উপকারী ফল খেজুর; খেতে পারেন শিশু বৃদ্ধ সকলেই
খেজুরের উপকারিতা অনেক। পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্কসহ অনেক খাদ্যগুণ। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সালফার, প্রোটিন, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার।
খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তাই প্রতিদিন খেতে পারেন খেজুর। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাকালীন সময়ে খেজুর খেলেই উপকার পাবেন যে কেউ। ফ্রুক্টোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। বর্তমানে বাজারে দামও সহনীয়।
শিশুদের প্রতিদিন এক থেকে দুটি করে খেজুর খাওয়া উচিত। আর প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি খেজুর খেতে পারেন। সকালে উঠে খালি পেটে চার থেকে পাঁচটি খেজুর চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া দুধের সঙ্গে ফুটিয়ে খেতে পারেন। আবার সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
খেজুর রক্তস্বল্পতা দূর করে। এতে থাকা ভিটামিন বি (বি১, বি২, বি৩, বি৫), ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খেজুরে থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে, এতে থাকা সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। খেজুরে উপস্থিত সালফার কম্পাউন্ড অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও হজমশক্তি বাড়ায়।
পাকা ফলে পূর্ণ একটি সুদৃশ্য খেজুর গাছ।
খেজুরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
খেজুর (সংস্কৃত: खर्जूरम्); (ইংরেজি: Date Palm) এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারি আকারের গাছ হিসেবে খেজুর গাছের উচ্চতা গড়পড়তা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে যা পাখির পালকের আকৃতিবিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতাগুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতায় দৃশ্যমান পত্রদণ্ড রয়েছে। এক বা একাধিক বৃক্ষ কাণ্ড রয়েছে যা একটিমাত্র শাখা থেকে এসেছে। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
খেজুরের পুষ্টিগুণঃ
সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন খেজুরঃ
আয়রনে ভরপুর খেজুর খেতে পারেন প্রতিদিন। অন্তত দুটি খেজুর যদি প্রতিদিন খান তবে অনেক রোগ কাছেও ঘেঁষবে না। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের সবই রয়েছে খেজুরে।
আসুন জেনে নিই, খেজুরের আরও কিছু উপকারিতা-
প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতেঃ খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়া। খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
রক্তচাপ কমাতেঃ প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতায়ঃ রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়ঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য। এছাড়া খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনও কখনও ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী।
হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতেঃ খেজুরে থাকা নানা খনিজ হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রেটিনা ভালো রাখতেঃ খেজুরে লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায় তা রেটিনা ভালো রাখে।
ক্যানসার প্রতিরোধেঃ খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের বেলায় ক্যানসারে ঝুঁকিটাও কম থাকে। খুব সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে খেজুর Abdominal ক্যান্সার রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে।
ওজন হ্রাস করতেঃ মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দেয় ক্ষুধার জ্বালা। এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটা খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়।
সংক্রমণ ঠেকাতেঃ যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি, এবং ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহল জনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধেঃ প্রচুর মিনারেল সঙ্গে আয়রন থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতা রোধ করে। তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন।
কর্মশক্তি বাড়ায়ঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদাররা যদি মাত্র ২টি খেজুর খান তবে খুব দ্রুত কেটে যাবে তাদের ক্লান্তি।
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়ঃ খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকার কারণে এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্র-ছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভাল থাকে।
হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম যা বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরণের কোলেস্টেরল কমায় (LDL) এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খেজুরের কিছু উপকারিতা জানা হলো। সাধারণতঃ আমরা পবিত্র রমজান মাসে খেজুর খেয়ে থাকি। ইফতারের অন্যতম আইটে এই খেজুর। ইফতারিতে খেজুর না থাকলে মনে হয় যেন ইফতারিই অপূর্ণ থেকে গেল! তাই আমাদের ভাবনায় খেজুরের সাথে রমজানের একটা সম্পর্ক। আসলে শুধু রমজান মাসেই নয়, আমাদের খেজুর খাওয়া উচিত সারা বছরের প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিন।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, Click This Link https://www.somoynews.tv/pages/details/225607
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৯