ফরজ নামাজ শেষে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থবহ অনেক দোয়া এবং জিকির পাঠ করতেন। তিনি কোন কোন দোয়া ও জিকির ফরজ নামাজান্তে গুরুত্বের সাথে পাঠ করতেন এবং পাঠে অভ্যস্তও ছিলেন - আমরা কি জানি? কেউ কেউ জেনে থাকলেও অনেকেরই হয়তো সঠিকভাবে জানা নেই। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পঠিত কিছু দোয়া এবং জিকির আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিদিনের ফরজ নামাজ শেষে অনুশীলনের লক্ষ্যে এখানে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের তাওফিক দান করুন।
১. সালাম ফিরিয়ে প্রথমেই পাঠ করুন- ''আল্লাহু আকবার'' ১ বার এবং “আসতাগফিরুল্লা-হ” (ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪ) -- ৩ বার
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
২. এরপরে পাঠ করুন- “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – ১ বার।
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻭَﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﺗَﺒَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻳَﺎ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﻼَﻝِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻛْﺮَﺍﻡِ
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। আপনি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ইস্তেগফার পড়তেন, অর্থাৎ, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”। -মুসলিম ১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১
৩. একবার
لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ:- “ লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ্, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ:- আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
৪. একবার
اَللّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الَجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’তিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন তা রোধ করার এবং যা রোধ করেন তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন আপনার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। -বুখারী, মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬২ নং
৫. একবার
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِالله
উচ্চারণ:- লা-হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ্।
অর্থ:- আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই।
৬. একবার
لآ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ:- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না’বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফায্বলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বিনা লাহুদ্দ্বীনা অলাউকারিহাল কা-ফিরুন।
অর্থ- আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফের দল তা অপছন্দ করে। -মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬৩ নং
৭. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫) ১ বার।
আবু উমামা (রাঃ) বলেন, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না”। -নাসায়ী, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহিহাহ-হাদিস ৯৭২
৮. আবু হুরাইরা (রাঃ) প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। -মুসলিম-১২২৮
৯. একবার করে সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পড়ুন। -আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮
১০. একবার পড়ুন- “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা”
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻋِﻨِّﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺫِﻛْﺮِﻙَ، ﻭَﺷُﻜْﺮِﻙَ، ﻭَﺣُﺴْﻦِ ﻋِﺒﺎﺩَﺗِﻚَ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার স্মরণ, আপনার কৃতজ্ঞতা এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে সাহায্য করুন”। -আবু দাউদ ১/২১৩
১১. একবার পাঠ করুন- 'আল্লা-হুম্মা ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা-দাক'।
اَللّهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
অর্থ:- হে আল্লাহ! যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন সেদিনকার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করুন। -মুসলিম
১২. ফজরের সলাতের পর ১ বার
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْماً نَّافِعاً وَّرِزْقاً طَيِّباً وَّعَمَلاً مُّتَقَبَّلاً
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না-ফিআ, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট ফলদায়ক শিক্ষা, হালাল জীবিকা এবং গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
ফজরের নামাযের পর এটি পঠনীয়। -ইবনে মাজাহ্, সুনান১/১৫২, ত্বাবারানী সাগীর, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১১১
১৩. হযরত আব্দুর রহমান বিন গানম (রাঃ) হতে বর্ণিত প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামায থেকে ফিরে বসা ও পা মুড়ার পূর্বে (অর্থাৎ, যেভাবে বসে নামাজ শেষ করেছে সেভাবে বসেই, এদিক অদিক ঘুরা বা অন্য রকম করে বসার পূর্বেই) নিম্নোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
আল্লাহ্ তার আমলনামায় প্রত্যেকবারের বিনিময়ে ১০টি সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন, ১০টি গোনাহ মোচন করে দেন, তাকে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত করেন, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ যিকির) রক্ষাকবচ হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমার্হ হয়। আর সে হয় আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে যে তার থেকেও উত্তম যিকির পাঠ করবে”। -আহমাদ,সহীহ তারগীব-হাদিস ৪৭২
শেষের নিবেদনঃ
প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, উল্লিখিত প্রতিটি দোয়া এবং জিকিরই চমৎকার অর্থবহ এবং গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থ বুঝে কায়োমনোবাক্যে একাগ্রতার সাথে পাঠ করলে অন্তরে শিহরণ জাগা স্বাভাবিক। নিতান্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে, একান্তভাবে প্রাপ্তির আশা নিয়ে দোয়া ও জিকিরগুলো পাঠ করা চাই। আল্লাহ জাল্লা শানুহূ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা।