somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের দাবি, তারা কোনো অপরাধে জড়িত নন। পলাতক হাসিনার মুখেও এই কথা শোনা গেছে যে, আমার দোষটা কোথায়? প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যদি দোষীই না হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তারা জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সাহস না দেখিয়ে পালিয়ে গেলেন? এই প্রশ্ন বাংলাদেশের জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের কারণে সৃষ্ট জনরোষের তীব্রতা আর দেশবাসীর অপরিমেয় ক্ষোভই তাদের পলায়নের পেছনে প্রধান কারণ। এর সাথে আরও কিছু কারণ রয়েছে যা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে শত শত মানুষ নিহত হন, যার জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। শেখ হাসিনার বাসভবন (গণভবন), আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং নেতাদের বাড়িঘরে জনতার হামলা ও লুটপাটের ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে আওয়ামী লীগের নেতারা জনগণের কাছে কতটা অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। এই ভয়াবহ জনরোষের মুখে তারা পালিয়ে যাওয়াকেই নিরাপদ মনে করেছেন। তাদের এই পলায়ন জনগণের কাছে তাদের দুর্বলতা এবং অপরাধবোধের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এবং আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সরকারি সম্পদ লুটপাটের অভিযোগে মামলা দায়ের করতে শুরু করেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা জানতেন যে তাদের শাসনামলে জনগণের উপর চালানো বহুমাত্রিক ও পৈশাচিক নির্যাতন এবং অর্থনৈতিক শোষণের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর বিচারের কারণ হতে পারে। এমনকি যারা সরাসরি দোষী নন, তারাও ভয় পেয়েছিলেন যে তারা ন্যায়বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন। ফলে, তারা ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অন্যান্য দেশে পালিয়ে যান।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী, ব্যাপক দমন-পীড়নের শিকার হয়। হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং মামলার মুখোমুখি করা হয়। বিরোধী মতের শত শত লোককে গুম করা হয়। আয়নাঘর নামে বিরোধীদের দমনে বিশেষ নির্যাতনের পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়। ২০২৪ সালে হাসিনার পতনের পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পান এবং জামায়াতে ইসলামীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা আশঙ্কা করেছিলেন যে তাদের দীর্ঘদিনের শত্রুরা এখন ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ নেবে। এই ভয় তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। জনগণের কাছে তাদের এই পলায়ন প্রমাণ করে যে তারা তাদের অতীত কর্মের ফল ভোগ করতে ভয় পাচ্ছিলেন।

গণ-আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং দলটি জনগণের সমর্থন হারায়। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনগণের উপর নির্যাতনের কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতার বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পারেন যে বাংলাদেশে তাদের আর নিরাপদ আশ্রয় নেই। জনগণের এই তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, যা জনমনে তাদের দায়িত্ব এড়ানোর প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা নিজে ভারতে আশ্রয় নেন, এবং অনেক আওয়ামী লীগ নেতা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং হাসিনার ভারতপ্রীতি তাদের জন্য ভারতকে একটি নিরাপদ গন্তব্য করে তুলেছে। কেউ কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, আবার কেউ নতুন করে সেখানে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন যে তার মা রাজনীতিতে ফিরবেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করবেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু নেতা বিদেশ থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে, জনগণের কাছে এই পলায়ন তাদের জনগণের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে পিছু হটার স্পষ্ট প্রমাণ।

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি ধোয়া তুলসি পাতা হতেন, সত্যিই যদি নির্দোষ হতেন, তাহলে কেন তারা জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন না? কেন তারা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখালেন না? জনগণের তীব্র ক্ষোভ, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও নির্যাতনের অভিযোগ, এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভয় তাদের পালাতে বাধ্য করেছে। তাদের এই পলায়ন শুধু তাদের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং তাদের অতীত কর্মের ফল এড়ানোর একটি কৌশল। জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগের নেতারা জনগণের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়েছেন। তাদের পলায়ন বাংলাদেশের জনগণের বিজয় এবং আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয়ের প্রতীক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১০
২২টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফ্রিতে ১০১ টি AI টুল, কোনটির কি কাজ বাংলায় বর্ণনাসহ!!

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

ফ্রিতে ১০১ টি AI টুল, কোনটির কি কাজ বাংলায় বর্ণনাসহ!!

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

AI টুল ব্যবহার করে জীবনকে করুন আরও সহজ এবং সৃজনশীল! কয়েক ঘন্টার কাজ করে নিন কয়েক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ মশিউর রহমান বনাম হাসান কালবৈশাখী: একি ঘৃণার নতুন সংস্করণ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬



ব্লগার সৈয়দ মশিউর রহমান শিল্পী নুসরাত ফারিয়াকে বিমানবন্দর থেকে আটক করার প্রসঙ্গে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি আশা করেছেন যে ফারিয়াকে জেলে পাঠানো হবে এবং তাকে ‘ডিম থেরাপি’... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনের সমাবেশে লাখ লাখ লোক যায় অথচ রোহিঙ্গাদের করিডর বিষয়ে উনারা নিশ্চুপ এটা মোনাফেকী হওয়া গেলো না ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১৯ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৪




রোহিঙ্গাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের থেকে ভিন্ন সেই জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসে ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না ।জাতিসংঘের মানবিক করিডর বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার একটা সুযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলা বাক্যে "কি" এবং "কী" এর ব্যবহার; অনেকেরই যা অজানা

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬

বাংলা বাক্যে "কি" এবং "কী" এর ব্যবহার; অনেকেরই যা অজানা

বাংলা ভাষায় "কি" এবং "কী" দুটি আলাদা অর্থ ও ব্যবহারে প্রশ্নবোধক বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এদের পার্থক্য বোঝার জন্য আমরা ব্যাকরণ, উচ্চারণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যাটায়ার পোস্ট : " মুজিব " ছবিতে অভিনয় করেও জায়েদ খান যে কারণে বেঁচে যেতে পারেন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০১


ইন্টেরিম সরকার দেশ ব্যাপী মারাত্মক সংস্কার শুরু করেছে। সে সংস্কারের অংশ হিসাবে ' মুজিব : একটি জাতির রূপকার ' ছবির সাথে সম্পৃক্ত লোকজনকে সাইজ করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×