somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বিন ভর, অলৌকিক ক্ষমতা এবং বেজবাবা সুমন

১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস সেভেন পড়ুয়া কাজলের আজকাল বেশিরভাগ সময়ই মন খারাপ থাকে। বয়সের যে সময়টা হাসি আনন্দে থাকার কথা, সেই সময়টাতে কাজল থাকে মনমরা।

অবশ্য মনমরা শুধু কাজল নয়, তার মা থেকে শুরু করে বড় দুই বোনের মনেও একফোঁটা শান্তি নেই।

অশান্তির কারণটা তাহলে খোলাসা করেই বলি ৷

কাজলেরা তিন বোন, এক ভাই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অন্য দুই বোনকে নিয়ে মায়ের সাথে মিরপুর ১১ তে থাকে কাজল মিয়া।

মাস দুয়েক ধরে, কাজলের ক্লাস নাইন পড়ুয়া বোন, নাইমা, সারাক্ষণই বিছানাতে শুয়ে থাকে। কথাবার্তা একদমই বলে না।
যে মেয়েটা দুই মাস আগেও ছিল উচ্ছ্বল প্রকৃতির, সেই মেয়েই এখন হয়ে গিয়েছে মানসিক সমস্যাতে আক্রান্ত। ঘরের ভিতর কোনরকম আলো ঢুকতে দেয় না। বিছানার চাদরও পরিস্কার করতে দেয় না।

বল প্রয়োগ করতে গেলে, প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেঁচি করে। ইন্টারেস্টিং ব্যপার হলঃ নাইমার মা পর্দা সরিয়ে দিয়ে, আবার কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকলে দেখতে পায় যে, পর্দা একদম আগেরমত টেনে রাখা হয়েছে।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন নাইমা একেবারেই খাওয়া দাওয়া করা ছেড়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে খাওয়াতে না পেরে, নাইমাকে স্যালাইন এবং নাকে টিউব লাগিয়ে খাবার দেওয়া শুরু হয়।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে , ডাক্তাররাও রোগীর সমস্যা ঠিকমত চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছিল।
নাইমের এই অবস্থা যখন চলমান, তখন ছিল ২০১১ সালের মার্চ মাস। সেই সময়টাতে কাজল ওর এক প্রিয় রেডিও শোয়ের মাধ্যমে বেজবাবা সুমনের কথা জানতে পারে। বোনের অবস্থাকে জ্বিনে ধরা টাইপ কোন ঘটনা মনে করে, বেজবাবার শরণাপন্ন হয় ছোট্ট কাজল।

বেজবাবার সাথে দেখা করে, শয্যাশায়ী বোনের কেসটা আমলে নেওয়ার জন্য কাজল খুব করে অনুরোধ করতে থাকে। কাজলকে বেজবাবা অনেকবার বলেঃ "আরে বাবা, আমি কোন হুজুর, কবিরাজ না, তুমি কেন আমার থেকে হেল্প চাইতেছ? "

কাজল নাছোড়বান্দার মত অনুরোধ করতেই লাগল।

পরে, কাজলের নাছোড়বান্দা মনোভাবের কাছে হার মেনে, সুমন ভাই প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনে যেতে রাজি হয়ে যায়।

দুইদিন পরে, সুমন ভাই ওনার টিম মেম্বার সাকিব এবং জিবরানকে নিয়ে মিরপুর ১১ তে কাজলদের বাসাতে যায়। যাওয়ার পর, পুরো টিমকে দেখে কাজলের মা খুশিতে কেঁদে ফেলেন। মেয়ের পুরো ইতিহাস টিমের কাছে তুলে ধরেন।
সবকিছু শোনার পর, বেজবাবা নাইমার রুমে ঢুকে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর অনুমতি চান।

মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে রুমের ভিতরে যান কাজল, কাজলের বোন আর সুমন ভায়ার টিম।

রুমে যাওয়ার পর,নাইমাকে ভাবলেশহীনভাবে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। অপরিচিত তিনজন মানুষ যে রুমে ঢুকেছে, নাইমার সেটাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
তদন্তের শুরুতে সুমন ভায়া নাইমাকে বেশকিছু প্রশ্ন করে।

প্রশ্ন শোনার পরও নাইমার মুখে কোন কথা নেই। এক পলক বেজবাবাদের দেখে, আবারও ছাদের দিকে মনোনিবেশ করল নাইমা ।

প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার কোন সম্ভাবনা না দেখে, সুমন ভাই জিবরানকে ইএমএফ রিডার বের করে নিয়ে আসতে বলেন।

ওই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষার সময় বেশ ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটল। ইএমএফ রিডারকে নাইমার কাছে যখন আনা হচ্ছিল, তখন যন্ত্রের কাঁটা কোনধরণের মুভ করছিল না। কিন্তু যখন রিডারকে জানালার কাছে বা আলমারির কাছে নেওয়া হচ্ছিল, তখনই যন্ত্রটা শক্তিশালী ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড শো করছিল।

এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা যখন চলছিল, সেসময় হঠাৎ করে নাইমা সুমন ভাই আর টিমের উদ্দেশ্যে কয়েকটা কথা বলে।
প্রথমেই নাইমা সুমন ভায়ের এমন কিছু ব্যক্তিগত কথা বলেন, যেটা শুনে বেজবাবা প্রচন্ড অবাক হয়ে যান। এককথায় পুরো থ বনে যান বেজবাবা।

