somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রান্নাঘরে ঢুকেই আনোয়ারার চক্ষু চড়কগাছ !
মেঝেতে অগুনতি লাল পিঁপড়ে দল বেঁধে সদর্পে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষনা করছে।সানকির ভাতে পিঁপড়ে,সালুনে তো তাকানোরই জো নেই। যেন সরোবর ! সানন্দে সবগুলো হাবুডুবু খাচ্ছে। আনোয়ারা অবাক হলেও ভড়কে গেল না। সানকিটা চুলোর আঁচে দিয়ে ঝাড়ু হাতে মেঝে পরিষ্কারের কাজে লেগে গেল। ভাতটা এদিকে চরচর করছে,আনোয়ারা ওমুখ হতেই দরজায় গোঁত্তা খেলেন। মচমচ শব্দে প্রতিবাদ জানিয়ে উঠলো বুড়ো পাল্লা দুটো। তাই শুনে ভেতরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠে আনোয়ারার রুগ্ন স্বামী-‌‌'কে ?...কে...কে এলো ?
এই এক জ্বালা ! দেহটা হাড় জিরজিরে,হাড্ডি কখানাও তাকিয়ে রয়। তার ওপর শরীরের আধখানা খেয়েছে পক্ষাঘাতে। কিন্তু তায়জালের কান দুটো বেজায় খাড়া। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর যত অসঙ্গতি আছে,তার সবকিছুর ক্ষতিপুরণ বিধাতা যেন ওর কানদুটোয় ঢেলে দিয়েছেন ! কোনরকম আওয়াজ পেলেই তায়জালের বদ্ধমূল ধারনা হয় যে,ছেলেটা বোধহয় দরজায় কড়া নাড়ছে। আনোয়ারার স্পষ্ট মনে আছে,এক গভীর রাতে রাতুল হামলে এসে পড়েছিল দরজার ওপর,করাঘাত করতে করতে বলেছিল,‌‌'মা...মা...দরজা খোল ! দরজা খোল মা...'
আনোয়ারা খিলটা টান দিতেই রাতুল ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকেই দেরি না করে দরজা আটকে দেয়। আতঙ্কে ওর মুখটা পাংশুবর্ণ। চোখে সন্দিগ্ধ ত্রাস। আনোয়ারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রাতুল ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে-‌‌'পুলিশ....মা...পুলিশ আমার পেছনে !'
-'পুলিশ ! পুলিশ কেন বাবা ! কি করেছিস তুই ?'
-‌'আমি...আমি' খোকার গলা ভিজে যায়। 'জানিনা মা...জানিনা কিভাবে কি ঘটে গেল ! মেয়েটা শুনশান রাস্তায় একা বাড়ি ফিরছিল। আমি ওকে.....কেন জানিনা....জানিনা....।'
আনোয়ারার বাকিটা বুঝে নিতে অসুবিধে হয়নি। খোকা একটা মেয়েকে.....কিন্তু কেন ! কি জন্য ! খোকা তো এমন ছিল না। ঘরের চৌকাঠ পারি দিলেই তিনি ছেলের প্রশংসা শুনতেন। তবে কেন এমন হল ! শেষ পর্যন্ত রক্তও বিশ্বাসঘাতকতা করলো ! রাগে,ঘেন্নায়,লজ্জায় আনোয়ারার ইচ্ছে করে মাটি ভেদ করে পাতালপুরীতে মুখ লুকায়। কিন্তু অবিচল চোখে আনোয়ারা জিজ্ঞেস করেন-'মেয়েটা.....মেয়েটা কি তবে...?'
রাতুল শুধু কাঁদছে। তার গলা থেকে কান্নাভেজা শব্দগুলো চুঁইয়ে পড়ে ' মেয়েটা মরে গেছে মা....আমি ওকে মারতে চাইনি...খুব ভয় পেয়েছিলাম...এমন চেঁচানো শুরু করলো ! তাই গলা টিপে ধরেছিলাম...এখন আমার ফাঁসি হবে তাইনা মা ? '
এমন প্রশ্নের জবাব পৃথী্বির কোন ভাষায় দেবে মায়েরা ? নিখিলের নানা কোনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অযুত-নিযুত রাশি রাশি শব্দরাজিও বুঝি আনোয়ারার মুখে এসে অজানা এক শূন্যতায় থমকে দাঁড়ায় ! সেদিন তার পায়ের তলার পৃথীবি থরথর করে কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু চোখেমুখে তার লেশমাত্র না ফুটিয়ে আনোয়ারা দাঁড়িয়ে ছিলেন পাথরের মূর্তির মতো। তার মুখে ছিলনা প্রাণ,চোখে শুধুই বোবা অন্ধকার !
তায়জাল সেদিনও ভেতরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলেছিলেন-'কি হয়েছে,খোকা কাঁদছে কেন?'
