ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও ইলিশ রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ:
দীর্ঘ মেয়াদি পানি ও বন্যায় ভারতের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় চলতি বছরে মৌসুমি পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এ বছর ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য বেশ চড়া। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকার রান্নার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ উপাদানটির রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোববার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সরকার বলছে, উৎপাদন ও মজুতের ঘাটতির কারণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক মুখপাত্র সীতাশু কর বলেন, ‘রফতানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানিতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’
ভারত হলো গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের বেশকিছু শহরে সবজির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। উৎপাদন কম এবং বছরের শেষে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন। তাই ভোগ্যপণ্য বিষয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানাচ্ছে রয়টার্স।
গত জুনে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার তখন রফতানি ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। মূলত আগের বছরের মজুত থেকে এ বছরে পেঁয়াজ সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বপনে বিলম্ব হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটি।
ভারতের বেশকিছু রাজ্যে চলতি বছরে দ্বিতীয় দফায় টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অনেক আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় পেঁয়াজের কাঙি্ক্ষত উৎপাদন হয়নি। ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। আগামী অক্টোবরের শেষে নতুন ফসল ওঠা পর্যন্ত এ সঙ্কট থাকবে।
দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম এখন চড়া। ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের রফতানি বন্ধের ঘোষণায় নতুন উৎসের খোঁজে আমদানিকারকরা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে। মিসর ও তুরস্ক থেকেও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) তপন কান্তি ঘোষ জানান, বাংলাদেশের একজন রপ্তানিকারকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এটি শুধু একবারের জন্যই। কোনো প্রকার উন্মুক্ত রপ্তানির নির্দেশ দেওয়া হয়নি। মূলত পূজা উপলক্ষে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করতে ওই প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে এই রপ্তানি করতে হবে। তা না হলে এ আদেশ বাতিল হবে।
চার বছর আগে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাজ্যে ইলিশ না পাওয়ার অনুযোগ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা সেই সময় বলেছিলেন, খুব কম পরিমাণেই ইলিশ পাচ্ছেন তারা। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পানি এলে ইলিশও যাবে।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তার আপত্তিতেই আটকে যায় তিস্তা চুক্তি। এরপর প্রতিটি উচ্চপর্যায়ের সফরে ওই চুক্তি নিয়ে কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
সংবাদ সূত্র: দৈনিক আমাদের কাগজ অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৭