somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'মেসি' হওয়ার দায়...১

১৫ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বল আর সে- মানিকজোড় ! রোজারিওর বহতা স্রোতস্বিনীর মতো তাদের গতিপথ , যার বাঁকে বাঁকে বৈচিত্র । ফুটবল এবং লিওনেল মেসির গল্প !
পূর্বসূরীর থেকেও শুরু করা যায় । দিয়াগো ম্যারাডোনা। আরেক জোড়া জাদুকরী বাঁ পা,যার সুবাদে টাচলাইনের বাইরের পৃথীবির স্বাদ পেয়েছিল ফুটবল। ফিদেল কাস্ত্রো-শাভেজ...ড্রাগ.....নারীসঙ্গ। কিন্তু টাচলাইনের ভেতরে তিনি আর্জেন্টাইনদের 'ঈশ্বর' ! মেক্সিকো বিশ্বকাপের আলো-আঁধার-দুইই ম্যারাডোনার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাক্ষাৎ জোচ্চুরিকে তিনি রুপান্তর করেছিলেন গোলে ! তার ভক্তেদের কাছে এ কলঙ্ক রোমাঞ্চের সমান ! যার নাম-'হ্যান্ড অব গড' !
সেই ম্যারাডোনাই আবার, দেশাত্নবোধের জালে গোল করেছেন। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধচলাকালিন তার সাক্ষাতকার চেয়েছিল কতিপয় ব্রিটিশ সাংবাদিক । জবাব এসেছিল-‌'গিভ অাস ব্যাক মালভিনাস (ফকল্যান্ডের স্প্যানিশ নাম)। ইউ..........ব্রিটিশার।'
ওই সময় ম্যারাডোনা ছিলেন,তার দেশের প্রতীক। ন্যাপোলিতে খেলাকালিন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেম একবার ইতালিতে ছুটে যান। ম্যারাডোনাকে ক্রীড়াদূতের বরমাল্য পড়িয়ে তবেই দেশে ফিরিছিলেন মেনেম।
বছরখানেক পরের কথা।
ড্রাগে আসক্ত ম্যারাডোনা। মেনেম এবং তার ক্রীড়া সচিব ভিক্টর লুপো প্রমাদ গোনেন। বুয়েন্স এইরসে এক সাক্ষাতকারে তারা বলেন,‌' আমাদের ছেলেটাকে ড্রাগ থেকে রক্ষা করতেই হবে ।' ভাবিকালের কথা ভেবে আর্জেন্টিনার কিশোর ফুটবলারদের দেশের বাইরে ট্রান্সফার বন্ধ করার জন্য একটি আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কঁচি-কাঁচারা পোক্ত হয়ে ওঠার আগেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। কিন্তু মেনেমের বাকিসব রাজণ্য 'দেশের বাইরে ট্রান্সফার মানেই পরিবার সচ্ছল' নীতির পক্ষে থাকায় সিদ্ধান্তটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
এবার উত্তরসূরীর গল্প শুরু করা যাক....।
গত দশ বছরে বার্সেলোনার হয়ে ছোটবড় সব মিলিয়ে মেসির জেতা শিরোপার সংখ্যা মোট ২১টি। ব্যক্তিগত পুরষ্কারের ঝাঁপি না খোলাই ভাল। স্রেফ অতলের আহবান ! 'ফ্রিক শো'-ও বলা যায় ।
তারপরও সবচেয়ে আজগুবি কথাটা হলো, আর্জেন্টিনা থেকে মেসির জনপ্রিয়তা স্পেনে বেশি! আর্জেন্টাইনদের বিশ্বাস, মেসি তার মন থেকে এখনো পুরোপুরি আর্জেন্টাইন হয়ে উঠতে পারেননি !
রোজারিওর ট্যাক্সিচালক থেকে ফুটবল কোচ পর্যন্ত সবার অভিযোগ, মেসি খুব ছোট থাকতেই দেশ ছাড়েন। তার গায়ে ঘরোয়া ক্লাব ফুটবলের সুবাস নেই । আর্জেন্টিনার প্রখম বিভাগ থেকে যেভাবে উঠে এসেছেন ম্যারাডোনা-তেভেজরা, মেসির আর্বিভাব মোটেও সেরকম নয়। জাতীয় সঙ্গীত পর্যন্ত গান না ! দেশের জন্য তার কোন প্যাশন নেই....ইত্যাদি, ইত্যাদি।
কিন্তু মেসির উচ্চারণে রোজারিওর আঞ্চলিক টানটা আজও স্পষ্ট। দেশের সঙ্গে এটাই বোধহয় তার একমাত্র অদৃশ্য যোগসুত্র ? আর্জেন্টিনার সাংবাদিক মার্টিন ম্যাজুরের মন্তব্য,‌'শেষ ক'বছরে মেসির জন্য সেরা উপহার হলো সে তার মাটির উচ্চারনটা এখনো ভোলেনি। ভাবতে পারেন, ভুলে গেলে কি ঘটতো ! স্রেফ খুন হয়ে যেত '!
এজেইজা বিমানবন্দরের কাঁচের দেয়ালে মেসির পোষ্টার। থেকে বুয়েন্স এইরস পর্যন্ত বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনি বিলবোর্ডগুলোর দখল মেসির। মেসি আর্জেন্টিনার সবখানে।
কিন্তু, আছে কি- আর্জেন্টাইনদের হৃদমাঝারে ?
