বলা আর না বলার কথা (৩য় পর্ব)
১ম অংশঃ শুরুতে আমি আপনাদের একটা গল্প শুনাব যাতে থাকবে একজনের মা হারানোর পর মাকে খুঁজে ফেরা ও তার ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রভাবের কথা। গল্পটা সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, তাহলে শুরু করা যাক,
দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার (নাতিশীতষ্ণ) রিফাত ফজর নামায পড়ে হাঁটতে বের হয়েছে, তার সাথে দেখা হল (একজনের সাথে) দেখা হওয়ার সময় বলল, “কী ব্যাপার কেমন আছেন?” তিনি বললেন, “বহুদিন পর আলহামদুলিল্লাহ্, ভাল আছি।” রিফাত বলল, “আজ কতক্ষণ হাঁটবেন?” তিনি বললেন, “আজ বেশী হাঁটব না, শরীরটা ভাল না।” “কেন কী হয়েছে?” আশ্চর্যজনক জিজ্ঞাসা রিফাতের। তিনি বললেন, “বাবা! বয়স হয়েছে না, তাছাড়া ডায়াবেটিস নেই কিন্তু প্রেসারের কারণে আর রক্তে হিমোগ্লোবিন কম তাই প্রতিদিন রক্ত দিতে হচ্ছে।” “আপনার রক্তের গ্রুপ কী?” জিজ্ঞাসা করল রিফাত। উত্তরে তিনি বললেন, “O+” রিফাত বলল, “আমারও তাই”। এখন কথা হচ্ছে কার সাথে কথা বলল রিফাত? এবার একটু পেছনে যাই প্রায় ২বছর আগে…………. রিফাত হাঁটছে সকালে প্রতিদিনের মত যখন সে ২০ নাম্বার রোডে ঢুকল ঠিক তখনই এক মহিলাকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। নিজেকে সামলে তাকে বলে, “আমাকে ক্ষমা করবেন আমি যখনই আপনাকে দেখি তখনই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে, যিনি ছিলেন আপনার মতই। আপনার কথা বলার ধরণ, শাড়ি পড়ার ধরণ, হাঁটা এমনকি আপনার চেহারা সবকিছুই মিলে যায়। তাই আপনাকে আমি মা বলতে চাই, যদি আপনার সম্মতি থাকে।” তিনি বললেন, “মা! কেন? আমি কী তোমাকে চিনি?” “জ্বি?” সাবলীল উত্তর,রিফাতের। “আর সেটা হল আপনার বড় মেয়ে অর্পা আপুর বিয়ে হয় তখন আপনার ভাতিজা রাহাতের সাথে ঘর সাজিয়েছিলাম ও সারা রাত জুড়ে আমাদের আড্ডা চলল। আর আপনি মাঝে মাঝে এসে আমাদের চা ও রসাত্মক কথা বলে উৎসাহ দিচ্ছিলেন মনে পড়ে? আর আমাদের দুজনকে নিজের হাতে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছিলেন, যা আপনি নিজেই তৈরী করেছিলেন।” তিনি ওহ তাই, হ্যাঁ মনে পড়েছে। “তোমার বাবার নাম আরশাদ আহমাদ, মায়ের(খাদীজা) আমার নামে নাম,তাই না?” “হ্যাঁ!”ঠিক ধরেছেন, বলল রিফাত। তিনি বললেন, “তোমার বাবা-মা কেমন আছেন? বাবা!” রিফাত বলল, “আপনি বোধহয় জানেন না, আমার বাবা-মা দুজনেই গত হয়ে গেছেন।” তিনি বললেন, “কবে?” “এইতো গত বছর”, রিফাতের উত্তর। এবার তিনি বললেন, “আমাদের একটুও জানালে না?” রিফাত বলল, “আসলে আপনাদের অনেক জানানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কনোভাবেই আপনাদের সাথে যোগাযোগ করেত পারি নি।” কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন, “তুমি এখন কোথায় থাকো?” রিফাত বলল, “আব্বা ডিওএইচএস-এ বাড়ি কিনেছিলেন, ওখানেই তিন তলায় থাকি।” এরপর আবার বলল, “এখন তো আমরা পরিচিত তাই না? এখন আপনাকে মা বলে সম্বোধন করতে পারি?” এরপর ২ বছর পরে.........।
দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার (নাতিশীতষ্ণ) রিফাত ফজর নামায পড়ে হাঁটতে বের হয়েছে, তার সাথে দেখা হল (একজনের সাথে) দেখা হওয়ার সময় বলল,“কী ব্যাপার কেমন আছেন?” তিনি বললেন,“বহুদিন পর আলহামদুলিল্লাহ্, ভাল আছি।” রিফাত বলল, “আজ কতক্ষণ হাঁটবেন?” তিনি বললেন, “আজ বেশী হাঁটব না, শরীরটা ভাল না।” “কেন কী হয়েছে?” আশ্চর্যজনক জিজ্ঞাসা রিফাতের। তিনি বললেন, “বাবা! বয়স হয়েছে না, তাছাড়া ডায়াবেটিস নেই, প্রেসারের কারণে আর রক্তে হিমোগ্লোবিন কম তাই প্রতিদিন রক্ত দিতে হচ্ছে।” “আপনার রক্তের গ্রুপ কী?” জিজ্ঞাসা করল রিফাত। উত্তরে তিনি বললেন, “O+” রিফাত বলল, “আমারও তাই ।কখনো যদি রক্তের প্রয়োজন হয় জানাবেন।” মা বললেন, “জানাবো। এখন চলো সামনে যাই।”
রিফাতঃ আপনার সাথে যারা হাঁটে, তারা কোথায়?
