somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ

"আমি প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুকে পানি দিয়ে সৃষ্টি করেছি"। -সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৩০



এই আয়াত পানির গভীর তাৎপর্যকে উন্মোচিত করে। পানি শুধু শারীরিক জীবনধারণের উপাদান নয়, বরং আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা এবং পরিবেশের ভারসাম্যের প্রতীক। ইসলামে পানিকে আল্লাহর মহান নেয়ামত হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি সম্প্রদায়ের সম্পদ এবং সকল মানুষের অধিকার। অপচয় বা দূষণকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এটি আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং সৃষ্টির প্রতি অবিচার।



অথচ ২০২৫ সালে বিশ্ব এক গভীর পানি সংকটের মুখোমুখি। ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ফলে পানিচক্র অস্থির হয়ে উঠেছে।



চার বিলিয়ন মানুষ বছরের অন্তত এক মাস তীব্র পানির অভাব অনুভব করছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ৩২৪ বিলিয়ন ঘনমিটার মিঠা পানি নষ্ট হচ্ছে। এটি ২৮০ মিলিয়ন মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। এই সংকট শুধু শারীরিক নয়, বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভারসাম্যকে বিপন্ন করছে।



এই গভীর সংকটের প্রেক্ষাপটে ইসলামের শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং দূরদর্শী। প্রায় পনেরশ বছর আগে, যখন বিশ্বের জনসংখ্যা সীমিত ছিল এবং পানির ব্যবহারও কম ছিল, তখনই রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানির অপচয় রোধে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ছিল সংযম এবং মিতাচারের আদর্শ। তিনি নিজে অতি সামান্য পানি দিয়ে ওযু করতেন এবং অনুসারীদেরও তাই শিক্ষা দিতেন।



একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওযু করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, "এটা কী অপচয়?" সা'দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, "ওযুতেও কি অপচয় হয়?" নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহিত নদীর তীরে থাকো।"



আরবি মূল: لا تسرف في الماء ولو كنت على نهر جارٍ

উচ্চারণ: লা তুসরিফ ফিল মায়ি ওয়া লাও কুনতা আলা নাহরিন জারিন।

বাংলা অনুবাদ: "পানিতে অপচয় করো না, যদিও তুমি প্রবাহিত নদীর তীরে থাকো।" -মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং ৭০৬৫ (সহিহ); সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৫।



এই হাদিসের গভীরতা অপরিসীম। এটি শুধু ওযুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পানির সংযমের নির্দেশ দেয়। প্রচুর উৎস থাকলেও অপচয় অনুচিত। কারণ পানি আল্লাহর আমানত। এর অপচয় মানে ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার কেড়ে নেওয়া। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষ পৃথিবীর খলিফা। সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল। এই হাদিস আধুনিক টেকসই উন্নয়নের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি পরিবেশ সংরক্ষণের একটি আধ্যাত্মিক ভিত্তি প্রদান করে।



আজকের বিশ্বে এই শিক্ষা অনুসরণ করা অপরিহার্য। প্রতিটি ফোঁটা পানি সংরক্ষণ করা মানে একটি জীবন রক্ষা করা। ইসলামের এই চিরন্তন বার্তা অন্তরে ধারণ করে আমরা পানির অপচয় রোধ করতে পারি। এতে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিবেশ এবং মানবতার কল্যাণ সাধিত হবে। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সকলকে এই গভীর শিক্ষা অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।

সকল ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×