
ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া হইতেছে। সেদিন শুনিলাম, এক মামলায় উহাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হইয়াছে। আরেকটাতে কয়েক বছরের কারাবন্দিত্ব। শুধু কি উহাকে? উহার পুত্র কন্যা, বোন ভাগিনা ভাগিনি কাউকেই ছাড় দেওয়া হইতেছে না। যাহার কথা বলিতেছি তিনি এই দেশেরই সন্তান। রাতের ভোটের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, বাকশাল খ্যাত প্রধানমন্ত্রীর কন্যাও।
বলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলিয়াও কি তাহাকে একটু ছাড় দেওয়া যাইতো না? আসলে দেশে আদালত এখন কাহারা চালাইতেছেন, কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না। তাহারা কি একবারের জন্যও ভাবিয়া দেখার প্রয়োজন বোধ করিলেন না যে, তিনি কাহার কন্যা? ধরিয়া নিলাম, তিনি ২০২৪ সালে ছাত্র জনতার উপরে গুলির নির্দেশ দিয়াছিলেন। তাহাতে দেশের কী এমন ক্ষতি হইয়া গিয়াছে? ১৮/ ২০ কোটি মানুষের বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশে সামান্য দুই এক হাজার মানুষ মরিয়া গেলে সেই দেশের কী এমন ক্ষতি হইয়া যায়? তাই বলিয়া এই সামান্য সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার দায়ে তাহাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া কি সঠিক হইলো?
ভূয়া ভোটে হোক আর রাতের ভোটে হোক, তিনি বারংবার এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হইয়াছেন। তিনি যেহেতু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করিতেন, এই দেশের মালিক তিনি এবং তাহার পরিবারই, সুতরাং তাহার কি একটু আধটু সাধ আহলাদ থাকিতে পারে না? তিনি নিজের নামে, পুত্র কন্যা, বোন ভাগিনা, ভাগিনি আত্মীয় স্বজনের নামে দেশের পছন্দমত স্থানে ইচ্ছামত জমি/ প্লট বরাদ্দ নিতে পারিবেন না, ইহা কোন কথা হইতে পারে? ইহাকে অপরাধ ধরিয়া তাহাকে সাজা দেওয়া হইয়াছে। ইহাও আমাদের মানিয়া নিতে হইবে? দেশে ইহা কী শুরু হইলো? কি তেলেসমাতি কান্ডকারখানা দেখিতেছি এখন?
এই দেশে ভবিষ্যতে আরও যে কত কিছু ঘটিবে, একমাত্র আল্লাহ মালুম। নিন্দুকেরা অনর্থক শুধুই তাহার দিকে সকল অঘটনের সংশ্লিষ্টতা আবিষ্কার করে। তাহারা কোন দিন না জানি, আবার এস আলম গ্রুপের বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ পাচারের ঘটনায় তাহার শাস্তি চাহিয়া বসে। কি যে যন্ত্রণায় আছি, বলিয়া বুঝাইতে পারিতেছি না। অথচ দেখুন, তিনি দেশে নাই আজ কত দিন! এক বছরেরও বেশি সময় ধরিয়া তিনি ভারতে আশ্রিত। একসময় যিনি গোটা বাংলাদেশটাকেই নিজের পিতার রেখে যাওয়া বৈধ সম্পত্তি মনে করিতেন তাহার মত একজন বিশাল মনের মানুষকে আজ অন্য দেশের দয়ায় উহাদের আশ্রয়ে থাকিতে হইতেছে, ইহাও কি মানিয়া নেওয়া যায়?
তাহার নামে মামলা কতগুলি হইয়াছে, তাহাই বা কে জানে? তিনি কি নিজের শাসনামলে এত মামলা বিরোধীদের নামে করিয়াছিলেন? করিয়া থাকিলেও তাহার তো পৈত্রিক সূত্রে বৈধ অধিকার ছিল বলিয়াই তিনি তাহা বৈধভাবে করিয়াছিলেন। কিন্তু এখন যাহারা করিতেছেন, তাহারা কোন অধিকারে করিতেছেন? ইহারা কারা? ইহাদের পরিচয় কী? ছাত্র-জনতা? তিনি তো নিজেকে ছাড়া বাকিদের, তাহার বিরুদ্ধবাদীদের রাজাকার বলিয়াই মনে করিতেন। তাহার এই ভাবনা কি সঠিক ছিল না?
তিনি কওমি জননী উপাধি ধারণ করিয়াছিলেন। তিনি জানিতেন যে, এই দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাই উপরে উপরে নিজেকে ধার্মিকের লেবাসে পরিপাটি করিয়া মাঝেমাঝে জনসম্মুখে আসিতেন যাতে লোকে তাহাকে সেরা ধার্মিক ভাবিয়া লয়। তসবিহ হাতে লইয়া ছবি তুলিয়া তাহা মিডিয়ায় প্রচার করিতেন। হিজাবের নামে মাথায় পট্টি বাধিয়া উহার চিত্র অনলাইনে ছড়াইয়া দিয়া উহা ভাইরাল করিতেন। প্রচার করিতেন তিনি তাহাজ্জুদ গুজার। এসবের বিপরীতে তিনি শাপলা চত্বরে আলেম ওলামা, হাফেজ গণহত্যার নির্দেশদাতা এবং মূল হোতা। আবার উহার প্রিয় ভূমি দাদাদের ওপাড়ে গেলে ঠিকই কপালে তিলক পড়িতেও আপত্তি করিতেন না।
তাহার মত সাহসী ব্যক্তির পক্ষেই একটি কঠিন সত্যকে সকলের সামনে প্রকাশ করিয়া দেওয়া সম্ভব হইয়াছিল, তিনিই বলিতে পারিয়াছিলেন: "আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে।" হ্যাঁ, তিনি আসলেই সঠিক বলিয়াছেন। এই দেশ উজাড় করিয়াই তিনি ভারতকে দিয়াছিলেন। ভারতও অক্ষরে অক্ষরে উহা মনে রাখিতেছে। মনে রাখিতেছে বলিয়াই সকলের টিটকারি সহজ্য করিয়াও তাহাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়া রক্ষা করিয়া চলিতেছে। তাহার এই কঠিন বিপদে তাহাকে বুকে আগলাইয়া রাখিতেছে। কথা হইতেছে, ভারত যেমন উহার অবৈধ সম্পর্ক মনে রাখিতেছে, এই দেশ ও জাতিও এইসব ইতিহাস মনে রাখিবে। এবং চলমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট ইহাও মনে করাইতেছে, দেশের মানুষ মদিনার সনদে দেশ চালানোর সেই ফাঁকা আওয়াজ আর মিথ্যা গালগল্প কোনোদিনই ভুলিবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


