somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি একটি চরম পত্র

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“---এর ফাঁসী হলে সরকারী দলের ওমুক রাজাকারকে কেন ফাঁসী দেয়া হবেনা?”
আমি বলছিনা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার মানদন্ডের বাইরে যেই ১৬০০ যুদ্ধ অপরাধী বন্দী ছিল, যাদের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্ত করেছিলেন, তারা কেউই ক্ষমার যোগ্য। অবশ্যই জার্মানীর নাৎসিদের বিচারের মত হলোকাস্ট আইনে প্রশ্নাতীত ভাবেই সবাইকে কাঠগড়ায় দাড় করানো দাবী এই বাংলায় শেষ দিন পর্যন্ত জাগ্রত থাকবে।

আলোচিত এই ১২ জনকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা মূলত একটি “প্রতীকি বিচার” । এর মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া , যে, শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর এই আলোচিত ব্যাক্তিদেরও বিচার কার্যকর করা হচ্ছে, কাজেই কেউই এই বিচারের বাইরে নয়। অবশ্যই সরকারী দলের উচ্চ পর্যায়ের কেউ সমানভাবে দায়ী হয়েও দ্রুত বিচারের আওতার বাইরে থাকলে তা বিচার কার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিচার কার্যে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে ত্রুটিও নজর এড়িয়ে যায়না। এক্ষেত্রেও জার্মানীর উদাহরন টানতে হয়। হিটলারে নাৎসি বাহিনী প্রতিটি কন্সান্ট্রেশন সেলে সুনির্দিষ্টভাবে যেসকল ইহুদীদের হত্যা করেছিল তাঁদের নাম, ঠিকানা যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করে রেখেছিল নাৎসি বাহিনী নিজেদের সৌর্য বীর্যের দম্ভ দেখাতে। ভাগ্যের ফেরে যুদ্ধে আকস্মিক ভাবে হেরে যাওয়ায় নাৎসি বাহিনী সেই সব নথিপত্র নিয়মমাফিক ধংস্ব করে যেতে পারেনি যা তাদের জন্য কালসাপ হয়ে পাশবিকতার সাক্ষী দিয়ে গেছে। কিন্তু, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধচলাকালীন কোন নথিকরণ সেভাবে হয়নি যুদ্ধপরবর্তী দলীল ছাড়া এবং যুদ্ধের ৪০ বছর পর বিচার কার্যে চাক্ষুস সাক্ষী, অকাট্য নথিপত্র জোগাড় নিঃসন্দেহে সহজসাধ্য নয়।

একজন মানুষের জীবনের বিভিন্ন ভূমিকা থাকে, কুখ্যাত খুনী, দাগী আসামী, নীতিহীন কর্মকর্তাও খুব ভাল বাবা বা স্বামী হতেই পারেন। শেষ বিদায়ে তারা পরিবারকে জড়িয়ে ধরে যে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তাতে অবশ্যই কোন খাঁদ ছিলনা। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বা দম্ভোক্তি আমাকে বিস্মিত করছে! সরকারী দলে নেই বলে তাদের বিচার হচ্ছে বলে তাদের বিশ্বাস বা ক্ষেধোক্তি? তার মানে কি তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করছে তাদের জনক নিষ্পাপ? নাকি লৌকিকতা বা সমাজে বাস করার জন্য নিজেদের নকল এক ভাবমুর্তির মুখোশ ধারণ! কাক যেমন নিজে চোখ বুজে সর্বসম্মুখে ডিম পেড়ে ভাবে কেউ দেখতে পাচ্ছেনা!

কিন্তু একবার শুধু ভাবুন বাংলার ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবারের কথা, জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রক্রিয়ায় দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যার কথা যাঁদের বাড়ি থেকে তাঁদেরই অনেকের প্রিয় ছাত্রদের দিয়ে ডাকিয়ে বের করে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, শহীদ আজাদের মা’র কথা যিনি তাঁর জীবনের একমাত্র বাঁচার সম্বল ছেলের শুধু একটু ভাত খাবার শেষ ইচ্ছা পূরন করতে পারেন নি বলে সারাজীবন ভাত মুখে তুলেন নি , ছেলে টর্চার সেলে মাটিতে শুতে হয়েছে বলে আজীবন তিনিও বিছানায় সজ্জা নেন নি। শহীদ সেই সব পরিবারের বিধবা মা ৮/৯ টি পর্যন্ত শিশুসন্তান নিয়ে সরকারের দানে পাওয়া বাড়িতে কি মানবেতর বেঁচে থাকার সংগ্রামে ৪৪ বছর পাড় করছেন ( শহীদ পরিবার সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের “আমি” উপন্যাস উল্লেখ্য) । আর সেখানে তাঁদের বুকের উপর দিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা শোভিত গাড়িতে সদম্ভে দেশ কাঁপিয়ে বেড়িয়েছে তাঁদের পিতার খুনীরা যারা এই দেশকেই যারা অস্বীকার করেছিল।

এমনকি আজকের স্বাধীন দেশেও একেকটি বিচার কার্যকর করতে কতশত সাধারন মানুষের বলি চড়তে হচ্ছে! আমাদের মত যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এটি একটি চরম পত্র যে কত নৃশংস বিবেকবর্জিত এরা ছিল!
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এই বিচার দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু তিনি যেই আন্দোলন সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ৭২ সালে শুরু করেছিলেন তাঁর আজ বিজয় সূচিত হচ্ছে।
“আজকের পতাকা শোভিত গাড়ীতে চড়ার দম্ভই শেষ নয়- এই বাংলায় ফাঁসী কাষ্ঠে ঝুলেই তোমার প্রাপ্যের অবসান” - এই নজীর সকল যুদ্ধাপরাধীর অত্যন্ত জরুরী ছিল।
সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×