মাঃ তারা আজ নেই। আজ আমি একা।
রিফাতঃ আপনাকে আমি যদি সঙ্গ দেই, কনো সমস্যা আছে?
মাঃ নাহ্! তোমার তো বাবা-মা নেই, এখন কী করছ, কার কাছে থাকছো?
রিফাতঃ আমি একাই থাকি। মাঝে মাঝে আমার মামাতো ভাই পরীক্ষা দিতে আসে।
মাঃ আচ্ছা, আজ আমাদের বাসায় নাস্তা করো?
রিফাতঃ না না! কিজে বলেন!
মাঃ ওমা! সেকি আমি কি পর হয়ে গেলাম?
রিফাতঃ না, তা হবে কেন? আপনি তো এখন আমার আপনজন।
মাঃ তাহলে হেঁটে এসে, আমার বাসায় আজ থাকবে।
রিফাতঃ এক শর্তে রাজি হতে পারি, যদি আপনাকে “মা” বলে সম্বোধন করার অনুমতি দেন।
মাঃ দেখ! ছেলে বলে কী বলে? তোমার যদি আমাকে মা বলে ডাকলে শান্তি লাগে তাহলে ডাকবে কোনোই বাঁধা নেই।
রিফাতঃ তাহলে, ঠিক আছে।
এভাবে দুজনে হাঁটাহাঁটি করে বাসায় পৌছল, এরপর রিফাত মাকে সাহায্য করল এবং দুজনের প্রচেষ্টায় মাত্র এক ঘণ্টায় নাস্তা তৈরি হয়ে গেল। এরপর......
রিফাতঃ মা! তোমরা কী সকালে দুধ খাও?
মাঃ আমাদের প্রতিদিন দুধ টেবিলে রাখা লাগে, নাহলে তোমার বাবার মাথা খারাপ হয়ে যায়।
যাহোক, মা সবাইকে নাস্তার টেবিলে ডাকল একে একে বাবা, নাদিয়া ও হৃদয় টেবিলে আসল। মা রিফাতকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই সকলেই চিনতে পারল। এরপর...
রিফাতঃ মা! তোমাদের সময় কাটে কীভাবে?
মাঃ তুমি এমন প্রশ্ন করছ কেন?
রিফাতঃ না, এমনি।
মাঃ হৃদয় ও নাদিয়া তো বাসায় থাকে না, তোমার বাবা ও আমি শুধু বাসায় থাকি। আর বাসায় থাকলে কোন ফাঁকে সময় পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না।
রিফাতঃ এটা ঠিক বলেছ। আমি চাচ্ছিলাম তুমি এবার আমার বাসাটা দেখে আসো।
মাঃ যাব, ওদের পরীক্ষার ঝামেলা শেষ হোক এরপর।
রিফাতঃ তাহলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে।
মাঃ হ্যাঁ! আর এক সপ্তাহ।
এভাবে সবাই মিলে গল্প করতে করতে প্রায় অনেক সময় পার হয়ে গেল হৃদয় ও নাদিয়া পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হল, সাথে বাবাও বের হল কারণ বাবা থাকেন ঢাকার বাইরে, দিনাজপুরে। বাসায় শুধু মা একা থাকবে তাই রিফাতকে থাকার জন্য অনুরোধ করে, বাবা। আর সাথে কিছু খরচ দিয়ে যায়, এখন মা রিফাতকে কিছু কথা বলবে......