রোজারিওর এক ট্যাক্সিচালকের কথা,‌'মেসির খেলা আমাদের ভাল লাগে। কিন্তু সে আমাদের অজানা। আমেরিকায় (লাতিন) সবাই দিয়াগোকে ভালবাসে। মেসির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খাটেনা।'
অার্জেন্টাইন ফুটবলে তুলনার গল্প অবশ্যপাঠ্য। ম্যারাডোনা সর্বকালের সেরাদের একজন। তার বাঁ পায়েই নাপোলির স্বর্ণযুগ। কিন্তু, এ বিশ্বের কাছে ম্যারাডোনা আর ৮৬' বিশ্বকাপ সমার্থক । দেশকে একাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব এনে দেয়া এক জীবন্ত ‌‌কিংবদন্তি।
মেক্সিকোর ওই আসরে আর্জেন্টিনার মাত্র তিনজন খেলোয়াড়ের ইউরোপিয়ান লিগে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন লিগ থেকে সাবেলার ২৩ জনে জায়গা পান মাত্র একজন ফুটবলার।
কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার ওই গোল দুটি খেলাধূলার ইতিহাসে নানা অাঙ্গিক থেকে বিখ্যাত। প্রথমটি- শঠতার চুড়ান্ত উদাহারন। পরেরটা বৈপ্লবিক । মিডফিল্ড থেকে সলো রানে গোল। একক প্রচেষ্টার সর্বোৎকৃষ্ঠতম উদাহারন।
এই যে অতিমানব থেকে সাধারন,চুড়া থেকে অতল,বন্ধুর কিন্তু ভেতরে কোমল-এসব মিলিয়েই দিয়াগো ম্যারাডোনা। যিনি পার্টি-ড্রাগ-বিতর্ক-বিপ্লব, সর্বোপরি কাগজের শিরোনামের পরিচিত মুখ। আর্জেন্টাইনদের চোখের মণি।
আর তাই হয়তো, মিতভাষীরা হয়তো এক কথায় সেরে দেন-‌'মেসি তো দৌড় শুরুর আগেই হেরে বসে আছেন' !
অনেকের কাছেই ব্যাপারটা উল্টো। অন্তত, ক্লাব রেকর্ডের ক্ষেত্রে ? আর্জেন্টাইন লেখক মার্টিণ ক্যাপারোসের মতে, 'ম্যারাডোনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- কাউকে অনুসরন করতে হয়নি। কিন্তু মেসির ক্ষেত্রে ম্যারাডোনাই শেষ সীমানা।'
বুয়েন্স এইরসের ফুটবল ক্লাব হারক্যান। সেখানকার জিমনেসিয়ামে রোজ বক্সিং শেখান পাবলো রদ্রিগুয়েজ। একসময় বক্সার ছিলেন। ফুটবলে প্রচন্ড অরুচি। কিন্ত পালসটা বুঝিয়ে বোঝেন,‌'ম্যারাডোনা তার প্রতিভাকে রাস্তার ধূলা থেকে তুলে এনেছে। কিন্তু মেসির জন্ম তুলনামুলক উঁচু ঘরে। তেভেজ বড় হয়েছে বুয়েন্স এইরসের বস্তিতে। সে পর্যন্ত আমাদের পরিচয় বহন করে।'
ব্রাজিলের মাটিতে সাবেলার দলে তেভেজ ছিলেন না। রদ্রিগুয়েজের মুখে তাই বিরাশি সিক্কার পাঞ্চ ,‌'পরিচয় মুখ্য হলে আমি কিন্তু তেভেজকেই বেছে নিতাম' ।
'milanesa a la napolitana'.
রুটির বিফ কাটলেট, টমোটো সস এবং তারওপর গলানো মাখন। ব্যস হয়ে গেল 'মিলানেসা এ লা নাপোলিতানা্' । শৈশবে মেসির প্রিয় খাবার। একবার তার কোচ মার্কনি আবিষ্কার করলেন, 'alfajores'-এর (চকোলেট বিস্কিট) প্রতি মেসির দুর্বলতা। পরবর্তিতে এক টিভি সাক্ষাৎকারে মার্কনি জানান,মেসির সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তিনি। গোল প্রতি একটি করে 'alfajores'। লোভে পরেই কিনা কে জানে, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে ম্যাচ প্রতি ৪/৫ গোল করতে শুরু মেসি। তৃপ্ত মার্কনি বিষ্ময়ের পাশাপাশি এটাও খেয়াল করেছিলেন তার দলের সেরা খেলোয়াড়টি উচ্চতায় বাকিদের থেকে ছোট। পাল্টে যায় চুক্তির শর্ত । হেডে গোল প্রতি দুটি 'alfajores'। পরের ম্যাচে, গোলকিপার সহ সবাইকে কাটিয়ে পোষ্টের সামনে এসে থেমে যান মেসি। বাঁ পা দিয়ে বলটা 'ফ্লিক' করে শূন্যে তুলে হেড করেন। গোল। মার্কনি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপন ছেড়ে মেসি তাকে খুঁজুছেন !
রোজারিওতে মেসির এমন আরো অনেক গল্প সবার মুখে মুখে। এই যেমন ধরুন, একবার এক ম্যাচে গোটা প্রথমার্ধ তাকে বাথরুমে আটকে রেখেছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা। মেসি দরজা ভেঙ্গে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন.........(চলবে)







সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:১২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×