somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইসলাম শিশু সন্তানের পরিচর্যা, যত্ন এবং লালনপালনের ভেতরেও বিশাল সাওয়াব অর্জনের সুযোগ রেখেছে

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইসলাম শিশু সন্তানের পরিচর্যা, যত্ন এবং লালনপালনের ভেতরেও বিশাল সাওয়াব অর্জনের সুযোগ রেখেছে
যেসব মা-বোনের ছোট সন্তান রয়েছে, যারা শিশু সন্তানের নার্সিং করতে গিয়ে নিয়মিত কুরআনে কারিমের তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, নফল নামায ইত্যাদি ইবাদত সঠিকভাবে করার সুযোগ পান না। আর এসব কারণে যাদের খুব মন খারাপ থাকে তাদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে, তারা তাদের সন্তানাদির যত্ন নেয়ার কারণে, নার্সিং করার মাধ্যমে নফল ইবাদতের সওয়াব প্রাপ্ত হবেন। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের আলোকে কিছু কথা উপস্থাপন করা হচ্ছে-

ইসলাম শিশু সন্তানের পরিচর্যা, যত্ন এবং লালনপালনের ভেতরেও বিশাল সাওয়াব অর্জনের সুযোগ রেখেছে। শিশু সন্তানের পরিচর্যা ও প্রতিপালন, তাদের সঠিক তালীম-তরবিয়ত করা পিতামাতার দায়িত্ব হওয়া সত্বেও দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে এটি পূণ্যলাভেরও অনন্য মাধ্যম। এক্ষেত্রে দেখা যায়, আয়-উপার্জন এবং সাংসারিক অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের তাকিদে বেশিরভাগ পিতাকে অধিকাংশ সময় ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়। বলা বাহুল্য, এর ফলে সন্তানের পরিচর্যার সার্বিক দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপরে। মা যেমন তার সন্তান তেমন। মায়ের প্রতিচ্ছবিই যেন সন্তানের মাঝে প্রতিবিম্বিত হয়ে ওঠে। একজন আদর্শ মা একটি আদর্শ পরিবার গঠনের কারিগর। স্নেহময়ী উত্তম আদর্শবতী, গুণবতী একজন মা একটি উন্নত আদর্শ জাতিগঠনের চাবিকাঠি। এজন্য মায়ের কোলকে সন্তানের জন্য 'আদর্শ শিক্ষালয়' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সন্তান প্রতিপালনে মায়ের ভূমিকা যে কত বেশি তা বলে বুঝানোর অপেক্ষা রাখে না। আর সন্তান প্রতিপালনে মায়ের প্রতি পবিত্র এ দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক অর্পিত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

كُلّكُمْ رَاعٍ وَكُلّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيّتِهِ، وَالأَمِيرُ رَاعٍ، وَالرّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيّتِهِ.

'তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে নিজ অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।... পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। স্ত্রী স্বামীর ঘর ও সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল। তোমরা সকলে দায়িত্বশীল। সকলে নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।' (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২০০)

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-

ورعاية الرجل أهله سياسته لأمرهم وإيصالهم حقوقهم ورعاية المرأة تدبير أمر البيت والأولاد والخدم والنصيحة للزوج في كل ذلك.

'পুরুষের দায়িত্ব হল পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা এবং তাদের হক আদায় করা। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হল, ঘরের কাজকর্ম আঞ্জাম দেয়া, সন্তান পরিচর্যা করা, সেবক-সেবিকাদের পরিচালনা করা এবং সকল বিষয়ে স্বামীর মঙ্গল কামনা করা।' (ফাতহুল বারী ১৩/১১৩)

শরীয়ত কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের দ্বারা সন্তানের মা অবশ্যই বড় সওয়াবের অধিকারী হবেন। এসব কাজে মা যতক্ষণ ব্যস্ত থাকেন পুরো সময়ই নেকী ও সওয়াবের মধ্যে কাটে। হাদীস শরীফে উত্তম নারীর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

خَيْرُ نِسَاءٍ رَكِبْنَ الإِبِلَ صَالِحُ نِسَاءِ قُرَيْشٍ، أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ، وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِي ذَاتِ يَدِهِ.

