somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেজবাবা সুমন আর সাকিবের অসহায়ত্ব

১২ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ /

মফস্বল শহরের এক বাড়ি। বাড়িটার বিশেষ এক কক্ষে কেউ যদি ঘুমিয়ে যায়, সে আর জেগে উঠতে পারে না। ওখানেই তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

এই খবরটা শুনবার পর, প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন টিম উত্তেজিত হয়ে পরে।পুরো কাহিনী জানার জন্য তথ্যদাতাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হয়।

তথ্যদাতার ভাষ্যমতে: বাড়িটার মালিক জ্বীন নিয়ে কাজ করতেন। ওনার নাকি বেশ কয়েকজন পোষা জ্বীন ছিল। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত উনার ওই পোষা জ্বীনগুলো দিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন।

মালিক মারা যাওয়ার পর, বাড়ির অন্য সদস্যরা কেয়ারটেকার রেখে বাসা ছেঁড়ে দিয়ে বিদেশে চলে যান। ওই কেয়ারটেকারই বাড়ির রক্ষনাবেক্ষন করতেন আর মাঝে মাঝে পর্যটকদের রুম ভাড়া দিতেন।

তথ্যদাতার ভাষ্যমতে: কেয়ারটেকার বাড়ির মালিকের কক্ষ এখনো পর্যন্ত যে চারজনকে ভাড়া দিয়েছিলেন, তাদের সবারই প্রচন্ড খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।চারজনের মধ্যে দুইজন রাতের বেলা ঘুমানোর পর, সকালে আর জেগে উঠতে পারেনি।একদম কোমাতে চলে গিয়েছিল ওই দুইজন। অন্য দুইজনেরও বেশ খারাপ একটা পরিণতি হয়েছিল।সকালে উঠে নিজেদেরকে অন্ধ অবস্থায় আবিস্কার করেন ওই দুইজন।

দুইজন যারা কোমাতে ছিল, দুই-তিনদিনের মধ্যেই উনাদের জ্ঞান ফিরে এসেছিল। কেয়ারটেকার উনাদের থেকে জানতে চেয়েছিলেন : আসলে কি হয়েছিল ওই রুমে ? উনারা কি কিছু দেখতে পেয়েছিলেন নাকি?

উত্তরে দুইজনই প্রায় একই ধরণের কিছু কথা বলেছিলেন। তারা বলেন যে: রাত ১১ টার দিকে তারা ঘুমাতে চলে গিয়েছিলেন।। খুব তাড়াতাড়িই তাদের ঘুম চলে এসেছিল। যখন ঘুম ভাঙ্গে, তখন ঘড়ির রেডিয়ামের আলোতে তারা দেখতে পান যে, সকাল ৭ টা বাজে। ঘুম থেকে উঠে , তারা জানালা খুলে দেন। জানালা খুলে দিয়ে দেখতে পান যে, বাইরে পুরোটাই অন্ধকার। কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে, তারা ঘরের বাইরে আসেন। বাইরে এসে খাবার হোটেল খুঁজতে থাকেন। এত অন্ধকারের মধ্যে তারা কিছুই ঠিকমত করতে পারছিল না। হোটেল খুঁজার চক্করে ভাড়া বাসাটাই পরে হারিয়ে ফেলেন দুইজনে। উদভ্রান্তের মত বাসা খুঁজতে থাকেন। প্রায় তিন/চার ঘন্টা পরে বাসা খুঁজে পেয়েছিলেন ওই দুইজন। বাসায় ঢুকে, আবার বিছানাতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ঘুম থেকে যখন জেগে উঠেন, তখন তারা নিজেদেরকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করেন। ডক্টর বলেন যে, আপনারা মাত্রই কোমা থেকে জেগে উঠলেন।!

