somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:: সে রাতে পূর্ণিমার সাথে আমি তোমাকেও দেখেছি ::

০৮ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
তখনও বুঝিনি আকাশে অতটা উজ্জলতা ছিল। হঠাত করেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। মুমু বল্ল সে ছাদে যাবে। বন্ধ ঘরে তার ভাল লাগছেনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে তাই বেরিয়ে আসি। মোমের আলোয় যতটা দেখা যায় ততটা দেখে সিড়ি বাইতে থাকি। একহাতে মোম অন্য হাতে ধরে রাখি মুমুকে।

সিড়িটা বেশ খাড়া। অন্যবাড়ির দেড় সিড়ি সমান এর একেকটা সিড়ি! মুমুকে বলি, কষ্ট হচ্ছে উঠতে। ম্লান হাসি হেসে বলে, তুমি জিজ্ঞেস করতেই উধাও হয়ে গেল! আমি দাঁড়িয়ে যাই। ওর চোখে চোখ রাখার চেস্টা করি। মোমের আলোয় কেমন এক মায়ার খেলা দেখতে পাই। বিষন্নতার মাঝে খেলা করে যেন অন্যরকম এক আলোর ছটা।

সিড়ি ঘরের দরজাটা খুলতেই আমি চমকে উঠি। বিস্ময়ে উল্লাস করে উঠে মুমু। কতদিন পর মুমু এমন বিস্মিত হয়! আশ্চর্য রুপালী আলোর কেমন এক ঘোর লাগা সময়ে আমরা প্রবেশ করি। মুমু মাদক জড়ানো কন্ঠে বলে, আজ কী পূর্ণিমা! আমি বলতে পারিনা। কতদিন হল পূর্ণিমার খোজ নিতে পারিনা।

ছাদে ছড়িয়ে আছে ছোটবড় বেশকটা ফুলের টব। বাগান বাগান একটা ভাব আনার চেস্টা করা হয়েছে। তিনতলার মিতা ভাবীর কাজ। সিমেন্ট দিয়ে দুটি বেঞ্চও বানানো হয়েছে। তারই একটাতে বসি। আসলে আমি বসি। মুমু দাড়িয়ে থাকে বেশ কিছুন। চাদের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। কয়েক মিনিট পর, কোমরের পেছনে একটা হাত আর আরেক হাতে তলপেটটা হালকা তুলে ধরে এক অনুপম ভঙ্গিতে মুমু বসার চেস্টা করে। আমি হাত বাড়িয়ে ওকে একটু ধরতে চেস্টা করি। মুমু মানা করে, বলে দেখিনা বসতে পারি কিনা... বলতে বলতে বসেও পড়ে। তারপর হেসে বলে, দেখলে, বসে পড়লাম!

বেশিক্ষন আর বসা হয়না।প্রথমে মাথাটা আমার কাধে হেলিয়ে দেয়... তারপর পুরোটা শরির। একসময় বলে পা’টা একটু তুলে দাওতো...। আমার কোলে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে পড়ে থাকে। কস্ট হচ্ছে কিনা জিজ্ঞেস করলে বলে, নাহ... অনেকদিন ধরে এমন ভাল লাগেনা... কেমন চাদ উঠেছে দেখ আকাশে।

পূর্ণিমা নিয়ে আমার অত রোমান্টিকতা ছিলনা কোনকালেই। মুমু আমাকে কোন ফাঁকে চাঁদকে ভালবাসা শেখালো জানিনা। আমিও এখন মুগ্ধতা নিয়ে চাঁদ দেখতে পারি সারাটা রাত!

কেমন এক কস্টের শব্দ উঠে মুমুর গলা থেকে। আমার সকল ভূবন কেঁপে উঠে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই আমার হাতটা ধরে নিয়ে তার পেটে হালকা ভাবে রেখে দেয়! সেখানে তখন উথাল পাথাল ঢেউ উঠেছে। বলি, কস্ট হচ্ছে তোমার? মুমু বলে, হ্যা, আবার না। আমি ধ্বন্দে পড়ে বলি, কি বল।

তখনও চলছে উথাল পাতাল ঢেউ। আমি বলি কি দিয়ে এমন ঢেউ তুলে? হাত? না বলে মুমু... এটা হল পা। আঁতকে উঠি! পা! তাহলেতো খুব শক্তি নিয়ে নাড়াচ্ছে। আমাকে আশ্বস্ত করে বলে, নাহ। বরং না নড়লেই কষ্ট। মনে ভয় হয়, কী হল সোনাটার? ওর কি কোন সমস্যা? নড়াচড়া করা মানে ও সুস্থ আছে! আমি কোন কথা বলিনা, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।

মুমু জিঙ্গেস করে, আজ কত তারিখ। জানুয়ারির বিশ। আঙ্গুলে গুনতে গুনতে বলে, তাহলেত আর দশ দিন। আমি কেঁপে উঠি। ওর হাতটা শক্ত করে ধরি। মুমু বলে, কি হল। তুমি এমন করছ কেন? কই আমাকে একটু সাহস দেবে! না উল্টো নিজেই ঘাবড়ে যাচ্ছ। আমি হাতটা আরও শক্ত করে ধরি। বলি, না ঠিক আছে।


২.
উনত্রিশ তারিখ বিকেলে হাসপাতালে যেতে হয়। মুমুর শরিরটা তেমন ভালনা। ডাক্তার আগেই বলেছেন অপারেশন লাগবে। তাছাড়া আরও সমস্যা হতে পারে। তাই আগে থেকেই হাসপাতালে থাকতে হবে। আগের রাত পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম। বিচ্ছিন্নতা। কেমন খালি খালি লাগে সব কিছু। লেবার ওয়ার্ডে পুরুষদের যেতে দেয়না। আমার তবু যেতে ইচ্ছে হয়। আমি করিডোরে পায়চারি করি। মা আমাকে বলেন, তুই বাড়িতে চলে যা। অন্যবেলাতে আসিস। আমি হ্যা না কিছুই বলিনা। মাথা নেড়ে আবার পায়চারি করতে থাকি।


৩.
সন্ধা তখনও নামেনি। অথবা রাত হয় হয়। সাদা সাদা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকায় মুমু। আমি কোন চোখে তাকাই তার কোন বর্ণনা নিজের কাছে নেই। একবার ছুতে মন চায় মুমুর কোমল গাল। ওর কাঁধে হাত রেখে বলতে ইচ্ছে করে, এইতো আমি আছি। বলা হয়না। চেনা অচেনা কতজন তাকে ঘিরে ধরেন। আমি আর এগুতে পারিনা। চোখে শুধু চোখ রাখা হয় মুহুর্তের জন্য। দরজা পেরিয়ে নিঃশব্দের ওপাশে চলে যায় মুমু। মিনিট পাঁচেক পর সেই দরজায় জ্বলে ওঠে লাল রঙের বাতি... আমি দাড়িয়ে থাকি... আমি হাটতে থাকি...


------------------------------------------------------

ছবি : মাশীদের ব্লগ থেক মেরে দেয়া। এত ভালোবাসায় আর কোন হাতের যুগলকে জড়াজড়ি করে থাকতে দেখিনি কখনও।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৭ দুপুর ২:১৪
৭৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×