-‌'কিছু না' আনোয়ারা তার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রাতুলকে জিজ্ঞেস করে-‌'পুলিশ তোকে বাড়িতে ঢুকতে দেথেছে?'
-'জানিনা মা...কিচ্ছু জানিনা। তবে ওরা আমাকে ঠিকই ধরে ফেলবে....তারপর ফাঁসিতে লটকে দেবে...আমি কি করবো মা...কোথায় যাব ' রাতুল ডুকরে ওঠে।
আনোয়ারার নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। নোনা জলের বানে দু'চোখে তা ফুটে ওঠে। খোকার কান্না তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ছোটবেলায় খোকা কাঁদলেই সব কাজ ফেলে ছুটে তিনি কোলে তুলে নিতেন সোনার ময়না পাখিটিকে। আদরে-সোহাগে ভুলিয়ে দিতেন সব দুঃখ-ব্যথা।
সেই সোনার ময়না পাখিটি এখন বড় হয়েছে। আর তাকে ভোলানো যায়না। উল্টো সে ভোলাতে না পারলে জোর করে। প্রয়োজনে খুন করে ! তবুও লালসা চরিতার্থ করে ছাড়ে ।
আনোয়ারা মনে মনে কি যেন ভাবছেন ! আজ হোক কাল হোক পুলিশ এ বাড়িতে আসবেই। খোকাকেও বেশিদিন কোথাও লুকিয়ে রাখা যাবেনা। তার মনে অন্য একটা ভাবনা উঁকি দিল। আচ্ছা,খোকা একটা মেয়েকে নষ্ট করেছে,তাকে খুন করেছে ! এ শিক্ষা সে পেল কোথায় ! এমন শিক্ষা তো তারা দেননি। ছিঃ আনোয়ারার গা গুলিয়ে উঠলো। বাথরুমে ঢুকে গলায় অঙ্গুলি করে কিছুটা বমিও করলেন। হঠাৎ তার পা দুটো জ্বলে-পুড়ে উঠলো। নিচে তাকাতেই আনোয়ারা দেখলেন কয়েকটা লাল পিঁপড়ে কামড় দিয়ে লটকে আছে। আনোয়ারার প্রচন্ড রাগ হলো। তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন-'কালাই,..কালাই।'
কালাই আনোয়ারার বিশ্বস্ত পরিচারক। সব কাজে সিদ্ধহস্ত। তায়জালদের তালুক থাকাকালিন বংশ পরম্পরায় তারা এ বাড়িতেই বসবাস করছে। সংসারের মতো এখন বাড়িরও ভগ্নদশা। বাকি শরীকরা শহরে। ভাঙ্গা বাড়িতে তিনজন মানুষের হাতের লাঠি ওই কালাই। এক ডাকেই সে ছুটে এলো-'ডেকেছেন আম্মা ?'
-'পিঁপড়ের উৎপাত বড্ড বেড়ে গেছে। টোপবিষটা নিয়ে আয়।'
-'টোপ তো ফুরিয়ে গেছে আম্মা। সেদিন চিলেকোঠায় তেলাপোকা মারতেই তো সব লেগে গেল্'। কালাই একটু ভাবে। তারপর মাথা চুলকে বলে-'ক্ষেতে দেযা বিষ আছে আম্মা। এনে দেই ? তবে,সাবধান চোখে-মুখে গেলে সর্বনাশ।'
আনোয়ারার ভাবলেশহীন মুখে এক চিলতে ক্ষনপ্রভা উঁকি দিল কি ? তিনি বললেন-'আচ্ছা নিয়ে আয়। আর টেবিলে খাবার দে।'
-'জি,আম্মা।'
কালাই বেরিয়ে যেতেই আনোয়ারা শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন,'-ভাবিস না খোকা। একটা ব্যবস্থা হবেই। তুই বরং খেতে আয়।'
ফজরের আযানের আগেই পুলিশ এসে গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে তল্লাশী চালায়। কিন্তু রাতুলের টিকিটিও খুঁজে পায়না। তরুন অফিসারটি আঙ্গুল তুলে হুমকি দিয়েছিল-'একটা ধর্ষক-খুনীকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। সোজাসুজি বলুন কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছেন্। নয়তো...!'
আনোয়ারার শুধু নীরব দৃষ্টি তুলে নিজের অজ্ঞতার জানান দিয়েছিলেন। ধরাধমের এমন কোন আঁতসী কাঁচ নেই যা দিয়ে পাথরের মতো কঠিন সেই দৃষ্টির ভেদ জানা যায়। বিড়বিড় করে বলেছিলেন-'জানি না।' আনোয়ারার পা দুটো আবারও জ্বালা করে উঠলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। কালাই খাবার ও বিষ দুটোই দিয়েছিল। শুধু পিঁপড়েই মরলো না।

