প্রিয় পাঠক,
যখন আমি “.................... ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান” শীর্ষক চিঠিটি লিখেছিলাম, তখন থেকে একটি প্রশ্ন আপনাদের অনেকের মনে ঢেউ তুলেছে—“কেন তাকে এই আহ্বান জানালেন?” কেউ কেউ বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়েছেন, কারণ অতীতে আমার ও তার মধ্যে ছিল তীক্ষ্ণ মতবিরোধের কাঁটাতার। এমনকি, আমার কলম তার সমালোচনায় তুলে ধরেছিল শাণিত বাক্যের ধার। তাই আপনাদের এই প্রশ্ন অত্যন্ত স্বাভাবিক, যেন শান্ত নদীতে হঠাৎ উঠেছে তরঙ্গের ঝিলিক।
হ্যাঁ, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার দায়িত্ব। এই পরিবর্তনের পেছনে কোনো কূটকৌশল নেই, নেই কোনো স্বার্থের ছায়া বা নাটকীয়তার রঙিন পর্দা। এটি হৃদয়ের গহীনে জেগে ওঠা এক নিঃশব্দ ডাক, যেন ভোরের কুয়াশায় ফুটে ওঠা শিশিরের মতো স্বচ্ছ, যেন নক্ষত্রের আলোয় পথ খুঁজে পাওয়া পথিকের উপলব্ধি। এটি এক গভীর টান—যেখানে সদিচ্ছা, দায়বোধ, আর পরকালের ভয় একত্রে মিলে রচনা করে অন্তরের এক অমলিন সুর।
আমরা এই ব্লগের আঙিনায় বহু বছর একসঙ্গে পথ চলেছি। একে অপরের লেখা পড়েছি, তর্কের উত্তাপে মত বিনিময় করেছি, কখনো হৃদয়ের সেতু বেঁধেছি, কখনো বা বিরোধের কাঁটায় রক্ত ঝরেছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন আমার অন্তরকে কুরে কুরে খায়—আল্লাহর তাওহিদের আহ্বান, রাসূল (সা.)-এর মমতাময় বার্তা, সেই অমৃতময় সত্য কি আমি তার কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি? তার মত বিশেষ বিশেষ আরও যারা রয়েছেন, তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি? এই প্রশ্ন আমার হৃদয়ে বেদনার স্পন্দন জাগায়, যেন কোনো প্রিয়জনের হাতছাড়া হওয়ার শূন্যতা।
রোজ হাশরের সেই মহামুহূর্তে, যদি আল্লাহ তাআ'লা জিজ্ঞাসা করেন, “যাদের সঙ্গে এত বছর ভার্চুয়াল জগতে কাটিয়েছ, আমার বাণী কি তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলে? তাদের হেদায়েতের জন্য কি তুমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলে, নাকি নিজের সীমানায় বন্দি ছিলে? নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলে?”—তখন আমি কী উত্তর দেব? আমার কণ্ঠ কি তখন নীরব হয়ে যাবে, নাকি লজ্জায় মাথা নত হবে?
শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা স্বার্থপর বান্দা তো আল্লাহ তাআ'লা চাননি। তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন এই ধরাধামে তাঁর খলিফা হিসেবে—যারা নিজে ন্যায়ের পথে চলবে, অন্যকেও আহ্বান জানাবে সেই পথে, আর অন্যায়ের অন্ধকার থেকে ফিরিয়ে আনবে মানুষের হৃদয়। তিনি এমন এক মহান রাসূল (সা.) আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, যিনি বিরুদ্ধবাদীর দ্বারে বারবার গিয়েছেন তাওহিদের সুমধুর বার্তা নিয়ে। এমনকি, একজনের দরজায় গিয়েছেন ছয়শত বার! আমি তাঁর উম্মত হয়ে কীভাবে নির্লিপ্ত থাকতে পারি? কীভাবে আমার হৃদয় নিশ্চুপ হয়ে থাকবে?
এই লেখা, এই আহ্বান কারও ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের দুঃসাহস নয়। এটি আমার দায়িত্ব পালনের এক বিনীত প্রয়াস, হৃদয়ের দরজায় মৃদু করাঘাতের কোমল স্পর্শ। সত্য কখনো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না, তবে ভালোবাসার আলোয় তাকে আহ্বান করা যায়। যদি আল্লাহ কাউকে হেদায়েত দান করেন, আর আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সেই পথে একটি পুষ্পের পাপড়ি হয়ে পড়ে, তবে তা আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবার অন্তরকে কোমল করুন, যেন তা তাঁর নূরে ভরে ওঠে। সত্যকে গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপনের তৌফিক দিন, সত্য গ্রহণের সাহস দিন। ভালোবাসার পথে একে অপরের হাত ধরার শক্তি দিন, যেন আমরা এক কাফেলায় চলি তাঁর দিকে। আমাদের হৃদয় যেন তাঁর আলোয় উদ্ভাসিত হয়, আর আমাদের পথ যেন ধাবমান হয় তাঁরই রহমতের কাছে, যেন নদী ছুটে যায় সাগরের বুকে।
শুভ কামনা সকলের জন্য,
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