মাঃ রিফাত! তুমি তো একায় থাক, কয়েকদিন আমার সাথে থাকবে, মায়ের পাশে?
রিফাত মনে মনে বলে, এটারই অপেক্ষায় ছিলাম, তুমি কখন বলবে আমার সাথে থাকো ......
রিফাতঃ জ্বি! থাকতে বলতে, তোমার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
মাঃ ওটা, তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও। ছেলেদের কীভাবে মানুষ করতে হয়, আমার জানা আছে।
রিফাতঃ তুমি তো দেখছি, নাছোড়বান্দা। আচ্ছা, আমার একটা শর্ত আছে।
মাঃ আবার শর্ত! কী সেটা?
রিফাতঃ মায়ের আদর, হাতে তুলে খাইয়ে দেওয়া আর মন খারাপ থাকলে তোমার বুকে মাথা রাখা ও আমাকে তুই বলে সম্বোধন করা।
মাঃ আমি তো ভাবলাম কি না কী? এটা তো মায়ের প্রতিদিনের কাজ সন্তানকে লালন-পালন ও তাদের কোনো সমস্যায় ছায়া হয়ে থাকা।
রিফাতঃ তাহলে সকল শর্ত মঞ্জুর।
মাঃ হ্যাঁ! কবে আসছ, তাহলে?
রিফাতঃ হাতে কিছু কাজ আছে, সেগুলো গুছিয়ে নিয়েই আসব।
মাঃ কী কাজ? চল, আমি সেড়ে দেই।
রিফাতঃ অফিসের কাজ ও কাপড় গোছান।
মাঃ ঠিক আছে। চল, আমি থাকলে তোমার বস তোমাকে ছুটি দিবে।
রিফাতঃ আচ্ছা, তবে চল।
রিফাত ও তার মা বাড়ির কাজ তাড়াতাড়ি সেড়ে রিফাতের অফিসে গেল এরপর......
মাঃ এটা তোর অফিস? আমার তো এটা পরিচিত মনে হচ্ছে।
রিফাতঃ তাই নাকি?
এভাবে কথা বলতে বলতে বসের রুমে প্রবেশ করল, তখনই রিফাতের মাকে ফুফু বলে সম্বোধন করল......
বসঃ আরে ফুফু যে! তুমি আমার অফিসে?
মাঃ রাহী যে! আমি এসেছি একটি কাজে, যেটা তোকে করে দিতে হবে।
রাহীঃ তুমি আমাকে কাজ করতে বলবে আর আমি সেটা করব না, সেটা কখনো হয় নাকি? বল, কী কাজ?
মাঃ রিফাত! আমার ভাতিজা, ওর কয়েকদিন ছুটি লাগবে ওকে এক জায়গায় পাঠাব।
রাহীঃ তুমি বলেছ! ওর ছুটি মঞ্জুর। খালি বল কয়দিনের জন্য?
মাঃ মাত্র ১৫দিনের জন্য।
রাহীঃ ঠিক আছে, নিয়ে যাও আর তোমার ভাতিজাকে বল যে, এসে যেন কাজ ঠিকমত করে।
মাঃ কিরে, ঠিকমত কাজ করবি তো?
রিফাতঃ জ্বি! করব।
মাঃ তাহলে আজ আমরা উঠি?
রাহীঃ সে কী কতদিন পরে তোমাকে পেয়েছি, হালকা নাস্তা করে যাও।
মা ও রিফাত একসাথে বলে উঠল আমাদের ঢাকার বাইরে যেতে হবে তাই, আজ আর না খাই পরে একদিন হবে। আমাদের গাড়ি বিকাল ৪.৩০ মিনিটে, আর কিছু কেনাকাটা করতে হবে, এই বলে রাহীর থেকে বিদায় নিয়ে মার্কেটের উদ্দেশ্যে বের হল। তারা ইসলামিয়া মার্কেটে ঢুকল এরপর......
মাঃ তোর কী কেনা লাগবে? আমি শাড়ি, বোরখা ও সেন্ডেল আর একটি ওড়না কিনব।
রিফাতঃ এক সেট পাঞ্জাবী, টি-শার্ট, প্যান্ট ও সেন্ডেল আর একটা টুপি কেনা লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১১