'আরবের নারীদের মধ্যে উত্তম নারী হল কুরাইশের নারী। তারা সন্তানের প্রতি অধিক স্নেহপরায়ণ এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযতের প্রতি অধিক যত্নশীল।' (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৮২)

সহীহ মুসলিমে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন-

جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأَطْعَمْتُهَا ثَلَاثَ تَمَرَاتٍ، فَأَعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً، وَرَفَعَتْ إِلَى فِيهَا تَمْرَةً لِتَأْكُلَهَا، فَاسْتَطْعَمَتْهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقّتِ التّمْرَةَ، الّتِي كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأَعْجَبَنِي شَأْنُهَا، فَذَكَرْتُ الّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ: إِنّ اللهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنّةَ، أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النّارِ.

'এক দরিদ্র মহিলা তার দুটি সন্তান নিয়ে আমার নিকট আসল। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম সে তাদের দু'জনের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল আর একটি খেজুর সে নিজে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নিল তখন তার দুই মেয়ে তার কাছে আরো চাইল। সে তার খেজুরটি দু'জনের মাঝে ভাগ করে দিল। তার এ বিষয়টি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঘটনাটি বললে তিনি বললেন- আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অথবা তিনি বলেছেন এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।' (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৩০)

আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা তার দু'টি সন্তানসহ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসেন। তিনি একটি সন্তানকে কোলে এবং অপরটিকে হাতে ধরে নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

حَامِلَاتٌ، وَالِدَاتٌ، رَحِيمَاتٌ، لَوْلَا مَا يَأْتِينَ إِلَى أَزْوَاجِهِنّ، دَخَلَ مُصَلِّيَاتُهُنّ الْجَنّةَ.

'গর্ভধারিনী, সন্তান জন্মদানকারিণী এবং সন্তানের প্রতি মমতাময়ী তারা যদি স্বামীদের কষ্ট না দেয় তবে তাদের মধ্যে যারা নামাযী তারা জান্নাতে যাবে।' (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২০১৩)

অনুরূপ বর্ণনা জামে মা‘মার ইবনে রাশিদে নির্ভরযোগ্য মুরসালসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীস নং ২০৬০২



সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে নারীর জীবনে পূর্ণতা আসে:
সন্তান জন্মদানের মাধ্যমেই নারী জীবনে পূর্ণতা আসে। নারী জীবন স্বার্থকতালাভ করে। আল্লাহ তাআ'লা প্রদত্ত সন্তান জন্মদানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ধারণ করে রাখেন তারা। আর এর মাধ্যমে পৃথিবী হয় আবাদযোগ্য। তাই এই পৃথিবীর টিকে থাকার পেছনে মাতৃজাতির ভূমিকা অনন্য, অনস্বীকার্য এবং তুলনাবিহীন। মাতৃজাতির প্রতি তাই বুঝি এই পৃথিবীর আজনমের ঋণ। জনম জনমের যে ঋণ শোধ হবার নয়।

প্রত্যেক মায়ের কাছে তার সন্তানই সেরা:
প্রত্যেক মায়ের কাছে তার নবাগত সন্তান যেন আকাশের চাঁদের টুকরো। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে, সন্তানের চাঁদমুখ দেখে মা নিজের শত কষ্ট ভুলে যান। গর্ভধারণের কষ্ট, প্রসবের সীমাহীন কষ্ট- সন্তানের মুখদর্শনে মা আপন জীবন সংহারী সকল যাতনা ভুলে যান। জান্নাতী অনাবিল এক আনন্দ ঢেকে দেয় তার সকল কষ্ট, দু:খ, যাতনার গ্লানীকে। মা তার সন্তানকে বুকে আগলে ধরে শীতল করে নেন তাপিত প্রাণ। মায়ের কোলে এই যে সন্তান, এ কেবল মহান প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লারই একান্ত রহমত। চাইলেই কোনো মা-বাবার পক্ষে একটি সন্তান তৈরি করা সম্ভব নয়।

