somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ব্যর্থতাকে ভয় পাই বলে জিতি'

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ব্যর্থতাকে ভয় পাই বলে জিতি'জেতার জন্য শুধু জেতার কথা ভাবলে হবে না। উল্টে ভাবুন, ব্যর্থ হলে সেটা কী ভয়ংকর হতে পারে! ওই ঠকঠকানিটাই আপনাকে খাটাবে আর জেতাবে। মন্ত্র দিলেন শাহরুখ খান। আমাকে সাফল্য নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে, কারণটা বোধহয় এই যে, আমাকে মোটের ওপর একজন সফল মানুষ হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু ঠিক করলাম সাফল্য নিয়ে না, লিখব সাফল্যের একদম উল্টো দিকে যে শব্দটার অবস্থান সেই 'ব্যর্থতা' নিয়ে। কেন না, আমার মনে হয়, জীবনে আপনাকে কী কী এড়িয়ে চলতে হবে যদি এটাই না জানলেন, তা হলে কী পেতে চান সেটা বুঝবেন কী করে!
এটা মানতে আমার আপত্তি নেই যে, সাফল্য খুব আনন্দের অভিজ্ঞতা। তবে সাফল্য থেকে খুব বেশি কিছু শেখা যায় বলে আমার মনে হয় না। অর্থাৎ, সফল হয়ে আপনি আশপাশের মানুষকে এমন কিছু বার্তা দিতে পারবেন না, যা থেকে তারা কিছু শিখতে পারবে। যেটা সম্ভব ব্যর্থ হলে। সাফল্যের আনন্দ একা উপভোগ করা যায়, একে-তাকে বলাও যায় হয়তো, কিন্তু ব্যর্থ হলে এই বার্তাটা দেওয়া যায়, আমি যে ভুলটা করেছি, সেটা করবেন না। তাই সাফল্য নিয়ে নয়, ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতেই আমার বেশি ভালো লাগে।
আসলে ব্যর্থতা ব্যাপারটাকে আমি অসম্ভব ভয় পাই। জীবনে সফল হতে হবে, এটা যতটা না ভেবেছি, তার থেকে বেশি ভেবেছি, যেন কখনো ব্যর্থ না হই। আমার বাবা একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন এবং আমার দেখা সেরা ব্যর্থ মানুষদের মধ্যেও বাবা একজন। আমার মা-ও তো পারলেন না দেখে যেতে যে, তাঁর ছেলে একজন তারকা হলো। সেদিক থেকে মা-ও ব্যর্থ। আমরা খুব গরিব ছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি বাবা-মা দুজনকেই হারানোর ফলে ব্যর্থতা আর দারিদ্র্য_এই শব্দ দুটো আমার কাছে সমার্থক হয়ে উঠেছিল।
নিজেকে তখন একটা কথাই বলতাম, কখনো যেন গরিব না থাকি। যখন ছবি সই করা শুরু করলাম, প্রথম দিকে যে কয়টা ছবি সই করেছিলাম, সবই এর-ওর বাতিল করে দেওয়া ছবি। প্রযোজকরা আর কাউকে পাচ্ছিলেন না, তাই আমাকে নিয়েছিলেন।
ছবিগুলো করতে রাজি হয়েছিলাম শুধু একটাই কারণে, আমি যাতে টানা কাজ করে যেতে পারি। আমাকে যাতে বেকার বসে থাকতে না হয়। অর্থাৎ প্রায় বাধ্য হয়েই কাজ করা।
অভিনয় করার সময় কিন্তু জানপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলাম। ইমোশনালি জড়িয়ে গিয়েছিলাম ছবিগুলোর সঙ্গে।
নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তো ছিলই। আমার ধারণা, তাগিদ, বিশ্বাস, ইমোশন_এগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটা অনুভূতি।
