somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতায় আবু মকসুদ এবং তাঁর দূরতর গ্রহজীবন

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৈ য় দ ম ব নু

কবিতায় আবু মকসুদ এবং তাঁর দূরতর গ্রহজীবন

তৃষ্ণার্ত মানুষের কাছে কেউ যদি জলের গল্প করে তবে তৃষ্ণা হ্রাস পায় না বৃদ্ধি পায়? তৃষ্ণায় কাতর যেকারো ইচ্ছে হতে পারে জলে ডুব দিতে। কবিরা স্বাপ্নিক, স্বপ্নের তৃষ্ণা নিয়ে কাতর। কবিতাকে কালে-মহাকালে মাষ্টার মহুদয় যে দৃষ্টিতে বিচারের পাল্লায় মাপেন প্রকৃত কবির কাছে সেই মাপজোক গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। যারা কবি তারা মাপামাপিতে নেই। তারা থাকেন স্বপ্নে, বেদনায়, তৃষ্ণায়, সাধনায়। তারা নিজের মাঝে কবিতার স্বর্গ তৈরী করে হাঁটেন আপন কক্ষপথে। তাদের কারো কারো কাছে অক্ষরের কবিতা গৌণ। তারা কেউ কেউ নিজেই কবিতা। তারা লিখেন, মনে যা আসে তাই। তাদের কবিতা পড়ে কেউ বলেন, কবিতাতো দারুণ হলো। আর কেউ বলেন, হয়নি, কবিতা একদম হয়নি, যা হয়েছে সব ছাঁইপাশ, ওর ভেতর কবিতা নেই। অবশেষে প্রশংসা-নিন্দা দুটিই কবির ঘরে কবিতা হয়ে ফুল-চন্দন ছিটায়। প্রকৃত কবিরা তৃপ্ত থাকেন সর্বদা নিজের সুখ-দুখে। কবি এবং কবিতা ভিন্ন না অভিন্ন তা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। অনেকের বিবেচনা অভিন্নতার মাঝে ভিন্নতা এবং ভিন্নতার মাঝে অভিন্নতা রাখার পক্ষে। পৃথিবীতে এমন অনেক কবি ছিলেন যারা তাদের ভাবকে ভাষা দিয়ে ধারণ করতে পারেননি। তারাও কবি। তাই কবিতার আলোচনায় আত্মা থেকে বেশি দৈহিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে কোনোদিনই থাকতে পারিনি। কবিতা বিষয়টাই ভাবের-আত্মার। ভাবকে অস্বীকার করে যারা বস্তুকে ধারণের পক্ষে যুক্তি-তর্ক করেছেন তারা তাদের সৃষ্টি-কর্মে ভাবকে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বিষয়টা অনেকের কাছে তর্ক-সাপেক্ষ হতে পারে।
কবিতা হলো প্রকৃত অর্থে আত্মার অনুবাদ। আত্মিক বিশ্লেষণ ছাড়া কবিতার প্রকৃত বিশ্লেষণ হতে পারে না। কারো দ্বিমত থাকতে পারে। দ্বিমতেও সম্মান জানানো উচিৎ। আজকের প্রসঙ্গ কবি-বন্ধু আবু মকসুদের কবিতার গ্রন্থ ‘দূরতর গ্রহজীবন’। প্রকাশক কাজল রশীদ। প্রকাশকাল ২০১০ বাংলা একাডেমির একুশের গ্রন্থ মেলায়। বইতে আবু মকসুদের যে জন্ম তারিখ, তা সত্যি হলে এই কবি আমার বয়স্য। বয়সের ক্ষেত্রে কেনো এই সন্দেহ? কারণ, আমি এমন অনেককে জানি যারা বয়সে আমার চার-পাঁচ বছরের বড়, আমার অগ্রজ কিন্তু বইয়ের মধ্যে জন্ম তারিখ দেখলে মনে হয় আমার সহপাঠি, নয়তো ছোট। কেউ বলতে পারেন, কবিতার আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক এই বিষয়টি কেনো নিয়ে আসা? বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক সাহিত্যের আলোচনায়। যখন কবিতাকে দশক দিয়ে বিচার করা হয় তখনতো আর কথা নেই। পাঁচ বছরে অর্ধদশক চলে যায়! যিনি পৃথিবীতে আমার থেকে পাঁচ বছর আগে এসে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন তাঁর সাথে আমার একটা সময়ের ব্যবধান তো আছেই। আমি তো নয় বছর বয়সেই লেখালেখি শুরু করি। তাই লেখালেখিতে আমি বয়সের লুকোচুরিকে এক রকমের প্রতারণা মনে করি। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেও বয়সের এই প্রতারণা লক্ষ্য করা যায়। এটা চাকুরীর মেয়াদ ধরতে ছাত্ররা করে থাকেন, যা দেশের শিক্ষাপদ্ধতি, সেশন জট, সরকারী চাকুরীর নীতি এবং প্রশাসনিক পদ্ধতির ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। অনেকে এটা বিয়েতে বর কিংবা কনে পক্ষকে ধোঁকা দিতে করে থাকেন। আমাদের দেশে এক সময় প্রচলিত একটা কথা ছিলো, মেয়ে কিংবা নারীরা তাদের সত্য বয়স বলেন না। এখন এই কথা ছেলে কিংবা পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেনো তারা এমনটি করেন? তা নিয়ে প্রশ্নটা ছোটবেলা থেকেই রয়ে গেছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। মূলত তা সমাজে প্রসার লাভ করে নারী পুরুষের কাছে এবং পুরুষ নারীর কাছে তরুণ প্রমাণের প্রবণতা