সন্তান ভূমিষ্টকালীন সময়ে নারীদের জীবনে থাকে অনেক ঝুঁকি। অনেক নারী প্রসবকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন। নারীদের কষ্টের এখানেই শেষ নয়। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর দীর্ঘ ২/৩ বছর যাবত অনেক কষ্ট করতে হয় একজন মাকে। এসবের বিনিময়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব। আর একারণেই সন্তানের জন্য গর্ভধারিণী মায়েদের প্রতি রয়েছে অনেক হক বা অধিকার। সন্তান জন্মদানে গর্ভবর্তী মায়েদের দীর্ঘদিন ধরে যে অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতে হয় তার জন্য রয়েছে বিশাল পুরষ্কারের খোশখবরী। এতসব কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মায়ের জাতিকে সম্মানিত করেছেন। জগতে মায়ের মর্যাদাকে অন্য সকলের উপরে স্থান দিয়েছেন। আল কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনাদির সাথে সাথে হাদিসেও এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করা হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহিমের পরিচর্যাকারী হজরত সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! শুধু পুরুষদের উত্তম উত্তম সুসংবাদ দেন কিন্তু নারীদের কেন সুসংবাদ দেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার সাথীরা এ কারণে (নারীরা কারণ জানার জন্য) তোমাকে পাঠিয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নারীদের জন্য সুসংবাদ) ঘোষণা ইরশাদ করেন- তোমাদের কেউ কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যখন তোমাদের স্বামী তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় তোমরা স্বামীর পক্ষ থেকে গর্ভধারীনী হও, তখন তোমরা আল্লাহর পথে রোযাদারের সমান সওয়াবের অধিকারী হও। আর যখন প্রসব বেদনা শুরু হয়, তখন আসমান ও জমিনের অধিবাসী কেউ জানে না, তার জন্য চক্ষু শীতলকারী কি পুরস্কার (ছেলে/মেয়ে) লুকায়িত থাকে। আর যখন প্রসব হয়ে যায়, তখন নবজাতকের দুধপানের প্রতিটি ঢোক এবং প্রতিটি চোষণের বিনিময়ে একটি করে নেকী লেখা হয়। আর যদি নবজাকতের কারণে (কোনো নারীকে রাত) জেগে থাকতে হয়, তাহলে প্রতিটি রাতের বিনিময়ে সত্তরটি ক্রীতদাস আল্লাহর রাস্তায় মুক্ত করার সওয়াব দেয়া হয়।’ (তাবারানি)

সন্তান প্রসবের পর দুগ্ধদানকারীনী নারীদের মর্যাদা ও সাওয়াবের বিষয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য একটি হাদিস এখানে প্রাসঙ্গিক। হজরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘নারীরা গর্ভধারণ থেকে নিয়ে (সন্তানকে) দুধ ছাড়ানো সময় পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারের ন্যায় সওয়াব পেতে থাকে। আর (এ নারী) যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে শহীদের সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি)

সুতরাং মা-বোনদের সন্তান পরিচর্যা ও প্রতিপালন এবং তাদের সেবা করার গুণটি নি:সন্দেহে উত্তম গুণ। এর পেছনে তারা যে সময় ও শ্রম দিয়ে থাকেন এতে তারা বড় সওয়াবের অধিকারী হওয়ার সৌভাগ্যলাভ করেন। তবে পরামর্শ হচ্ছে, সন্তানের লালনপালন ও পরিচর্যার পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামায, যিকর-আযকারের প্রতিও সাধ্যানুসারে যথাযথ প্রচেষ্টা এবং আগ্রহ রাখতে হবে। এগুলো তো মুমিনা নারীর রক্ষাকবচ। সন্তান প্রতিপালনের সময়গুলোতে এসব আমল অধিক পরিমানে করতে না পারার কারণে যেসব নারীগন আক্ষেপ এবং অনুশোচনায় দগ্ধ হন, তারা সত্যিকারার্থে প্রশংসনীয় চরিত্রের অধিকারী এবং বলা বাহুল্য, এই অনন্য গুণ তাদের উঁচু স্তরের আল্লাহওয়ালা বান্দী হওয়ার পরিচায়ক।

সন্তান পরিচর্যায় ব্যস্ত মা-বোনদের আমলের ক্ষেত্রে করণীয়:
এক্ষেত্রে তাদের করণীয় হচ্ছে, দৈনন্দিনের ফরয ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাযসমুহ আদায় করে যাওয়া এবং সম্ভব হলে সাংসারিক ব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে অভ্যাসগত উক্ত নফল ইবাদত-বন্দেগী কিছু কিছু করতে সচেষ্ট থাকা। তবে নিতান্ত সময় সুযোগ না থাকলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দয়াময়, রহীম রহমান। তিনি মায়ের অবর্ণনীয় কষ্ট বোঝেন। তার মত আর কেউ বোঝে না। বুঝবেন না। সন্তানের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে নি:শেষ হয়ে যাওয়া মায়ের পূণ্যের পাল্লাকে তিনি ভারী করে দিবেন। আশা করা যায়, তিনি সন্তান লালন পালনের জন্য প্রত্যেক মাকে প্রভূত পরিমান সওয়াব দান করবেন। আর সন্তান যতদিন বড় না হবে, ততদিন এই সওয়াব তিনি পেতেই থাকবেন ইনশাআল্লাহ।



