল বা পা-টা অনেক হালকা হালকা লাগছে।

পরে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে আবার বিশাল ইতিহাস। এই অসুখ নিয়ে পুরো পরীক্ষা দিলাম। এখনো ঔষধ চলছে। পরীক্ষায় ফেল করি কিনা সন্দেহ ছিল। মজার ব্যাপার হলো, এই পরীক্ষায় আগের সাত সেমিস্টার পরীক্ষার থেকে বেশি জিপিএ পেয়েছি।


১৬/০৩/২০১০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×