somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মোবাইল চোর: আপনার একটু ভালবাসা বদলে দিতে পারে ওদের মত অনেকের জীবন!

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনার একটু ভালবাসা বদলে দিতে পারে ওদের জীবন! হ্যাঁ আসলেই তাই। গত পরশু ২৭ মার্চ ২০১৮ কাজের চাপে দুপুরের খাবার গ্রহনে কিছুটা লেট হয়ে যায়। আড়াইটার দিকে অফিসের পাশ্ববর্তী হোটেলে খেতে যাই। দু'চার জন খানা খাচ্ছেন। একটি খালি টেবিলে বসে হোটেল মালিকের ছোট ভাই আবুলকে বললাম, 'খানা দাও।'

অাবুল খানা অানার জন্য হোটেলের পেছনের দিকে চলে গেল। ইত্যবসরে ১৫/১৬ বছর বয়সী অচেনা লুঙ্গি পড়া একটি ছেলেকে দেখলাম, হোটেলের ভেতর ঘোরাফেরা করছে। ভাবলাম, এদের কর্মচারী হবে হয়তো। ছেলেটি ঠিক আমি যে টেবিলে বসেছি, সেই টেবিল থেকে কালো রংয়ের একটি মোবাইল হাতে নিয়ে পেছনের দিকে চলে গেল। পেছনের দিকে যেতে দেখে তাকে বললাম, 'তুমি, আবুলকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে বল।'

দু'তিন মিনিটের মাথায় আবুল খাবার নিয়ে এলো। আবুল আসতে না আসতেই বাইরের দিক থেকে এক যুবক দৌড়ে এসে বললেন, 'আমার মোবাইল ভুলে রেখে গেলাম। এই একটু আগে।'

আমার টেবিলটি দেখিয়ে তিনি বলেন, 'এই টেবিলে ছিল। আমার নতুন মোবাইল। দুই সপ্তাহ হয় কিনেছি।'

মুহূর্তেই সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। আবুলকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি খাবার আনতে পেছনের দিকে যাওয়ার পরে যে ছেলেটি তোমার পেছন পেছন গেল সে কোথায়? তাকে তো আমি মোবাইল হাতে নিয়ে যেতে দেখেছি। তাকে ডাকো। আবুল বলে, 'কোন্ ছেলে?'

ধমকের স্বরে বলি, 'এই ব্যাটা, চোর আজকে পিটাবো না, মার কিন্তু তোর পিঠেই পড়বে। ডাক ওকে। ও ছেলেটা কে ছিল? এই একটু আগে বেরিয়ে গেল। আর এখনই চিনতে না পারার ভান করছিস?'

ছেলেটির কিছুটা বর্ননা দেয়ার পরে আবুল বুঝতে পারলো এবং তার মোবাইলে ফোন করে তাকে হোটেলে আসতে বললো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখি, সে এসে হাজির।

আশপাশের দোকানীসহ অনেক লোক ইতিমধ্যেই হোটেলে এসে জড় হয়েছে। ছেলেটিকে কঠিনভাবে চেপে ধরা হল, মোবাইল বের করে দেয়ার জন্য। তবে, তার এক কথা, সে মোবাইল নেয়নি। যার মোবাইল হারিয়েছে, তিনি আমাকে দেখিয়ে ছেলেটিকে বললেন, ইনি দেখেছেন, তুই তার সামনে থেকে মোবাইল নিয়েছিস। তুই ছাড়া আর কেউ মোবাইল নিতে পারে না।

কারও কোনো কথাতেই কিছু হল না। ছেলেটির সেই একই কথা, সে মোবাইল নেয়নি। একপর্যায়ে আমার সামনে এসে বললো, 'হুজূর, দেখুন, আমি তো আপনার সামনে থেকেই আমার এই মোবাইল নিয়ে গেলাম। আপনি দেখেছেন না তখন?'

আমি বললাম, 'হ্যাঁ, আমি দেখেছি, তোমাকে কালো রংয়ের এরকম একটি মোবাইলই তো নিতে দেখেছি। আচ্ছা, যে মোবাইলটি তুমি নিয়েছো, সেটাই কি এটা ছিল? তাহলে তুমি কি এই ভদ্রলোকের মোবাইল নাওনি?'

সে বললো, 'এটাই টেবিলে রেখেছিলাম। আবার টেবিল থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছি।'

এবার তাকে ভাল করে জেকে ধরলো সবাই। উত্তম মধ্যম পর্ব শুরু হবে আরকি! লুঙ্গিপড়া ছেলের ভাবসাব দেখে আমি শিউর, এই ছেলে মার খেয়ে মরে যাবে, তবু মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করবে না।

আমি সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললাম, 'আচ্ছা, যেহেতু ঘটনার শুরু থেকে আমি এখানে ছিলাম। ওকে আমার সাথে একান্তে দু'মিনিট কথা বলতে দিন।'

সবাই সম্মত হলেন। ছেলেটিকে নিয়ে আমি হোটেলের পেছন দিকে চলে গেলাম। যে দিকটায় সে মোবাইল নিয়ে গিয়েছিল। হোটেলের পেছনে সবুজ ঘাসের মাঠ। মাঠে গিয়ে তাকে বললাম, 'বাবা, আমার দিকে তাকাও।'

সে তাকালো। বললাম, 'বাবা, তোমাকে দেখে মনে হয় না তুমি চোর। এই সামান্য একটি মোবাইল নিয়ে তুমি তোমার হাত অপবিত্র করো, এটা আমি চাই না। তোমাকে ভাল ছেলে বলে মনে হয়। তুমি তার মোবাইল যদি নিয়ে থাকো, দিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না। সে দায়িত্ব আমি নিলাম।'

আহ! ছেলেটি শুকনো মুখে বললো, 'আপনি যেহেতু বলেছেন, আমার আর কিছু বলার নেই। চলুন, মোবাইল সামনে আছে।'

তার সাথে কিছু দূর যাওয়ার পরে ইটের একটি স্তুপের ভেতর থেকে মোবাইল সেটটি বের করে আমার হাতে দিয়ে দিল।'

আহ! কতটা শ্রদ্ধাবোধ আমার প্রতি তার! অামি অবাক হলাম। আহ! দু'টো কথায় সে মোবাইলটা দিয়ে দিল! আমার মনে হল, আহ! একটু ভাল কথা, তার অন্তরটা ভিজিয়ে দিল। একটু সুন্দর কথায় সে অর্থের লোভ ত্যাগ করে মোবাইলটি দিয়ে দিল!

মাথায় হাত দিয়ে আরও দু'টো কথা বলার পরে সে জানালো, 'জীবনে আর এই কাজ করবে না সে।'

সকলের সাথে আমাদের আচরন যদি সুন্দর হত, সকলেই নিজেকে অন্যায় থেকে বাঁচিয়ে রাখতো! আমাদের সদাচরন বদলে দিত ওদের মত অনেকের জীবন!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×