থেকে। কবিদের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু কবিতার মানস বিবেচনায় বয়সের কম-বেশি করায় আলোচককে বেশ অসুবিধায় ফেলে দিতে পারে যদি তিনি দশককে বিবেচনায় রাখেন। আর যদি হয় কালের বিচার, তবে চার-পাঁচ বছরের ব্যবধান তেমন গুরুত্ববহন করে না। এই কথাগুলো তাদের কাছে অসহ্য মনে হতে পারে যারা মানব মস্তিষ্ক, চেতন এবং নিউরনের উন্নতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না। তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আবার আমার আলোচনার ধরণ দেখে কারো সন্দেহ হতে পারে আবু মকসুদ তাঁর বয়স ভুল দিয়েছেন। এই সন্দেহের কোনো কারণ নেই। মূলত আবু মকসুদের সূত্রধরে একটা বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটালাম।
আবু মকসুদের ‘দূরতর গ্রহজীবন’ গ্রন্থের কবিতাগুলো পাঠ করতে গিয়ে তাঁর অনেক বক্তব্যের গভীরে নিজকে আবিষ্কার করতে পেরেছি। কবির কবিতার অনেক পংক্তিতে স্পষ্ট দেখেছি নিজের অস্তিত্বে। বর্ণ দিয়ে আমরা কবিতা লিখি, কিন্তু বর্ণের নাম কবিতা নয়। কবিতা তো আত্মা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। আত্মাকে ধারণের জন্য দেহের প্রয়োজন, কবিতায় বর্ণ কিংবা অক্ষর হলো সেই দেহ। শুধু দেহ আর আত্মায় মানুষ দাঁড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু দৃঢ় আর সুন্দরের জন্য তা যথেষ্ট নয়। দেহের দৃঢ়তা আর সুন্দরের জন্য শিল্প-নন্দন ইত্যাদিও থাকতে হয়। স্মরণ রাখতে হবে, আমরা আদিকালের বাউল কিংবা সন্যাসী নই। আমাদের কাছে সাহিত্যটা ইবাদত বা পূঁজ্য হলেও আমরা ইবাদত কিংবা পূঁজার উদ্দেশ্যে সাহিত্য তৈরি করি না। আমরা ভাবের সওদাগর, নিজে ভাব নয়। কবি ইকবালের ভাষায় বললে─আমরা শিকারী, শিকার নয়। আমরা ভাবের শিকারী। বৈষ্ণব কিংবা এরও পূর্বের কবিদের সাথে আমাদের কবিদের ব্যবধান─তারা ভাবের জন্য ভাষাকে ব্যবহার করতেন আর আমরা শব্দ, বাক্য এবং ভাবকে শিল্পের মধ্যে সমন্বয় করি। আমরা পদ্য, কবিতা, ছড়া, গানকে পৃথক করে বিচার-বিশ্লেষণ করি সাহিত্যের শৈল্পিকতায় আর তারা এসব বিচার-বিশ্লেষনে ছিলেন না, তারা ছিলেন প্রার্থনায়। এমন কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান এবং অনেকগুলো কবিতাও আধুনিক প্রার্থনা সাহিত্যের মধ্যে নিহিত। তাঁর কবিতা, গানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই রাজা রামমোহন রায়ের একশ্বরবাদের উপাসনা। এই অর্থে রবীন্দ্রনাথকে একজন আধুনিক মরমি কবি বলা যায়। লালন, হাফিজের প্রচুর প্রভাবের কথা রবীন্দ্র-গবেষকেরা স্বীকার করেছেন। আমাদের কি আবু মকসুদকে উত্তরাধুনিক মরমি কবি বললে ভুল হবে?
আবু মকসুদের কবিতায় অন্তমিল নেই, এখন আর কেউ এই অভিযোগে তাকে দোষী করতে পারবেন না, কারণ, বর্তমানে কবিতায় অন্তমিল খুব জরুরি বিষয় নয়। অন্তমিল হলো মূলত পদ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চরণে-চরণে মিল রেখে ভাব ও বক্তব্যকে উশকে দেয়া। গদ্যকবিতায় নয়। অনেকের ধারণা গদ্য কবিতায় ছন্দ থাকে না। এই ধারণাও ভুল। ছন্দ ছাড়া জীবনের কোনো কিছুই হয় না, কবিতা তো অবশ্যই না। গদ্য কবিতায় ছন্দ থাকে লাইনের ভেতর শব্দ-বাক্যের গাঁথুনিতে। আবু মকসুদের ‘দূরতর গ্রহজীবন’ একটি গদ্য কবিতার বই। গদ্য কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বক্তব্য, চিন্তায় এবং স্বপ্নে। আবু মকসুদের এই গ্রন্থে তা আছে কি? এগুলোও সবার বুঝার বিষয়। কবি মানে প্রেমিক, প্রেম ছাড়া কবিতা হয় না, যার অন্তরে প্রেম নেই সে কবিতা লিখার অধিকার রাখে না। অভিধান থেকে শব্দ নিয়ে কোনো প্রতারক কবিতা লিখলেও সে অবশ্যই কবি নয়। আবু মকসুদ কি প্রেমিক? এর উত্তর ঘণিষ্টজনেরা বলতে পারবেন। বইয়ের কবিতাগুলো পাঠ করলে হয়তো আমরাও অনুভব করতে পারবো এই কবি কতোটুক প্রেম ধারণ করতে পেরেছেন? প্রেম আর আসক্তিতে যারা ব্যবধান দেখেন না তাদের কাছে প্রেম শব্দ হয়তো লজ্জার, নয়তো পরকিয়ার। বর্তমান সমাজে পরকিয়া খুবই লজ্জাস্কর ব্যাপার সৃষ্টি করেছে। আমরা আত্মিক মানুষেরা প্রেম মানে পরকিয়া কিংবা আসক্তি মনে করি না। আমাদের কাছে প্রেম হলো আত্মায় আত্মার টান। আমাদের কাছে