রোযাদার ব্যক্তির রক্তদানের হুকুম
সাধারণভাবে রোযাদার ব্যক্তির রক্তদানে কোন সমস্যা নেই, বরং রোযা অবস্থায় রক্ত দেয়া জায়েজ। তবে যদি রক্তদানের কারণে উক্ত রোযাদারের রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাহলে রক্ত দেয়া মাকরূহ হবে।
জটিল ও মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টায় রক্ত প্রয়োজন হলে এবং রোযাদার ব্যক্তি ছাড়া রক্ত দেয়ার মত কাউকে পাওয়া না গেলে এবং রক্ত দেয়ার কারণে সুন্নতে মুআক্কাদা তারাবিহ নামাজ আদায় উক্ত রোযাদারের জন্য কষ্টকর হলে বা পড়তে না পারলেও রক্ত দেয়াটাই উচিত হবে। কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে, রক্ত দিলে রোযাই রাখতে পারবে না, তাহলে রক্ত দেয়া যাবে না। মোট কথা, রক্তদানের কারণে কোন অবস্থায়ই রোযা ভঙ্গ হবে না।
প্রমান হিসেবে সাবেত আল বুনানী রাহ. বলেন, হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না; তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।’ -সহীহ বুখারী হাদীস ১৯৪০
মোট কথা, রোযা রাখা অবস্থায় রক্ত দেবার দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তাই বিশেষ প্রয়োজনে নিশ্চিন্তভাবে রক্তদানের মত মহত একটি কাজ করে খিদমতে খালক তথা, সৃষ্টির সেবায় ভূমিকা রাখা যেতে পারে।
عن ثابت البنانى قال: سئل أنس بن مالك أكنتم تكرهون الحجامة للصائم؟ قال: لا، إلا من أجل الضعف (صحيح البخارى، كتاب الصوم، باب الحجامة والقيئ للصائم-1260، رقم-1899، 1940)
عن ابن عباس أن ذكر عنده الوضوء من الطعام، قال الأعمش مرة: الحجامة للصائم فقال: إنما الوضوء مما يخرج وليس مما يدخل، وإنما الفطر مما دخل وليس مما خرج (السنن الكبرى للبيهقى-6312، رقم-8346)
রোযাদারের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান
রমজানে রোযা অবস্থায় অনেক সময় ঔষধ সেবন বা ব্যবহার করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কখনও কখনও নাক, কান বা চোখে ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, রোজাদার ব্যক্তির মুখ, কান, নাক, গুহ্যদ্বার, যোনিপথ ও পেটের ক্ষতস্থানে ঔষধ ব্যবহার করলে যদি তা পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য ইতোপূর্বেকার মাসআলা অনুযায়ী বলা হতো যে, পাকস্থলিতে তরল বা ঔষধ প্রবেশ যেমন রোযা ভঙ্গের একটি কারণ, একইরকমভাবে চোখ, কান বা নাকে কোন তরল বা ঔষধ ব্যবহার করার পরে তা মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে তাতেও রোযা ভঙ্গ হবে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষনায় জানা গেছে যে- মস্তিস্ক ও কানে ঔষধ ব্যবহার করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, গবষেণায় প্রমান হয়েছে, মস্তিষ্ক ও কান থেকে গলা হয়ে পাকস্থলি পর্যন্ত পানি বা তরল ঔষধ ইত্যাদি পৌঁছানোর সরাসরি কোন ছিদ্র পথ নেই। পূর্বযুগের ফেকাহর কিতাবাদিতে মস্তিষ্ক ও কান থেকে গলা পর্যন্ত ছিদ্রপথ থাকার আনুমানিক ধারণা থেকেই মূলতঃ এর ফলে রোজা ভঙ্গের হুকুম দেয়া হয়েছিল। -বাদায়েউস সানায়ে খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৯৩, মারাকিল ফালাহ পৃষ্ঠা ১৩৩, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭, আহছানুল ফাতাওয়া খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪২১
নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে যদি তা পেটে পৌঁছে যায় তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা, লাক্বীত বিন সাবুরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন,
وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
ছিয়াম বা রোযা অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে। -আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিও্বতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা, নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা, ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা
অতএব, পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়।
রোযাদার কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছে যায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহ্ তাআ'লা ইরশাদ করেন,
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَـٰكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন। -সূরা আহযাব, আয়াত ৫
আরেকটি বিষয়, নাকে ভাপের ধোঁয়া টানলে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ করে আর তা নিজ ইচ্ছায় হলে, এতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
চোখে ড্রপ ব্যবহার করা সুরমা ব্যবহার করার মতই। সাধারণতঃ কানে বা চোখে ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরং এতে উদ্দেশ্য থাকে শুধু ড্রপ ব্যবহার করা। এই কারণে কানে বা চোখে ড্রপ ব্যবহার করা হলে তাতে রোযা নষ্ট হবে না। চোখে মলম বা ড্রপ ব্যবহারের ফলে যদি কন্ঠনালিতে ও থুথুতে স্বাদ অনুভূত হয়,তবুও রোজার কোন সমস্যা হবে না।
এমনিভাবে রোযা অবস্থায় শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে (Nebulizer) ব্যবহার করলে এবং যদি উক্ত স্প্রে শুধুমাত্র নাকে প্রবেশ করে কিন্তু পেট পর্যন্ত না পৌঁছায় তাহলে রোযা রেখে ইহা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এতে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এটা এমন বস্তু যা সাধারণতঃ উড়ে বেড়ায়। নাকে প্রবেশ করে এবং বিলীন হয়ে যায়, এর অংশ বিশেষ পেটের মধ্যে প্রবেশ করে না। তাই এর দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে না।
শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা পানাহারের অন্তর্ভূক্ত নয়। -ফতোয়া আরকানুল ইসলাম থেকে, মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
রোযা অবস্থায় ভ্যাক্সিন বা টিকা গ্রহণের হুকুম
করোনা, নোবেল করোনাসহ নানাবিদ ভাইরাসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আজকের পৃথিবী। রোযা রেখে ভ্যাকসিন নেয়া যাবে কি না, এ নিয়েও অনেকের চিন্তা। মূলতঃ যে কোন ধরণের ভ্যাক্সিন বা টিকা নেবার দ্বারা রোযাদারের রোযার কোন সমস্যা হবে না। তাই রোযাদারের জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা নিতে কোন সমস্যা নেই।
وأما ما وصل إلى الجوف أو الى الدماغ عن غير المخارق الأصلية بأن داوى الجائفة ولآمة، فإن داواها بداء يابس لا يفسد (بدائع الصنائع، كتاب الصوم، فصل فى فساد الصوم-2243)
وأكثر المشائخ اعتبروا الوصول إلى الجوف فى الجائفة والآمة إن عرف أن اليابس وصل إلى جوف يفسد صومه بالاتفاق، وإن لم يعرف أن الرطب لا يصل إلى الجوف لا يفسد (الفتاوى التاتارخانية-3379، رقم-4629)
الموجود فى حلقه أثر داخل من المسام الذى هو خلل البدن والمفطر إنما هو الداخل من المنافذ (رد المحتار، كتاب الصوم، باب ما يفسد الصوم وما لا يفسد-3367)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:১৩