************************

বহুদিনের বাড়িটা এখন পরিত্যক্ত দুর্গের মতো ভেঙ্গে পড়েছে। একসময় ঈগলের ডানার মতো দু দিকে বাহু প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিল বাড়িটা। বাঁ দিকের ডানাটা প্রায় ধংস্ব হয়ে গেছে। শুধু কয়েকটা দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে নিরুপায় সেপাইয়ের মতো। ডান দিকটার অবস্থা তবু একটু ভাল। তিনটে ঘরে আলো জ্বলছে। অর্থাৎ ওই কয়েকটা ঘরে মানুষ বসবাস করে। রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে এতক্ষন তাই দেখছিল লোকটি।
বাড়িটাকে সে একদৃষ্টে দেখছে। বলা যায় মাপজোখ করে নিচ্ছে। লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাড়িটার মোটামুটি সব তথ্যই তার জানা। প্রায় দশ বছর হয়ে গেল এ বাড়ির ছেলে ফেরারী আসামি হয়ে নিরুদ্দেশ। উঠতি বয়সের ছেলে ছিল। একটি মেয়েকে ধর্ষনের পর হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তারপর থেকে কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি । পুলিশের সন্দেহ,বাবা-মা'ই তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এর সপক্ষে কোন প্রমান মেলেনি। তাই পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
ওই তিনটি ঘরের কোথায় কি আছে-তাও লোকটা জানে। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাকে জানতে হয়। অরক্ষিত বাড়িতে বুড়ো-বুড়ি থাকলে অপারেশন চালানোর জন্য আরও ভাল। তাছাড়া বাড়িটির ধারে-কাছে আর কোন বাড়ি নেই। চেঁচালেও কেউ শুনবে না। বুড়োটা পঙ্গু। বুড়িটিও চোখে ঠিকমতো দেখতে পায়না। থাকার মধ্যে আছে শুধু এক চাকর। বুড়োটা সম্প্রতি কিছু জমি-জমা বিক্রি করেছে। ফর্মা মারফত লোকটা জানে বুড়োটার ব্যাংকে কোন হিসেব নেই। অর্থাৎ নগদ টাকা বাড়িতেই আছে।

স্যুটকেসের হাতলটা শক্ত করে ধরে লোকটা নিজের গলা ফের পরখ করে নেয়-'খালাম্মা, আমি রাতুলের বন্ধু। এ পখ দিযেই যাচ্ছিলাম,ভাবলাম দোয়া নিয়ে যাই।'কথাটা কি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে ? রাতুল সমন্ধে এর বেশিকিছু তো সে জানেনা। আচ্ছা,অত ভনিতার কি দরকার ? সরাসরি নাইলনের রশিটা ব্যবহার করলেই তো হয় ? এক ফাঁসেই বিনা রক্তপাতে খেল খতম। জীবনের প্রথম খুনটা তো সে এভাবেই করেছিল !