এরপর কিভাবে জানি না, কিছু একটা হয়ে গেল, কয়েকটা ছবি ভালো চলল; আর আমিও রাতারাতি তারকা বনে গেলাম। আমার মনে হয়, ব্যর্থতার ভয় থেকেই এটা হয়েছে। কারণ ব্যর্থ হই যদি_এই ভয়ে আমি সব সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে ১০০ শতাংশের বেশি দিয়েছি। ব্যর্থ হইনি যে তা নয়, কিন্তু ব্যর্থতা থেকে আরো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ব্যর্থতাই আমাকে সাফল্যের রাস্তা দেখিয়েছে।
তাই যখনই ব্যর্থ হবেন, আরো বেশি করে, মন দিয়ে কাজ করুন। ব্যর্থতার মতো ভালো শিক্ষক আর দুটো হয় না। ব্যর্থ না হলে আপনি জীবনে কিছু শিখবেন না, আর না শিখলে উন্নতিও করতে পারবেন না। পারবেন না আপনার ভেতরের হীরাটাকে খুঁজে বের করতে! ব্যর্থতাই আমাকে শিখিয়েছে ভান না করতে, আমি যা, সেটাই থাকতে। আমার জীবনের দিশা আমি খুঁজে পেয়েছি ব্যর্থতার মাধ্যমেই। অনেক সময় হয়, আপনাকে এমন একটা চাকরি করতে হলো যেটা কোনোভাবেই আপনার মনের মতো নয়, এবং বেশ কিছুদিন চেষ্টা করে আর না পেরে শেষে ছেড়েও দিলেন। আসলে একটা মরা ঘোড়াকে কত দিন পিটিয়ে খাড়া করার চেষ্টা করবেন, বলুন তো?
তাই এটাও জানতে হবে, কতবার ব্যর্থ হওয়া যায়। আর কতবারের মাথায় বলতে হয়, আর নয়। ব্যর্থতা এভাবেই আপনাকে শিখিয়ে দেয়, কোনটা আপনার দ্বারা হবে আর কোনটা না। ব্যর্থতা আমাকে খাঁটি বন্ধু চিনিয়েছে, সম্পর্কের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য করেছে। অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা কাকে বলে সেটাও শিখেছি নিজে জীবনে ব্যর্থ হয়েছি বলেই।
তাই বলে আমি এটা বলব না যে, ব্যর্থ হওয়া ভালো। আমার বক্তব্য এটাই যে, জীবনে আসলে আপনি কী কী অ্যাচিভ করলেন তার একটা তালিকা নয়; কী পেলাম, কতটা সফল হলাম, কতটা তৃপ্তি পেলাম_এই তালিকাটা লম্বা হলেই জীবন হলো না। আপনার সিভিতে আপনার কয়টা বড় বড় ডিগ্রি থাকল, সেটাও জীবন না। জীবন ঠিক এর উল্টোটা, অত্যন্ত কঠিন আর জটিল একটা প্রক্রিয়া, যা আমাদের হাতের বাইরে। যথাযথ বিনয়ের সঙ্গে এই সত্যিটা মেনে নিতে পারলে, নিজের ব্যর্থতাকে সম্মান জানাতে পারলে, জীবনের অচেনা দিকগুলোর মুখোমুখি হওয়াটা সহজ হবে।
মনে রাখবেন, সাফল্যই জীবনের শেষ কথা নয়, ঠিক যেমন ব্যর্থতা মানেই ভয়ঙ্কর কোনো একটা বিপর্যয় নয়! সাহস হচ্ছে_যে কাজটা করতে ভয় করে, সেটা করতে পারাটা। যদি ভয়ই না থাকত তাহলে সাহসের প্রশ্নই আসত না। তাই ব্যর্থ হওয়ার ভয়টা থাকুক। তাতে সফল হওয়ার খিদেটা আরো বেশি মোচড় দেবে।
সূত্র : 'ডিসকভার দ্য ডায়মন্ড ইন ইউ' বইয়ের ভূমিকা
এই লিখাটি আজকের কালের কনঠের
A to Z পাতা থেকে নেয়া।লিখাটি ভাল লাগল তাই share করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×