এরপর, নাইমা জিবরান ভায়ের কিশোর বয়সের ব্যান্ড দল নিয়ে এমন কিছু কথা বলেন, যেগুলো জিবরান ভাই ছাড়া আর কারোই জানার কথা না। সুমন ভাই এর মত জিবরানও তাজ্জব বনে যায়।

শেষে, সাকিব ভাইয়ের উদ্দেশ্যে নাইমা বলে উঠেঃ "বালিশ চেঞ্জ করে লাভ নাই"।

বালিশের কথা শুনে, সুমন ভাই সাকিব ভায়াকে বলেনঃ " কিসের বালিশের কথা বলছে, সাকিব? "
সাকিব তখন বলেনঃ "আসলে আমি পরের মাসে বাসা শিফট করব, এ কারণে নতুন বালিশ কেনার চিন্তা করছিলাম"।

সাকিব ভায়ের মুখে এ উত্তর শুনে, সুমন ভাই বলে বসলেনঃ " কি!! এ কথা এই মেয়ে জানলো কিভাবে?"

দুইমাস ধরে বিছানাতে শয্যাশায়ী মেয়ে কিভাবে এই কথাগুলো জানতে পারল, সেটা বেজবাবার মাথাতে কিছুতেই ঢুকছিল না।

শেষে দুই দিনের সময় নিয়ে, বেজবাবার টিম ওই বাসা ত্যাগ করল।

অফিসে এসে সবাই মিলে কেসটা নিয়ে মিটিংয়ে বসল।

প্রায় বেশ কয়েক ঘন্টার আলোচনার পর, সবাই-ই একমত হলঃ নাইমার উপর নিশ্চিতভাবেই জ্বিন ভর করেছে। ওই জ্বিনের সাহায্যেই নাইমা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যপারগুলো বলতে পারছে।

এছাড়াও নাইমার উপর কালোজাদুর প্রভাব রয়েছে। ব্ল্যাক ম্যাজিকের এলিমেন্টসগুলো ওই রুমেই থাকতে পারে, কারণ ইএমএফ রিডার রুমের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বিপ বিপ করেছিল।

এতসব কিছু মনে হওয়ার পর, বেজবাবা কাজলদের বাসাতে ফোন দেন। কাজলের বড় বোনকে বিস্তারিতভাবে ওনাদের তদন্তের ফলাফল জানান।

সবকিছু শুনে কাজলের বোন টিমের কাছে সমাধান জানতে চায় ৷

সুমন ভাই কাজলের বোনকে জানায়ঃ "আপা, আপনি সবার প্রথমে কালোজাদু কে করেছে সেটা বের করেন। যদি বের করতে পারেন, তাহলে ওই কালোজাদুকরই এই জ্বিন ছাড়াতে পারবে।"

"আপনি নাইমার রুমের বিছানা, বালিশ, আলমারি, জানালার পর্দা এসব তন্ন তন্ন করে দেখেন, আমি নিশ্চিত কালোজাদুতে ব্যবহৃত তাবিজ, চুল, সূতা, কাগজ ইত্যাদি ওখানেই পেয়ে যাবেন"

"ওগুলো পাওয়ার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবেন"

সব দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর, কাজলরা ওই কালপ্রিটকে খোঁজার কাজ শুরু করে। শুরুতেই সন্দেহ হয়, তাদের এক বুয়ার উপর, যাকে চুরির অপরাধে তিন মাস আগে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছিল। জমিলা বুয়া ওদের বাসায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করেছিল। বাড়ির নাড়িনক্ষত্র ওনার সব জানা।

বুয়াকে ডেকে আনানোর পর কালোজাদুর ব্যপারটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বুয়াকে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় ৷ এত এত জেরার মুখে পড়ে, বেশ কিছুক্ষণ পর জমিলা বুয়া বান মারার কথা স্বীকার করে। চাকরি থেকে ছাঁটাই করার প্রতিশোধ হিসেবে সে এই কাজ করে বলে জানায়। তাবিজ, মন্ত্র লিখা কাগজ সবকিছুই বের করে দেয় নাইমার রুম থেকে।

এরপর কালোজাদুর সবকিছু ছাদে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ইন্টারেস্টিং ব্যপার হচ্ছেঃ তাবিজ, কাগজ পুড়িয়ে ফেলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নাইমা কিছুটা স্বাভাবিকভাবে খাওয়া দাওয়া শুরু করে।

অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কাজলের পরিবার স্বাভাবিক নাইমাকে ফিরে পেতে শুরু করে। শান্তির সুবাতাস ফিরে আসে কাজলের পরিবারে।

নাইমা ভাল হয়ে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর, কাজল বেজবাবাকে মিরপুর ১১ তে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যায় ৷ মজার ব্যপার হলঃ নাইমা বেজবাবাকে একেবারেই চিনতে পারেনি। জ্বিন ভর করা অবস্থাতে যে কথোপকথন হয়েছিল, তা নাইমার একদমই মনে নেই।

(রেডিও ফুর্তির ভূত এফএম প্রোগ্রামে প্রচারিত একটি গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই লিখা)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×