যৌবনের প্রথম ভাগেই এতিম কিন্তু সুন্দরী একটি মেয়ের দিকে তার চোখ পড়েছিল। ইনিয়ে-বিনিয়ে কাজ না হওয়ায় জোর করে সে মেয়েটাকে বিয়েও করেছিল। তারপর যেন নরক নেমে আসে তাদের সংসারে। রোজ অভাব-অনটনের ফিরিস্তি,খিস্তি-খেউড়, এককথায় যাচ্ছে-তাই জীবন। তারই মাঝে একদিন রাতে সে ঘরে ফিরল বেহেড মাতাল হয়ে। বউ কিন্তু হাসি-খুশি সাজপটিয়সী ! লোকটা কিছুটা অবাক। সে খিস্তি দেয়-'কিরে মাগী,পটের বিবির মতো সাইজ্যা বইস্যা আছিস ? মতলব কি ?
-'একটা গল্প শুনবে ? পরীর গল্প।'
-'রাইত-দুপুরে আবার কিয়ের গল্প ? শুইয়া পড়' লোকটা খেঁকিয়ে ওঠে।
-'আহা শোনইনা' বউয়ের আদুরে আকুতি।
আগুনের কাছে গেলে মোম গলবেই। লোকটাও গলে পড়লো-'ক দেহি শুনি।'
-কি সুন্দর পাখা দুটো ওর,ঠিক যেন মুক্তোর গুঁড়ো দিয়ে তৈরি। কিন্তু উড়তে পারেনা জানো ! ডানা দুটো ছেঁটে সেলাই করা। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বারোমাস চার দেয়ালে বন্দি থাকে। রাস্তা দিয়ে গাড়ী যায়,মানুষ যায়,বাইরে রোদ ওঠে,বৃষ্টি পড়ে,পরীটার খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সবার সঙ্গে ডেকে কথা বলতে। কিন্তু কথা বলাতো অনেক দুর,জানালা খোলাও বারন। পরীদের অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। মনিব সঙ্গে করে নিয়ে বের হলেই কেবল একটু-আধটু মাপা আকাশ কপালে জোটে।

বউটা একটু দম নেয়। তারপর আবার শুরু করে-

সব নিষেধ মেনে পরীটা এতদিন চুপচাপ শান্তই ছিল। কিন্তু একদিন তার মনিব ঘুমিয়ে পড়ায় সে একটু জানালা খোলার সুযোগ পায়। সামনের রাস্তাটা শুনশান,টুপটাপ পাতা ঝড়ে পড়ছে,রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে দুপুর। পরী মুগ্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ সে দেখে সাইকেলে করে একজন মালা বিক্রি করছে। সেই একফালি দুপুরে হঠাৎ মুক্তির আনন্দে পরীটার কেমন যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল। সাইকেলওয়ালা পরীকে শুধায় -'মালা নেবে'? পরী হাত বাড়ায়। এভাবে পরীর কাছে অনেক মালা জমা হয়ে যায়। কিন্তু সাইকেলওয়ালা একটিরও দাম নেয়না।

লোকটা আবারও খিস্তি দিয়ে ওঠে-'হ্যায় কি জমিদারের বাচ্চা যে মালার দাম নিব না ?' বউটা শান্ত কন্ঠে জবাব দেয়-সবগুলো মালার দাম চেয়েছিল আজকে। কিন্তু পরীর কাছে তো টাকা নেই। পরীদের টাকা,দুঃখ-কষ্ট কিংবা কোন অনুভূতি থাকতে হয়না। তাহলে তারা পরী হতে পারেনা।

লোকটা নড়ে-চড়ে বসে। তার চোখে মুখে রাজ্যের ভাবনা। বউটি বলেই চলে-সবগুলো মালার দাম দিতে না পারায় পরীটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সে বলে,আমার তো কিছুই নেই। কি দিয়ে তোমার দাম দেব ? মালাওয়ালা জবাব দেয়,ডানা আছে তো তোমার। তবু উড়তে পারোনা কেন ? এত ভয় কিসের ? দেখ বাইরে কেমন পথ হারানোর বাতাস ছেড়েছে,চলে এসো। যদি আসতে পারো সবগুলো মালা তোমায় দেব।'

নিজের দাম্পত্যজীবন লোকটার চোখের সামনে হঠাৎ করেই ভেসে উঠেছিল।তীব্র ক্রোধে নোঙ্গর ছেঁড়া বউয়ের গলায় মশারীর নাইলন পেঁচিয়ে সে তখনই তার মালা কুড়োনার সাধ সাঙ্গ করেছিল।