গুরুত্বপূর্ণ এই সুন্নাতটি যেন আমরা পুরুষগন ভুলে না যাই:
প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করিয়ে দেয়া বিধেয় যে, সন্তানের সঠিক পরিচর্যা, প্রতিপালন এবং ঘর-সংসারের দায় দায়িত্ব সামলানোর কাজগুলো সাধারণত মহিলাদের উপরেই ন্যস্ত থাকে। আর এই কাজগুলো মহিলাদের কাজ মনে করে আমরা পুরুষগন অনেকেই এর ধারে কাছে দিয়েও মাড়াতে (হাটতে) চাই না। বাইরের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনশেষে বাসা বাড়িতে গিয়ে নিজেকে রাজা বাদশাহদের জাত ঠাওরে বসি। খড়ের টুকরোটা পর্যন্ত নেড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করি না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিজের পৌরষত্ব কিংবা মানস্মান ক্ষুন্ন হবার ভয়ে এগুলো করা থেকে নিজেেদের গুটিয়ে রাখা হয়। মানহানিকর ভাবা হয় ঘরের কাজকর্ম করাকে। না ভাই, না প্রিয় বন্ধু, এমনটা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের নারীগন আমাদের কাজের লোক নন। ক্রিতদাসী নন। তারা সম্মানিত। তারা মায়ের জাতি। তাদের প্রতি সদয় হতে হবে। তাদের মর্যাদা এবং অধিকার মুখে মুখে নয়, বরং বাস্তবে কাজের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। তারা যে আমাদের ঘরবাড়ির কাজগুলো শত কষ্ট সত্বেও করে যান, এটার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য হলেও তাদের সাথে সহমর্মিতা দেখানো উচিত। তাই সুন্নাত নিয়ম মেনে, রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ মেনে ঘরকাণ্যার কাজেও তাদের সহযোগী হয়ে সাধ্যমত তাদেরকে সাহায্য করতে হবে। নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, তিনি ঘরের কাজে তার পরিবার পরিজনকে সাহায্য করতেন। নিজ হাতে ছোট ছোট কাজগুলো সম্পন্ন করতেন। সুতরাং, রান্না বান্না থেকে শুরু করে ঘরদোর পরিষ্কার করা, কাপড়চোপর কাচা যে কাজই হোক না কেন, এগুলোকে নারীদের কাজ মনে করে একতরফা তাদের উপরে ফেলে রাখার মানসিকতা কোনোক্রমেই সুন্নাহসম্মত নয়। সম্ভব হলে, সুযোগ পেলে আপনি যখন ঘরে অবস্থান করেন, এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করুন। বিশেষত নিজের ব্যক্তিগত কাজ তো নিজেরই করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে অবস্থানকালে গৃহস্থালীর বিভিন্ন কাজকর্ম নিজে করতেন। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বললেন-

'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন।’ (মিশকাত, ৩৫১৯)

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে,

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْصِفُ نَعْلَهُ، وَيَخِيطُ ثَوْبَهُ، وَيَعْمَلُ فِي بَيْتِهِ كَمَا يَعْمَلُ أَحَدُكُمْ فِي بَيْتِهِ.

'তিনি নিজে কাপড় সেলাই করতেন, জুতা সেলাই করতেন, ঘরের কাজকর্ম করতেন, যেমন তোমরা ঘরের কাজকর্ম করে থাক।' (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫৩৪১)

আর একজন পুরুষের উত্তম চরিত্রের পরিচয়ের ক্ষেত্রে এসব গুনাবলী নি:সন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।

শেষের প্রার্থনা:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মাতৃজাতির প্রতি রহম করুন। জগতের কোনো মাকে তার সন্তান দিয়ে যেন পরীক্ষার মুখোমুখি না করেন। মায়েদেরকে চক্ষুশীতলকারী সুসন্তান দান করে তাদের হৃদয়ে অনাবিল শান্তি আনয়ন করুন। দুনিয়া এবং আখেরাত উজ্জ্বল করুন। নেককার, উত্তম চরিত্রের সন্তানকে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ বানিয়ে দিন। পুরুষদেরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনন্য আদর্শ অনুসরণে ঘর-গৃহস্থালীর কাজে মায়ের জাতির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি ঘরে হৃদ্যতা-সহমর্মিতা এবং ভালোবাসার সুখময় পরিবেশ কায়েম করার তাওফিক দান করুন।

ছবি: সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×