'ব্যর্থতাকে ভয় পাই বলে জিতি'জেতার জন্য শুধু জেতার কথা ভাবলে হবে না। উল্টে ভাবুন, ব্যর্থ হলে সেটা কী ভয়ংকর হতে পারে! ওই ঠকঠকানিটাই আপনাকে খাটাবে আর জেতাবে। মন্ত্র দিলেন শাহরুখ খান। আমাকে সাফল্য নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে, কারণটা বোধহয় এই যে, আমাকে মোটের ওপর একজন সফল মানুষ হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু ঠিক করলাম সাফল্য নিয়ে না, লিখব সাফল্যের একদম উল্টো দিকে যে শব্দটার অবস্থান সেই 'ব্যর্থতা' নিয়ে। কেন না, আমার মনে হয়, জীবনে আপনাকে কী কী এড়িয়ে চলতে হবে যদি এটাই না জানলেন, তা হলে কী পেতে চান সেটা বুঝবেন কী করে!
এটা মানতে আমার আপত্তি নেই যে, সাফল্য খুব আনন্দের অভিজ্ঞতা। তবে সাফল্য থেকে খুব বেশি কিছু শেখা যায় বলে আমার মনে হয় না। অর্থাৎ, সফল হয়ে আপনি আশপাশের মানুষকে এমন কিছু বার্তা দিতে পারবেন না, যা থেকে তারা কিছু শিখতে পারবে। যেটা সম্ভব ব্যর্থ হলে। সাফল্যের আনন্দ একা উপভোগ করা যায়, একে-তাকে বলাও যায় হয়তো, কিন্তু ব্যর্থ হলে এই বার্তাটা দেওয়া যায়, আমি যে ভুলটা করেছি, সেটা করবেন না। তাই সাফল্য নিয়ে নয়, ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতেই আমার বেশি ভালো লাগে।
আসলে ব্যর্থতা ব্যাপারটাকে আমি অসম্ভব ভয় পাই। জীবনে সফল হতে হবে, এটা যতটা না ভেবেছি, তার থেকে বেশি ভেবেছি, যেন কখনো ব্যর্থ না হই। আমার বাবা একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন এবং আমার দেখা সেরা ব্যর্থ মানুষদের মধ্যেও বাবা একজন। আমার মা-ও তো পারলেন না দেখে যেতে যে, তাঁর ছেলে একজন তারকা হলো। সেদিক থেকে মা-ও ব্যর্থ। আমরা খুব গরিব ছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি বাবা-মা দুজনকেই হারানোর ফলে ব্যর্থতা আর দারিদ্র্য_এই শব্দ দুটো আমার কাছে সমার্থক হয়ে উঠেছিল।
নিজেকে তখন একটা কথাই বলতাম, কখনো যেন গরিব না থাকি। যখন ছবি সই করা শুরু করলাম, প্রথম দিকে যে কয়টা ছবি সই করেছিলাম, সবই এর-ওর বাতিল করে দেওয়া ছবি। প্রযোজকরা আর কাউকে পাচ্ছিলেন না, তাই আমাকে নিয়েছিলেন।
ছবিগুলো করতে রাজি হয়েছিলাম শুধু একটাই কারণে, আমি যাতে টানা কাজ করে যেতে পারি। আমাকে যাতে বেকার বসে থাকতে না হয়। অর্থাৎ প্রায় বাধ্য হয়েই কাজ করা।
অভিনয় করার সময় কিন্তু জানপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলাম। ইমোশনালি জড়িয়ে গিয়েছিলাম ছবিগুলোর সঙ্গে।
নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তো ছিলই। আমার ধারণা, তাগিদ, বিশ্বাস, ইমোশন_এগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটা অনুভূতি।
