somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বিশ্বজয় [ছোটগল্প]

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বিশ্ব মানবতাকে ধিক্কারিত উৎসর্গ)
।। নাসীমুল বারী।।

হাতড়ে হাতড়ে সামনে এগোয় সুহাইব। বয়সে কিশোর এখনো। মাথার জখমের রক্তে চোখ দুটো প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। পা-ও জখম, রক্ত ঝরছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। একটু পানির জন্য হাতড়ে হাতড়ে আগাচ্ছে। আশপাশে কে আছে বা কারা আছে ঠিক বুঝতে পারছে না। মাঝে মাঝে ইট পাথরে ধাক্কা খায়।
একটু ডানেই গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালের একটি তাঁবু ওয়ার্ড। সেখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে সুহাইব। বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল ইসরাইলী অসভ্যরা। এখন হাঁটতে হাঁটতে খুব কষ্ট করে বলে, একটু পানি হবে। পানি খাওয়ার পর আমি একটা ইসরাইলী সৈন্যকে মারবো।
কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছে, কিন্তু কোনো মানুষের আওয়াজ পাচ্ছে না। কিছু আগেই হাসপাতালে বোমা পড়েছে। আবার একটু জোরে বলে, কেউ কি নেই কাছে?
-আমি তো আছি।
সাকরান বলে ওঠে।
-তোমার কাছে কি পানি আছে?
-না, আমি চারদিকের ভাঙ্গা দেয়ালের মাঝখানে আটকে আছি।
-কেন তুমি সরে যেতে পারোনি?
২৭-২৮ বছরের টগবগে যুবক ইউসুফ আবু সাকরান। আল-আহলি আরব হাসপাতালে যখন দুটি ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত করল, ওরা তখন ছিল হাসপাতালের একটা বিল্ডিং দক্ষিণে। ওদের বাড়িটাও ভেঙে পড়ল।
সুহাইবের প্রশ্নের জবাবে বলে, না, আমার হাতে গুরুতর জখম। রক্ত ঝরছে। পিঠ আর পায়ে আরও বেশি। আমি আমাদের বাড়িতেই আটকে আছি।
'ও তো আরও বিপদে' মনে মনে কথাগুলো বলে সুহাইব। তারপর বসে পড়ে একখণ্ড ধ্বংসাবশেষ দেওয়ালের উপর।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলের ভয়াবহ অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে এ নারী-শিশু, কিশোর-যুবকরাও আহত। ঈদের দিন থেকে শুরু হয়ে গতকাল পঁচিশের পাঁচ এপ্রিলেও চালাচ্ছে বর্বর হামলা। এ হামলায় মানবিক বিপর্যয় চরমে; আর মুসলিম বিশ্ব আছে ঈদ-আনন্দের পরমে। ঈদ থেকে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ-ছয় দিনে ২৪টি পানির কূপের মধ্যে ২২টি-ই ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ আর মরুর উত্তাপে জীবন-তৃষ্ণা মেটাতে একটু পানি দরকার সেটাও ইসরাইলী বর্বররা ধ্বংস করে ফেলেছে। এ যেন কারবালার এজিদেরই প্রতিরূপ! এজিদেরই প্রেতাত্মার আগমন ঘটেছে ফিলিস্তিনের এ গাজায়।
পানির অভাবে পানির জন্যে কাতরাচ্ছে ওই সুহাইব। ধ্বংসস্তূপের উপর বসেই সুহাইব আবার বলছে, একটু পানি হবে কারো কাছে? পানি না পেলে যে আমি ওদের মারতে পারবো না। মরার আগে অন্তত একটা ইসরাইলীকে মেরে মরতে চাই।
আহত সাকরান বলে, আমি তো বের হতে পারছি না। আমি বেরোতে পারলে তোমার সাথে যোগ দিয়ে আরেকটা ইসরাইলীকে মারতাম।
যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ইসরাইলি, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সাকরানও। শরীরের এ যন্ত্রণার চেয়েও আরও বড় যন্ত্রণা ওদের মনের মধ্যে৷ ইসরাইলীকে মারতে হবে অন্তত মরার আগে।
বিশ্ব সভ্যতা দিকে দিকে মানবতার ফেরি করে বেড়ায়। কোথাও, কোনো দেশে মানবতার ন্যূনতম বিচ্যুতি দেখলেই মায়াকান্না শুরু করে। কুম্বিরাশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ওই দেশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবরোধের নামে নতুন মানবতা বিরোধী কর্মসূচি দিয়ে নিজেদরকে মানবতার বাহক হিসেবে জাহির করে। ওদের এসব চোখ একদিকেই তাকায়। একদিকেই মানবতা খোঁজে।
কিন্তু বর্বর ইসরাইলীরা এখন জাতি নিধন করলেও তাদের নাকি মানবতা লঙ্ঘন হয় না। তারা অসভ্য হয় না। ভূতের পা পেছনে ঘুরানো থাকে। ইসরাইলীদের ব্যাপারেও মানবতার ফেরিওয়ালাদের পা পিছনে ঘুরানো৷ তাই ইসরাইলীদের তৈরি ইচ্ছাকৃত চরম মানবিক বর্বরতাকে ওই মানবতার ফেরিওয়ালারা দেখে না। দেখতে চায় না।
হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। সুহাইব বসা থেকেই শুয়ে পড়ে ইট-পাথরের আড়ালে। চেতনা লোপ পায়নি। ধোঁয়া আর বালিতে একাকার। ধোঁয়া ভেদ করেই ভেসে আসছে করুণ আর্তচিৎকার। খুব বেশি নয়, অল্প। ইসরাইলী বর্বরতার ক্ষেপনাস্ত্র এখানকার সাধারণ জনগণের উপর এসে পড়েছে। 'কতজন মরেছে এবার?' মনে মনে আওড়ায় সুহাইব। পরক্ষণেই রুক্ষ একটা হাসি দিয়ে বলে, মরবে কোত্থেকে? মানুষ থাকলে তো! গাজাবাসি কেউ থাকলে তো!
ভাঙ্গা দেয়ালের কুঠুরিতে আটকে থাকা আহত সাকরান বলে, এই কে যেনো তুমি পানি চাচ্ছিলে? আছো কি?
-আছি। আমার নাম সুহাইব।
-কোথায়? দেখতে পারছি না তো।
-এই যে এখানে ভাঙ্গা ইটের স্তুপের পেছনে শুয়ে পড়েছি বোমা থেকে বাঁচতে।
-একটু এসে আমাকে ছাড়ানোর কিছু করতে পারবে? বড় যন্ত্রণা। কিন্তু ছাড়া পেলে ওই যন্ত্রণা মাড়িয়ে একটা ইসরাইলীকে মারার জন্য পাথর মারতাম।
-রক্তে যে আমার চোখের পাতা দুটো আটকে গেছে৷ ঝাপসা দেখছি, তুমি কোথায়? তোমাকে তো দেখছি না।
কথাগুলো বলে দাঁড়ায় সুহাইব। এখনো ধোঁয়া বালি উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছুই দেখতে পারছে না। আবার ডাকে, ভাই সাকরান তুমি কোথায়?
-আমি তো আল-আহলি আরব হাসপাতালের এক বিল্ডিং পেছনে ছিলাম। হাসপাতাল আর আমাদের বিল্ডিং দু জায়গাতেই ওরা বোমা মেরেছে। আমার বাবা কোথায় জানি না? আমি এখানে দেওয়ালের মধ্যে আটকা পড়েছি।
-আমি তো মনে হয় তোমারই কাছে। হাসপাতালে ছিলাম। ওখানেও রেহাই পাইনি। বোমা মারার একটু আগে বেরিয়ে এসেছি বলেই এখনো আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন।
-তুমিও কি খুব আহত?
-হাঁ, হাতে মাথায়।
-ইস. . . ! আমিও! ওরা আমাদের চিকিৎসাও নিতে দিবে না। খেতেও দিবে না। বেঁচে থাকতেও দিবে না।
-অসভ্যদের আবার মায়া আছে নাকি? কষ্ট হলেও আমি আসছি। তোমাকে বের করব। তারপর ওই ইসরাইলীদের একটা হলেও মেরে আমরা মরবো।
এতেই আমাদের বিশ্বজয়।
#
৩ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×