ছেলেবেলা খাকী পোষাক দেখলে খুব ভয় পেতাম।মানে--পুলিশ।পুলিশ আমার সামনে কোন অপকর্ম করেছে বলে আমার ছেলেবেলার কোন স্মৃতি নেই অবশ্য।তবু যে কেন পুলিশের নাম শুনলেই একটা ভয় তাড়া করতো। আর শোনার চেয়ে বেশী-খাকী পোষাকটাই ছিল রূপকথার গল্পে শোনা -দানো-রাক্ষসের প্রতিমূর্ত্তি। এত ছেলেবেলায় কোন তফাৎ করা সম্ভব ছিলোনা তাই যে কোন দফতরের পিয়ন-আর্দালী(ওদের জন্যও ওই খাকী রংটাই প্রচলিত ছিল তখন) দেখলেও ভাবতাম পুলিশ।ভয়ের চোটে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলার কোন কলা-কৌশল, মন্ত্র-টন্ত্র জানা আছে কিনা মনে মনে হাতড়ে বেড়াতাম।
আমার কৈশোরের স্মৃতি হলো একাত্তর।পাকিস্থানী সেনার চক্রা -বক্রা পোষাক আর মিলিশিয়ার(আধা সামরিক) কালো পোষাক এমন প্রভাব ফেলেছিল --সেই কিশোর মনে যা থেকে আজ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারিনি।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বারবারই ঘটে।সেই ভয়টাই বারবার ফিরে ফিরে আসে।
এতো গেল পোষাক ভীতির কথা।
আরেক ধরনের মানুষ আমার ভীতির তালিকার প্রথম সারিতে আছে----তারা হলো দালাল। ছেলেবেলা জমির দালাল, বীমার দালাল,গরু-ছাগল ইত্যাদি ইত্যাদির দালালের সাথে পরিচিত ছিলাম।তারা হল নিরাপদ দালাল।
ভীতিকর দালাল দেখার শুরুও সেই একাত্তর থেকেই।স্বাধীনতা বিরোধী দালালদের বর্বর নৃশংসতার,বিশ্বাসঘাতকতার এবং চরম নোংরামীর ছবি দেখলাম সেই সময়েই।নিজের দেশের সাথে--দেশের মানুষের সাথে--নিজের পাড়া-প্রতিবেশী-স্বজনের সাথে সেই বিশ্বাসঘাতকতার দলিল আজো বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
সেই থেকেই' দালাল'( ব্যবসা- বাণিজ্যের ব্রোকারদের প্রসংগ এখানে আসছেনা) শব্দটির প্রতিও এক তীব্র ঘৃণাবোধ কাজ করে।
আমার ভয় এবং ঘৃণার পাত্র হলো যে কোন অপশক্তির দালাল।
বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হলো দালালদের কোন নির্দিষ্ট পোষাক নেই।দেখে চেনার মতো কোন চিহ্ন শরীরে ধারণ করেনা। ওরা সাধারণ পোষাকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভীড়ে মিশে থাকে।আর পৌরাণিক কাহিনীর 'ঘরের শত্রু বিভীষণের'মতো অনবরত নিজের ঘরের দেয়ালে ছিদ্র করে যায়।চোরের মতো সিঁদ কেটে কেটে দেয়ালের ভিত দুর্বল করে দেয়একটু একটু করে।
দেশের শত্রুই ছদ্মবেশী দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।প্রয়োজনএদের প্রতিরোধ করার। নাহলে এই হাজার সমস্যা পীড়িত-ঘুণপোকা ধরা দেশটি ক্ষয় হতে হতে একসময় ধুলায় মিশে যাবে।
আমি ভীতু মানুষ। আমার মতো ভীতু মানুষ আরো অনেক আছে। কিন্তু ভীতু হলেও আমি সবসময় আশাবাদী।সারাক্ষণ খুব প্রত্যাশা নিয়ে থাকি একদিন সাহসী মানুষের সম্মিলিত হাতগুলো বলীয়ান হয়ে উঠবে। এবং আমার মতো ভীতু মানুষের ভয়ের কারণগুলো চিহ্নিত এবং নির্মূল করতে সক্ষম হবে।
[এই লেখাটি সহ-ব্লগার নুশেরার সম্মানে --যে আমাকে বারবার গদ্য লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করে।]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:১৬