বিঃদ্রঃ লেখাটি সরাসরি বক্তার ভাষায় লেখা ।
আমি মুসা কলিমুল্লাহ , পিতা-জয়নাল আবেদিন,গ্রাম-আলগী। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাকুরা(SAKURA-Society for Augmentation of Knowledge in Yrban and Rural Advancement)। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। চট্টগ্রামের মীরসসরাই ও রামগড়ে গেরিলা যুদ্ধ করেছি। ফেনীর বেলুনিয়া, গোতুমা, খেজুরিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে অংমগ্রহণ করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার অংশ গ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ পরবর্তীতে জেনারেল ওসমাণীর কতৃক স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৭৫' এর পটপরিবর্তনের পর অনেক রাজাকার এবং অমুক্তিযোদ্ধাদের হাতে জাল সার্টিফিকেট দেখে আমার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলি। পরবর্তিতে এসব জাল সার্টিফিকেট ধারী লোকেরা এই জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে আর্থিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছিল। তাদের এই অবস্থা দেখে সমাজের অন্যান্য সাধারণ ও সৎ মুক্তিযোদ্ধাদের মত আমিও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে কুন্ঠা বোধ করতাম।
এই সময় মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধাদেও দাপটে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। আর জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর পুরো ঘটনাটা উল্টে যায়। দেখা যায় তখন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে অপরাধ করে ফেলেছে, আর তারা অনেক অন্যায় করেছে ইত্যাদি। তাই নিজেকে কখনো কারো কাছে পরিচয় দেই নি। আমি কখনো কোন প্রকার সাহায্যের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যাই নি। এমনকি সরকারি কোন অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করেনি।
চট্টগ্রাম নগর এর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দৈনিক পূর্বকোণের ফটোসাংবাদিক মঞ্জু মাঝে মাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন। আর যারা সব সময় আমার খবর নিয়েছেন সেই জালাল আহমেদ, এবং মন্টু একসাথে ট্রেনিং করেছি,যুদ্ধ করেছি। সেই জালাল ভাই ও মন্টু ভাই দু'জনেই আজ মৃত। জালাল ভাইয়ের শোকসভাতেই প্রথম আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই।
আমার আর এক শুভাকাঙ্খী বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফার জানত, আমি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে সার্টিফিকেট নাই এবং আমি কোথাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেই না। মন্টু ভাই ও মোজাফফর প্রায়ই বলত যে, তুমি তো যুদ্ধ করেছ, সুযোগ-সুবিধা না নাও অন্তত সার্টিফিকেট টা নাও, এইটা তোমার পরবর্তী জেনারেশনকে তোমার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। আর তোমার ইন্ডিয়ান সরকার কতৃক যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল তাতে নাম আছে, জাস্ট তাদেও কাছে গিয়া একটা কপি নিয়া আসব।৫ সেপ্টেম্বর ২০০০ এ আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যাই, সেখানে গিয়ে দেখি হুলুস্থুল অবস্থা,যেন একটা মাছের বাজার। তো কষ্টে আমি পিয়নকে অনুরোধ করে নামের তালিকার বই বের করি, কিন্ত আমি অবাক হয়ে যাই ভারত সরকার কতৃক প্রদত্ত বই থেকে অনুবাদ করতে যেয়ে বিকৃত করে ফেলেছে। লেখা আছে ক্রমিক নং -৩৩ নাম-মোঃ মুশাক আলী পিতার নাম-মোঃ মুসাঃ কালিম উল্লা গ্রাম-আলগী কল্যাণ ট্রাস্ট নং-৪৭৩২১। তখন আমি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে যোগাযোগ করি, যেখানে ভারত সরকার প্রেরিত তলিকার বইটি সংরক্ষিত আছে, সেখানে গিয়ে দেখি আমার নাম ঠিকানা সবই ঠিক আছে,তখন আমাকে সেখান হতে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০০০ এ যাহার স্মারক নং-১৯৯৫৬/০০। আমাকে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই সংশোধনীটি আবেদন করলে তা কযেকদিনের মধ্যে সংশোধন হয়ে যাবে। এরপর আমি আর যোগাযোগ করি নাই। কিছুদিন আগে জানতে পারি যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকাতে মুসা কলিমুল্লাহ এখনো মুশাক আলী রয়ে গেছে। তাদের কাছে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকার পরও তা ঠিক করে নাই। তারা কি এতই ব্যাস্ত যে সামান্য কাজটুকু করার সময় তারা দীর্ঘ ১০ বছরেও পায় নাই ? তাহলে তাদেও কাজ কি? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কি আমি জাতির কাছে এতটুকু সম্মান পাওয়ারও আশা করতে পারি না ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



