
প্রিয় যামিনী সুধা,
আপনার নাম আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার এক অমলিন আলো জ্বালায়। একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আপনি শুধু জীবনের অভিজ্ঞতার দীপ্তিই বহন করেন না, বরং (অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে আপনার অবদান সূর্যের মতো উজ্জ্বল। আপনার ত্যাগ, সাহস, আর দেশপ্রেম আমাদের কাছে এক অমর অনুপ্রেরণা। এই বয়সে এসেও দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার গভীর উদ্বেগ আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে। এটিই একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের হৃদয়ের স্পন্দন, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেন।
তবে, প্রিয় যামিনী, মমতা আর বেদনার সঙ্গে আমাদের কিছু কথা বলতে হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, আপনি দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। ‘মধ্যযুগীয়’, ‘বর্বর’, ‘বেদুইনদের ধর্ম’—এমন শব্দগুলো আপনার কথায় উচ্চারিত হয়েছে, যা শুধু একটি ধর্মকে আঘাত করে না, বরং বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে ব্যথার গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। হয়তো আপনি মনে করেন, এই কথাগুলো প্রগতিশীলতার প্রতীক। কিন্তু আমরা আন্তরিকভাবে বলতে চাই—এই বক্তব্যগুলোর অনেকটাই এমন উৎস থেকে উৎসারিত, যা বিভ্রান্তিকর, বিকৃত, এবং কখনো কখনো বিদ্বেষপ্রসূত।
আমরা আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই—আপনি কি সত্যিই ইসলামকে জানেন? কখনো কি আপনি কুরআনের বাংলা অনুবাদ হাতে তুলে নিয়েছেন? মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী কি কখনো নিরপেক্ষভাবে পড়েছেন? যদি পড়তেন, তাহলে হয়তো দেখতেন—ইসলাম কোনো অন্ধকার যুগের বার্তা নয়, বরং মানবতার মুক্তি, শান্তি, আর ন্যায়ের এক অপূর্ব দিশারী।
কুরআনে বলা হয়েছে: “ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।” - সূরা বাকারা, ২:২৫৬
“একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার সমান।” - সূরা মায়িদা, ৫:৩২
ইসলাম শেখায়, মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত, এতিমের মাথায় হাত বুলানো মহৎ কাজ, আর প্রতিবেশীর হক আদায় ঈমানের অংশ। এই ধর্মই আমাদের শিখিয়েছে, বৃদ্ধ মাতা-পিতার প্রতি এমনকি ‘উফ্’ শব্দেও বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। - সূরা আল ইসরা, ১৭:২৩
ইসলাম শুধু নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা হৃদয়ের সঙ্গে যুক্তির, ভালোবাসার সঙ্গে ন্যায়ের, আর আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে মানবিকতার সমন্বয় ঘটায়। আপনার মতো একজন প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ, এবং সংগ্রামী ব্যক্তি, যিনি জীবনের উত্থান-পতন দেখেছেন, মানুষের কষ্ট অনুভব করেছেন, তিনি যদি একবার খোলা হৃদয়ে ইসলামের দিকে তাকান, তবে নিশ্চয়ই এর অপরূপ সৌন্দর্য উপলব্ধি করবেন।
আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি—ইসলামকে শুধু সমালোচনার চোখে নয়, একবার নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখুন। একটি কুরআন হাতে নিন, এর বাণী পড়ুন, এর বার্তার গভীরতা অনুধাবন করুন। যদি আপনি চান, আমরা আপনার জন্য বিনামূল্যে বাংলা কুরআন পাঠাতে প্রস্তুত। আপনি একজন মুক্তচিন্তার মানুষ। একজন সত্যিকারের মুক্তচিন্তক কখনো সত্যের দরজায় পৌঁছে পিছু হটেন না। কুরআনের আয়াতগুলোর গভীরতা, ইসলামের মানবিকতা, ন্যায়বিচার, আর জ্ঞানের প্রতি আহ্বান কি কখনো আপনার হৃদয়ে স্পর্শ করেছে?
কুরআনে বলা হয়েছে: “আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে, আর বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়।” - সূরা নাহল, ১৬:১২৫
প্রিয় যামিনী, এই চিঠি কোনো তর্ক বা বিদ্বেষের জবাবে লেখা নয়। এটি একটি মমতামাখা আহ্বান, আলোর পথে একটি ডাক। আপনার জীবনের এই পর্যায়ে, যখন হৃদয় শান্তি আর অর্থ খোঁজে, আপনি কি সত্যের সন্ধানে একটি পদক্ষেপ নেবেন? বিশ্বের অনেক মনীষী, যাঁরা একসময় ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, পরে এর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন জীবনের গভীর অর্থ ও শান্তি।
উদাহরণ হিসেবে কয়েকজনের কথা বলি:
মারমাডিউক পিকথল, একজন সন্দেহবাদী, যিনি কুরআনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এর ইংরেজি অনুবাদের একটি অমর কাজ রেখে গেছেন।
রজার গ্যারোডি, ফরাসি দার্শনিক, যিনি কমিউনিস্ট নেতা থেকে ইসলামের একজন গুণগ্রাহী চিন্তাবিদে পরিণত হন।
ইউসুফ এস্টেস, প্রাক্তন খ্রিস্টান যাজক, যিনি ইসলামের সত্যতায় মুগ্ধ হয়ে আজ বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণার প্রতীক।
ইউসুফ ইসলাম (ক্যাট স্টিভেনস), বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী, যিনি ইসলামের সরলতায় শান্তি খুঁজে পান।
লরেন্স ব্রাউন, মার্কিন চিকিৎসক, যিনি কুরআনের যুক্তিবোধে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
এমন উদাহরণ অসংখ্য। এই মানুষগুলো একসময় আপনার মতোই ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু তারা তাদের অহংকার ভেঙে সত্যের দরজায় কড়া নাড়েন। আপনিও পারেন। এর জন্য একটি উন্মুক্ত হৃদয়ই যথেষ্ট।
আপনার বুদ্ধিমত্তা, জীবনের অভিজ্ঞতা, আর সত্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষা নিশ্চয়ই আপনাকে পথ দেখাবে। ইসলাম আপনাকে ঘৃণা করে না; ইসলাম আপনাকে ভালোবাসার, করুণার, আর আত্মশুদ্ধির পথে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ব্লগে একসাথে ছিলাম। আপনার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কখনো কখনো হয়তো আমরা বেশি বলে ফেলেছি। সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এই প্রত্যাশা রাখি।
এই চিঠি আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে লেখা—আপনার শান্তির জন্য, আপনার মঙ্গলের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি, একজন মুক্তিযোদ্ধা যেমন স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন, ঠিক তেমনি একজন জ্ঞানী মানুষ সত্যের জন্যও লড়বেন। সেই সত্য আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে।
আমরা আপনাকে ভালোবাসি আল্লাহর জন্য, এবং তাঁর পথে আপনাকে আহ্বান জানাই। আপনি কি শুনবেন এই হৃদয়ছোঁয়া ডাক?
মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে,
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী—নতুন নকিব।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