২ /

বাসার পুরো কাহিনী শুনবার পর তো ইনভেস্টিগেশন টিম খুবই আগ্রহী হয়ে গেল তদন্তে যাওয়ার জন্য। সকল ধরণের রিস্ক বিশ্লেষণ করে,প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে শুক্রবার সকালে বের হয়ে পড়লেন তিন সদস্যের ভৌতিস্ট টিম।

ওখানে রাতে পৌঁছানোর পর, ভৌতিস্ট টিম তাদের প্ল্যান অনুযায়ী ক্যামেরা, মাইক্রোফোন , ইলেক্টোম্যাগ্নেটিক ডিভাইস বসানোর কাজ শুরু করে দেয়। রুমের সব আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র ক্যামেরার আলোগুলোই জ্বলছিল।

তদন্তের প্রথম ধাপ হিসেবে: ভৌতিস্ট টিম রুমের অদৃশ্য কোন সত্ত্বার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। অনেকবার আহবান করে, তাদেরকে কিছু সাইন দেখাবার জন্য। প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টার পরও যখন কোন লাভ হল না, উনারা সবাই তখন মেঝেতে বসে পড়লেন। মেঝেতে বসে আড্ডাবাজি চলতে লাগল।

আড্ডাবাজির এক পর্যায়ে টিমের সদস্য সাকিব ভাই হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন। সাকিব ভায়ের ভাষ্যমতে: ঘুমিয়ে পড়াটা ছিল একদমই অপ্রত্যাশিত। তদন্তের আগে লিডার সুমন ভাই ঘুমিয়ে যাওয়ার ব্যপারে সবাইকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তারপরও সাকিব ভাই হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন।

আরও ইন্টারেষ্টিং ব্যপার হল : ত্রিশ মিনিট পর সাকিব সাহেবের ঘুম ভেঙে যায়। উনি ধড়ফড় করে উঠেই দেখতে পান যে ; লিডার সুমন আর জিব্রান দুইজনই বেঘোড়ে ঘুমাচ্ছে।

ওনার মাথায় তখন একটা কথা হঠাৎ করে খেলে যায়: "এই রুমে যে ঘুমিয়ে যায়, সে আর জেগে উঠতে পারে না।" উনি তখন তড়িঘড়ি করে সবাইকে জাগিয়ে দেন।

কোন ঝামেলা ছাড়াই, সবাই আবার জেগে উঠল।

৩ /

রাত তখন দুইটা অথবা তিনটা। রুম পুরো অন্ধকার। বাইরের ল্যাম্প পোস্টের আলো রুমের ভিতরে ঢুকছে কিছুটা। এক্সপেরিমেন্ট তখনও চলমান।পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে চলতে হঠাৎ করে ভৌতিস্ট টিমের ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাটারির সমস্যা মনে করে, জিবরান ভাই দ্রুত ব্যাকআপ ক্যামেরা সেট করার কাজ শুরু করে। রুম তখন পুরো অন্ধকার। টর্চগুলোও কাজ করছিল না ভালমতন।

অবস্থাটা আরও ভীতিকর হয়ে উঠে, যখন হঠাৎ করে ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল করে। শেষ ভরসা রাস্তার ল্যাম্পের আলোও বন্ধ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল রুমটা।

জানালা দিয়ে অনেক দূরের এক টাওয়ারের মাথায় আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। সাকিব ভাইয়ের হঠাৎ মনে হতে লাগলো: ওই টাওয়ারের মাথার আলোই আমাদের শেষ ভরসা। ওই আলো নিভে গেলেই আমরা সবাই শেষ। সুমন ভাইও টাওয়ারের আলোটা দেখছিল। হঠাৎ ওনার মনে হল, ওই আলোটাও কেন জানি টাওয়ার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ওনাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে।

সুমন ভাই তখন সাকিব ভায়ের দিকে তাকালেন। সাকিব ভাই নিজেও ব্যপারটা খেয়াল করে থ হয়ে আছেন।

কয়েক মিনিট পরই কারেন্ট আবার চলে আসে।

সুমন ভাই ডিভাইস, টর্চ আর ইনফ্রারেডের এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেন না। তার উপর টাওয়ারের আলোটার হারিয়ে যাওয়াকেও অস্বাভাবিক ভাবতে লাগলেন। তিনজন মিলে আলোচনা করে, ওই বাড়ি থেকে সেই গভীর রাতেই বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

রুমটাতে বিশেষ কোন কিছুর অস্তিত্ব না পেলেও, কারেন্ট যাওয়ার পর সুমন আর সাকিব ভাই কয়েক মিনিটের জন্য যে অসহায়বোধ করছিলেন সেটার ব্যাখ্যা উনারা আজও খুঁজে পাননি।








সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×