প্রেম হলো ঘুমন্ত মনের জাগরণ। আত্মাশূন্য যান্ত্রিক এই সমাজে যারা হতাশায় বুকের দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলছে তাদের বুকে স্বপ্ন জাগানোই আমাদের প্রেমের উদ্দেশ্য। আবু মকসুদ তাঁর ‘দূরতর গ্রহজীবন’-এ মূলত এই কাজটি করতে চেয়েছেন। তিনি এই হতাশাগ্রস্থদের বুকে স্বপ্ন জাগাতে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো ডেকে গেলেন অন্য বিকেলের কথা। যারা হতাশ হয়ে জীবনের অর্থ ভুলে নিজেকে নেশা কিংবা আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায় তাদেরকে তিনি বলছেন─‘সন্ধ্যের ছায়া এগিয়ে আসছে ভেবে অবিবেচক, হটকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ো না।’ (পাখিরডাক : অন্যবিকেল)। আবু মকসুদ তাঁর ‘মানুষের ছায়া’ কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনায় বেশ আবেগঘন হয়ে ‘শুকর’ গালি দিয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে। স্বাধীনতার প্রতি তাঁর আবেগকে সম্মান দেখিয়ে বলতে চাই, ইতিহাস আবেগশূণ্য একটা নদী। ইতিহাসের বর্ণনাকারী এমনভাবে বিষয়টিকে বর্ণনা করতে হবে যাতে পাঠকের মনে আবেগ সৃষ্টি হয়, বর্ণনাকারীর মনে নয়। কবি ভাবের শিকারী কিংবা সওদাগর, ভাবের শিকার কিংবা ভাব নয়। কবি আবু মকসুদ যদি এখানে আবেগকে আরেকটু শৈল্পিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারতেন। তবু স্বীকার করতে হবে এই কবিতাটি তাঁর বক্তব্যের দিকে, দেশপ্রেমের দিকে, চিন্তার দিকে বেশ উত্তির্ণ। এ প্রসঙ্গে কালিক রাজনীতির উত্তেজক কেউ দ্বিমত করতে পারেন, কিন্তু মহাকালের বিষয়কে সামনে নিয়ে বিষয়টির বিচার্য হওয়া উচিৎ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোনো আপোষ নয়, কবির সঙ্গে আমরাও একমত, এই একটিমাত্র বিষয়ে নিরপেক্ষ হতে চাই না। কিন্তু তবুও যদি প্রশ্ন করি, একজন কবি কিংবা দার্শনিক বড়, না রাষ্ট্র? বিজ্ঞ পাঠেকের কেউ হয়তো বলবেন রাষ্ট্র। কিন্তু একজন কবি কিংবা দার্শনিকের সামনে রাষ্ট্রকে বড় মনে করি না। বাংলা একাডেমীর বইমেলা কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে যখন রাষ্ট্রীয় উচ্চতর ব্যক্তিকে কবি-সাহিত্যিকদের সামনে বেশি গুরুত্ব দেখানো হয় তখন কষ্টে আমাদের ভেতর ভাঙতে থাকে। একটা রাষ্ট্র থেকে কবি অনেক শক্তিশালী। রাষ্ট্র ভেঙে যেতে পারে। স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে রাষ্ট্রের ভিন্ন ইতিহাস হতে পারে। রাষ্ট্রীক আবেগ ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। একজন দার্শনিক কিংবা কবি রাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থান পাল্টে দিতে পারেন। আমরা পাকিস্তানের জন্য একজন কবি ইকবাল, বাংলাদেশের জন্য একজন আবুল মনসুর আহমদ, চীনের জন্য একজন কনফুসিয়াস প্রমূখের কথা স্মরণ করতে পারি। আমি যে কথাগুলো বললাম তা আবেগে নয়, বিষয়টি বোধ থেকে উৎসারিত। পৃথিবীর ইতিহাস নয়, শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসে চোখ দিলেই এর বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আবু মকসুদকে ধন্যবাদ তারা যে ইংল্যান্ডে বসে ভাবছেন দেশের কথা, দেশের স্বাধীনতার কথা। লন্ডনের টেমস নদীর তীরে বসে শুধু বাংলাদেশের কথা ভাবছেন তা কিন্তু নয়। তিনি স্মৃতিতে দেশের আরো ভেতরে প্রবেশ কছেন। ফিরে আসছেন মৌলভীবাজারের খরস্রোতা মনু নদীর তীরে তাঁর ছোটবেলার ‘হাওয়াই মিঠাই’-এ। আমরা তাঁর ‘পরিধিসীমা’ কবিতা পাঠ করলে আমাদের ছোটবেলার শহরে, নগরে, নদীর তীরে কিংবা ঘি চমচম, হাওয়াই মিঠাই, নাবিস্ক চকলেট, হজমি আর চালতার আচাড়ে কিছুক্ষণ চোকবুজে পড়ে থাকতে পারি। লন্ডনে বসে তিনি শিকড়ের যে টান অনুভব করছেন, এর বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই তাঁর এই কবিতায়। তবে তাঁর এই কবিতা পড়ে কেউ যদি ভাবেন আধুনিক সময়ে এসেও কবি বড়ই ঘরমুখি। অথচ কতো আগে নজরুল ইসলাম ঘোষণা দিয়ে গেলেন আর বদ্ধ ঘরে থাকবেন না, ঘুরে ঘুরে জগতটাকে দেখবেন! কেউ বলতে পারেন, আবু মকসুদ বিশ্বচিন্তায় নিজেকে বিস্তৃত না করে কেবল ঘুরমুখো হয়ে উঠছেন