somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাপজানের হাতঘড়ি (স্মৃতিতে ২২শে মার্চ)

১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জুন মাসের ৩য় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস। আমার বাবাকে নিয়ে লিখলাম লেখাটি।পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।



টেবিলের উপর এখনো শোভা পাচ্ছে বাপজানের হাতঘড়িটা। ঘড়িতে এখন ৫ টা বেজে ১৫মিনিট। আজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঘড়িটা পাঁচটা পনেরতেই থেমে আছে। এই থামাঘড়িটাও দিনে দুইবার সঠিক সময় দেখায়। ঘড়ির পিছনে খোদাই করে লেখা আছে-
CITIZEN WATCH CO.
WATER RESIST
STAINLESS
GN-4W -S
JAPAN

এর মানে হলো ঘড়িটা জাপানের তৈরি। মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম ঘড়িটা সৌদি আরবব থেকে বড়মামা এনেছিলেন বাপজানের জন্য। এই ঘড়িটার সবচেয়ে বড় যে বিশেষত্ব সেটা হলো, এর মধ্যে কোন ব্যাটারি নেই। নাহ, এটি সৌরবিদ্যুতেও চলে না। এটি চলে শুধুমাত্র রক্তচলাচলের সাহায্যে। অর্থাৎ হাতে পরার পর এটি ত্বকের স্পর্শ থেকে রক্ত চলাচল এর আভাস পেলেই চলতে শুরু করে। আপনার শরীরে রক্ত চলাচল করবে আর তার উপর ভিত্তি করে ঘড়িটা আপনাকে সময় জানিয়ে দিবে। এটি ওয়াটার রেসিস্ট হওয়ায় এর মধ্যে পানি ঢুকার ভয় নেই। তাই এটি খুলে রাখারও প্রয়োজন হয় না। তবে কোন কারণে যদি আপনি খুলেও ফেলেন তবু সেটা সাথে সাথে থেমে
যাবেনা। আরও বেশ কয়েক ঘণ্টা অনায়াসে এটি আপনাকে সঠিক সময় জানাবে। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা, এই ঘড়ির মধ্যে ছোট করে বার এবং তারিখ দেখা যায়। তারিখ বলতে শুধু কততম দিন সেটাই রয়েছে । মাস আর বছর নেই। সমস্যা নেই, চলমান মাস আর বছর তো সবারই জানা থাকে। সে হিসেবে ঘড়িতে আছে আজ মঙ্গলবার, ২২তারিখ। তবে এই ২২তারিখ চলমান বছরের নয়। যে বছর ঘড়িটা থেমে গিয়েছিল সেই বছরের।
২২ মার্চ,২০০৫ সকাল সাড়ে দশটার দিকে বাপজান ঘড়িটা হাত থেকে খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো তার। দিশেহারার মত আচরণ করছিলেন খুব। এই ২২শে মার্চে আমার জীবনের একটা অন্যতম অধ্যায় রচিত হয়েছিল।

সেদিনটার কথা আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে। অন্যান্য দিনের মতই সেদিনও স্কুলে গিয়েছিলাম। তখন আমি ক্লাস ফাইভে। আমাদেরর বাড়ি থেকে স্কুল খুব কাছে হওয়ায় দুপুরবেলার বিরতিতে বাড়িতে খেতে আসতাম। যথারীতি সেদিন দুপুরে বাড়িতে এলাম, কিন্তু মা কে পেলাম না। ছোট আপু জানালো মা বাপজানকে নিয়ে ফেনী গেছে। তখন খেয়েদেয়ে আবার স্কুলে চলে গেলাম। স্কুল ছুটি শেষে বাড়িতে এসে সবার মধ্যে কেমন যেন একটা তাড়াহুড়ো ভাব দেখলাম। মাকে দেখলাম তখন বাড়ি থেকে আবার ফেনী যাচ্ছে। বললো বাপজানকে নিয়ে ঢাকা যাবে। আমারে দুষ্টমি করতে মানা করে গেল।
ঘন্টা খানেক পরে কে জানি বললো আমার বাপজান নাকি ঢাকা চলে গেছেন। রাজধানী ঢাকায় নয়,আমাদের জীবন থেকেই ঢাকা গেলেন তিনি।

বাপজানের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কোনদিন যদি মায়ের বকুনি খেতাম কিংবা পিটুনি খাওয়ার ভয় থাকতো, অমনি ছুটে যেতাম বাপজানের কাছে। বাপজান আমায় কোলে করে বাড়ি দিয়ে যেতেন। আমি ভয়ে ভয়ে থাকলেও তখন অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতাম। ভাই বোন সবার ছোট ছিলাম বলে বাপজান আমায় এত্তো এত্তো আদর করতেন। কখনো আমায় মারতেন না তিনি। পুরো জীবনে একবারই শুধু আমায় মেরেছিলেন। আমার খুব রাগ উঠলে আমি বাপজানের দোকানের সব জিনিস তোলপাড় করে ফেলতাম। অথচ তিনি শুধুই হাসতেন। হাসিখুশি ভাবেই আমায় বুঝানোর/মানানোর চেষ্টা করতেন। যেদিন তিনি খুব রেগে গিয়ে আমায় চড় মেরেছিলেন। রাতেই আমার জ্বর উঠল। মা বাপজানকে খুব বকুনি দিলেন। কোনদিন যিনি আমায় মারতে দিতেন না সেই তিনিই কিনা আমায় মারলেন। আবার রাতভর ডাক্তার ওষুধ নিয়ে ছুটোছুটিও করলেন। সবাই বলতো আমি নাকি বাপটিরে বেশি জ্বালাতন করতাম। এজন্যই কি তিনি আমায় ছেড়ে গেলেন?

আমার জিন্দেগীর কুড়ি বছরের বেশি চলে গেছে। এই কুড়ি বছরকে যদি আমি দু'ভাগ করি তবে সেখানে প্রথম অর্ধ কুড়িতে মিশে আছে আমার বাপজানের সাথে কত স্মৃতি,কত আদর, স্নেহ। আর পরবর্তী এই একযুগে শুধুই স্নেহকাতর পিতৃশূণ্য হৃদয়ের হাহাকার। সেদিন সকাল সাড়ে দশটায় তিনি তার হাতঘড়িটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। ঘড়িটি তখনই থেমে যায় নি। অদ্ভুতভাবে ঘড়িটি থেমেছিল বিকেল ৫টা ১৫মিনিটে যখন কি না তার মালিকের রক্ত চলাচল চিরতরে থেমে গিয়েছিল!

আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে আজকের (১৮জুন,২০১৭) দৈনিক নয়াদিগন্তের অবকাশ পাতায় প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×