'বুড়ো-বুড়ির বিদায়টাও ঠিক ওভাবেই করেই করবো ' লোকটা স্থির করে।


****************

‌'তুমি খোকার বন্ধু ' তায়জাল তার অথর্ব শরীরটাকে কোনমতে সোজা করার চেষ্টা করে। ‌'কেমন আছে সে ?' খোকা কোথায় আছে তুমি জান ?'
রজব গলা খাঁকারি দেয়। এই মুহুর্তে তাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলতে হবে। সর্ন্তপনে গেট খোলার সময় চাকরের সামনে পড়ে গিয়ে তার সব পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে। 'রাতুলের বন্ধু' পরিচয়টা দিয়ে কোনমতে সে রক্ষা পেয়েছে। নিজের নাম বলেছে রজব। নামটা আসল নয়। হঠাৎ করেই মাথায় চলে এসেছে।
--'চিন্তা করবেন না চাচাজান। রাতুল ভাল আছে। আপনাদের কথা খুব বলে। কিন্তু আসতে পারেনা। আসলেই যে গ্রেফতার হবে।'
-'তাই বলে বুড়ো বাপটাকে একবার দেখে যেতে নেই' তায়জালের কন্ঠে অস্থিরতা। আনোয়ারা বাধ সেঁধে বলেন-'আহা কি শুরু করলে,ছেলেটাকে একটু বিশ্রামের সুযোগ তো দেবে। তা,কয়েকদিন থাকবে তো বাবা ?'
রজব এবার বাধ্য হয়েই মুখ খুললো-'থাকার সুযোগ নেই চাচী আম্মা। ব্যবসার কাজে এদিকে এসেছিলাম। রাতুলের মুখে আপনাদের কথা অনেক শুনেছি। তাই দেখা করতে এলাম।'
-'তাই বলে কোন খবর না দিয়েই এভাবে আসতে হয়' আনোয়ারার কন্ঠে প্রচ্ছন্ন অভিযোগ। 'আজকের রাতটা তো থেকে যেতে পার। তোমরা শহুরে মানুষ। আমাদের রান্না হয়তো মুখে রুচবে না' বলে বাড়ির পিছে ভাঙ্গা দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থাকে আনোয়ারা।
রজব আর দিরুক্তি না করে রাজি হয়ে যায়। এমনিতেই সে অনেক পাপ করেছে। মারার আগে দুঃখিনি মা'কে কষ্ট দিয়ে কি লাভ ? তাছাড়া মাঝরাতেই তো কাজ সারার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যাবে...।


***************

আজ রাতে অন্ধকারের ঢল নেমেছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খানখান। অভুক্ত কোন এক কুকুরের বেসুরো কান্নার সুর দুর থেকে ভেসে আসছে। ভগ্নস্তুপের দেয়ালটার পাশে দাঁড়িয়ে অকারণেই মাথায় ঘোমটা টানলেন আনোয়ারা। দশ বছর আগে এই দেয়ালটা মেরামত করা হয়। তার ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি।
'খোকা কে এসেছে বল তো?' দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে মাটিতে স্নেহতুরা হাত বোলাতে বোলাতে বলেন আনোয়ারা। 'তোর বন্ধু এসেছে। বলেছে তুই নাকি ভাল আছিস। ও তো জানেনা তুই কোথায় আছিস। ওর জানা দরকার কি বলিস ? তোর খুব একা একা লাগে,তাইনা খোকা ? চিন্তা করিস না,তোর বন্ধু এখন থেকে তোর সঙ্গে থাকবে।' পরম মমতার সঙ্গে হাত বোলাতে বোলাতে হঠাৎ 'উফঃ' করে আর্তনাদ করে ওঠেন আনোয়ারা। পিঁপড়ের কামড়ের জ্বালায় শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখ। হিসহিস করে বলেন-'পিঁপড়ে !....পিঁপড়ের উৎপাত বড় বেড়েছে।'
হঠাৎ সেই অন্ধকারের মধ্যে শোনা গেল কালাইয়ের গলা,'ক্ষেতে দেয়া বিষের শিশিটা নিয়ে আসবো, আম্মা ?
আনোয়ারার চোখে ক্রুর হাসি !


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×