লেনদেনে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার, ইসলাম কী বলে?
একাউন্টে টাকা জমা না রাখা অবস্থায় কোন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের জন্য প্রদত্ব কার্ডের নাম ক্রেডিট কার্ড।
এটা মূলত সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণের জন্যই প্রদান করা হয়ে থাকে। গ্রাহক এই কার্ড ব্যবহার করলে, সাধারনত: পরবর্তীতে কিছু টাকা অতিরিক্তসহ পরিশোধ করতে হয়।
যদিও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয় যে, এ সময়ের মধ্যে পরিশোধ করলে সুদ দিতে হবে না। কিন্তু সে সময় পেরিয়ে গেলে সুদ সংযুক্ত হয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যেহেতু এর মূল চুক্তিটাই থাকে সুদের উপর।
তবে যদি ডেবিট কার্ড গ্রহণ করার সুযোগ না থাকে, আর সুদ প্রদানের বেঁধে দেয়া সময়সীমার আগেই ব্যবহৃত টাকা কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেয়া হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে।
কিন্তু সুদ প্রদানের সময়সীমা অতিক্রম হবার পর সুদসহ টাকা পরিশোধের নিয়তে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। (ফাতাওয়া উসমানি-৩/৩৫৪)
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দুই ধরনের কার্ড প্রচলিত ১, ক্রেডিট কার্ড ২,ডেবিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যে কেউ নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীর দোকান থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে।
জিনিসের মূল্য মাসের শেষে সম্পৃক্ত ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিশোধ করতে পারবে। অন্যদিকে ডেবিট কার্ড হল মূল্য পরিশোধের একটি পদ্ধতি। অটোমেটিক টেলার মেশিনে এটিকে স্থাপন করতে হয়, এজন্য ডেবিট কার্ডকে বৈদুতিক টাকার থলি বলা হয়।
ডেবিট কার্ডের জন্য ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকতে হয়, কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের জন্য এ ধরনের শর্তের প্রয়োজন হয় না। ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের কিছু সুবিধা যেমন রয়েছে, এগুলো ব্যবহারে অসুবিধাও কম নয়।
এটি ঝুঁকি এবং বাধামুক্ত। একটি ক্রেডিট কার্ডে অনেক টাকা রাখার সুযোগ রযেছে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে একটি ক্রেডিট কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুকি থেকেও গ্রাহককে মুক্ত রাখে।
বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ডে সুদের পরিমান কেমন?
দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার অন্যান্য ঋণের থেকে বেশি। ক্রেডিট কার্ডের সুদহার সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য ২০১৭ সালের মে মাসে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ভোক্তা ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ যোগ করে ক্রেটিট কার্ডের ঋণের সুদহার নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে ব্যাংকগুলোর চাপে একই বছরের আগস্টে ওই নির্দেশনা বদলে বিদ্যমান ঋণের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হয়। একইসাথে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে এই নীতিমালা কার্যকর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশণা পালন করা হলে বর্তমানে শিল্পঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ ডিজিট ধরে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ হার হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। অথচ ব্যাংকগুলোতে এখন ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টারসহ কয়েক ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এই ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা কার্ডের বিপরীতে কোনো ঋণ নিলে বছরে সুদ দিতে হবে ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি ও বার্ষিক ফিসহ অন্যান্য ফি এবং এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বা মূসক তো রয়েছেই।
ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ঋণের বার্ষিক সুদহার ২৭ শতাংশ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ঋণের বার্ষিক সুদহার ২১ থেকে ২৩.৫০ শতাংশ (কার্ড ভেদে)।
দি সিটি ব্যাংকের ভিসা ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদ মাসে ২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই ব্যাংকটির ভিসা ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণ নিলে বছরে ৩০ শতাংশ হারে ১০০ টাকা সুদ দিতে হবে ৩০ টাকা। ব্যাংকটির আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের ঋণের মাসিক সুদহার ২.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণ নিলে বছরে ১০০ টাকায় সুদ গুনতে হবে ২৭ টাকা। এ ছাড়া এই কার্ড ব্যবহার করে কিস্তিতে পণ্য কিনলে সমান মাসিক কিস্তির (ইএমআই) জন্য বার্ষিক সুদ গুনতে হবে ১৭ শতাংশ হারে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের সব ধরনের ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার মাসিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ এই ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ডধারীদের ঋণের বিপরীতে বছরে সুদ গুনতে হবে ২৪ শতাংশ হারে। এই ব্যাংকটি সমান মাসিক কিস্তির ঋণে কোনো সুদ আরোপ করে না।
যমুনা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ১৫ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৮ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ২৪ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ২৫ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ২৭ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডধারীদের।
দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন এমন একজনের সাথে কথা হলে তিনি সুদের এ উচ্চ হারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১ পয়সাও লিমিট ক্রস করলে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা ‘ওভার লিমিট ফি’, আবার লাস্ট ডেট ছুটির দিন হলেও ‘লেটপেমেন্ট ফি’সহ নানা রকম হিডেন চার্য। নানা অজুহাতে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ সুদ হারের এ তালবাহনার ঋণ ‘মরণ ফাঁদ’ ছাড়া আর কিছুই না। লাস্ট ডেট ছুটির দিন হলেও পরের অফিস ডেতে লেটপেমেন্ট ফি ছাড়া বিল পরিশোধ করা যায় না। সবচেয়ে বড় ধরনের ধোঁকাবাজি। বহু কষ্টে এর থেকে বের হতে পেরেছি। উচ্চ সুদ হার থেকে রক্ষা পেতে আমি কার্ডটি এরই মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা দরকার। তা না হলে গ্রাহকরা এভাবে ঠকতেই থাকবে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চুষে নিজেদের পেট ভরবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:২৯