এরপর কিভাবে জানি না, কিছু একটা হয়ে গেল, কয়েকটা ছবি ভালো চলল; আর আমিও রাতারাতি তারকা বনে গেলাম। আমার মনে হয়, ব্যর্থতার ভয় থেকেই এটা হয়েছে। কারণ ব্যর্থ হই যদি_এই ভয়ে আমি সব সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে ১০০ শতাংশের বেশি দিয়েছি। ব্যর্থ হইনি যে তা নয়, কিন্তু ব্যর্থতা থেকে আরো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ব্যর্থতাই আমাকে সাফল্যের রাস্তা দেখিয়েছে।
তাই যখনই ব্যর্থ হবেন, আরো বেশি করে, মন দিয়ে কাজ করুন। ব্যর্থতার মতো ভালো শিক্ষক আর দুটো হয় না। ব্যর্থ না হলে আপনি জীবনে কিছু শিখবেন না, আর না শিখলে উন্নতিও করতে পারবেন না। পারবেন না আপনার ভেতরের হীরাটাকে খুঁজে বের করতে! ব্যর্থতাই আমাকে শিখিয়েছে ভান না করতে, আমি যা, সেটাই থাকতে। আমার জীবনের দিশা আমি খুঁজে পেয়েছি ব্যর্থতার মাধ্যমেই। অনেক সময় হয়, আপনাকে এমন একটা চাকরি করতে হলো যেটা কোনোভাবেই আপনার মনের মতো নয়, এবং বেশ কিছুদিন চেষ্টা করে আর না পেরে শেষে ছেড়েও দিলেন। আসলে একটা মরা ঘোড়াকে কত দিন পিটিয়ে খাড়া করার চেষ্টা করবেন, বলুন তো?
তাই এটাও জানতে হবে, কতবার ব্যর্থ হওয়া যায়। আর কতবারের মাথায় বলতে হয়, আর নয়। ব্যর্থতা এভাবেই আপনাকে শিখিয়ে দেয়, কোনটা আপনার দ্বারা হবে আর কোনটা না। ব্যর্থতা আমাকে খাঁটি বন্ধু চিনিয়েছে, সম্পর্কের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য করেছে। অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা কাকে বলে সেটাও শিখেছি নিজে জীবনে ব্যর্থ হয়েছি বলেই।
তাই বলে আমি এটা বলব না যে, ব্যর্থ হওয়া ভালো। আমার বক্তব্য এটাই যে, জীবনে আসলে আপনি কী কী অ্যাচিভ করলেন তার একটা তালিকা নয়; কী পেলাম, কতটা সফল হলাম, কতটা তৃপ্তি পেলাম_এই তালিকাটা লম্বা হলেই জীবন হলো না। আপনার সিভিতে আপনার কয়টা বড় বড় ডিগ্রি থাকল, সেটাও জীবন না। জীবন ঠিক এর উল্টোটা, অত্যন্ত কঠিন আর জটিল একটা প্রক্রিয়া, যা আমাদের হাতের বাইরে। যথাযথ বিনয়ের সঙ্গে এই সত্যিটা মেনে নিতে পারলে, নিজের ব্যর্থতাকে সম্মান জানাতে পারলে, জীবনের অচেনা দিকগুলোর মুখোমুখি হওয়াটা সহজ হবে।
মনে রাখবেন, সাফল্যই জীবনের শেষ কথা নয়, ঠিক যেমন ব্যর্থতা মানেই ভয়ঙ্কর কোনো একটা বিপর্যয় নয়! সাহস হচ্ছে_যে কাজটা করতে ভয় করে, সেটা করতে পারাটা। যদি ভয়ই না থাকত তাহলে সাহসের প্রশ্নই আসত না। তাই ব্যর্থ হওয়ার ভয়টা থাকুক। তাতে সফল হওয়ার খিদেটা আরো বেশি মোচড় দেবে।
সূত্র : 'ডিসকভার দ্য ডায়মন্ড ইন ইউ' বইয়ের ভূমিকা
এই লিখাটি আজকের কালের কনঠের
A to Z পাতা থেকে নেয়া।লিখাটি ভাল লাগল তাই share করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




