somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:: কাল ঘুম নেমে আসে তার দু'চোখ জুড়ে ::

২৫ শে মে, ২০০৭ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
কাল রাতেও ঘটনাটা ঘটল। আমি খেতে বসতেই অনন্যা এসে হাজির। হিস হিস করে বলে, ‘ ভাবী তোমার লজ্জা করেনা? নিজের বুঝ ঠিকই বুঝ, আর অন্যের কিছু পেলে হুলস্তুল বাঁধিয়ে দাও!’ আমি আর খেতে পারলামনা। গলায় কষ্ট দলা পাকিয়ে ব্যাথা শুরু হল। চব্বিশ ঘন্টা আগের ঘটনাটা বলতে গিয়েও রুপার গলাটা ধরে আসে। কেঁদে ফেলে। জহির বউকে শান্তনা দেয়। আহা কেঁদনাতো। ঠিক হয়ে যাবে সব। কালই আমি বকে দেব অনন্যাকে। রুপার মন অন্যদিকে ফেরাতে চেস্টা করেন। তবু সে ফুঁপাতে থাকে। বলে যায়, মা-ও কিছু বল্লেন না। যেন আমি মহা অন্যায় করেছি। তারইতো মেয়ে। কিছু যদি হয়, আমার থেকেতো তারই বেশি কষ্ট হবে। কিন্তু তার ভাব দেখে মনে হল অনন্যা যা করছে ঠিক করছে। আমি এ নিয়ে কথা বলে অন্যায় করেছি! আর এমন কি আছে যেটা আমি আগলে রাখি। কি এমন অপরাধ আছে আমার...

রুপার হয়ত আরও কিছু বলার ছিল। পিয়ারি সেটা হতে দিলনা। রাত একটায় তার একবার খাবারের দরকার হয়। বুকের দুধ পায়না বলে সময় ভাগ করে ফিডার দিতে হয়। রুপা ব্যস্ত হয়ে পড়ে পিয়ারিকে নিয়ে। জহির হাপ ছেড়ে বাঁচে। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে রুপা অন্যভূবনে চলে যায়। জহির মুগ্ধ চোখে রুপার সন্তান সেবা দেখতে থাকে। তার চোখ বুজে আসতে চায় ঘুমে। তবু সে জেগে থাকেন। পিয়ারিকে দেখে। রুপাকে দেখে...।

সামলে নিয়েছে রুপা। জহিরের দিকে তাকিয়ে বলে, কি হল তুমি আজ দেখি বড় জেগে আছ। ঘটনা কি? নির্দোষ হাসি হেসে জহির বলে, কাল শুক্রবার না? সকালেতো আর দৌড় নাই। রাত জাগলে সমস্যা কি। সে রুপার দিকে তাঁকিয়েই থাকে। রুপার কেমন মায়া হয়। এই মানুষটা এমন কেন। মাটি মাটি ভাব নিয়ে এই জামানায় এসে সে কিযে ভূল করেছে এই ব্যাপারটাও সে বুঝেনা। শুধু নিজেই নয় সাথে তার মত অতি সাধারন মেয়েটাকেও বিপদে ফেলেছে। আর রুপাও কেমন মেয়ে। এমন ছেলেদের বউ হতে হলে একটু ডাকাবুকো হতে হয়! একজন মেনমেনা হলে আরেকজন হবে গরমাগরম। যাতে সব কিছু পুষিয়ে নেয়া যায়। তা না রুপা জহিরের চেয়ে আরও কয়েকগুন বেশি নরম সরম। কোন কিছুই সামলাতে পারেনা। রাতে শুধু বালিশ ভেজায় আর বেচারা জহিরকে কষ্ট দেয়।

