মনে পড়ে ২০১২ সালের আজকের এই দিনটিকে??? আজ থেকে তিন বছর আগে এশিয়া কাপে আমরা হারিয়েছিলাম ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতকে। চলেন না হয় আরেকবার ঘুরে আসি বিজয়ের আঙিনা থেকে...
২৫, ০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মিরপুরের শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। শুরুর অপেক্ষায় ওয়ানডে ইতিহাসের ৩২৬১তম আর একাদশ এশিয়া কাপের ৪র্থ ম্যাচ। মুখোমুখি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত ও স্বাগতিক বাংলাদেশ। টসে জিতে আমাদের মুশফিক প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। মাঠে নামে ওরা এগারো জন! আর গৌতম গম্ভীর ও লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। আধ ঘণ্টার মধ্যে গম্ভীরকে প্লেড অন করে সাজঘরে ফেরান পেসার শফিউল...
তারপর মোটামুটি গেঁড়ে বসে ভিরাট কোহলী আর শচীন টেন্ডুলকার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৮ রান তোলে এই দুই ব্যাটসম্যান। আবার প্লেড অন... কোহলীকে ফেরান স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক... ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ...
তারপর আরো কিছুদূর... ২৫৯ রানে টপাটপ চলে যায় যথাক্রমে সুরেশ রায়না আর শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু যাওয়ার আগে এক ইতিহাস লিখে যায় ক্রিকেটের লিটল মাস্টার... শতকের শতক করে চির ভাস্বর করে রাখে ক্রিকেট অঙ্গনকে।
সাথে সাথে সবার আগে (অন্য প্রান্তে সুরেশ রায়নারও আগে) শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আমাদের মাশরাফি। আসে তামিম ইকবালও...
পুরো ৫০ ওভার খেলে ৫ উইকেটের বিনিময়ে বাংলাদেশকে ২৮৯ রানের এক চ্যালেঞ্জিং স্কোর দেয় গতবারের এশিয়া কাপজয়ী ভারত।
মাশরাফি দুটি আর শফিউল ও আব্দুর রাজ্জাক একটি করে উইকেট পায়। নাসিরের প্রচেষ্টায় অন্যটি হয় রান আউট।
মাঠে নামে আমাদের টাইগারেরা। শুরুতেই একটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আকাশে উড়ে যাওয়া বল যখন আবার মাটির দিকে ফিরে আসতে থাকে সেটাকে তালুবন্দি করে রোহিত শর্মা
মাত্র ১৫ রানে নাজিমউদ্দিনকে হারালেও ওয়ান ডাউন জহুরুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১১৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলে ওপেনার তামিম ইকবাল।
জহুরুলের বিদায়ের কিছু পরে তামিমও চলে যায়। তবে তার আগে করে যায় ৯৯ বলে ৭০ রানের কার্যকরী এক ইনিংস।
তামিম চলে গেলে ৩ উইকেটে ১৫৬ হয়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের বন্দরে পৌঁছতে আরো লাগবে ৯৮ বলে ১৩৪ রান। কিন্তু সেদিনের সন্ধ্যাকাশে যে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি প্রকম্পিত হবে এমনটাই লিখে রেখেছিলেন ভাগ্য বিধাতা।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান এক ঝড়ো জুটি গড়ে নাসিরকে সাথে নিয়ে। মাত্র ৮ ওভারে ৬৮ রানের এই তড়িৎ পার্টনারশিপ ভালোভাবে ম্যাচে নিয়ে আসে আমাদের।
আম্পায়ারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্পড আউট হয়ে সাকিব যখন ফিরে আসে তখন হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে সে... বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ২২৪... উইকেটে আসে বাংলাদেশের অধিনায়ক (তৎকালীন) মুশফিকুর রহিম। নাসিরকে নিয়ে শুরু হয় আরেক যৌথ অধ্যায়...
হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আমাদের নাসির... কিন্তু জয়ের বন্দর থেকে মাত্র দুই রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যায় সে। এ যেন সারা ঘর লেপে দুয়ারে কাঁদা রাখার মতো... কিন্তু না বাংলাদেশ পারে শেষতক... জয় ছিনিয়ে এনে নিজেদের জাত চিনিয়ে দেয় বাংলাদেশ...
আজ সেই ১৬ মার্চ। তিন বছর আগের সেই সুখস্মৃতি আজও চিরজাগরূক প্রতিটি বাংলাদেশবাসীর মন, মনন ও হৃদয়ে... ভুলে থাকা কি যায় ইরফান পাঠানের বলে করা মুশফিকুর রহিমের সেই ছক্কাগুলো কিংবা রিয়াদের সেই উইনিং চার...
যায় না... আবার ফিরে এসেছে মার্চ... আমাদের মার্চ... এই মার্চ '৭১ এর মার্চ, স্বাধীনতার মার্চ, জ্বালাময়ী এক ভাষণের মার্চ, তিনবার ভারতকে হারানোর মার্চ... সারা দেশের দোয়া রইলো যেন এই তিনবার আগামী ১৯ তারিখে চারবারে পরিণত হয়... ইন শা আল্লাহ্ তা হবে...
বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডঃ ক্রিকেট রণাঙ্গনের সেই বীরেরা...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫৭