মানুষ ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে। আবার কেউ কেউ দিবা-স্বপ্নও দেখে। স্বপ্ন কেন দেখে, কিভাবে দেখে, কে কী দেখে এবং কোন কারণে দেখে তা এখনো অজানা। বিজ্ঞানী আর সাইকাইট্রিসটরা নানা রকম গবেষণা করে যাচ্ছেন এই স্বপ্ন দেখা নিয়ে। আমার লেখার বিষয় কিন্তু স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক বা অলৌকিক ব্যাখ্যা দান করা নয়। আমি আমার দেখা একটি স্বপ্নের কথা বলব। এ স্বপ্নের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ আবার মনে পড়ল। মানুষের কিন্তু স্বপ্নের কথা ঘুম ভাঙার পর আর মনে থাকে না। আমারও মনে থাকে না। কিন্তু এটা মনে আছে। এটাকে স্বপ্ন বলা যায় কিনা তাও বুঝতে পারছি না। হতে পারে এটা কোন স্বপ্ন, কিংবা ঘোর লাগা কোন এক সময়, বা কোন হেলুসিনেশন। আমার এতো কিছু না বুঝলেও চলবে।
গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস। সামনে ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষা। পি. এল. চলছে। পি. এল. এর মধ্যেই আবার ঈদ। হঠাৎ আমার শরীর খারাপ করলো। খুবই খারাপ অবস্থা। বা পায়ের হাঁটু ফুলে গেল। আমি আর নড়তে পারি না। পুরোপুরি বিছানায় শোয়া। ঈদ পুরোটাই মাটি। সামনে পরীক্ষা। এর মধ্যেই পড়তে হবে। কোন রকমে বিছানায় শুয়ে শুয়ে Pre-stressed Concrete পড়ি। রাতের বেলা জ্বর আর ব্যথা খুব বেড়ে যায়। একদম অসহ্যকর অবস্থা। এক পায়ের জন্য পুরো শরীর অবশের মতো। নিজের শরীরকে নড়াতে পারি না। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। ঘুম আসে, আবার আসে না। আধো জাগা, আধো ঘুম অবস্থা। সেদিন রাত দুটো কি তিনটে বাজে। মাথার উপর টিউব লাইট জ্বালানো। সারা রাতই জ্বালানো থাকে। আমি চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। ঘুম আসছে না। আবার ঘুম আসলেও একটু পরপর ভেঙে যাচ্ছে। কোন এক সময় আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বোধ হয়। দেখলাম আমার মতো এক পা খোঁড়া অনেক মানুষ আমার আশে-পাশে। একটা আরব পরিবেশে চলে এসেছি। মরুভূমি টাইপ। আমার পা বহন করার জন্য দু’জন মানুষ রাখা হয়েছে। তাদের পোশাক-আশাকও আরবদের মতো। জোব্বা-জাব্বা পড়া। আমারই মতো অন্য খোঁড়া লোকদের পা বহন করার জন্য দু’জন করে নিয়োগ দেওয়া আছে। আমি তো পা নাড়াতে পারি না, তাই ওই দুই লোক আমার পা বহন করে। আমি তাদের উপর ভর দিয়ে চলি। সবসময় শুয়ে থাকি। কোন কষ্ট করতে হয় না। তবে ডানে-বামে কাত হতে পারি না।
তো সমস্যা শুরু হয়ে গেল যখন লোকগুলো স্ট্রাইক করে বসলো। তাদের দাবি, তাদের বেতন বাড়াতে হবে। তাদের বেতন এতাদিন ছিল ৩০ ডলার। কিন্তু এখন তারা ২০০ ডলার চাচ্ছে। এতো মহাবিপদ। একে তো আমি চলতে পারি না। আবার এতা টাকা দিয়ে তো চাকরও রাখতে পারবো না। এর মধ্যে সবাই বললো আমাকে এ ব্যাপারে ভাষণ দিতে। ভাষণ দিতে হবে আবার বালিশের উপর দাঁড়িয়ে। আমি অনেক চেষ্টা করলাম দাঁড়ানোর। কিন্তু মাথাই উঠাতে পারলাম না। কিছু বলতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। ততক্ষণে চাকরের দল আমাকে রেখে আন্দোলনে চলে গিয়েছে, “আমাদের দাবি মানতে হতে, মানতে হবে।”
তারা লিফলেট বিতরণ শুরু করলো। উপর থেকে লিফলেট ফেলা হচ্ছে। হলুদ লিফলেট। চারদিক লিফলেটে ভরে গেল। আমি আমার রুম দেখতে পারছি, রুমের সব ফার্ণিচার দেখতে পাচ্ছি। তারই মধ্যে সেই আরব আরব টাইপ পরিবেশও দেখতে পাচ্ছি। একটা লিফলেট পড়লো আমার বালিশের বা পাশে, বইয়ের উপর। সেই হলুদ লিফলেট। আমি লিফলেটটা নিতে চাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই পারছি না। বা পাশে কাত হওয়ার খুব চেষ্টা করলাম। আমার একদম কাছেই লিফলেটটা। কিন্তু নাগালে পাচ্ছি না।এক সময় মনে হলো, হাত দিয়ে না পারি তো মুখ দিয়ে নেই। তখনই আম্মু আসলো আমাকে দেখতে। আমি বললাম, ওই লিফলেটটা দাও তো। আম্মু বললো, কোন লিফলেট? “আরে এই তো, ওই লোকগুলো দিয়েছে।” আম্মু বললো, কোথায় লোক? তখন আমি সামনে তাকিয়ে দেখি, কই লোক? কেউ তো নেই। আর হলুদ লিফলেটটাও উধাও। শুধু আমার লাল বইটা আছে। সবই ঠিকঠাক আছে। আমি যেভাবে শুয়ে ছিলাম সেভাবেই আছি। কেবল বা পা-টা অনেক হালকা হালকা লাগছে।
পরে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে আবার বিশাল ইতিহাস। এই অসুখ নিয়ে পুরো পরীক্ষা দিলাম। এখনো ঔষধ চলছে। পরীক্ষায় ফেল করি কিনা সন্দেহ ছিল। মজার ব্যাপার হলো, এই পরীক্ষায় আগের সাত সেমিস্টার পরীক্ষার থেকে বেশি জিপিএ পেয়েছি।
১৬/০৩/২০১০