দেড়টা বেজে যায় পিয়ারিকে সামলাতে সামলাতে। জহির তখনও জেগে আছে। মেয়ের নরম নরম গালে একটু পর পর গাল ঘসে দেয়ার চেস্টা করছে। রুপা তাকে বার বার বলছে, এমন করোনা প্লিজ। ঘুম ভেঙ্গে যাবে ওর। কে শুনে কার কথা! জহির এই যদি হাত বাড়ায় তো পরনেই মুখ বাড়ায়। ফেরাতে গেলে সে রুপার দিকে ঠোট বাড়িয়ে দেয়। কি এক যন্ত্রনা... পিয়ারিকে কোন মতে বিছানায় রেখে যুদ্ধ ঘোষনা করে রুপা। বলে আস দেখি, আমার সাথে আস। দেখি কত শক্তি তোমার। জহির ফিস ফিস করে বলে, এভাবে উসকানি দিতে নাই। জাননা আমার ভেতর বারোশ বাঘ ঘুমিয়ে থাকে! তাকে জাগাতে যেওনা... রুপা তার রাজহংসির মত কন্ঠ উচিয়ে বলে, আহারে কি আমার বাঘ পুষনেওয়ালা!

সকালে ঘুম ভাঙলে জহির দেখে সে একা বিছানায় পড়ে আছে। রুপা, পিয়ারি কেউ নেই। চোখ কচলে ঘড়িতে তাকায়, সাড়ে এগারটা। লাফ দিয়ে উঠে। আজ বাজারে যেতে হবে। জুমআর নামাজ পড়তে হবে। আর এখনও সে ঘুমে...

জুমআর পর বাসার সবাই এক সাথে বসে খাওয়ার নিয়ম। টেবিলে বসেই টের পায় জহির, আজ কেমন যেন এক গুমোট ভাব। কি যেন এক বাধা সবার মুখে থমথমে ছাপ একে দিয়েছে। মা’ই প্রথম কথাটা তুলেন। জহির কাল তোর বউ কি করেছে শুনেছিস। কি করেছে? কি করেনাই সেইটা বল আম্মা, বলে খাকারি দিয়ে উঠে অনন্যা। অনেক দিন পর জহিরের রাগ উঠে, ধমক দিয়ে উঠে, মাকে কথা বলতে দে অনন্যা। অনন্যা সেই কথায় কান দেয়না, আরও জোরে চেচিয়ে বলে, কেন, আমি বলবনা কেন? তোমার বউ আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা বলবে আর আমি কিছু বলতে পারবনা। জহির ঠান্ডা গলায় বলে, কি বলেছে রুপা? অনন্যা সপ্তমে চড়ানো গলায় বলে, আমাকে নিয়ে তোমার বউ মায়ের কাছে বিশ্রি বিশ্রি কথা বলেছে কাল বিকেলে। সে বলেছে, আমি নাকি সুমনের সাথে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই। সুমন একটা বাজে ছেলে। তার সাথে থেকে আমিও বাজে হয়ে যাব... জহির ক্ষেপে গিয়ে চিত্কার করে উঠে, ঠিকই বলেছে রুপা।

এবার কথা বলেন মা। জহির তুই যদি তোর বউয়ের কথায় লাফ দিস তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু ঘরের বউ হয়ে সে যদি আমার মেয়ের বিরুদ্ধে এমন কথা বলে সেটা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া সুমনতো খারাপ ছেলে নয়। এই বয়েসে অনেকেরই অনেক সমস্যা থাকে। সব ঠিক হয়ে যাবে। জহির অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মাথায় মায়ের কথাগুলো ঠিক ঢুকেনা। কয়েক মূহুর্তের জন্য বেশ বড় গলায় কথা বল্লেও আবার সে চুপসে যায়। গলায় খাবার আটকে যায়। হাত ধুয়ে ফেলে। আর খেতে মন চায় না। রুপা তার মতো উঠতে পারেনা। টেবিলে বসে তাকে অনন্যার অশ্রাব্য কথামালা হজম করতে হয়।

