কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের ধারণা, হামলার পেছনে মোদীর কাশ্মীর নীতি সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের ৩৭০ ধারা বাতিল। তবে জটিল এবং বিতর্কিত এই হামলার পেছনে আরও অনেক কারণ জড়িত থাকতে পারে।
হামলার বিবরণ
২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এটি বাইসারন উপত্যকায় ঘটেছে, যা একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। "কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স" নামক একটি গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেছে, যারা মোদীর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এটি করেছে বলে দাবি করেছে।
মোদীর কাশ্মীর নীতি
২০১৯ সালে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ স্থিতি শেষ করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল অঞ্চলটিকে ভারতের সঙ্গে আরও সমন্বিত করা। তবে, এটি বিতর্কিত, কারণ কিছু লোক বলছেন যে এটি স্থানীয় জনগণের অধিকার হরণ করেছে এবং উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
সম্পর্ক এবং জটিলতা
অনেকে মনে করেন যে, এই হামলা মোদীর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে "বাইরের লোক" এর বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে। তবে, কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার কারণে এই ধরণের ঘটনা বিচিত্র কিছু নয়। মোটকথা, এটি জটিল, এবং এককভাবে শুধু মোদীর নীতিকে দায়ী করা সহজ নয়।
বিস্তারিত বিবরণ
কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলোর মধ্যে একটি। এই হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন, যার মধ্যে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কার্নাটক, ওড়িশা, তেলঙ্গানা, ছত্তিসগড়, গুজরাট এবং কেরালার বাসিন্দা রয়েছেন। কিছু বিদেশি পর্যটকও এই হামলায় নিহত হয়েছেন। হামলাটি বাইসারন উপত্যকায়, পেহেলগামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে ঘটেছে, যার অবস্থান পাহাড়ি এলাকায় এবং শুধুমাত্র পায়ে হাঁটার মাধ্যমে সেখানে পৌঁছানো যায়।
হামলার বিস্তারিত
হামলাকারীরা ২-৩ জন গুলি চালিয়েছিল, এবং এটি এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন এলাকায় পর্যটকরা বেশি থাকতেন। "কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স" নামক একটি গোষ্ঠী, যা লাশকার-ই-তৈয়েবার (LeT) একটি শাখা, দায় স্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে যে এই হামলা ভারত সরকারের কাশ্মীর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ, বিশেষ করে ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে অঞ্চলটিতে "বাইরের লোক" এর বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে। এই গোষ্ঠী বলেছে যে এটি জনসংখ্যার গঠনে পরিবর্তন আনার চেষ্টার বিরুদ্ধে।
মোদীর কাশ্মীর নীতি
২০১৯ সালে, মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্থিতি শেষ করতে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছিল, যা অঞ্চলটিকে ভারতের সঙ্গে আরও সমন্বিত করার লক্ষ্যে ছিল। এটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দুটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করেছিল। এই নীতির অংশ হিসেবে, সেখানে বহিরাগতদের জমি কেনা এবং চাকরির অধিকার দেওয়া হয়েছিল, যা কিছু লোকের কাছে অঞ্চলটির জনসংখ্যা গঠনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। এই নীতি সমর্থকদের মতে, এটি উন্নয়ন এবং একতার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল, তবে সমালোচকরা বলেন যে এটি স্থানীয় জনগণের অধিকার হরণ করেছে এবং উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
হামলা এবং নীতির সম্পর্ক
এই হামলা মোদীর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর থেকে হিন্দু এবং অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যযুক্ত হত্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। "কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স" এর দাবি অনুসারে, ৮৫,০০০ "বাইরের লোক" এর বসতি স্থাপন তাদের ক্রোধের একটি কারণ। তবে, কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের ভূ-রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সীমান্ত-সংক্রান্ত সমস্যা এটিতে অবদান রাখতে পারে। হামলাকারীরা মোদীকে অভিশাপ দিয়েছিল এবং শিকারদের ইসলামিক শ্লোক আবৃত্তি করতে বলেছিল, যা দেখায় যে এটি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় উভয় প্রেক্ষাপটেই পরিচালিত হয়েছিল।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই হামলাকে "সন্ত্রাসী হামলা" বলে অভিহিত করেছেন এবং দোষীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি তার সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরে এসেছেন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উগ্রবাদী মোদীর সকল অপকর্মের অন্যতম দোসর সরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে গিয়েছেন নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে, এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেন যে এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে বড় সিভিলিয়ান হামলা। আন্তর্জাতিকভাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি সহ অনেকে এই হামলার নিন্দা করেছেন, এবং ট্রাম্প মোদির সঙ্গে কথা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
মোদীর সাজানো নাটক নয়তো?
কেউ কেউ মনে করেন, এই ঘটনার সাথে ভারতের হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থী শাসকগোষ্ঠী মোদী গংদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাদের মতে, সুনির্দিষ্ট ছকে মোদী গং প্রশিক্ষিত অপরাধীদের দ্বারা এসব সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে সুকৌশলে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপরে এর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করে থাকতে পারেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে মুসলিমদের সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা থাকতে পারে তাদের।
ইতোপূর্বে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে এই ধরণের বহু সাজানো সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার ঘটনার আসল তথ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপে একে একে প্রকাশ পাওয়ার পরে মানুষ নড়েচড়ে বসেছেন। অনেকেই মনে করছেন, হাসিনা সরকার তো প্রভূ ভারতের পরামর্শেই চলতেন। সুতরাং, সাজানো সন্ত্রাসী হামলাগুলোও তিনি হয়তো ভারতের পরামর্শেই করিয়েছিলেন। যে ভারত অন্য দেশকে পরামর্শ দিয়ে সাজানো সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করাতে পারে, সে বিভেদপূর্ণ কাশ্মীরে একই অঘটন ঘটাতে পারবে না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
তথ্য সংগ্রহের উৎস
তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন:
At Least 24 Tourists Gunned Down by Militants in KashmirAt least 26 tourists killed by suspected militants in Kashmir attackhttps://www.nytimes.com/2025/04/22/world/asia/kashmir-terrorist-attack.html
বিশ্লেষণ
এই হামলা কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা তুলে ধরে এবং মোদীর কাশ্মীর নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। তবে, হামলার জন্য এককভাবে মোদীর নীতিকে দায়ী করা অতিসরলীকরণ হতে পারে, কারণ অঞ্চলটির দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যাগুলো এই ধরনের হত্যাকান্ডের ঘটনাকে বারবার সামনে এনেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৭