somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ১৪০০ বছর আগের যে বাণীর সত্যতার প্রমাণ পেল বিজ্ঞান

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মসজিদে নববীর মিহরাবে তাহাজ্জুদ। ছবিঃ ওয়েব থেকে সংগৃহীত।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ১৪০০ বছর আগের যে বাণীর সত্যতার প্রমাণ পেল বিজ্ঞান

পার্থিব ক্ষনস্থায়ী এই জীবনে যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার হুকুম এবং রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখানো পথ অনুসরণ করে চলবেন পরকালে তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং সেখানে পরম শান্তিতে বসবাস করবেন। জান্নাতের সে জীবন যেমন অনি:শেষ এবং চিরস্থায়ী, তেমনি সেখানকার নাজ নেয়ামতও অশেষ, অঢেল ও অফুরন্ত। সে জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। জান্নাতিদের জন্য সেখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বড় নেয়ামত হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দিদার বা দর্শনলাভ। জান্নাতের নেয়ামত, সুখ-শান্তি, ঐশ্বর্য সম্পর্কে কুরআনুল হাকিম ও হাদিসে নববীতে বহু বর্ণনা রয়েছে। জান্নাতে প্রবেশের জন্য আটটি দরজার বর্ণনাও উঠে এসেছে কুরআন হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়। জান্নাতীগণ তাদের স্তর এবং মর্যাদা অনুযায়ী এসব দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

জান্নাতের আটটি দরজার প্রত্যেকটিতে দুটি করে পাল্লা রয়েছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই পাল্লার মধ্যবর্তী জায়গা কতটা প্রশস্ত সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। হাদিসের বিশুদ্ধ গ্রন্থ সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের দরজার দুই পাল্লার মাঝখানের প্রশস্ততা মক্কা শরিফ থেকে বাহরাইনের হাজার অথবা মক্কা শরিফ থেকে সিরিয়ার বসরার দূরত্বের সমান। ১৪০০ বছর আগে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ لَكَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرٍ أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى ‏

'... যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ তার শপথ, নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজার দুই পাল্লা/ চৌকাঠের মাঝখানের দূরত্ব মক্কা এবং হাজারের দূরত্বের পরিমাণ, অথবা মক্কা এবং বসরা এর দূরত্বের পরিমাণ'। -সহিহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمان), হাদিস নং ৩৭৬।

জান্নাতের দরজার দুই পাল্লা/ চৌকাঠের মাঝখানের দূরত্ব বর্ণিত হাদিসের বঙ্গানুবাদসহ পূর্ণ ইবারত এখানে সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সুবিধার্থে তুলে ধরা হলো-

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، - وَاتَّفَقَا فِي سِيَاقِ الْحَدِيثِ إِلاَّ مَا يَزِيدُ أَحَدُهُمَا مِنَ الْحَرْفِ بَعْدَ الْحَرْفِ - قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ حَدَّثَنَا أَبُو حَيَّانَ عَنْ أَبِي زُرْعَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَسَ مِنْهَا نَهْسَةً فَقَالَ ‏ "‏ أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَهَلْ تَدْرُونَ بِمَ ذَاكَ يَجْمَعُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَيُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ الْبَصَرُ وَتَدْنُو الشَّمْسُ فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الْغَمِّ وَالْكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَمَا لاَ يَحْتَمِلُونَ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ أَلاَ تَرَوْنَ مَا أَنْتُمْ فِيهِ أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ ائْتُوا آدَمَ ‏.‏ فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ يَا آدَمُ أَنْتَ أَبُو الْبَشَرِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ وَأَمَرَ الْمَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَيَقُولُ آدَمُ إِنَّ رَبِّي غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ وَإِنَّهُ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ ‏.‏ فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُونَ يَا نُوحُ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى الأَرْضِ وَسَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَيَقُولُ لَهُمْ إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُ بِهَا عَلَى قَوْمِي نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُونَ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَيَقُولُ لَهُمْ إِبْرَاهِيمُ إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلاَ يَغْضَبُ بَعْدَهُ مِثْلَهُ ‏.‏ وَذَكَرَ كَذَبَاتِهِ نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى ‏.‏ فَيَأْتُونَ مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُونَ يَا مُوسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالاَتِهِ وَبِتَكْلِيمِهِ عَلَى النَّاسِ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَيَقُولُ لَهُمْ مُوسَى صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ وَإِنِّي قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى صلى الله عليه وسلم ‏.‏ فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُونَ يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَلِمَةٌ مِنْهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَاشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَيَقُولُ لَهُمْ عِيسَى صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ - وَلَمْ يَذْكُرْ لَهُ ذَنْبًا - نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فَيَأْتُونِّي فَيَقُولُونَ يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتَمُ الأَنْبِيَاءِ وَغَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا فَأَنْطَلِقُ فَآتِي تَحْتَ الْعَرْشِ فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي ثُمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَىَّ وَيُلْهِمُنِي مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا لَمْ يَفْتَحْهُ لأَحَدٍ قَبْلِي ثُمَّ يُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ سَلْ تُعْطَهْ اشْفَعْ تُشَفَّعْ ‏.‏ فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي ‏.‏ فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلِ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِ مِنَ الْبَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ لَكَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرٍ أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى ‏"‏ ‏‏

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, তার সামনে সামনের রান পেশ করা হলো। (ছাগলের) গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, তখন একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের দৃষ্টি সকলকে আয়ত্ব করতে সক্ষম হবে। সূর্য নিকটবতী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কষ্ট ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দুর্দশায় তোমরা আছ, দেখছ না? কী অবস্থায় তোমরা পৌঁছেছো, উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না, যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন?

তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, চল, আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাই। অনন্তর তারা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন; তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে। আপনি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না, আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌঁছেছি? আদম আলাইহিস সালাম উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি, আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহ আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও।

তখন তারা নূহ আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি? অ্যমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? নূহ আলাইহিস সালাম বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুআ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও।

তখন তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নবী পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে, পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বাহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, -‘নাফসী”, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। মূসা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও।

তারা মূসা আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তাঁর হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ঈসা আলাইহিস সালাম -এর কাছে যাও।

তারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং, আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন অবস্থায় পৌঁছেছে? ঈসা আলাইহিস সালাম বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরূপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা জন্য কারো কাছে যাও। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরকে সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।

অনন্তর আমি মাথা তুলব। বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, এদেরকে মুক্তি দান করুন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত।*

* হাদিসের শেষোক্ত বাক্যের 'হাজার' বাহরাইনের একটি শহর এবং 'বসরা' দামেশকের নিকটবর্তী একটি শহর।

হাদিসটি অনলাইনে দেখে নেয়া যায় নিচের লিঙ্ক থেকে-

সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী

আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাণী প্রদান করেছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি বলতেন, জান্নাতের দরজার ‍দুই পাল্লার মধ্যবর্তী দূরত্ব মক্কা শরিফ থেকে ‘হাজার’ (স্থানের নাম) পর্যন্ত। তাহলে এ নিয়ে এ মুহূর্তে হয়তো আলোচনার প্রয়োজন হতো না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, অথবা, জান্নাতের দুই দরজার মধ্যবর্তী দূরত্ব মক্কা শরিফ থেকে 'বসরা'র দূরত্বের সমান। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ কথায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, মক্কা থেকে ‘হাজার’ কিংবা মক্কা থেকে 'বসরা' সমান দূরত্বে অবস্থিত দু'টি শহর বা নগর।

মজার বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে পাওয়া ছবিতেও দেখা গেছে যে, মক্কা থেকে 'বসরা' এবং মক্কা থেকে ‘হাজার’ প্রায় একই দূরত্বে অবস্থিত। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে প্রযুক্তিগত উপায়-উপকরণবিহীন সেই সময়ে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে এই দু'টি স্থানের দূরত্ব অবিকল জানতে সক্ষম হলেন? আল্লাহ তাআ'লার অমোঘ ঘোষনা-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى

এবং তিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না। -সুরা নাজম, আয়াত-৩

Nor does he say (aught) of (his own) Desire.

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

এগুলো কেবলই ওহী, যা তার কাছে পাঠানো হয়।’ -সুরা নাজম, আয়াত-৪

It is no less than inspiration sent down to him.

সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। 'ইসলাম প্র্যাকটিস' নামে একটি ফেসবুক পেজ তাদের এক পোস্টে বিষয়টি ‍তুলে ধরেছে। সেখানে স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।

বিষয়টি প্রমানের জন্য গুগল ম্যাপ করে দেখলাম যে, মক্কা এবং বাহরাইনের হাজার শহরের দূরত্ব ১২১০ কিলোমিটার এবং মক্কা থেকে সিরিয়ার বসরা শহরের দূরত্বও ১২৯০ কিলোমিটার পাওয়া যায়। গুগল ম্যাপে দু'টি স্থান থেকে মক্কাতুল মুকাররমাহর দূরত্বের সামান্য এই ব্যবধান দেখানোর পেছনে হয়তো গাড়ি পথ বা হাটা পথের বিষয়াদি কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। মোট কথা, মক্কা থেকে দু'টি স্থানের দূরত্ব যে প্রায় কাছাকাছি পরিমান, সেটি প্রমাণিত এবং সে কথায় কারও দ্বিমত পোষন করারও সুযোগ নেই। আর এই বিষয়টি প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অনুমান করা নিশ্চয়ই সহজ কোনো কাজ ছিল না। অবশ্যই এটির মাধ্যমে প্রিয় নবীজীর প্রতিটি কথাই যে সত্য তা বুঝতে কিছুটা হলেও আমাদের সাহায্য করে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের বিষয়গুলো বুঝার তাওফিক দান করুন।

গুগল ম্যাপে প্রাপ্ত দু'টি স্থানের দূরত্বের ছবি যুক্ত করা হলো-



সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×