মন খারাপ করে জহির ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পিয়ারিকে নিয়ে অন্য বন্ধের দিনে এই সময়টায় সে খেলা করে। আজ আর তাতে মন উঠলনা। ঘরটাই তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠল। সুমনের মত একটা বাজে ছেলের জন্য মা কথা বলবেন এটা ভাবতেই তার মাথায় টনটন করছে। রুপা আগেও বলেছে, অনন্যার চালচলন ভাল ঠেকছেনা। তাছাড়া সুমনের সাথে তার সম্পর্কের কথা দ্রুত সবার মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা থামানো দরকার। রুপা কাল বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় অনন্যাকে সুমনের বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছে। সুমনের বাবা-মা দুজনেই দেশের বাইরে থাকেন। ভাই, বোনও তাই। খালি একটি বাড়িতে এভাবে যাওয়া শোভন নয় সেই কথাটাই সন্ধায় শাশুড়িকে বলেছিল রুপা। তার জের ধরেই এতকিছু।


২.
অনন্যার মুখে খই ফুটছে যেন। রুপা তার ভাইটার মাথা চিবিয়ে খেয়েছে। সহজ সরল পেয়ে যা ইচ্ছা তাই করছে। চাকরির নামে সারদিন বেশ্যাগিরি করে বেড়ায় আর ঘরে এসে মহিয়সি ভাব ধরে। মা’ও বলেন তার ইচ্ছামত। নিজের ইচ্ছেমত ছেলেটার বিয়ে দিতে পারলেননা। কোত্থেকে এক আকামের মেয়েকে ছেলে জোগাড় করে আনল আর আজ সেই মেয়ে তার ঘরের ইজ্জত নিয়ে কথা তুলে! এইসব প্যাচঘোচের কথায় রুপার মাথা ঝিমঝিম করে। সে ভেবে পায়না তার অপরাধটা কোন যায়গায়। পালিয়ে আসুক আর যাই করুক সেতো এই ঘরের বউ। তারকি কোন অধিকার নেই ঘরের ভাল মন্দ কিছুতে মত দেবার। আর এটাইবা কেমনতরো আক্রমন। তার চরিত্র নিয়ে কুত্সা রটানোর মত রুচি এরা কোত্থেকে পেল। জহিরের উপর তার রাগ হতে থাকে। এই সময় কেমন সে পালিয়ে গেল। তার উপর দিয়ে এত অশ্লিল ঝড় বয়ে যাচ্ছে আর জহির কিনা বাইরে বাতাস খেয়ে বেড়াচ্ছে!

কথার তুবড়ি এখন জমেছে রুপার চরিত্র আর চাকরির উপর। বস্তিতে ঘুরে বেড়ানোর কাজ কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে করে বলে কোনদিন শুনেনি অনন্যা। তার মা’ও শুনেননি। আর সেইরকম একটা মেয়ে তাদের ঘরের বউ হয়ে এলো!


৩.
অনেকক্ষন ধরে রুপার কানে আর কোন কথা ঢুকছেনা। তার পুরোটা মাথা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। বারবার জহিরের কথা মনে পড়ছে। এভাবে তাকে এই ঘরে একা ফেলে সে চলে যেতে পারল? এভাবেইকি সে সব যুদ্ধে তাকে অসহায়ের মত ফেলে যাবে! তার চরিত্র আর পেশা নিয়ে এরা বারবার বকে যাচ্ছে আর সে কিছুই বলতে পারছেনা! তাকে যে আগলে রাখতে পারতো এসব থেকে সেই মানুষটাও কাপুরুষের মত পালিয়ে গেল...

বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়া পিয়ারির কাছে শুয়ে পড়ার পর থেকেই গভির ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকে রুপা। তার চোখের সামনে জহিরের নিরিহ, গোবেচারা চেহারাটা ভেসে উঠে। পিয়ারিকে আদর করতে ইচ্ছে করে। ঠোটটা পিয়ারির গালের দিকে এগিয়ে নিতে গিয়েও এগুতে পারেনা রুপা। তার শুধু ঘুম পেতে থাকে। তার চোখে একরাশ কালো কালো পর্দা নেমে আসে। পিয়ারির মুখটা আড়াল করে ফেলে। রুপা ডুকরে কেঁদে উঠতে গিয়েও কাঁদতে পারেনা...


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৭ ভোর ৪:২১
৪২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×