কেন? না, এটা কোনো ক্ষুদ্র বিষয় নয়। মূলত নিজের মাটির উপর দাঁড়িয়েই বিশ্বটাকে দেখতে হয়। যারা নিজের ঘরের খবর না রেখে বিশ্বচিন্তায় হাবুডুবু খান তারা মূলত ফাঁকির মধ্যে থাকেন। খুব কাছের জিনিষ নিয়ে কথা বললে কাজ করতে হয়, বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়, ক্ষেত্র বিশেষ জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তাই তারা দূরের জিনিষ নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নজরুল-রবীন্দ্রনাথের বিচার-বিশ্লেষণ করি তবে বিষয়টি কিছুটা অনুভব করতে পারবো। এখানে কৃতজ্ঞতার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি তিনি যে যুগের তালে আবেগ প্রবণ না হয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে বাঙালির জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। এটা নজরুলের প্রাপ্য ছিলো। বৈদিক যুগের প-িতদের কথা হলো─‘আত্মানং বিদ্ধি’ নিজেকে জানো। ইমাম গাজ্জালী বলেছেন, ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু’ যে নিজেকে জানে সে রবকে জানে। পৃথিবীর সর্বযুগের প-িতদের একই কথা─প্রথমে নিজকে জানতে চেষ্টা করো। আবু মকসুদ ঘরের খবর নিয়েই বিহারাঙ্গন দেখার পক্ষে। এ যেনো নজরুলের ভাবনার প্রতিচ্ছবি─তাকে ‘অনাদির সমুদ্র ডাকেছে’, ‘এঁদো পুকুরের জলে অনেক হলো’ তাঁর। এখন আর তিনি ঘরের কোণে থাকতে রাজি নয়, তিনি বেরিয়ে যাবেন, সামনে যাবেন, বিশাল সমুদ্রে নামবেন। এটা ক্ষুদ্র থেকে বৃতহত স্বপ্নের দিকে ধাবিত হওয়া। কবি তো ফেরেস্ত নন, মানুষ। মানুষ তো বাবা আদমের সন্তান। হাওয়ার কাকুতি থাকবেই তাঁর মনোস্বর্গে, থাকবে তাঁর ‘বাসনায় বাঁধা গভীর আসক্তি’, সে আসক্ত হতেই পারে শিমুল উৎসবে যাওয়া পানকৌড়িদের প্রতি। পানকৌড়ির প্রতি আসক্তির ক্ষেত্রে কবি আল-মাহমুদের সাথে আবু মকসুদের ব্যবধান কতটুক? তা শুদ্ধবাদীদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। কারো কাছে প্রেমে ভুল-শুদ্ধ হতে পারে একটা আপেক্ষিক বিষয়। আবার মরমিয়ারা যখন বলেন, আসক্তি হলো প্রেমের মূল শত্রু, তখন আসক্তিযুক্ত প্রেমকে আর প্রেম না বলে বলতে হয় স্বার্থ। আর স্বার্থবাদী মানুষের কাছে প্রেমে ভুল-শুদ্ধ একটা বিবেচ্য বিষয়। আসক্তিশূন্য প্রেমে কোনো হিসাব-কিতাব নেই। নেই কোনো ভুল-শুদ্ধ। প্রকৃত কবি মানে প্রকৃত প্রেমিক। প্রেমিকরা ভুল-শুদ্ধে থাকেন না। তারা শুধু রেখে যেতে চান পৃথিবীতে মায়া। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, শামসুর রহমান, আল-মাহমুদ প্রমূখ কবিরা যে প্রেমের কথা বলে গেছেন আবু মকসুদ এই প্রেমের কথাই তাঁর নিজের মতো করে বলেছেন─‘যাবো, তবু রেখে যাবো মায়া।’ দারুণ কথা বলেছেন তিনি। আসলেই জন্মভোরে আমরা ছিলাম প্রেমের কাঙাল। আজও রয়ে গেছি সেই কাঙালই। তাই আমরা চৌকাটে দাঁড়িয়ে দেখি অগাধ শূন্যতায় সবই ঝাপসা। যদি কেউ বলে একশব্দে কোনো প্রেমিকের পরিচয় দিতে, তবে আমি গ্রহণ করবো আবু মকসুদের ‘তৃষ্ণাগ্নী’ শব্দকে। আমরা প্রেমিকরা আজীবন জ্বলি এই ‘তৃষ্ণাগ্নী’ তে। বাড়ির পাশে পদ্মা-মেঘনা থাকতে প্রেমিক লালন কেনো মরে জলের তৃষ্ণায়? কারণ, প্রেমের ধর্মই প্রেমিককে তৃষ্ণার্ত করে রাখা। এই তৃষ্ণার আগুন জ্বলে প্রেমিকের মনে-দেহে। তার ভেতরেই মরুভূমি। সে যখন সূর্যের স্পর্শে যায় তখন মায়ার উষ্ণতা অনুভব করে, সে যখন বৃষ্টিতে যায় তখন মায়ার জল তার মন স্পর্শ করে গড়ায়। সবুজে, বাতাসে, মাঠে, নদীতে বাজে তার মায়ার নূপুর আর সাঁনাই। কিন্তু কিছুই যখন প্রেমিক-প্রেমিকার তৃষ্ণাগ্নি মিটাতে পারে না তখনই সে হয়ে উঠে কবি। কবির মন বড়ই বিচিত্র। এই অবস্থায় কবিত্বকে কখনো কখনো বেদনার ঘরে অভিশাপই মনে হয়। ব্যস্ততম শহরের জেব্রা ক্রসিং-এ যদি কবি আটকে পড়েন পল্লী কিশোরীর বেগুনি ওড়নায় তখন তাকে স্বীকার করতেই হবে ‘সম্মোহনের পশমাংশ’। প্রকৃতির সাথে কবিদের বিচিত্র মনের সম্পর্ক খুবই গাঢ়। ‘মেঘের ছলনা’য় শুধু আকাশের রঙ বদলায় না, বদলায় কবির মনও। মেঘ তো কবিতায় প্রতীক মাত্র, আসল অভিযোগ হলো আপনজনের বিরুদ্ধে। একটা ঘটনা বলি, আমার ‘ঝরাপাতার শূন্য সময়’ কবিতার বই প্রকাশের পর অগ্রজ কবিবন্ধু কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার আমাকে একদিন প্রশ্ন করলেন─‘ভাই ভাবীর সাথে আপনার কোনো সমস্যা আছে কি, আপনি কি সংসার জীবনে সুখি নয়?’ প্রয়াত কবি কিশওয়ারের এই ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে আমার কবিতায় বিচ্ছেদ আর বেদনার মিশেল দেখে। মূলত আমি পারিবারিক জীবনে এই পর্যন্ত খুবই সুখি একজন মানুষ। তবে অনেক মানুষের সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে তাদের সমস্যাগুলোকে আমার মতো করে দেখতে গিয়ে যে বেদনা বুকে সঞ্চিত হয়েছে, তাই আমার সাহিত্য। কবি আবু মকসুদকে আমি যতটুক জানি, তিনি জীবনে সুখি একজন মানুষ। কিন্তু তাঁর ‘সংসার পাঠ’ কবিতা যখন পড়ছিলাম তখন প্রশ্ন হচ্ছিলো─জানালার থুতনি ঠেকিয়ে যে বাঘীনির কথা কবি বলছেন, তিনি কে? কেনো এই বাঘীনির নখের আঁচড় তাঁর হৃদপি-ে? যে কেউ কবিতা পড়ে কবি কিশওয়ারের মতো বিভ্রান্ত হয়ে কবি পতœীর কথা ভাবতে পারেন। তবে এমনটি হওয়া যে জরুরি নয়। কবির বর্ণিত সব ঘটনা তার নিজস্ব হওয়া জরুরি নয়। কবি মানে সমাজ সচেতন সত্যবাদী একজন মানুষ। তিনি মানুষের সমস্যাকে নিজের মতো দেখে বর্ণনা করেন।
কবি বলছেন ‘অনাবৃত তোমার শরীর/ ঝড়ো হাওয়ার ঝাঁপটা/ ঐখানে দাঁড়িয়ে বৃক্ষের সহপাটি/ একটু নীরবতার প্রহরে/ থামলে ডানাভাঙা পাখি/ কাঁপে সৌখিন সম্পর্কের হাত।’ (তৃষ্ণাকথা)। নারীবাদীরা ক্ষিপ্ত হলেও হতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিবছর যখন ইংরেজি নবর্ষেরদিন তথাকথিত প্রগতিবাদীর কোপানলে পড়ে মেয়েরা লাঞ্ছিত হন তখন একজন কবির এ ধরনের অবজারবেশনকে ছোট করে দেখার অবকাশ থাকে না।
আবু মকসুদও জানেন একজন কবির কাছে ‘কবিতা জীবন’। কবিতা হলো, একজন কবির অব্যক্তের অংশবিশেষ। যন্ত্রণা, স্মৃতি, স্বপ্নের জোনাকী পোঁকা হয়ে কবিতা প্রতিদিন কবির জীবনের সঙ্গে বসবাস করে। কবিরা মাঝেমধ্যে নিজকে খুব অবহেলিত ভাবেন। তবে এই অবহেলায় হীনতা থাকে না, থাকে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বুকে নিয়েই চলে কবির সাধনা। আবু মকসুদ তাঁর ‘স্বপ্নমধ্যমা’য় এই কথাগুলো বলেছেন। ‘ফেরা’ কবিতায় নিজেকে কবিবন্ধু মুজিব ইরমের মুখোমুখি করে বিচার-বিশ্লেষনের চেষ্টা করেছেন। কথাটি তাঁর ভাষায় বললে─‘আমি মুগ্ধতায় গাছের আলিঙ্গনে গাছ হই, ময়ূরাক্ষী সমান্তরাল হাঁটতে হাঁটতে হাতের তালুতে অনুভব করি মাকড়সার মায়া।’ আমরা পৃথিবীকে যদি একটা পথ হিসেবে বিবেচনা করি তবে এখানের সবকিছুকে বলতে হবে ‘পথের পরিচয়’। আবু মকসুদের পথের পরিচয় কবিতায় যখন দেখি ‘বয়সী উনুনে পোড়ায় গাছের বাকল’ তখন বুঝি যৌবন এখন বিদায়ী ট্রেনের যাত্রী। এই কবিতায় কবি সময়কে ধারণের চেষ্টা করেছেন। তিনি জানেন একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে, তবু তিনি বাঁচতে চান। সবারই মনে থাকে অমরত্বের বাসনা। কবি নিজে বলছেন─‘পাখিদেরও বাসনা জাগে কচ্ছপের প্রাণ।’ ভাবনার ঘরে কবিরা কখনো হয়ে পড়েন ‘এক রৈখিক সময়ে’র হাতে বন্দি। এই শিরোনামে কবি লিখেছেন তাঁর বেদনার কথা, ভৌগলিক ভাবনা, দেশের চিন্তা, মানুষের অসহাত্বের কথা, পিশাচদের দাপট, পূর্বপুরুষদের সাহসিক যুদ্ধ-সংগ্রাম, আমাদের বেহুদা অশ্রু বিসর্জন, বিলাপ ইত্যাদি। পাশাপাশি তিনি দিয়েছেন জেগে উঠার ডাক। এই ডাক দিয়েই তিনি ‘কবির গন্তব্য’ শিরোনামে স্মরণ করেছেন অগ্রজ কবিবন্ধু আতাউর রহমান মিলাদকে। এতে কবি মিলাদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন আবু মকসুদ। বেশ আগে আমি সামু ব্লগে কবি আতাউর রহমান মিলাদ-এর ১) দাসত্ব এবং পশুত্ব, ২) ঈশ্বর ও ইদুঁর, ৩) আর্শ্চয শ্লোক, ৪) বিয়োগ, ৫) সাংসারিক কৌশল এই পাঁচটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পাঁচটির মধ্যে ‘আশ্চর্য শ্লোক’ কবিতাটি সমান্তরাল আলোচনা করতে চাই আবু মকসুদের ‘পরকীয়া’ কবিতাটির পাশাপাশি রেখে। আশ্চর্য শ্লোকে আতাউর রহমান মিলাদ বলেছেন─‘পতিতালয়ের বারান্দায় হেঁটে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। চমকে উঠলেন বহুগামী তরুণ কবিরা। যৌবনের দুর্গন্ধ আটকে যায় নাকে। বজ্রপাতে ভঙ্গ হয় কামের কীর্তন, জরায়ূর শ্বেতøান। নীলজলে ডুবে যায় স্তন্যচুড়া। ভাসমান সঙ্গমের সহজসূত্র। মাঝপথ থেমে যায় হুইস্কির ঢোকে। জীবনের আশ্চর্য শ্লোক।’ এই কবিতার আলোচনায় উল্লেখ করেছিলাম, যারা নিজেদের দূর্বলতাকে ঢেকে রাখতে অগ্রজদের আশ্রয় নিয়ে বলেন─‘কৃষ্ণ করলে লিলাখেলা আমি করলে দোষ’ তাদের প্রতি ছিলো আতাউর রহমান মিলাদের ‘আশ্চর্য শ্লোক’ একটা ব্যঙ্গাত্মক চপেটাঘাত। এখানে আমাদের দেখার বিষয় আবু মকসুদ কোনপথে হাঁটতে চেষ্টা করেছেন। তিনির কবিতায় যখন দেখি─‘কামাসক্তির পঙ্গপাল আমাদের জড়িয়েছে অবৈধ সম্মোহনে’ তখন আমরা বুঝতে পারি তিনি আছেন আতাউর রহমান মিলাদের সাথে আলোকিত পথে। পরকিয়া নীতি শাস্ত্রে, ধর্মশাস্ত্রে, ভদ্রশাস্ত্রে, আমাদের সমাজশাস্ত্রে, আমাদের রাষ্ট্রে যেমন একটি ঘৃণিত কাজ তেমনি ঘৃণিত আতাউর রহমান মিলাদ কিংবা আবু মকসুদের কাছেও। অনেকের ধারণা পরকিয়া কিংবা শরাব ছাড়া কবিদের কবিতার নেশায় ধরে না। কিন্তু আবু মকসুদের তাতে নেশা নেই। তাঁর নেশাটা হলো ‘চৈত্রের নেশা’। চৈত্রের সব কিছু থাকে টানটান। সূর্য থাকে প্রখর। রূপসি রাতে আলোর আশায় পুলকিত হয় কবির মন। কবির মন ধূ ধূ মরুর মাঝে হতাশ হলেও আশাহীন হয় না। এই মন ডুবুরীর মতো ডুব দিয়ে জলের অতল থেকে মুক্তা তুলে আনে। কবিরা হতাশ থাকে। অতৃপ্তির যাতনা কবির মধ্যে থাকে। অভিজ্ঞান বলছে অতৃপ্ত প্রেমই কবিকে জাগিয়ে রাখে। কবিদের এই প্রেমই মানুসের বুকে চিরস্থায়ী এক রূপরেখা তৈরি করে । ‘বকুলসমগ্র’ কবিতায় বলেন─‘নদীরা শুকিয়ে গেলে কোথায় ভাসাবে তরী?’ কিংবা ‘আমার মতো তোমার মনে কেন জোনাকি ঢুকে না?’ তখন মনে হয় কথাগুলো সাধারণের নয় কোনো স্বাপ্নিক প্রেমিকের নিজস্ব বয়ান। আলোর বীজ বুকে নিয়ে মানুষের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরে যখন হাতকে শূন্য মনে হয় তখন এই কথাগুলো মনে উঁকি মারে।
কবিরা তাদের বক্তব্যে বিভিন্নভাবে প্রেমের আবরণে স্বপ্ন মাখিয়ে বলতে চেষ্টা করেন। আবু মকসুদও এই চেষ্টা করেছেন। তবে স্বাপ্নিক মানুষ তৃপ্ত হলে কর্ম থেমে যাবে বলে তারা আজন্ম অতৃপ্ত থেকে যান। আবু মকসুদ এই অতৃপ্তি তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন। মানুষেন জীবনকে সময় দিয়ে ভাগ করলে সকাল-সন্ধা-রাত সবই পাওয়া যায় একটি জীবনের মধ্যে। কবি যখন বলেন─‘বিকেলের রোদ ঝরে গেলে পিছু ফিরে সন্ধ্যার ভয়’ তখন আমার কাছে বিকেলকে মনে হয় জীবনের শেষবেলা আর সন্ধ্যাকে মৃত্যু। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের মনে মৃত্যুর ভয়টা বেশি কাজ করে। কবিদের কবিতায়ও এই ভয় ভেসে ওঠে। আবু মকসুদের ‘গোধূলি’ কবিতায় এই ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে যদি তিনি এখানে জীবনকে উদ্দেশ্য না করে সভ্যতাকে করে থাকেন তবে বলবো এটা আমাদের সভ্যতার ক্রান্তিকালের কথা। তিনি আতংকিত এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ভেবে।
কবিতার ভাব, চিত্রকল্প বুঝার জন্য অভিজ্ঞা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কবিতার ভাব এবং চিত্রকল্প অনুদিত না এলে পাঠক মনে এই কবিতার ঝলক প্রকাশ পায় না। কোনো কবিতা যদি কারো মনে কম্পন না তুলে তিনি মনে করতে পারেন এটা কবিতা হয়ে উঠেনি। কবিতার দৈহিক বিশ্লেষকদের ক্ষেত্রে এটাই বেশি হয়। আবু মকসুদ তাঁর ‘প্রান্তকাল’ কবিতায় যখন বলেন─‘কৈশোরের অবুঝ সন্ধ্যায়/ উড়ে গেলো একটা ফড়িঙ/ ও প্রান্তে ওড়নার ওড়ন’ তখন আমার কৈশোর এসে আমাকে গ্রাস করলে আমি মোহগ্রস্ত হই স্মৃতিতে। ফড়িঙ যাদের কৈশোরের প্রেমস্মৃতিতে আছে তাদেরও তা হতে পারে। এরপর এই কবিতায় বর্ষায় স্কুলে যাওয়ার চিত্র, মধ্যবয়স এবং উজান পথে হাঁটার চিত্র সবই ঝলক দিয়ে ওঠে মনের গভীরে। সবশেষে এই কবিতায় কবি আবু মকসুদের আদর্শিক বক্তব্য─‘সবুজাভ গাছগুলি দেখিয়েছিলো দিশা/ ভুল নিমন্ত্রণ, এনেছিলো ঘোর অমানিশা।’ আসলেই আমরা পথ হারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল নিমন্ত্রণে। বাংলা সাহিত্যের বর্তমান কাজগুলোকে ভূমিগত দিকে আমরা তিনভাগে বিভক্ত করে বিবেচনা করতে পারি─প্রথম বাংলা, দ্বিতীয় বাংলা, তৃতীয় বাংলা। প্রথম বাংলা হলো গোটা বাংলাদেশ। এখানে শুধু ঢাকা বলা যাবে না, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সরকারী-বেসরকারী রাষ্ট্রীয়ভাষা বাংলা। দ্বিতীয় কোলকাতা এবং তৃতীয় বিলেত। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বাংলা চর্চা হচ্ছে, কিন্তু এই তিন স্থানের মতো ব্যাপক নয়। আবু মকসুদ থাকেন যুক্তরাজ্যে। তাই তিনি তাঁর ‘তৃতীয় বাংলা’ কবিতায় প্রশ্ন করেছেন─‘এই ভূখ-ে আমি কি কিছুই দেইনি?’ কোনো কিছুর পর্যবেক্ষণ কিংবা পরিক্ষা-নিরিক্ষা করা খুবই সহজ কাজ। কিন্তু কোনো কিছুকে প্রশ্নের ভেতর নিয়ে আসা খুব সহজ নয়। প্রশ্ন আবার সাধারণ, অসাধারণ দু’রকম হতে পারে। প্রশ্নকর্তার অভিজ্ঞা এবং জ্ঞানের ওপর যে কোনো প্রশ্নের তাৎপর্য নির্ভর করে। প্রশ্ন হলো দর্শন এবং বিজ্ঞানের মূল উপাদান। আবু মকসুদ যদি এই প্রশ্নের পর আর কোনো বক্তব্য না দিতেন তবু আমি বলতাম এটা তাঁর সফল এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন এবং কবিতা। ইংল্যান্ডে আমরা যারা বাপ-দাদার যুগ থেকে স্থায়ী বসতি গড়েছি তাদের কাছে সেই ভূখন্ড কোনো অর্থেই বাংলাদেশ থেকে গুরুত্ব কম রাখে না। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ হলে এই ক্ষেত্রে আমার সন্তানের জন্মভূমি ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ বিশ্বাকাপে যেতে পারেনি, ইংল্যান্ড গিয়েছে। আমরা জানতাম, ইংল্যান্ড পরাজিত হবে, তবু নাগরিক ঈমানদারী থেকে সমর্থক থেকেছি ইংল্যান্ডের। আমাদের দাদারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের পক্ষে জার্মানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আমরা পর্যন্ত তিন প্রজন্ম ইংল্যান্ডের সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চেষ্টা করেছি। অতঃপর কোনো বর্ণবাদী যদি এসে আমাদেরকে লাল চোখ দেখায় তবে আমাদের প্রশ্ন তার কাছে─‘এই ভূখ-ে আমি কি কিছুই দেইনি?’ তাদের জানা উচিৎ, আমরা শুধু বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখে ক্লান্তনই, এই ভূখন্ড নিয়েও আমাদের স্বপ্ন আছে। এই স্বপ্নে কবি আবু মকসুদের ভাষায় বলতে চাই─‘এ ভূখ-কে বানাবো অপরূপা শ্যামলা সুন্দরী।’ এটা করবো আমার জন্য, আমার সন্তানদের জন্য, মানুষের জন্য। বৃটেনের নাগরিক হিসেবে এটাও আমার দেশপ্রেম। এতোটুক বলে আমি যখন আবু মকসুদের ‘বেদনাপার্বণ’ কবিতার শেষ দুই চরণ─‘হাজার কঙ্কালের ইতিহাস মাড়িয়ে/ মানুষই ফিরে বহমান বেদনার কাছে’-তে চোখ দিলাম তখন পলাশী থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলার দীর্ঘ পরাধীন যুগ আমার চোখের সামনে ঝলমল করে উঠে। বৃটেনকে নিজের দেশ মনে করলেই কিন্তু আমরা সেই অমানবিক ইতিহাসের পর্বগুলোকে ভুলতে পারি না। এটাই আমাদের মানবতা। আমরা ইংরেজদের সেই অমানবিক কাজগুলোর নিন্দা করি। একই সঙ্গে বৃটেনের দানবগুলোকেও তাড়াতে চাই।
কবি দেশ, জাতি, বিশ্ব, নদী, আকাশ ইত্যাদির ফাঁকে ভুলছেন না নিজের পিতার কথাও। পিতার স্মৃতিচারণে লিখেছেন ‘অপেক্ষা’ কবিতাটি। কবির মনে কেন এতো বেদনা? কে দেয় এই বেদনা? আমাদের অভিজ্ঞা বলে─এই বেদনার মূলে কবির প্রেমাত্মা। এই প্রেম নারীর না প্রকৃতির? দেহের না আত্মার─এসব ব্যক্তিগত বিষয়। কবি মূলত সুন্দরের প্রেমিক। এই সুন্দর আবার ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন। আবু মকসুদ যখন বলেন─‘মানুষ জন্ম নেয় মহারৌদ্রে, পৌঁছতে তীরে/ অমানুষ বাঁদরেরা সব কালেই মূখ রাখে বিষ্টার ভিড়ে’ তখন আমরা দেখি এই কবির সুন্দর মানবতায়, মানুষের উন্নয়নে, স্বপ্ন নিয়ে তীরে পৌঁছার চেষ্টায়। কিন্তু সময়টা খুবই খারাপ। অমানুষ বাঁদরেরা পথে পথে শত্রু হয়ে যায়। সময়টা কতো খারাপ তা আবু মকসুদ তাঁর ‘নদী পৃথিবী’ কবিতার শুরুতেই বলছেন─‘এখন সম্পর্কের ভাঁজে শুয়ে থাকে সাপের কু-ুলী/ এই শাদা পৃথিবী কী করে ডুবে জটিল অন্ধকারে।’ কবি এখন আর বন্ধুত্বে, প্রেমে কারো প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। সভ্য পৃথিবীটা যেনো দিনদিন অসভ্যতার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি কবি, তিনি হতাশ হতে পারেন না। তিনি জানেন, মানুষের হৃদয়ের রাস্তা অসীমের দিকে ধাবমান। তাই তিনি চাচ্ছেন─‘এবার তা হলে কলঙ্কমোচন হোক/ নেমে আসুক নতুন পৃথিবীর নদী।’ তিনি যখন ‘জন্মঋণ’ স্বীকার করছিলেন তখন আমার কাছে মনে হলো এটা যেকো কোনো এক মায়ের সন্তান প্রসবের বেদনা। এই কবিতায় কবি নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন─‘নিজেকে খুঁজি উৎস মুখে।’ এতে ভদ্রতাজনিত অহমও আছে─‘বিনত ছিলাম না, তবুও বিনতি সাজাই।’ এখানেও তাঁর প্রশ্ন আছে, প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার কাকুতি আছে। ‘আমি আর ভাঙা স্বপ্নগুলো’ কবিতায় যে ভাঙা স্বপ্ন, শিউলির ঝোঁপ, ঘাসের গন্ধ, জোনাকি পোকা, আকাশের চাঁদ, সূর্যডুব, গাছের ঝরাপাতা, হরিণশিশু ইত্যাদি পাওয়া যায় তাতে যদি আমার কিংবা আমাদের কিছু স্মৃতি থাকে তবে সবকিছু মিশে গিয়ে ভেতরে একটা উতলা হাওয়া তৈরী করে দেয়। এখানে এসে কিছুটা বিভ্রান্ত হই─এগুলো আমার, না আবু মকসুদের স্মৃতিচারণ। ‘একা ঘুমোনোর দিন’ কবিতায় ‘তীরের মাটি, উল্টানো নৌকা’ পড়ে কেউ যদি হেমন্তের গ্রামে নদীর তীর ঘুরে আসেন তবে দেখবেন গ্রামের মানুষেরা নদীর তীরে নৌকা মেরামতের জন্য, নতুন তারতেল দেওয়ার জন্য, কিংবা নৌকা যাতে নষ্ট না হয় সেই জন্য উল্টিয়ে রেখেছে। আবু মকসুদের ‘একা ঘুমোনোর দিন’ কবিতাটি সম্পূর্ণ একটি গ্রামীণচিত্র।

কবির অন্তরে নদীর সাথে মিশে যায় নারী আর নারীর সাথে নদী। কবি উচ্চারণ করেন─‘পরশে কেঁপে উঠে নাভিমূল’। নদী এবং নারী কবির মনে আলোকিত হয়ে উঠে। ‘যৎসামান্য তৃষ্ণার নদী’ কবিতায় আমরা এই আলো দেখতে পাই। আবু মকসুদ প্রেমিক, তবে এই কবিতা বলে দিচ্ছে তিনি সচেতন প্রেমিক─‘নিশ্চিত রাত্রি পেরুতে/ রোমাঞ্চের সাথে প্রয়োজন প্রখর সতর্কতা।’ কবি কোন ঘটনা কিংবা কোন স্মৃতিকে সামনে রেখে কথা বলছেন অনেক সময় স্বয়ং কবিই তা ভুলে যান। পাঠক সর্বদাই চিত্রগুলোকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তৃপ্ত হন। আবু মকসুদ বলেন─‘বিষন্নতা তাকিয়ে থাকে/ আলোর আবিষ্ট পথে/ অসংখ্য পথের মাঝে মেটেরঙ পথটি/ বেয়ে আসে আমার দুঃখীস্বজন।’ আবু মকসুদের ‘অসংখ্য পথের মাঝে’ কবিতায় এই চার লাইন লিখলেই তা পূর্ণাঙ্গ বলা যেতো, বাকী কথাগুলো মূলত বরের সাথে বৈরাতি। আর ‘পরিডাঙা মাঠে’ কবিতায় অনেক কথাকে দেখেছি নিজের স্মৃতির সাথে মিলিয়ে। জীবনে যাদের ভালোবাসার প্রত্যাশা করেছি তারা করেছে অবহেলা, আর যাকে চিন্তাও করিনি সে হঠাৎ এসে বলে─তোমার জন্য আমি কতো নদীর জল ডিঙ্গিয়েছি। আবার অনেক কথা আমাকে লুকাতে হয় সবুজপাতায় লুকানো আমের মুকুলের মতো। ভেতরে লুকাতে হয় কতো হাসি, কতো কান্না। আবু মকসুদের এই লুকানো হাসি-কান্না আলো-আধাঁরি ভাষায় অস্তিত্ব পেয়েছে ‘দূরতর গ্রহজীবন’ কাব্যগ্রন্থের-নিখিল মানবী, কয়েকটুকরো নিঃশ্বাস, আড়ালে রোদমন্ত্র, ব্যর্থ চাঁদ, তেজারতি, কালকথা, সূর্যসমবায়ে, ইট, ছায়াচিহ্ন : মেঘের সাথে, গন্তব্যের ভাঁজরেখা, প্রত্যাবর্তনকথা, দড়িয়াবান্ধা খেলা, ফিরো : জলধারা, যাবতীয় চিত্রকলা, ভরাট আবাদ, অতিথিনিবাস, বাঁকের পাখি, অথবা অনন্ত আগুন, খাঁচা ও আকাশ, নিজস্ব আয়না, কিনার তিনপর্ব, দূরতর গ্রহজীবন কবিতাগুলোতে। এই বইয়ে তাঁর সবগুলো কবিতাই গদ্যছন্দে। শব্দের শৈল্পিক গাঁথুনি আছে। কবিতাগুলো বেশিরভাগই প্রেমের। তবে এই প্রেমিকের বক্তব্যে আছে বাণী, সতর্কতা, স্বপ্ন। তিনি কিছু কিছু স্থানে জোরপূর্বক যুক্তশব্দ তৈরি করতে গিয়ে স্রোতে বাঁধাগ্রস্থ করেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তবে এটা হয়তো তাঁর পরিক্ষামূলক কাজ। কানে বাজলেও পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য বিষয়টাকে লঘুদোষ মনে করা যেতে পারে। আগেই বলেছি, আমি কবিতাকে আত্মা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করি। আমারও অনেক কথার সাথে অনেকের ভিন্ন মত থাকবে। আবু মকসুদের ‘দূরতর গ্রহজীবন’ কবিতাগ্রন্থের কবিতাগুলোকে নিজের মতো করে দেখেছি─এটাই আমাদের দেখার সরলতা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×