somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

ছবি, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্বৈরাচারী শাসনের পতন সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদের ছায়া সমাজের প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে রয়েছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগীরা—যারা একদা স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষকতায় লাভবান হয়েছিল—এখনো চতুর্দিকে ওত পেতে আছে। রাজনীতি, আমলাতন্ত্র, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ডিজিটাল জগতে তাদের সুকৌশলী তৎপরতা সমাজের নৈতিক ভিত্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই প্রতিবেদন ফ্যাসিবাদের অদৃশ্য উপস্থিতি, এর দোসরদের কার্যক্রম এবং সমাজের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিকারের পথ নির্দেশ করে।

ফ্যাসিবাদ: একটি বিষাক্ত মানসিকতা

ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, এটি একটি মানসিকতা, যা স্বাধীনতা, ন্যায় ও মানবাধিকারকে দমন করে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ এবং বিরোধী মত দমনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, ফ্যাসিস্ট মানসিকতার বাহকেরা রাজনীতি, শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। তারা প্রকাশ্যে ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা না বললেও, তাদের কর্মকাণ্ডে সেই বিষাক্ত প্রভাব স্পষ্ট।

ফ্যাসিস্টের দোসর: কারা এরা?

ফ্যাসিস্টের দোসররা হলো সেই ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, যারা স্বৈরাচারী শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে লাভবান হয়েছে এবং এখনো তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। এদের মধ্যে রয়েছে:

প্রভাবশালী আমলা ও রাজনীতিবিদ: যারা স্বৈরাচারী শাসনে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং নতুন ব্যবস্থায় নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

গণমাধ্যমের একাংশ: কিছু গণমাধ্যম, যারা স্বৈরাচারের প্রচারণায় সহায়ক ছিল, এখনো সত্যকে বিকৃত করে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখছে।

ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রবক্তা: পুঁজিবাদী ভোগবাদ মানুষকে স্রষ্টাবিমুখ ও প্রবৃত্তির দাসে পরিণত করে ফ্যাসিবাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।

ধর্মীয় ও সামাজিক নেতা: কিছু নেতা ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

অনলাইনে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা

ফ্যাসিস্ট দোসররা এখন ডিজিটাল জগতে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমে তারা মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের কৌশলগুলো হলো:

মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য: ২০২৫ সালে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে ভুয়া খবর ছড়িয়ে জনমনে অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু গ্রুপ দাবি করেছে, সংস্কার প্রক্রিয়া দেশকে “বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র”।

বিদ্বেষমূলক প্রচারণা: শিশু আছিয়ার হত্যাকাণ্ডের মতো সংবেদনশীল ঘটনাকে ব্যবহার করে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ উসকে দেওয়া হচ্ছে।

ট্রোলিং ও সাইবার হুমকি: সত্যবাদী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে ট্রোলিং ও ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

প্রোপাগান্ডা কনটেন্ট: আকর্ষণীয় ভিডিও, মিম ও পেইড প্রচারণার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট আদর্শ ছড়ানো হচ্ছে।

সমাজে প্রভাব

ফ্যাসিস্ট দোসরদের তৎপরতা সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে:

নৈতিক অধঃপতন: সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ও বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট মানুষকে স্রষ্টাবিমুখ করছে। হাদিসে বলা হয়েছে, পাপ বারবার করলে হৃদয়ে কালো দাগ পড়ে, যা মানুষকে পাপে আচ্ছন্ন। (জামে তিরমিযী, হাদিস: ৩৩৩৪)।

বিভেদ ও অবিশ্বাস: মিথ্যা তথ্য সমাজে বিভেদ ও অবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, যা ফ্যাসিবাদের জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে।

তরুণ প্রজন্মের বিপথগামন: সামাজিক মাধ্যমে সময় ব্যয়কারী তরুণরা প্রোপাগান্ডার শিকার হয়ে নৈতিক ও আদর্শিকভাবে দুর্বল হচ্ছে।

বিচারহীনতা: আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামির পলায়নের মতো ঘটনা বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে, যা ফ্যাসিস্ট দোসরদের উৎসাহিত করে।

প্রতিকারের পথ

ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তাদের দোসরদের প্রভাব রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন:

বিচারব্যবস্থার সংস্কার: ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামী বিধানে কঠোর শাস্তির নির্দেশনা অপরাধ দমনে কার্যকর হতে পারে। মামলার নিষ্পত্তি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিত।

ডিজিটাল সাক্ষরতা: তরুণদের ডিজিটাল সাক্ষরতা শিক্ষা দিয়ে মিথ্যা তথ্য চিহ্নিত করার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে পাঠ্যক্রম যুক্ত করা যেতে পারে।

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা: গণমাধ্যমকে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুয়া কনটেন্ট অপসারণ করতে হবে।

নৈতিক শিক্ষার প্রসার: ইসলামী নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা ছড়িয়ে মানুষকে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সমাজের সক্রিয় ভূমিকা: আলেম, শিক্ষক ও বিবেকবান ব্যক্তিদের সামাজিক মাধ্যমে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সক্রিয় হতে হবে। দরিদ্র বিচারপ্রার্থীদের পক্ষে রাষ্ট্রকে আইনি সহায়তা দিতে হবে।

উপসংহার

ফ্যাসিস্টের দোসররা সমাজের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে থাকলেও, তাদের প্রভাব রোধ করা অসম্ভব নয়। শিশু আছিয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা আমাদের সতর্ক করে যে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও সামাজিক। বিচারব্যবস্থার সংস্কার, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রসারের মাধ্যমে আমরা এই বিষাক্ত ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সুমতি ও সাহস দান করুন, যেন আমরা ন্যায়, ইনসাফ ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×