somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিজ্ঞতা

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ২টা। বাবার সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় কেউ নেই, দূরে কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো, বসন্তের মৃদু বাতাসে আমার চুল উড়ছে। আমি হেঁটে চলেছি, গন্তব্য ঠিকানা বিহীন।
পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে চলে যাওয়া একটি বাসের ধুলো এসে পড়লো গায়ে, হাঁটতে হাঁটতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে আসছি জানিনা, সামনে থেকে আসা ট্রাকের শব্দে ধ্যান ভাঙলো, রাস্তার মাঝখানে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে ট্রাকের আলোয় কিছু দেখতে পাচ্ছিনা, হর্ণের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোর তীব্রতা বাড়তে লাগলো। আমি দুই হাত দিয়ে আলো ঠেকাতে বৃথা চেস্টা করলাম, তারপর কিভাবে যেন সেফ সাইডে চলে গেলাম বলতে পারবোনা। আমি বাস্তব জগতে ফিরে এলাম, ট্রাকের ড্রাইভার কি যেন বলল, শুনতে পাইনি।
এই মুহূর্তে আসেপাশে কেউ নেই। দূরে কয়েকটা মানুষ দেখা যাচ্ছে, পাশের যাত্রি বিশ্রাম এর বেঞ্চিতে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর...
.
“মন খারাফ? চলেন মন ভালা কইরা দিমু”
আমি উদাস চোখে তাকালাম, একটি রাতপরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তার ঠোঁটের কড়া লিপস্টিক ল্যাম্প পোস্টের আলোয় চিকচিক করে করছে, চোখে ঘন কাজল, সেই চোখে কোন লজ্জা নেই, কোন ভয় নেই, অজানা এক কামনার আকর্ষণ।
.
-এমনেচাইয়া কি দেখেন? যাবেন কিনা কন, আমার কিন্তুক অনেক ডিমান্ড।

-কিরে বুবলি কার লগে এত কথা কস? (আরেকজন এগিয়ে আসে)
-দেহস না ফুলঝুরি, এত সুইট কইরা কইতাছি, এই ছেলে কিছুই কয়না।
-কি কস, তোরে দেইখা রাজি হইবো না? এই আফনে পুরুষ তো?
.
একসাথে দুজন হেসে উঠলো, আমি পকেটে থেকে টাকা বের করে দিলাম।
- ৫০ ট্যাকা!! এই বুবলির দাম ৫০০ টাকা, তবে তোমারে আমার পছন্দ হইছে তুমি কিছু কম দিও....চলো।
(মেয়েটি আমার হাত ধরে টান দেয়)
.
-আমি যাবোনা, টাকাটা আপনি রেখে দিন।
-যাইবানা তো ট্যাকা দিছো কেন? ও বুঝছি ভিক্ষা, এই বুবলি ভিক্ষা নেয়না। নেন আপ নের ট্যাকা।
- আমার কাছে এর চেয়ে বেশী টাকা নেই। তাছাড়া এই টাকা আমার কাছে এখন মূল্যহীন, আপনার কাজে লাগতে পারে রেখে দিন।
-লইয়া ফেল, ট্যাকা হইলো আমাগো ভগবান।
.
বুবলি নামের মেয়েটি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
-তুমি কি কানতে ছিলা? (কন্ঠে মায়া)
-এগুলা জাইন্না আমাগো কি কাম, চল কাস্টমার খুঁজি।
.
ফুলঝুরি হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, বুবলি তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সে চোখে অন্যরকম মায়া, আমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম। চারপাশের বাতাসটা কমে গেছে, ভেতর থেকে আবার কান্না চেপে আসলো আমার।
.
“ঐ যা আছে বের কর” ছুড়ি হাতে দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। আমি তাকিয়ে আছি লোক টার চোখের দিকে, সে চোখ টক টকে লাল। লোকটি এবার আগের চেয়ে জোর গলায় বলল।
.
- ওস্তাদ আমার মনে হয় কানে শুনেনা।
-তুই দেখ কি আছে।
-ওস্তাদ কিছুই তো নাই।
-ভালো কইরা দেখ।
-নাই ওস্তাদ।
-“ঐ......বের কর কি আছে” ওস্তাদের চোখ থেকে মনে হল আগুন বেরুচ্ছে ভয়ে আমি কেঁপে উঠলাম।
.
-ওস্তাদ আমার মনে হয় বোবা।
-“বোবা কিনা এখুনি প্রমাণ হইবো” ওস্তাদ ছুড়ি উপরে তুললো, চোখের পলকে ছুঁড়িটা নিচে নেমে এলো, আমি সরে গেলাম।
.
-“হিরু শক্ত কইরা ধর...” হিরু নামের ছেলেটি এগিয়ে আসছে, আমি ফাঁক বুঝে দিলাম দৌড়। পিছনে ওরা তাড়া করছে। কিছুক্ষণ পর, হাইওয়ে পুলিশের দেখা পেয়ে গেলাম। ঘটনা বুঝে পুলিশ এগিয়ে এলো, ততক্ষণে দুজন আড়ালে। পুলিশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করলো, তারপর উপদেশ দিলো, আর চলে যেতে বলল। হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়তেই ভিতর থেকে ডুকরে কান্না বের হয়ে আসলো, বাসার দিকে হাঁটা দিলাম।
.
মা মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে আছে, আমার ভিতরে ঢোকার শব্দ শুনে মাথা তুলে তাকালেন, তাঁর চোখ ছিল কান্নায় ভেজা আর মমতায় ভরা।
.
মাঃ অনেক বড় হয়ে গেছিস তাইনা? কত বড় সাহস তোর বাসা থেকে বের হয়ে গেলি? (মা কান্না করে দিলেন)
নিজের ভুল আর বোকামি বুঝতে পেরে আমি অনুতপ্ত। মায়ের সাথে আমিও কান্না করে দিলাম।
.
-দেখ তুই আবিদকেও কাঁদিয়েছিস, সেই কখন থেকে বলছে, “আম্মা আম্মা, আল্লাহ্‌কে বলেন যেন ঝড়-বৃষ্টি না দেয়, তাহলে ভাইয়া কি করে আসবে?”
আমার পরিবারের এত ভালবাসা দেখে আমি নিজের ছেলেমানুষিকে উপলব্ধি করতে পারলাম, ছোট ভাইটাকে সরি বলে গালে চুমু দিয়ে দিলাম।
.
আমার মত কেউ এমনটি করবেন না, এই পৃথিবীতে পিতা-মাতাই একমাত্র আপনজন। তারা শাসন করেন আমাদের ভালোর জন্য, তাদের কথা মাঝে মাঝে কটু মনে হতে পারে, শুনে বিরক্ত লাগতে পারে। এই বয়সটাই অদ্ভুত কোন উপদেশ আর বাঁধা মানতে চায়না, নিজের খেয়াল-খুশী মত চলতে চায়, আর কথায় কথায় রাগ উঠে আর মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু, তখন মাথা-গরম না করে ধৈর্য ধরা উচিত। ধৈর্য ধরা হল মহৎ কাজ।
সেদিনের ঘটনায় অনেকগুলো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। সেদিন হয়তো আমার সাথে আরো খারাপ কিছু হতে পারতো, হয়তো মারাও যেতে পারতাম।
.
আমাদের সবারএকটা কথা মনে রাখতে হবে মা-বাবা যা বলেন আমাদের ভালোর জন্য বলেন। তাদের কথা মেনেই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

লিখা: নাহিদ হোসাইন
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×